কলকাতায় সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের টুকরোগুলো ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। এ কারণে উদ্ধার লাশের খণ্ডাংশ দেশে আনতে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা থেকে দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, কলকাতায় আমাদের তদন্তকাজ সফল হয়েছে। এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছি, তা পেয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সিআইডিকে চিঠি দিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের টুকরো বাংলাদেশে আনা হবে।

এদিকে এমপি আজীমের হত্যাকারীদের বিচার ও মরদেহ ফেরতের দাবিতে গতকাল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

ডিবিপ্রধান জানান, কলকাতায় ১৩ মে এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকার ডিবি তদন্ত করছে। তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে একটি দল কলকাতায় গিয়েছিল। ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই ও ঘটনাস্থলে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত দেখেছেন তারা।

তিনি বলেন, লাশের টুকরোগুলো আজীমের লাশের মনে হলেও এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক এবং ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ভারতীয় পুলিশও একই ধরনের পরীক্ষা করে জানাবে।

কলকাতা থেকে ঢাকার বিমানে ওঠার আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিবিপ্রধান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘ওয়াটার থিওরি’র কথা তারা আমলে নেন। এরপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে অনুরোধ করে কমোড, সেপটিক ট্যাঙ্ক ও স্যুয়ারেজ লাইন পরীক্ষা করা হয়। এর পরই সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কেজি লাশের টুকরো।

উদ্ধার হওয়া মাংস এমপি আজীমের লাশের টুকরো কিনা, তা পরীক্ষার জন্য এরই মধ্যে নমুনা পাঠানো হয়েছে ভারতের ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে’। এ কারণে কলকাতায় ডাকা হতে পারে এমপিকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে।

ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, হত্যাকাণ্ডের হোতা আজীমের বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়ও তাকে দেশে ফেরত আনতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শাহীনের জন্য ইন্টারপোলে আর সিয়ামের জন্য নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

আজীম হত্যার ঘটনায় ঢাকা ও কলকাতায় দুটি মামলা হয়েছে। গত ২৬ মে হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কলকাতায় যায়। কলকাতার ব্যারাকপুর-সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় এমপির বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কলকাতার নিউ টাউন থানা পুলিশ ও সিআইডি কর্মকর্তারা। পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ডিবিও।

হত্যা শব্দটি এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি এ প্রসঙ্গে একবারও ‘হত্যা’ বা ‘হত্যাকাণ্ড’ জাতীয় কোনো শব্দ ব্যবহার করেননি। তিনি শুধু এটিকে ‘কেস’ বা মামলা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ভারত সরকার অন্তত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করতে চাইছে না। আক্তারুজ্জামানকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।

রণধীর বলেন, ‘ভারত সরকার বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। ভারত ও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করছে।’ হত্যাসংক্রান্ত বাড়তি কিছু তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে কিনা, তা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।