হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে এগিয়ে সাইদুর-তুষার
০৪ মে ২০২৪, ০৮:৫১ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে উপেক্ষা করে এখনও ভোটের মাঠে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আ. লীগ পন্থি বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও বিএনপি পন্থি সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক)।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে হাটবাজারের চায়ের দোকানে প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা জল্পনা- কল্পনা ও আলোচনা সমালোচনা। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের জোর প্রচার প্রচারণায় সভা সমাবেশ। তবে সাধারণ ভোটারসহ অনেকেই মন্তব্য করছেন মূল লড়াইটা শেষ পর্যন্ত সাইদুর- তুষারের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আবারও চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান।
জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে হেভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী পন্থি বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান, নতুন মুখ হিসেবে প্রথম বারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন এবং বিএনপি পন্থি একক প্রার্থী সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার।
তবে এ উপজেলায় দীর্ঘদিনের আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবার নতুন করে সামনে আসায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের বৃহৎ একটা অংশ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন দিয়ে নেতাকর্মীরা সরাসরি তার পক্ষে কাজ করছেন। ফলে দলীয়ভাবে কোণঠাসায় পড়েও ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান।
নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা যায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান। এর আগে তিনি ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তিনি দিনে দিনে সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয় উঠেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রাজনীতির মাঠে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দলীয় অর্ন্তকোন্দলে গ্রুুপিংয়েও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তবে দলীয় কোন্দলকে উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তার নিজস্ব অনুসারী কর্মীবাহিনীসহ বড় আকারের একটা ভোট ব্যাংক তৈরি করেছেন। ফলে এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের অনেকেই বলছেন, এখনও বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতার জায়গায় কেউ আসতে পারেননি। তার বিকল্প কেউ নেই। পুরো উপজেলা জুড়েই রয়েছে তার ভোট ব্যাংক। ফলে দলবল নির্বিশেষে এখনও ভোটের মাঠে সবার চেয়ে তিনিই এগিয়ে আছেন সাধারণ ভোটারদের অনেকেই মনে করছেন বলে জানা গেছে।
অন্য দিকে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী মাঠে এসেছেন তরুণ ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন (দোয়াত কলম প্রতীক)। হঠাৎ করেই প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন তিনি। করছেন জোর প্রচার প্রচারণাও। তার পেছনে রয়েছে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাবৃন্দসহ জেলার কয়েকজন শীর্ষ নেতাও। তবে রাজনৈতিকভাবে তরুণ সমাজের কাছে পরিচিত মুখ হলেও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের কাছে তিনি একেবারেই নতুন মুখ। তবে রাজনৈতিকভাবে যুব সমাজের কাছে পরিচিত মুখ হলেও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ জনগণের সাথে অপরিচিত। এরআগে সাধারণ ভোটারদের অনেকে তার নামও শোনেননি, এমনটাও আলোচনা সমালোচনায় উঠে আসছে সাধারণ ভোটারদের মন্তব্যে। এখনও সাধারণ ভোটারদের মনে জায়গা করে নিতে পারেননি বলেও জানান রাজনৈতিক-মহলসহ সাধারণ ভোটাররা।
একাধিক আ. লীগ পন্থি প্রার্থীদের উপেক্ষা করে হেভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি পন্থি একমাত্র প্রার্থী সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলার সদর ইউনিয়ন-খ্যাত বয়ড়া ইউনিয়নের টানা তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহিদুর রহমান তুষার।
দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে এসে তিনিও উঠে এসেছেন আলোচনায়। বিভিন্ন মহল মনে করছেন, আ. লীগের দলীয় গ্রুপিং ও অর্ন্তকোন্দলের রোষানলে এবারের নির্বাচনের বড় ফ্যাক্ট হতে পারেন তিনিও। বিভিন্ন মহলের মন্তব্যে উঠে আসে বিএনপি পন্থি সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেলে নির্বাচনের মেরুকরণ ঘুরে যেতে পারে । তবে এ নির্বাচন নিয়ে সহসাই মুখ খুলছেন অনেক ভোটাররাই। নির্বাচনের জয়পরাজয়ের হিসেবে অনেক ভোটারা নীরব ভূমিকাও পালন করছেন।
এ নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ বা চাপ মনে করছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান। তিনি জানান, "স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় ভোট নয়, ব্যক্তিগত ভোটই প্রাধান্য পাবে। যেহেতু এ নির্বাচনে দলীয় কোনো প্রতীক নেই। এখানে দলীয় একাধিক প্রার্থী আছে। ভোট ভাগাভাগি হবে। তবে দলীয়ভাবে ভোট আসবে না। এখানে নৌকা আর ধানের শীষ নেই। দলীয় প্রতীক থাকলে একটা ফ্যাক্ট ছিল। লোকাল নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই। তাই এখানে দলীয়গতভাবে নয়, ব্যক্তিগত ভোট আসবে। অর্থাৎ ব্যক্তি সম্পর্কের ভোট, ভালোবাসার ভোট। এগুলোর কার্যকারিতাই বেশি হবে। আমি দুই বার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি কতটুকু কি করতে পেরেছি, তার ভালমন্দ নির্ভর করছে জনগণের রায়ের ওপর। ভাল মন্দ জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। জনগণ যে রায় দিবে, সেটা আনন্দের সাথে মেনে নিব। ভাল করলেরলে জনগণ আমাকে ভোট দিবে। এটা বিশ্বাস। তবে যেহেতু দলীয় প্রতীক নাই। তাই প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজটাই এখানে প্রাধান্য পাবে বলে আমি মনে করি।"
নতুন মুখ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, "আমি খুব ছোটবেলা থেকেই ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত। স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হই, তখন থেকেই সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করি। পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেন, সেখানে আমি কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাহী কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পাই। আসলে রাজনীতি মানেই হলো মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে পথ চলতে হবে। আমি নিজে ভাল থাকব। আমার পাশের মানুষেরা কষ্টে থাকবে, আমি আসলে সেই ধারায় বিশ্বাসী না। মানুষের সেবা করার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হলো রাজনীতি। আর রাজনীতির পরিপূর্ণতা জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করা। সেই লক্ষেই আমার এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেয়া। আমি বিশ্বাস করি, আপামর সাধারণ জনগণসহ তরুণ সমাজ আমার পাশে থাকবে।"
বিএনপি পন্থি প্রার্থী মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, "ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে আসছি। ২০০৩ সাল হতে সাধারণ জনগণের ভালোবাসায় বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদে একটানা ১৯ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এবারে উপজেলা নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত। কোনো দলীয় প্রতীক থাকবে না। তাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছি। আশা করি, সাধারণ জনগণ ব্যক্তি বিশেষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সে দিক থেকে জনগণের প্রতি আমার বিশ্বাস ও আস্থা আছে। তাদের সুচিন্তিত রায় পাব।"
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সামছুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আজিম খাঁন (মোটরসাইকেল প্রতীক)। এছাড়াও সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পদ্মা অধ্যুষিত এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৮ জন। তফসিল অনুযায়ী, এ উপজেলায় ভোট-গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন
অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার
নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫
চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন
হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত
লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা
বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার
নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি
জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী
আবারও চার বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের দু' পক্ষের সংঘর্ষ, আহত-৬, সরকারী কলেজের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা
ক্রিকেট নিয়ে পাকিস্তানকে যে বার্তা দিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আগুয়েরোর রেকর্ড ভাঙলেন আর্জেন্টিনার নতুন বিস্ময়বালক
নাইট রাইডার্সে ফিরলেন সাকিব
লিভারপুলের দায়িত্ব নিচ্ছেন স্লট
আলেগ্রিকে ছাঁটাই করল ইউভেন্তুস
অভিনব উপায়ে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন
বাংলাবাজার খানকায়ে নেছারিয়ায় মাসিক তা'লিমী জলসা অনুষ্ঠিত