ভোটের দিন স্বেচ্ছায় লকডাউন কর্মসূচি পালন করুন : গোলটেবিল বৈঠকে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম

৭ জানুয়ারি দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার নির্বাচন। অর্থনীতি ধ্বংস করার নির্বাচন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণকারী ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রহসনের নির্বাচনে কেউ যাবেন না। আগামীকাল ভাগবাটোয়ারার নির্বাচনের দিন স্বেচ্ছায় লক ডাউন কর্মসূচি পালন করুন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত একতরফা প্রহসনের নির্বাচন : জনগণের করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের(এনডিএম) চেয়ারম্যান ববী হাজ্জাজ,বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, গণ-ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা তাফাজ্জল হোসেন, মুফতি শরাফত হোসেন।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে জাতির সাথে প্রহসন করা হচ্ছে। এই প্রহসনের জবাব দিতে হবে। দেশে আগেছিল একদলীয় বাকশাল। এখন আওয়ামী লীগের অধীনে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হচ্ছে। এই নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট দেশ জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তিনি ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আগামীকাল দেশের জনগণ প্রহসনের নির্বাচনের ভোট দিতে যাবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এতো বড় অন্যায় হয়েছে। জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, মার্চে দুভিক্ষ আসতে পারে। তথাকথিত নির্বাচনে শক্তি বাড়বে না;বরং শত্রæ বাড়বে। এক মাঘে শীত যায় না। নির্বাচনী ফলাফল যাই ঘোষণা করা হোক সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, দেশে জনগণের সরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান। বঙ্গবন্ধু একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি বাকশালের আদলে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে বাকশালী কায়দায় দেশ চলছে। বিএনপির প্রায় ২২ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে এককাতারে দাঁড়করিয়েছে। পুরো দেশটাকে দখলদারিত্বে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের ভাতের ও মানুষের ইজ্জতের অধিকার হরণ করেছে এই সরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দূর্বলতা ও কৌশলের অভাবে জেগে উঠা মানুষকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। ২০১৪-২০১৮ বিতর্কিত নির্বাচন পার করলেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচন রাজনৈতিক বৈধতা পাবে না। ভোটারদের জবরদস্তি করে ভোট কেন্দ্রে নেয়ার প্রচেষ্টা সফল হবে না। একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার নির্বাচনকে জনগণ গণঅনাস্থা দিবে। তিনি বলেন, ৩০ হাজার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে জেলে রেখে দমন নিপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইছে সরকার। তারা দেশটাকে গৃহযুদ্ধের পথে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এই সরকারকে বিদায় দিতে রাজনৈতিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে কঠিন লড়াই করতে হবে। জয় হবেই। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী ইসলামী বইয়ে দূর্গার ছবি ছাপানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রী ডা:দিপু মনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাÐের ঘটনায় ৬০ জন মেধাবি সেনা নিহতের দায়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, ভারত সরকারে পরিকল্পনায় দেশে ডামি নির্বাচন হচ্ছে। খুব সহসায় এই সরকারের পতন হবে। দেশে ডলার সঙ্কটের দরুণ আমদানী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মোদি সরকার বাংলাদেশকে সিকিম ভুটান বানাতে সফলতার দিকে যাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৭ জানুয়ারি সরকারের পতন দিবস পালন করতে হবে। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সরকার বিরোধী যুগপথ আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে হবে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাবন্দি রেখেছে। গত ৬ মাস যুগপথ আন্দোলন করেও ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকে ঠেকাতে পারিনি। তাদের মাষ্টার প্লান হচ্ছে তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে হবে। এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ভাইরাস। তিনি ওই দিনটিতে স্বেচ্ছায় লকডাউন কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা দিবস। ওই দিবসটি ভুলাতে চায় ওরা। তিনি বলেন, ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। মাওলানা মামুনুল হক, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীসহ কারাবন্দিরা মুক্তি পায় না। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতরা আজ এক কাতারে। প্রহসনের নির্বাচনে গেলে ৫০ কোটি টাকা পেতাম। আবার টাকা না পেয়ে অনেকেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের দালালদের চিহ্নিত করতে হবে। নুরুল হক নুর বলেন, মাওলানা মামুনুল হককে চরিত্র হননের নাটক সাজিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মদিনার সনদে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলে সরকার পশ্চিমাদের খুশি করতে সমকামিতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। নুর বলেন, ফেরাউনী শাসন চালিয়ে নূহ নবীর নৌকার সাথে তুলনা করে ভোট চাইছে। তিনি আগামীকালের নির্বাচনের ভোট বর্জনের আহবান জানান। সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, দেশ, জাতি ও মানুষের ভোটের ভাতের অধিকার রক্ষায় আগামীকালের প্রহসনের নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা
হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ
ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার
বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোক্তার অভিযোগের জন্য ওয়েব পোর্টাল চালু
আরও

আরও পড়ুন

নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ে ছাই হলো ১৮ দোকান

নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ে ছাই হলো ১৮ দোকান

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা

সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ির ২৩ লাখ  টাকা ছিনতাইয়ের  মূল মাস্টারমাইন্ড আলিমুদ্দিনসহ দু'জন গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ির ২৩ লাখ  টাকা ছিনতাইয়ের  মূল মাস্টারমাইন্ড আলিমুদ্দিনসহ দু'জন গ্রেপ্তার

কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতাকে বিএনপি নেতার হুশিয়ারি

কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতাকে বিএনপি নেতার হুশিয়ারি

এনামুলকে সরিয়ে রাজশাহীর নেতৃত্বে তাসকিন

এনামুলকে সরিয়ে রাজশাহীর নেতৃত্বে তাসকিন

কাপ্তাইয়ে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর

কাপ্তাইয়ে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর

শিক্ষার্থীদের জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে হবে  :  আভা রাণী দেব

শিক্ষার্থীদের জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে হবে : আভা রাণী দেব

হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ

হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ

মাগুরায় এক শ্রমিকের মৃত দেহ উদ্ধার

মাগুরায় এক শ্রমিকের মৃত দেহ উদ্ধার

জিয়া পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হলেন সালথার হেমায়েত হোসেন

জিয়া পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হলেন সালথার হেমায়েত হোসেন

ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার

ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার

শ্রীপুরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ, আহত ২০

শ্রীপুরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ, আহত ২০

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর মাথা থেকে নামতে পারেনি আওয়ামী ভূত

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর মাথা থেকে নামতে পারেনি আওয়ামী ভূত

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ পেল 'রিকশা গার্ল' সিনেমার মিউজিক ভিডিও 'কোন লাটাইয়ে উড়বা ঘুড়ি'

প্রকাশ পেল 'রিকশা গার্ল' সিনেমার মিউজিক ভিডিও 'কোন লাটাইয়ে উড়বা ঘুড়ি'

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: জিএম কাদের

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: জিএম কাদের

সিলেটকে তলানীতে পাঠিয়ে ঢাকার দ্বিতীয় জয়

সিলেটকে তলানীতে পাঠিয়ে ঢাকার দ্বিতীয় জয়

আবু সাঈদ হত্যা: রংপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

আবু সাঈদ হত্যা: রংপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

ট্রাম্পের ২.০: তার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন যারা

ট্রাম্পের ২.০: তার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন যারা