তালিকা হচ্ছে শাহিনের বাংলোয় যাতায়াতকারীদের
৩১ মে ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৪, ১২:২৩ এএম
সময় যতই গড়াচ্ছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যা রহস্য নিয়ে ততোই সৃষ্টি হচ্ছে ধূম্রজাল। সবচেয়ে আলোচিত আনার হত্যাকাÐ কি শুধুই ব্যবসায়িক দ্ব›দ্ব, নাকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতবদল এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে চারিদিকে। প্রায় ক্লু-লেস এ হত্যাকাÐটি এতই পরিকল্পিত এবং পেশাদারিত্বের প্রমাণ রাখে যে, রহস্য উদঘাটনে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের পুলিশকেই রীতিমত গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। তিন তিনবারের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য হয়েও চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া আনার নিজের স্ত্রী-সন্তান কিংবা ব্যক্তিগত সহকারী অথবা বন্ধুদের কাউকে সঙ্গে না নেয়ার বিষয়টিকেও সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে।
এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধানের উপস্থিতিতে কলকাতার সিআইডি নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করেছে বেশ কিছু খÐিত গোশতের টুকরা। ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ জোর দিয়ে বলেন, টুকরোগুলো সংসদ সদস্য আনারের শরীরেরই অংশবিশেষ। তবে তিনি এও বলেন, উদ্ধার করা গোশতের টুকরোগুলো আনারের শরীরের কিনা তা শতভাগ নিশ্চিত হতে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) টেস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তবে এ গোশতের ডিএনএ পরীক্ষার সুফল প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল সোহেল মাহমুদ। গতরাতে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, যদি গোশত উদ্ধার হয় গত ২৮ মে সন্ধ্যায়, আর খুনের ঘটনা ঘটে গত ১৩ মে, তবে এ দীর্ঘ সময়ে গোশতে পচন ধরেছে। কাজেই এ গোশতের ডিএনএ’র রেজাল্ট সঠিক হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রায় একই মত দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান গাজী গোলাম মোকলেছুর রহমান। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে সেপটিক ট্যাংকে ফেলা গোশতের ফরেনসিক পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তবে চুল, রক্ত বা হাড় পরীক্ষায় মৃত্যুর অনেকদিন পরও নিশ্চিত ফল পাওয়া যায়। যদি শুধুই গোশত পেশি পাওয়া যায় আর সেটি যদি পঁচে যায় তাহলে ডিএনএ এনালাইসিস প্রসেসিং দুরূহ কাজ। তিনি আরো বলেন, কোনো হত্যাকাÐের পর নিহতের শরীরের হাড় অথবা যা দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে যেমন ছুরি, চাপাতি যাকে বলে বøাড স্টোন এসব আলামত সংগ্রহ করা গেলে সহজেই ডিএনএ প্রসেসিং করা সম্ভব।
কলকাতায় গ্রেফতারকৃত কসাই জিহাদকে সেখানকার পুলিশ সঙ্গে নিয়ে লাশের টুকরো যেখানে ফেলা হয়েছে সেই খালের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তারা সেখান থেকে গতকাল পর্যন্ত লাশসংশ্লিষ্ট কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি ঘটনাস্থলে রক্তের চিহ্নও মুছে ফেলে সেখানে বিøচিং পাউডার দেয়া হয়েছে। কলকাতায় রিমান্ডে থাকা জিহাদকে দিয়ে এখনো পর্যন্ত হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছুরি, লাশ সরাতে ব্যবহৃত লাগেজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করেই আনার হত্যার তদন্ত করছে। তবে দু’দেশের পুলিশই নিশ্চিত করছে, আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনার খুনের পরিকল্পনা হয় ঢাকার বসুন্ধরা ও গুলশানে নিহতের বন্ধু শাহিনের ফ্ল্যাটে। দীর্ঘ দুই মাসের পরিকল্পনায় হত্যার মিশন শেষ হয় কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে। আনার খুনে সংশ্লিষ্টরা দেশে ফিরতেই শাহিন পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সদস্য আনার স্মাগলিং, চোরাচালান ও হুন্ডিসহ স্বর্ণ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। আর তারই বন্ধু আকতারুজ্জামান শাহিন একজন আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের এলেঙ্গার গ্রামে শাহিনের রয়েছে আলিশান বাগানবাড়ি। ওই বাগানবাড়ির বাংলোতেই হতো স্বর্ণ চোরাচালানের ও হুন্ডি ব্যবসার লেনদেন। যেখানে যাতায়াত ছিল একাধিক আমলা, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের। রাত গভীর হতেই ওই বাংলো আলোকিত হয়ে উঠতো অতিথিদের আগমনে। নিজস্ব বাবুর্চির রান্নায় ভোজনের পাশাপাশি চলত মদ আর নারী নিয়ে ফুর্তি।
আনার খুনের পর সেখান থেকে উদ্ধার করা ১০টি সিসি ফুটেজের একটিতে শাহিনের সঙ্গে আনারকেও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পুলিশ বলছে, ওসব ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনেকের ধারণা, এককভাবে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের দখল নিতে দুই বন্ধুর দ্ব›েদ্বই খুন হন আনার।
এদিকে আনার হত্যার তদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকি থেকে উদ্ধার হওয়া খÐিত গোশত আনোয়ারুল আজীম আনারের। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে সেটা নিশ্চিত হতে পারবো।
তিনি বলেন, কলকাতায় আমাদের তদন্তকাজ সফল হয়েছে। আনার হত্যাকাÐ নিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছি, তা পেয়েছি। আলামত উদ্ধার, পারিপার্শ্বিক ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করায় আনার হত্যার তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ দুই দেশের গোয়েন্দাদের তথ্য সমন্বয় করে মামলার তদন্ত পরিচালনা করায় ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
‘মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আরেকজন অভিযুক্ত সিয়াম নেপালে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা কাঠমুন্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শাহীনকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে ভারতকে অনুরোধ করেছি।’
এর আগে কলকাতা বিমান বন্দরে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তদন্ত করি। আমরা প্রধান সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছি, তার কাছে থেকে পাওয়া তথ্য আমরা মিলিয়ে নেওয়ার কাজ করেছি কলকাতায়। দ্বিতীয়ত, ভারতে গ্রেফতার জিহাদের সঙ্গে আমাদের কাছে থাকা মূল ঘাতক শিমুলের বক্তব্য মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে দুই জনের বক্তব্য শতভাগ মিলেছে। আমরা স্বচক্ষে ডিজিটাল এভিডেন্সগুলো মিলিয়ে দেখেছি। এমপি আনার যার বাসায় ছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সিআইডিকে বলেছিলাম সেপটিক ট্যাংক ও কমোড ভেঙে দেখার জন্য। আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি কিন্তু সেপটিক ট্যাংক থেকে ভিকটিমের দেহের অনেক খÐাংশ পেয়েছে। শতভাগ সফলতা নিয়ে আমরা বাংলাদেশে ফিরছি। আরো ভালো খবর আপনারা পাবেন।’
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর সেখানেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ মে পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার পূর্বপরিচিত বরানগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। ২০ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করার তথ্য জানায় ভারতীয় পুলিশ। গ্রেফতার ঘাতকদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, ১৩ মে দুপুরেই আনারকে হত্যা করা হয়েছে। আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া তিনজন শিমুল, সিলাস্তি ওরফে সেলে নিস্কি এবং তানভীর ভ‚ঁইয়া আট দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল ছিল রিমান্ডের ষষ্ঠ দিন। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া মুম্বাইয়ের কসাই জিহাদ ১২ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। হত্যাকাÐে অংশ নেওয়া মোস্তাফিজ ওরফে ফয়জুল নামে আরেকজনকে খুঁজছে পুলিশ। শিগগিরই ডরিনের কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন
ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?
ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার