টানা চতুর্থবার জয়ের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন ড. হাছান মাহমুদ। আগামী ৭ ফেব্রæয়ারি ভারত সফরে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি ৭ ফেব্রæয়ারি ভারত সফরে যাচ্ছি।’ এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে করা টিআইবি প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে সম্ভাব্য তিন দিনের সফরে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারত সফর কত দিনের জন্য যাচ্ছেন সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত তিন দিনের সফরে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে কী না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সফরে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের আলোচ্যসূচি, সফরসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখনো এগুলো নিয়ে কাজ চলছে।

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর হাছান মাহমুদকে ১৪ জানুয়ারি অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পর দিন হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি দ্বিপক্ষীয় সফর স্পষ্টত চাইছেন ভারত দিয়ে করতে।

এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে করা টিআইবি প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলে, বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী আহমেদ প্রতিদিন প্রেস কনফারেন্স করে যে কথাগুলো বলেন, সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে গতকাল টিআইবি উপস্থাপন করেছে বলেই মনে হচ্ছে।

এ সময় হাছান মাহমুদ বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিআইবি গবেষণা না করেই শ্যালো কিছু বিষয় বা পত্রিকার রিপোর্ট এবং তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সেটার ভিত্তিতেই প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটা আমার সে রকম মনে হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা বলছেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সুন্দর আর স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। সেটিকে ¤øান করার উদ্দেশ্যে টিআইবি এই রিপোর্ট দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পৃথিবীর শক্তিধর দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ। নতুন সরকারকে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আবার অনেকে এই সরকারের সঙ্গে কাজ করার ও সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।

টিআইবির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রিপোর্ট আসলে কারও পক্ষ হয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন রেখেছেন অনেকেই। কারণ, বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী আহমেদ প্রতিদিন প্রেস কনফারেন্স করে যে কথাগুলো বলেন, সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে গতকাল টিআইবি উপস্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সমালোচকসহ যারা এই নির্বাচন বর্জন করেছে, প্রতিহত করেছে, প্রতিহত করতে চেয়েছে, প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখনো চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের মুখে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনেকেই বলছেন। টিআইবির সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে কঠোরভাবে, সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, সেটির বিন্দুমাত্র প্রশংসা টিআইবির রিপোর্টে নাই।

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, নাগরিক সমাজের যে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের ভুলত্রæটি উপস্থাপন করে, সরকারের সমালোচনা করে আমরা সেগুলোকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করি। কিন্তু যখন রিপোর্ট কারো পক্ষে হয়ে, যখন রিপোর্ট হয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত, তখন সেটি রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার কারোরই উপকারে আসে না। সেটি তখন বিশেষ কেনো গোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, টিআইবি যেন বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর, নির্বাচন বিরোধী অপশক্তির বা গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির মুখপাত্র না হয়, সেটি আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের কামনা। টিআইবিকে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ করা হবে কী না এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করব, টিআইবি নিজেরা নিজেদের সংগঠনের যে মর্যাদা রাখবে। তাদের সম্পর্কে যে ধারণা মানুষ আগে পোষণ করত সেখান থেকে সরে এসে তারা নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে যেন কাজ না করে সেটি আমাদের কামনা।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গত বুধবার একটি ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তবে আবহাওয়াজনিত ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে বলেও এ সময় জানান মন্ত্রী।