ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনদের আশঙ্কা

‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে খাদে ফেলবে’

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো নির্বাচনের সংজ্ঞায় পড়ে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নামে নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, অনুগত প্রার্থী আর কিংস পার্টি দাঁড় করানো হয়েছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে সরকার নির্বাচনে শতভাগ ভোটার উপস্থিতি যদি নিশ্চিত করতেও পারে, তাও এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচকদের বক্তব্য, এটা নির্বাচন নির্বাচন খেলা। এই খেলা দেশকে ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। দেখকে খাদে ফেলে দেবে। যে ধারায় নির্বাচন চলে গেছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ দেশ কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে না।

‘সাজানো নির্বাচন ২০২৪ : অতীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা কী বলে’ শিরোনামে আয়োজিত ওয়েবিনার সভায় বক্তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প খুঁজে বের করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যমও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ নির্বাচন ঠেকানো দরকার।

আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন গণতন্ত্রের ঘাটতিতে ভুগছে। সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা জনগণের জন্য নয়, বাইরের যে শক্তি তাদের ক্ষমতায় রাখছে, তাদের সহায়তা করতে কাজ করে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৭ জানুয়ারি যে কর্মকা- হবে, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। একটি দল তাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন–নির্বাচন খেলা খেলছে। এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে। নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে প্রবল দলীয়করণ হয়েছে। অসাংবিধানিকভাবে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সামাজিক ভাতা কার্ড নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্রতীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমীন এস মুরশিদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তাদের বিভিন্ন দলের মুখপাত্র হিসেবে তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার সংস্থাকে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়া হয়নি। এখন নামসর্বস্ব পর্যবেক্ষকদের দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করানো হয়। ক্ষমতাসীনেরা সত্যের সম্মুখীন হতে চান না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যে ধারায় নির্বাচন চলে গেছে, এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ দেশ কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে না। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নির্ধারিত আলোচকের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ছাত্রদের মধ্যে এখন বিরাজনীতিকরণ চলছে। আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেখা যেত, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন জয়ী হতো না। অন্তত এতটুকু গণতান্ত্রিক ছিল প্রতিষ্ঠান। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলে চড়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পরিকল্পিতভাবে নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, এখন নাগরিক সমাজকেও খুব বেশি প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যায় সহ্য করতে করতে অনাচার এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একটা অংশকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে না। এটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। নির্বাচনের নামে যা হচ্ছে, তা একতরফা ও জবরদস্তিমূলক। এখন নির্বাচন ঠেকানোর উপায় হচ্ছে গণ–আন্দোলন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, ভয়ের সংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। সামাজিক নেতৃত্বের সংকট চলছে। সমস্যা সমাধানে বিকল্প খুঁজে বের করা দরকার। যাতে পরের প্রজন্ম সেই সুফল পায়। তার মতে, গণতন্ত্রের ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ করতে না পারলে নির্বাচনের কারিগরি সমস্যা দূর করে লাভ হবে না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ (কান্ট্রি স্পেশালিস্ট) সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হলেও এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। নানা প্রশ্ন উঠছে যে বাংলাদেশ কি স্বাধীন, সার্বভৌম, শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে? দেশকে কি উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যদি দেশকে যেকোনো দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে তা খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে। ##

 

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলীতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলীতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

যে সন্মান অর্জন করেছেন তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না

যে সন্মান অর্জন করেছেন তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার

গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার

চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে

চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে

সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ

সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ

হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার

হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

ভারতের  প্রথম মহিলা  নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ