এইচআরপিবি’র সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতি জিইয়ে রেখে উন্নয়ন করলে সেটি টেকসই হবে না
২৫ মে ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, দুর্নীতি জিইয়ে রেখে উন্নয়ন করা হলেও সেই উন্নয়ন কখনো টেকসই হবে না। নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালনে সচেতন হন এবং পারিবারিক পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন তাহলে ফলাফল হবে আশাপ্রদ । তিনি বলেন, অধিকাংশ আভিযোগে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকে না। এ কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়া মামলা দায়ের সম্ভব হয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন হয়, তাহলে দুদকে অভিযোগই আসবে না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নাগরিকরা সচেতন না হলে দুর্নীতি কমান সম্ভব হবে না। দুর্নীতি দমনে দুদক ইতিমধ্যে স্কুল ছাত্রদের মাঝে প্রচারনা, স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আজ (শনিবার) ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’ আয়োজিত ‘দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সংস্থার প্রেসিডেন্ট সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া লাউঞ্জে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী জ.ই.মামুন। সেমিনার পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো: ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী ও সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট একলাছউদ্দিন ভুইয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হুমায়ুন রশিদ বলেন, বর্তমানে কতিপয় নতুন ব্যবসায়ী, যারা আগে কখনও ব্যবসা করেননি তারা প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন। মানি লন্ডারিং এর সাথে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারি, আমলা, রাজনীতিবিদ অনেকেই জড়িত।
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, গবেষকরা শত বছর পুর্বেই বলেছেন যে, দর্নীতি হল আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতার তিন বছর পরেই বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে উপলব্ধি করে জনসভায় তার বক্তৃতায় বলেছেন চোররা সব খেয়ে ফেলেছে। সাংবাদিক জ.ই.মামুন বলেন, কতিপয় ক্ষেত্রে মিডিয়াগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধে যথাযথ ভুমিকা পালন করতে পারছে না । কারণ, ঢাল তলোয়ার হিসেবে মিডিয়াকে ব্যবহার ব্যবহারের প্রবণতা বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণে সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্টি এ ভয়ভীতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ১৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন জনসাধারণের প্রত্যাশা পুরণে সফল হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ রাঘব বোয়ালরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাশীনরা যদিও দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলালেন্সের কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। ক্ষমতার আশেপাশে থেকে অনেকেই দুর্নীতি করলেও তা আমলে নেয়া হয় না।
বক্তব্যে তিনি ১৯ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে: (১) কমিশনের সদস্য সংখা ৭ জন ও কর্মরত জনবলের সংখ্যা ৩ গুণ বৃদ্ধির জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন। (২) দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও কর্মকর্তাদের নির্দলীয় মনোভাব, সাহসী ব্যক্তিত্ব এবং দুর্নীতি দমনে অঙ্গিকারবদ্ধ থেকে দুর্নীতি দমনে ভুমিকা রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। (৩) দল-মত, পেশা, এলাকা এবং ব্যক্তি পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সমানভাবে আইন প্রয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ (৪) দুদকের প্রত্যেক মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের আইন ও বিধি সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরন করতে হবে, ব্যত্যয় ঘটলে কমিশন কর্তৃক তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। (৫) উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ হলে সেক্ষেত্রে অনুসন্ধান, তদন্ত দ্রুত সময়ে শেষ করার ব্যবস্থা গ্রহণ। অনুসন্ধান বা তদন্ত মনিটরিং করার জন্য উপরস্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করার ব্যবস্থা গ্রহণ। (৬) দুদকে ডেপুটেশনে পদায়নের ক্ষেত্রে তাদের চাকরি দুদকে ন্যাস্ত করার বিধান করতে হবে। দুদকে চাকরিরত অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে আভিযোগ, তদন্ত ও শাস্তি দুদক আইনে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৭) দুদকে কর্মরত সকলের সম্পদের হিসাব ২ বছর পরপর জনগনকে অবহিত করার জন্য দুদকের ওয়েবসাইডে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৮) বিভিন্ন রিপোর্টে বিচার বিভাগের দুর্নীতির বিষয়ে বলা হচ্ছে, বিচার বিভাগের ভাবমুর্তি রক্ষার জন্য সেসব রিপোর্ট সম্পর্কে দুদককে তদন্ত করার কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । (৯) দুদকে কর্মরত যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসবে তাদের বিষয়ে দুদকের তদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তাৎক্ষনিক তদন্ত থেকে বিরত রাখা নিশ্চিত করতে হবে।(১০) দুদকে কর্মরত যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসলে অধিক গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। (১১) টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অনুসন্ধানি রিপোর্ট প্রচারিত,প্রকাশিত হলে সেসব বিষয়ে দুদককে সরাসরি অনুসন্ধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (১২) দুদকে মামলা দায়েরের পর আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধন এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ( ১৩) দ্রুত সময়ে মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত সমাপ্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং যারা তা করতে পারবেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে হবে। (১৪) কোটি টাকার উপরে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপরে গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তিনি প্রভাবিত না হতে পারেন। (১৫) বিভিন্ন আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য অধিক সংখ্যক দক্ষ আইনজীবি নিয়োগ করতে হবে এবং কোনো আইনজীবী আসামি পক্ষদ্বারা প্রভাবিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। (১৬) জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্য থেকে দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পুরস্কার ও সনদ প্রদানের ব্যবস্থ নিতে হবে। (১৭) যেসব অনুসন্ধান, তদন্ত একবছরের মধ্যে শেষ হচ্ছে না, সেগুলো তালিকাভুক্ত করে কমিশনের তত্ত্বাবধানে দ্রুত শেষ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । (১৮) বিদেশে অর্থ পাচার বা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তথ্য দুদকে এলে কিংবা সংবাদমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশিত হলে কমিশনকে গুরুত্বসহকারে সহকারে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের ভ্রমন, গাড়ি ব্যবহার, ব্যাংক এর লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি বিধান সংযোজন করার ব্যবস্থা করতে হবে। (১৯) ইতিপুর্বে অনেক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে অনুসন্ধান না করায় ঢালাওভাবে অব্যাহতি পেয়েছেণ এবং এ বিষয়ে মিডিয়ায়ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মিডিয়ার তথ্য বিবেচনায় নিয়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালীদের বিষয়ে নথি পুনরায় অনুসন্ধানের আওতায় আনতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অস্কারে যাচ্ছে ইরানের ‘ইন দ্য আর্মস অফ দ্য ট্রি’
চবিতে নিয়োগ পেলেন দুই প্রো ভিসি
নিখোঁজের ৯ ঘন্টা পর ভেসে উঠল জেলের লাশ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
ভারতকে প্রায় ৩০০ প্রত্নসামগ্রী ফেরত দিল আমেরিকা
চলতি হিসাবে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ৯ ব্যাংকের
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত বগুড়ার শিশু শিক্ষার্থী রাতুল চলে গেলো না ফেরার দেশে
ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক গাজার আল-শিফা হাসপাতাল
তালতলীতে ব্যাংকের ভিতর থেকে টাকা ছিনতাই
একাডেমিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে: চবি উপাচার্য
চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখা অপরাধ, যুগান্তকারী রায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহযোগিতার আশ্বাস যুক্তরাজ্যের
খোঁজ মিলছে না হামাসের বর্তমান শীর্ষ নেতা সিনওয়ারের, তদন্ত চায় ইসরায়েল
কুলাউড়ায় বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণ
ইসলামী ব্যাংকের এএমডি হিসেবে মো. ওমর ফারুক খান ও মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদারের যোগদান
ফুটসাল বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারালো ইরান
হঠাৎ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ালেন ইলিয়াস কাঞ্চন
দুর্গাপূজায় ব্র্যাক ব্যাংক দিচ্ছে শীর্ষ ব্র্যান্ডে ৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট
লেবাননে ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলা, নিহত ৫০, আহত ৩০০