ঢাকা   মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিক জটিল আবর্তে বাংলাদেশ

Daily Inqilab উখিয়া ( কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা

১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পিএম

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান তুমুল যুদ্ধে একের পর এক মর্টার শেলের বিকট শব্দে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। ঈদের পুর্ব দিন থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপের সীমান্তে ভারী মর্টারশেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গছে সীমান্তের লোকজনদের।
অন্যদিকে, কয়েকদিন পুর্বে কক্সবাজারের টেকনাফের খারাংখালী ও ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সোমবার ও রবিবার সকালে তাঁরা মিয়ানমারের নাকফুরা এলাকা থেকে নাফনদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, ওপারের বেশ কিছু সীমান্তচৌকি এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ( বিজিপি)’র সদস্যরা সংঘর্ষে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তের ওপারের অভ্যন্তরীন গোলযোগ বা যুদ্ধের কারণে এপারে সীমান্তের টেকনাফের লম্বাবিল, উত্তরপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনচিপ্রাং, হ্নীলা, মোলভীপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া ও জালিয়াপাড়া এলাকায় সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া গেছে। মূলত সীমান্তের ঐপাড়ে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা, হাসসুরাসহ কয়েকটি গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। ফলে ওপারের গোলার বিকট শব্দে এপারের সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে।
সীমান্তবর্তী শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা রফিক (৪২) বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের রাত থেকে মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। ইতিপুর্বেকার তুলনায় বড় ধরনের গোলার শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র কাঁপছে। অনেক সময় বিকট শব্দে নারী-শিশুদের ঘুম ভেঙে যায়। অনেকেই ভয়ে জবুথবু হয়ে পড়ে। এই বুঝি মিয়ানমারের গোলা এসে বাড়িতে বা আঙ্গিনায় পড়বে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।‘
শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা আবদুল জলিল (৫৫) বলেন, ‘এর আগেও গোলার বিকট শব্দ আমরা পেয়েছি, কিন্তু শব্দগুলো এত বিকট ছিল না। ঐপাড়ের যুদ্ধে মনে হচ্ছে নাফনদসহ পুরো টেকনাফ কেঁপে উঠেছে।’
সোমবার (১৫ এপ্রিল) ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী নাফনদী সীমান্ত দিয়ে এই ৫ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে রবিবার সকালে অস্ত্রসহ ৯ বিজিপি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব সদস্যদের নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) এর হেফাজতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে টেকনাফের হীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়।

টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে গত দুইদিনে সোমবার ভোরে ও রবিবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী ও ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ ১৪ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে, গত ৩০ মার্চ বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭৭ জন বিজিপি সদস্য। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আরও ৩ জন সদস্য তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি স্কুলে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সর্বমোট ১৯৪ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সীমান্তবর্তী দেশ রাখাইনে তাদের অভ্যন্তরের অনেক দূরে গোলাগুলি চলছে। এ কারণে এপারে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী লোকজনের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে ঘটতে না পারে, সেজন্য টহল জোরদার রয়েছে সীমান্তে।
রাখাইনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান বিরোধ ও যুদ্ধে একপ্রকার টিকতে না পেরে গত মাসে সেদেশের ১৮০ জন মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তারাও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নে রয়েছেন। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত বেড়েই চলেছে। দুই পক্ষের টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা লড়াইয়ে রাখাইনের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকায় সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ফাঁড়ি ছেড়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় কয়েক দিনে মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে বিজিপি, সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তাসহ দেশটির ওই ৩৩০ জন নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
এবার দ্বিতীয় দফায় গত ৩০ মার্চ থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু হয়। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনকে এর আগে সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এবারও কি একইভাবে ফেরত পাঠানো হবে কি না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের নৌপথে বা আকাশ পথে তাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে একটি সুত্রে জানা যায়। অন্যদিকে, রাখাইনে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই অব্যাহত থাকায় সেখান থেকে লোকজনের আসাও থামছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে কবে তাঁদের ফেরত পাঠানো যাবে, সেটা নিয়েও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
মিয়ানমারের আভ্যন্তরীন বিরোধ, রক্তক্ষয়ী সংঘাত দেশটির কেন্দ্রস্থল ছাড়িয়ে গৃহযুদ্ধের স্পষ্ট ছাপ এখন সর্বত্র। তাদের অভ্যন্তরীন সশস্ত্র লড়াইয়ের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। বিশেষ করে, মিয়ানমারে প্রচণ্ড গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় চলে এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সংঘাতকবলিত বিশ্ব মানচিত্রে মিয়ানমার একটি স্পর্শকাতর দেশ। একদিকে মাদকের জন্য গোল্ডেন ট্রাইএংগেল নামে পরিচিত মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড-অন্যদিকে রাখাইন রাজ্য হয়ে উঠেছে বিশ্ব ভু-রাজনীতির মেরুকরণের বাণিজ্যিক ‘হাব’। তাই এতদঅঞ্চলের নিরাপত্তার ঝুঁকি ও স্থিতিশীলতার সংকটে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে মিয়ানমারকে গণ্য করা হয়। স্বার্থান্বেষী দেশগুলো মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দমনের লক্ষ্যে একদিকে যেমন দেশটির সামরিক জান্তাকে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাতে এতটুকু দ্বিধা করছে না। এ খেলায় মিয়ানমার অস্থিতিশীল হলে এবং সে অস্থিতিশীলতার জেরে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়লে এই উভয় দেশের বঙ্গোপসাগরভিত্তিক বিদ্যমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গ্যাসক্ষেত্র, আকিয়াব ও চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর, নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মিয়ানমারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সেখানে চীন-ভারতের বিপুল বিনিয়োগ, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নির্মিত ও নির্মাণাধীন ( চীন ভারতের) ট্রানজিট পথ ইত্যাদির ওপর বহিঃপক্ষগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হয়। এই সুবাদে এ ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জনটি ঘটে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নিজেদের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। যদিও মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই তা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়া।
মিয়ানমারের সংকট ও সংঘাত দেশটির পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ডের জন্যেও বিপদের কারণ হচ্ছে। নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশকে সব সময়ই মিয়ানমার বিষয়ে পুরোপুরি সতর্ক থাকতে হয়। নব্বই দশকের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে জোরপুর্বক বাস্ত্যুচ্যুত হয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েই শুধু ক্ষান্ত হয়নি, অধিকন্তু তারা অধুনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্থিতিশীলতার প্রশ্নে মারাত্মক হুমকি হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গভীর থেকে গভীরতম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সীমান্তের ঐপাড়ে তীব্র গোলযোগ, চলমান যুদ্ধংদেহী পরিবেশের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আবারো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ যে খুজবে না, তা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভিড় জমাচ্ছে মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের নতুন ঢল আশ্রয়দানকারী দেশ বাংলাদেশের জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করবে কি না- এ প্রশ্নও নানা মহলে ইতোমধ্যে উত্থাপিত হয়েছে। মিয়ানমারে গৃহদাহের ধারাবাহিকতা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা বাংলাদেশের জন্য সার্বিকভাবে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মিয়ানমারের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার সজাগ ও সতর্ক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া রয়েছে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পুরোটাই অরক্ষিত। প্রভাবশালী চোরাচালান সিন্ডিকেটের রীতিমতো অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে এই জনপদ। সচেতন মহলের ধারণা, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ সীমান্তকে ‘ইয়াবা জোন’ হিসেবে গড়ে তুলেছে। ইয়াবা উৎপাদনের অঞ্চল হিসেবে তারা বাংলাদেশ সীমান্তকে বেছে নিয়ে চোরাচালানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশী প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করে চলছে। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা, স্বর্ণ, গরুসহ বিভিন্ন চোরাইপণ্যের জন্য মারাত্মক হুমকী এই সীমান্ত এলাকা। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে স্থল ও নৌপথে যাচ্ছে ডিজেল, অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানী, গুরুত্বপুর্ণ ঔষধ সামগ্রী। এসব অপকর্মের সাথে জড়িত উভয় দেশের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটচক্র।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাখাইনসহ মিয়ানমারের নানা অংশে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের চলমান লড়াই বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং বঙ্গোপসাগরে প্রভাব ফেলবে। আর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির অব্যাহত লড়াইয়ে রোহিঙ্গা সংকট আরও প্রকট করবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা, আরাকান থেকে আরও মানুষ আসবে এবং সেটা আগের মতো রোহিঙ্গারা নাও হতে পারে। আরও জটিল হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গা বাঁচিয়ে চলার দিন শেষ। কাল বিলম্ব না করে সরকারকে এখনই করণীয় নির্ধারণ করে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,-
মিয়ানমারের সঙ্গে লাওস, থাইল্যান্ড, চীন, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সংগত কারণেই মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংঘাত-সহিংসতা সীমান্তসংলগ্ন অন্য দেশকেও প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বড় অংশজুড়ে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। আমাদের সীমান্তের অপর পাশেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চলমান সহিংস উত্তাপের কতটা আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে, তা অস্পষ্ট নয়। বিবদমান পক্ষগুলোর লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে আমাদের ভূখণ্ডে। সীমান্ত এলাকার জনজীবনে এর মারাত্মক অভিঘাত ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা এমনকি টেকনাফ-উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গারাও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা জানি, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনীর সামরিক রসদের সরবরাহ কমছে। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর মনোবলও বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে কমতে শুরু করেছে। তাদের একের পর এক বিজয়ও আমাদের সে বার্তাই দেয় ৷ মিয়ানমারের এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা খুব জরুরি যাতে বিদ্যমান সংকটের সমাধান করা যায়। যদি তা না করা যায়, তাহলে সংঘাত-সহিংস পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল। মিয়ানমারে ক্ষমতাসীনরা সামরিক সমাধানের পথে হাঁটলে যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হবে। এই দীর্ঘতার সূত্র থেকে সংকটে কোনো পক্ষ বিজয়ী হলেও বিদ্যমান অস্থিরতা দ্রুত মেটানো সম্ভব হবে না৷


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

এয়ারলাইন্স সেবায় শঙ্কা

এয়ারলাইন্স সেবায় শঙ্কা

অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

প্রয়োজনে শুক্রবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

প্রয়োজনে শুক্রবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে টেকনিক্যাল সেমিনার অনুষ্ঠিত

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে টেকনিক্যাল সেমিনার অনুষ্ঠিত

ইসরায়েলকে সমর্থন, মালয়েশিয়াতে বন্ধ কেএফসির বেশীরভাগ আউটলেট

ইসরায়েলকে সমর্থন, মালয়েশিয়াতে বন্ধ কেএফসির বেশীরভাগ আউটলেট

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

নীতিমালা লঙ্ঘনে হজ চিকিৎসক দলের নার্সদের ৬ মাসের স্থগিতাদেশ

নীতিমালা লঙ্ঘনে হজ চিকিৎসক দলের নার্সদের ৬ মাসের স্থগিতাদেশ

বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে এডিবি

বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে এডিবি

দেশের ক্রমবর্ধমান এলপিজি খাত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ

দেশের ক্রমবর্ধমান এলপিজি খাত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ

এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ

এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ

গ্রিন ফ্যাক্টরী অ্যাওয়ার্ড পেল ইভিটেক্স ড্রেস শাট লিমিটেড

গ্রিন ফ্যাক্টরী অ্যাওয়ার্ড পেল ইভিটেক্স ড্রেস শাট লিমিটেড

এনার্জিপ্যাকের সাথে চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

এনার্জিপ্যাকের সাথে চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

গণিতপ্রেমীদের জন্য আয়োজিত হতে যাচ্ছে ইউসিবি ম্যাথ অলিম্পিয়াড ২০২৪

গণিতপ্রেমীদের জন্য আয়োজিত হতে যাচ্ছে ইউসিবি ম্যাথ অলিম্পিয়াড ২০২৪

দেশে সংক্রামক রোগ, মহামারীর হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ওয়ান হেলথ’ প্রকল্প

দেশে সংক্রামক রোগ, মহামারীর হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ওয়ান হেলথ’ প্রকল্প

জাতীয় সংসদের ন্যায় উপজেলা নির্বাচনেও জনগণ বিরত থাকবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

জাতীয় সংসদের ন্যায় উপজেলা নির্বাচনেও জনগণ বিরত থাকবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

হজ্জ্বব্রত পালনে সরকার সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন- জেলা প্রশাসক

হজ্জ্বব্রত পালনে সরকার সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন- জেলা প্রশাসক