ঢাকা   মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১

নির্বাচনে প্রতিযোগিতার কোনো চিহ্ন ছিল না, সহিংসতার ঝুঁকি :  দ্য ডিপ্লোম্যাট

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম

 ‘বাংলাদেশে ত্রæটিপূর্ণ নির্বাচন মেরুকরণ, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন দ্য ডিপ্লোম্যাটের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের এশিয়া প্রোগ্রাম ডিরেক্টর পিয়েরে প্রকাশ রচিত প্রতিবেদনটি বাংলা অনুবাদ করে ইনকিলাব পাঠকদের জন্য সংক্ষিপ্তকারে তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন থেকে বহুদিক থেকে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফাঁকফোকর ছিল। হাজারো প্রার্থী, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনেক সংগঠন, বিশাল র‌্যালি, বিপুল পরিমাণ প্রেস এমনকি নজরকাড়া নির্বাচনী গান ছিল। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ভোটে প্রতিযোগিতার কোনো চিহ্ন ছিল না। বেশির ভাগ ভোটারের অংশগ্রহণ ছিল না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি তোলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। কিন্তু তা আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যাখ্যান করার পর নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি ও অন্য দলগুলো। অক্টোবরে মহাসমাবেশের পর বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন বর্জনের অর্থ হলো ৭ই জানুয়ারি ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার বহু আগেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া যে- বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদ নিশ্চিত করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এরপর নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা করলো যে, ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ অথবা দলটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে ২৮৩টি আসনে জয়ী হয়েছে, তখন বিস্মিত হওয়ার কিছু ছিল না। ভোটকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়ার জন্য অন্য আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রত্যাহার করেছে, যাতে তাদের মিত্ররা বা সাজানো বিরোধীরা জিততে পারেন।

কিন্তু এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন আরও ৫ বছরের মেয়াদ নিশ্চিত করলো, তখন তা একটি ‘পিরিক বিজয়’ হিসেবে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে (এমন একটি বিজয়কে পিরিক বিজয় বলে আখ্যায়িত করা হয়, যে বিজয়ে বিজয়ীকে ভীষণ মূল্য দিতে হয়- যা তার পরাজয়ের সমতুল্য)। এই দলটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গভীর ফাটল, যা ভোটের ফলে প্রকৃতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে নিবন্ধিত ভোটারদের শতকরা কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোট দিয়েছেন। কিন্তু সারাদিন ভোটকেন্দ্রগুলো দেখা গেছে শ‚ন্য। এ জন্য এত বেশি সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন যে, এই সংখ্যাটা নিয়ে উচ্চ মাত্রায় সংশয় আছে। তবু ঘটনা যা-ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত উচ্চ ভোট দেখানো হলেও তা সা¤প্রতিক দশকগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে শতকরা ৭৫ থেকে ৮৫ ভাগ ভোটের চেয়ে অনেক কম।

কোনো বাস্তব বিরোধী না থাকায়, ভোট দেয়ার আগ্রহ বেশিরভাগ ভোটারের মধ্যেই ছিল না বললেই চলে। কিন্তু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বা সমালোচকদের মতে ‘সিলেকশন’ ছিল ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য একটি গণভোটের মতো। এই নির্বাচনে কম মাত্রায় ভোটার ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের সা¤প্রতিক পারফর্মেন্সে ভোটারদের অসন্তোষ কোন পর্যায়ে তা প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের ভিতরে সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে দমনপীড়ন, ব্যাপক বিস্তৃত দুর্নীতি ও দুষ্টচক্র বৃদ্ধি পাওয়ার ধারণা এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষমতাসীন দলটির সমর্থন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভ‚রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই কারণগুলো বিরোধিতাকে নতুন একটি গতি দিয়েছে, যা কয়েক বছর আগেও শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল।

দেড় বছর ধরে বিএনপি বেশির ভাগই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল শেখ হাসিনাকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য, যাতে ওই সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। কিন্তু তাদের দাবি কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে যখন ব্যর্থ হয়, তখন তারা লক্ষাধিক সমর্থককে ঢাকায় মহাসমাবেশে ডাকে। ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ ভÐুল করে দেয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সরকার। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্যতা করতে কিছু পদক্ষেপ নেয় আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে। কিন্তু তার বৈধতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে বিতর্ক হচ্ছে। পরপর টানা তিনটি ত্রæটিপূর্ণ নির্বাচনের পর ভোটারদের মধ্যে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি হতাশা দেখা দিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলিত করতে বিরোধী দলের অহিংস আন্দোলনের কৌশল এবং দলের ভাবমূর্তি দেশে এবং বিদেশে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর ফল দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা খুব ঘন ঘন দেখা গিয়েছে, তা এর মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে। অন্যদিকে অহিংস এই আন্দোলন করলেও বিরোধীরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এখন রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। দলটির বেশির ভাগ উদারপন্থি নেতা জেলে। ফলে দলটির কোনো অংশ থেকে বিরোধীদেরকে অতীতের ভয়াবহ সহিংসতায় ফেরাতে চাইতে পারেন। যদি এটা ঘটে তাহলে তা হবে মারাত্মক এক ভুল।

এরই মধ্যে সা¤প্রতিক দিনগুলোতে শেখ হাসিনা বিএনপির ওপর আরও দমনপীড়ন চালানোর পূর্বাভাস দিয়েছেন। তিনি সমর্থকদের বলেছেন, এই দলটির রাজনীতি করার অধিকার নেই। তবে এ কথা দিয়ে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা পরিষ্কার না হলেও বিএনপিকে নিষিদ্ধ করাটা হবে একটি ভুল। ২০১৩ সালে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। কিন্তু উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখনও তারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিএনপিকে আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠানো হলে তাতে দেশ আরও মেরুকরণ হবে।

অর্থনীতির ওপর বড় রকম ক্ষতিকর প্রভাব থাকতে পারে। বিশেষ করে যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে। অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা এবং রাজপথে বড় রকম সহিংসতা হলে তাতে পলিসিমেকাররা স্থিতিশীলতার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত লাগতে পারে। বিশেষ করে ইমেজ নিয়ে সচেতন পশ্চিমা ব্রান্ডগুলো, যারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে এই তৈরি পোশাক খাত থেকে। আরো নিষ্পেষণ ও সহিংসতার একটি বিকল্প আছে। নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে ফেরার পথ করে দিতে বড় দুটি দলের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি সংলাপ। তা হতে হবে উভয়পক্ষ থেকে ছাড় দেয়ার মাধ্যমে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে এই ছাড় আসতে হবে আওয়ামী লীগের দিক থেকে। কারণ, তারা এখন পরিষ্কার শক্তিশালী অবস্থানে। দেশের ভিতরে যে বিরোধীদেরকে মোকাবিলা করছে, তার সঙ্গে অর্থনীতি এবং ভ‚-রাজনৈতিক বিষয় মাথায় রেখে সমঝোতায় আসতে হবে ক্ষমতাসীন দলকে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণ করলেন প্রেসিডেন্ট
৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা: আইন উপদেষ্টা
ধরা পড়েননি পালানো ওসি, ‘সম্ভবত’ ইন্ডিয়া চলে গেছেন: ডিএমপি কমিশনার
চার অতিরিক্ত ডিআইজিসহ পুলিশের ২০ কর্মকর্তাকে বদলি
সরকারিভাবে সবজিসহ কৃষিপণ্য বিক্রি বন্ধ : অর্থ উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

মেসির আচরণে ক্ষুব্ধ মেক্সিকোর সাবেক তারকা ফুটবলার

মেসির আচরণে ক্ষুব্ধ মেক্সিকোর সাবেক তারকা ফুটবলার

র‍্যাশফোর্ডের নতুন ঠিকানা বার্সালোনা?

র‍্যাশফোর্ডের নতুন ঠিকানা বার্সালোনা?

জুলাই বিপ্লবের ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে  :   হাসান সরকার

জুলাই বিপ্লবের ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে  :   হাসান সরকার

তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণ করলেন প্রেসিডেন্ট

তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণ করলেন প্রেসিডেন্ট

নরসিংদীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ চলছে

নরসিংদীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ চলছে

কুষ্টিয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাচল করছে বালুভর্তি ড্রামট্রাক

কুষ্টিয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাচল করছে বালুভর্তি ড্রামট্রাক

আমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ কোটি টাকা মূল্যের ১৬টি দোকান পুড়ে ছাই

আমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ কোটি টাকা মূল্যের ১৬টি দোকান পুড়ে ছাই

ঘোড়াঘাটে সিসি ক্যামেরার সামনে থেকে দিনের বেলায় মোটরসাইকেল চুরি

ঘোড়াঘাটে সিসি ক্যামেরার সামনে থেকে দিনের বেলায় মোটরসাইকেল চুরি

ট্রাম্পের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন কঠিন হতে পারে

ট্রাম্পের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন কঠিন হতে পারে

লেবাননের নতুন নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর প্রভাব কি হ্রাস পাচ্ছে?

লেবাননের নতুন নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর প্রভাব কি হ্রাস পাচ্ছে?

টিকটককে ৭৫ দিন সময় দিলেন ট্রাম্প

টিকটককে ৭৫ দিন সময় দিলেন ট্রাম্প

আদানি পুত্রের বিয়েতে আসছেন টেইলর সুইফট!

আদানি পুত্রের বিয়েতে আসছেন টেইলর সুইফট!

বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্টে এনবিআরের অভিযান, মিলেছে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির প্রমাণ

বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্টে এনবিআরের অভিযান, মিলেছে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির প্রমাণ

৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা: আইন উপদেষ্টা

৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা: আইন উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে তারুণ্যের উৎসবে বিনামুল্যে চক্ষু শিবির

পঞ্চগড়ে তারুণ্যের উৎসবে বিনামুল্যে চক্ষু শিবির

আগামীকাল নেত্রকোণা জেলা যুবদলের সভাপতি মরহুম আল আমিন খান পাঠানের মৃত্যুবার্ষিকী

আগামীকাল নেত্রকোণা জেলা যুবদলের সভাপতি মরহুম আল আমিন খান পাঠানের মৃত্যুবার্ষিকী

তুরস্কের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০, আহত আরও ৩২

তুরস্কের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০, আহত আরও ৩২

কাল উত্তরায় আসছেন ধর্ম উপদেষ্টা ২ দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির শুরু কাল

কাল উত্তরায় আসছেন ধর্ম উপদেষ্টা ২ দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির শুরু কাল

কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফের বেড়া, বিজিবির বাধায় কাজ বন্ধ

জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফের বেড়া, বিজিবির বাধায় কাজ বন্ধ