জন্মের দুই দিন পর বাবা-মা ফেলে গিয়েছিল আরাবিকে। হাসপাতালে বেড়ে উঠে সে। চিকিৎসক, নার্সরাই হয়ে উঠেন তার স্বজন। আট বছর বয়সে সে মায়ার বাঁধন ছিড়ে না ফেরার দেশে চলে যায় আরাবি। সানজিদা জাহান আরাবি এ নামটিও দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এ হাসপাতালেই তার জন্ম আট বছর আগে। মেনিনগোমায়োলোসি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুটির প্রথম পরিচয় এক নিষ্ঠুর পৃথিবীর সঙ্গে। জন্মের পর বিকলাঙ্গ নবজাতককে হাসপাতালেই ফেলে পালিয়ে যান বাবা-মা।

তবে আরাবিকে সুস্থ রাখার লড়াই শুরু করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা। তাকে ঘিরে ভালোবাসার অন্য গল্পের শুরু। আরাবি বড় হয়ে উঠছিল হাসপাতালে, চিকিৎসক, নার্সদের মমতা আর ভালোবাসায়। হাসপাতালটির শিশু সার্জারি বিভাগ হয়ে উঠেছিল তার ঘরবাড়ি। সেখানেই চলে তার চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, খাওয়াদাওয়া, যতœআত্তি। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরাই তার নাম রাখেন সানজিদা জাহান আরাবি। ওয়ার্ডেই ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট ঘটা করে পালন করা হয় তার প্রথম জন্মবার্ষিকী। সেই আরাবি মঙ্গলবার চলে গেল না ফেরার দেশে।
চমেক হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। জন্মগত ত্রæটি নিয়ে জন্ম নেওয়া আরাবি কিডনি, মেরুদÐসহ নানা সমস্যায় ভুগছিল। ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই চমেক হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের পাশে আরাবিকে ফেলে যায় তার অভিভাবকেরা। দুই দিন বয়সী আরাবির ঠাঁই হয়েছিল শিশু সার্জারি বিভাগে। মেনিনগোমায়োলোসিসে আক্রান্ত শিশুটির অস্ত্রোপচার হয় ওই বছরের ১০ আগস্ট বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর তাহমিনা বানুর নেতৃত্বে।

পরে হাসপাতাল থেকে আরাবির জায়গা হয়েছিল শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক খোরশেদ আলম সরোয়ারের বাসায়। তিনি বর্তমানে বিভাগটির প্রধান। আরাবি তাকে বাবা হিসেবে সম্বোধন করত। আরাবির ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেন খোরশেদ আলম সরোয়ার। তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্ক না হলেও শিশুটির সাথে ছিল মায়ার বন্ধন। আরাবিকে আমাদের পরিবার যেভাবে আপন করে নিয়েছিল, তা ভাবা যায় না। এখন আমার মেয়ে ও ছেলে তার জন্য কাতর। তাকে কখনো পর মনে হয়নি। আমি আমার এক মেয়েকে হারিয়েছি।