ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
ডব্লিউটিও'র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

কয়েক পক্ষীয় চুক্তিতে থাকছে না বাংলাদেশ

Daily Inqilab আবুধাবি থেকে হাসান সোহেল

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম

টেকসই উন্নয়ন- বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্যভুক্ত ১২৩টি দেশ ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি) চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে এক মত হলেও বাংলাদেশ এতে যোগ দিচ্ছে না। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর একটা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো কয়েক পক্ষীয় চুক্তিতে আপাতত সমর্থন করবে না ঢাকা। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশ এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে গতকাল সোমবার শুরু হওয়া ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ডব্লিউটিও'র ১২৩ সদস্য দেশের মন্ত্রীরা টেকসই উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আইএফডি চুক্তিটিকে সংস্থাটির মারাকেশ চুক্তির অ্যানেক্স-৪-এ বহুপাক্ষিক চুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে জমা দিয়েছেন। আইএফডি একটি কয়েকপাক্ষিক চুক্তি হলেও এতে ডব্লিউটিও'র অন্যান্য সদস্যের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় এসব দেশের জলবায়ু ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে কাজ করা হবে। এ চুক্তিতে ১২৩টি দেশ সম্মত হলেও বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশ একমত হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ কোনো কয়েক পক্ষীয় চুক্তিতে সম্পৃক্ত হবে না। কেননা এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে, কোনো কয়েক পক্ষীয় চুক্তিতে আপাতত সমর্থন না করা। এলডিসির দেশ হিসেবে এ ধরনের চুক্তিকে সমর্থন দেবে না।

তাছাড়া এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই যে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এর বিষয় বস্তুত কোনো নিশ্চয়তা বা নির্দেশনা নেই বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার জেনেভাস্থ মিনিস্টার কমার্সিয়াল দেবব্রত চক্রবর্তী। তাই আপাতত বাংলাদেশ এর অংশ হচ্ছে না।
এদিকে এ চুক্তিতে সম্মত না হওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো জানিয়েছে, বিনিয়োগ সুবিধা একটি অ-বাণিজ্য বিষয়। তাই বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার এতে জড়িত হওয়া উচিত নয়। ভারত আরও যুক্তি দিয়েছে যে চুক্তিটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা ছাড়াই দেশীয় বিনিয়োগ-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বায়ত্তশাসনের সাথে আপস করতে পারে।
অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিলি এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক সমন্বয়কারী হলেও যা চীন নিয়ন্ত্রীত। আইএফডি ডব্লিউটিওতে একটি আনুষ্ঠানিক বহুপাক্ষিক চুক্তি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অবশ্যই এর সকল সদস্য তথা ১৬৪টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। এ ধরনের চুক্তির অধীনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি নতুন নিয়ম এবং শুল্কের পারস্পরিক উদারীকরণ সুরক্ষিত করতে পারে, যা কখনও কখনও ডব্লিউটিও-এর অধীনে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বাইরে যেতে পারে।
অনেক আন্তর্জাতিক সমালোচক ইতিমধ্যে চুক্তিটিকে অবৈধ এবং উন্নয়ন বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে। এক বিবৃতিতে আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইজ নট ফর সেল নেটওয়ার্কের ফ্যাসিলিটেটর ডেবোরা জেমস বলেছেন, এ ধরনের চুক্তি ডব্লিউটিও'র মোলিক লক্ষ্য বিরোধী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শক্তিশালী দেশগুলো নিজেদের সুবিধা বাস্তবায়নে এ ধরনের কয়েকপক্ষীয় উদ্যোগে যোগ দেওয়ার জন্য অনেক ছোট এবং দুর্বল দেশকে চাপ দেয়।
সূত্র মতে, আইএফডি চুক্তি সমর্থনকারী হিসেবে ৯০টি উন্নয়নশীল এবং ২৬ এলডিসিভুক্ত দেশ রয়েছে।
এদিকে সম্মেলনে ডব্লিউটিও'র মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আইএফডি চুক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আরও স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে অবদান রাখবে। তবে চুক্তিতে তার সহায়ক অবস্থানও অনেকের সমালোচনার মুখে পড়ে। তারা যুক্তি দিয়েছেন, যে সংস্থার প্রধান হওয়ায় মহাপরিচালককে নিরপেক্ষ হতে হবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি বলেন, আএফডি চুক্তির বিষয়ে ১২০টির বেশি সদস্যের ছয় বছরেরও বেশি সময় কাজ করে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে।
ডব্লিউটিও'র শুরু থেকে শুধুমাত্র কয়েকটি কয়েকপাক্ষিক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের প্রথম চারটি চুক্তি হচ্ছে- বেসামরিক বিমানের ব্যবসা, সরকারী ক্রয়, দুগ্ধজাত পণ্য এবং গরুর মাংস। ১৯৯৭ সালে গরুর গোশত এবং দুগ্ধ সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল।
সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি প্রথম ১৯৭৯ সালে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির অধীনে সমাপ্ত হয়। এর পরে সংশোধিত এবং প্রসারিত করা হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে কার্যকর হয়। তবে কবে নাগাদ এটি শেষ হবে এর কোনো নিদির্ষ্ট তালিখ উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে চুক্তিটিতে ২২টি পক্ষ রয়েছে যার মধ্যে ৪৯টি ডব্লিউটিও সদস্য রয়েছে। একই সঙ্গে আরও ৩৫টি দেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে কমিটিতে অংশগ্রহণ করে।

বেসামরিক বিমান বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তিতে এখন ৩৩ সদস্য স্বাক্ষরকারী রয়েছে। বাংলাদেশ চুক্তির অন্যতম পর্যবেক্ষক।
চার দিনব্যাপী মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন মঙ্গলবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডব্লিউটিও'র ১৬৪টি সদস্য দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে দর কষাকষিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার