ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

৭ জানুয়ারি জনগণ সরকারের মুখে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে :  আলোচনা সভায় ড. মঈন খান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম

৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, জনগণের ভোট বর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী এ সরকারের নির্বাচনকে নাটক ও প্রহসন বলেছে। মঈন খান বলেন, আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। এ দেশের মানুষকে আমরা বলেছি ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া জন্য রাজনীতি করি। বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতি করে না। বিএনপি ভদ্র মানুষের দল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নিরস্ত্র মানুষদের নিয়ে এ দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ৩৯০ সিটের সংসদে ৬০০ সিটের সংসদ সদস্য করে, তাড়াহুড়া করে নতুন একটি সংসদ সৃষ্টি করে তারা চিন্তা করছে আবার তারা ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু দেশের ১২ কোটি ভোটার এবং ১৮ কোটি মানুষ ৭ জানুয়ারি এই সরকারকে বর্জন করে তাদের মুখে কলঙ্ক লেপন করেছে। এটা আমাদের কথা নয়। আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের যে বক্তব্যে এটাই। শুধু তাই নয়, বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজের সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো একত্রিত হয়ে ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনকে একটা ভুয়া, নাটক ও প্রহসনের নির্বাচন বলে ঘোষণা দিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার গুলি করবে। কিন্তু আমাদের বুকে বল আছে। এই সংগ্রামের শেষ পর্যন্ত আমরা দেখে নিবো, ইনশাআল্লাহ। আর এখন কথা বলা সময় নেই। এখন কাজের সময়। জনগণের শক্তি দিয়ে বর্তমান বাকশাল-২ সরকারের বন্দুক, বুলেট, গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস এবং জলকামানের শক্তিসহ সব শক্তিকে আমরা পরাভ‚ত করবো। এই হচ্ছে আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা।

জিয়াউর রহমানের প্রতি স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান যে অর্জন করেছিলেন, সেই অর্জনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আজকে আমাদের উপর একটি দায়িত্ব বর্তেছে, সেই দায়িত্ব হচ্ছে- আমরা জীবন বাজি রেখে দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। তাই জিয়াউর রহমানের যে গুণাবলী, সেসব গুণাবলী আপনারা আপনার জীবনে প্রতিভাসিত করুন। সেটা আমরা করতে পারলে দেশের মানুষের যে চাওয়া তা ফিরিয়ে দিতে পারবো।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ড. মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমান আমাদের যে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন, সেই গণতন্ত্র আজকে বাংলাদেশে মৃত। আজকে আমরা এই শপথ গ্রহণ করবো, আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, সেই গণতন্ত্রকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করবো, ইনশাআল্লাহ। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজকে আমরা এখানে এসেছি। কিন্তু এই সংগ্রাম অনেক কঠিন ও দুরূহ। তবে সত্য ও মানুষের জয় হবেই। অন্যায় ও স্বৈরাচার পরাজিত হবে। এটা ইতিহাসের সত্য।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতে যখন বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের ওপর পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন জিয়াউর রহমান এই হানাদার বাহিনীর হামলার প্রতিরোধ করেছিলেন। সেদিনতো বর্তমান সরকারের কোন ব্যক্তি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেনি। তারাতো পালিয়ে গিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়ার আদর্শ ও স্মৃতি কখনো নষ্ট হয়ে যাবে না। কারণ এ দেশের মানুষের মাঝে তিনি আছেন। গণতন্ত্র হত্যার করে বর্তমান সরকার বাকশাল কায়েম করেছিল, সেটাকে কবর দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় বাগান করেছিলেন। আবার যখন স্বৈরাচার এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে ঠিক তখনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া তার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন সরকারের যারা আছেন তারা জিয়াউর রহমানের কথা শুনতেই পারে না। কারণ যেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের পরও তার সময় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল। চিনি, শিল্প সব খাতে রপ্তানি করেছিলেন। জিয়ার আমলেই শ্রমিক পাঠিয়ে লাখ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসা শুরু হয়। কোটি কোটি টাকা যারা পাচার করেছে তারা আজ জামিন পায়, বিদেশে চিকিৎসা পায় অথচ যিনি এ দেশের জন্য এতো কিছু করলেন সেই বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় রায় দিয়ে মুক্তি দিচ্ছে না। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। এই দেশের জন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? একজনের মা মারা গেলে তাকে ডান্ডাবেরি পরিয়ে আনা হয়। আমরা একটি বাকশাল বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছি, আমরা যদি আন্দোলনের মাঠে না থাকতাম তবে আন্দোলন চলত না। এই আন্দোলনের ময়দান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি ও আমার ভাই তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ের ময়দান। এই ময়দানে জয় অসম্ভাবি। জয় আমাদের আসবেই ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, শত অত্যাচারের মধ্যে যারা এখনো আছেন তারাই জিয়ার আর্দশের সৈনিক। তাদেরকে কেউ থামাতে পারেনি। জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীনতা পেতো না। নারী, শিশু অধিকার নিয়ে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে তিনি অন্যতরে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। একটা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংপূর্ণ করেছিলেন। এই সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়, বিএনপিকে ভয় পায়। কোনভাবেই আমাদেরকে ভাঙতে পারেনি। পারবে না। এই সরকার ভুয়া। এ পার্লামেন্টে সাড়ে ৬ শ এর বেশি সংসদ সদস্য। তাহলে ভাবেন, কোথায় আমাদের স্বাধীনতা, কোথায় আমাদের মুক্তি? একটি বন্ধু নামে দেশ এই সরকারকে সহযোগিতা করে তারা সকলের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা এই দেশে তাদের সরকার বসিয়ে তাদের মধ্যে নিতে চায়। সেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে সভায় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২

ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে