]বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন ‘উদ্ভট ডামী’ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। সর্বত্রই বিরাজ করছে এক ভয়াবহ বিভিষিকা। আওয়ামী লুটেরা, হন্তারক, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতনকারী, খুনি, দখলবাজ-টেন্ডারবাজদের এক উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের দৃশ্যপট দেশজুড়েই। আর ‘ডামি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শঃ জনগণকে নিয়ে বিদ্রুপ, মিথ্যাচার, তামাশা করছেন। শেখ হাসিনা বিমসটেক-এর মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডেকে বলেছেন, তিনদিন “আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ এখন গণতন্ত্র উপভোগ করছে।” আর বুধবার গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। বিএনপি-জামায়াত তাদের অপকর্মের সাজা যেন যথাযথভাবে দ্রæত পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ শেখ হাসিনা দেশ থেকে যে গণতন্ত্রের পদ্ধতি পরমতসহিষ্ণুতাকে মুছে ফেলে একদলীয় একনায়কতন্ত্র স্থাপন করেছেন তা তার এই সাংঘর্ষিক বক্তব্যেই প্রমান করে। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ও সত্যের বদলে কায়েম করেছে অন্যায়ের রাজত্ব। দেশে মতপ্রকাশ,চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নেই। জেনেটিক্যালি ফ্যাসিস্ট বাকশালী দল- আওয়ামীলীগের রক্তের মধ্যেই রয়েছে বাকশালী কর্তৃত্ববাদীর বীজ। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গনতন্ত্রের শেষ চিহ্নটিকে মুছে দেয়।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ গণতন্ত্র নয়, স্বৈরাচারের নিষ্ঠুর সাজা ভোগ করছে। ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছে। ক্ষুধার জ্বালায় চোখের পানিতে ভাসছে। নিপীড়ণ উপভোগ করতে করতে মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষের ভাষাও হারিয়ে গেছে। অসহিষ্ণুতা, সীমাহীন লোভ আর উদ্ধত রাষ্ট্রশক্তিকে আশ্রয় করে সর্বত্রই ফ্যাসিবাদের বিকৃত হিংস্রুরপ প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সীমানায় শুধুই অশান্তির আগুন। 
শেখ হাসিনার জনগণ মানে তার লুটেরা আওয়ামী লীগার মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আওয়ামী নেতাকর্মী, উচ্ছিস্টভোগী, ভোট ডাকাত, দালাল লীগের কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ গণতন্ত্রের লেবাস গায়ে জড়িয়ে সুবিধা ভোগ-উপভোগ সবকিছু করছে। শেখ হাসিনা তাদের কথাই বলেছেন। শেখ হাসিনা লজ্জাবোধ না করলেও এদেশের জনগণ লজ্জিত। এই ভেবে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন নিত্যদিনই নির্জলা মিথ্যাচার করে চলেছেন। তাতে তার কোন ব্যকিক্রম হয় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যে, নির্বাচন হয়েছে ঠিকই কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দেখাতে হবে কোথায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।’ 
রিজভী বলেন, ভোটের নামে জাল ভোটের প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও ভোটের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ % ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘন্টা পরেই ৪০% এবং পরের দিন আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর ভূয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ন করেছে ‘ডামি’ সরকার। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহনহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান পত্র পত্রিকা, অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভোট বর্জনের এই তথাকথিত নির্বাচনের নামে কি কেলেংকারি ঘটিয়েছেন তার প্রামাণ্য চিত্রসহ তুলে ধরেছে। সেখানেও শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন থেকে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তা তুলে ধরে জনগণকে সামনে কি ভয়ংকর বিপদের মুখে ফেলতে চলেছেন তার আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের প্রায়সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন, অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শুব্রিজসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা শেখ হাসিনার নির্বাচনকে কারচুপিপূর্ণ একতরফা নির্বাচন বাতিল করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহবান জানিয়েছে। বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি “ওয়ান উয়োম্যান শো’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয়ের ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে। এটা আজ সর্বজনবিদিত যে, মূলত জনগণ বর্জিত এই নির্বাচনে ৫ পারসেন্টেরও কম ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে। ৯৫ পারসেন্টেরও বেশি জনগণ ডামি নির্বাচন প্রত্যাখান করেছেন।    
নতুন করে ফের ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার পায়তারা করছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, জনগণের পকেট কাটার আরেকটি কৌশল নিয়েছে দখলদার সরকার। ঢাকা ওয়াসা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও অন্যায়ভাবে পানির মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন চলছে। ডামি সরকার জনগণের বাঁচা-মরাকে পাত্তা দেয়না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের রক্ত চুষে নিতেই এরা তৎপর। সারাদেশের তীব্র গ্যাসের সংকট থাকলেও এরই মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও তৎপরতা শুরু হয়েছে। দখলদার সরকারের নীতিই হচ্ছে গরীব মানুষের পকেট কাটা। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের ৪টি জেলায় গ্যাস সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের সংকটে সার কারখানা থেকে শুরু করে শিল্প কারাখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দেশে এক ভয়াবহ আর্থিক নৈরাজ্য বিরাজ করছে।