সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
উজানে পানি কমলেও ডুবছে ভাটি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট
গত ৩ দিন ধরে তীব্র গরমের পর গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেটজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে গরমে অতীষ্ট মানুষজনের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করলেও উদ্বেগ বেড়েছে বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে। সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার পানি কিছুটা কমলেও পুরো জলাবদ্ধতা এখনো কাটেনি। তবে বন্যা কবলিত নগরবাসীর জন্য সিসিকের সেবা অব্যাহত রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র চালু এবং খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে নগর ভবন। ইতিমধ্যে নগরীর বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ কর্মকর্তাগণ। তবে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কটে ভুগছে নগরবাসী। তবে জেলা প্রশাসন জানায় উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় ভাটিতে মহানগর, সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্যা উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা থেকে সামান্য (১ সে.মি.) নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গতকাল দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ১০ দশিমিক ৮০ থেকে ১ সে.মি. কমে ১০ দশমিক ৭৯ নিচে নেমে এসেছে। টানাবৃষ্টি না হলে পানি আরো কমবে বলে জানায় পাউবো। সিলেট নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে বিভিন্ন ভাবে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় জরুরি সভা করে নানা ভাবে কর্মতৎপর রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তাগণ।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বেশির ভাগ এলাকার। তাছাড়া বন্যার ঝুঁকিতে আছে এমন সকল ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে ওই আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হবে তাদের। সুরমা তীরবর্তী বিদ্যুৎ সাব স্টেশনগুলো রক্ষার জন্য বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাদের নিজস্ব তথ্যমতে আনুমানিক ৪ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত আছে। গতকালও আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান শুকনো খাবার মজুদ। এই অবস্থার মধ্যে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। সিলেট নগরীর উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার এলাকায় পানি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার জনসাধারণকে দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিসিকের পানির লাইন অনেক এলাকায় ডুবে থাকায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শনিবার থেকে জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে দুই লিটার করে পানি সরবরাহ করছি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামীকাল পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে পারে। এতে ধীরগতিতে হলেও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকালে সিলেট জেলার দুটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ও সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটের লালাখালে ৬১ ও জাফলংয়ে ১১৩ মিলিমিটার।
অপরদিকে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৯৪, আসামের তেজপুর ৭১, পশ্চিমভঙ্গের জলপাইগুড়ি ৫৬ ও কোচবিহারে ৬৩ মিলিমিটার হয়েছে বৃষ্টিপাত।
এদিকে, জেলার গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি এখনো থাকলেও তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে। গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও বিয়ানীবাজারে উপজেলায় নেমে যাচ্ছে নদীর পানি।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৩ দিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। ৩০ মে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এর পর থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে। তবে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা ধীর গতিতে কমছে। আশা করছি, বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাবে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এ যাবত বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১২৫০ বস্তা শুকনা খাবার ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৯ লাখ টাকার গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বেশি দুর্গত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে দুই দফায় ৪০ টন করে চাল ও দেড় লাখ টাকা করে এবং ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত আরো ৮টি উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন করে চাল, এক লাখ টাকা এবং ৫০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৬ বছরের শিশুর ধর্ষণ ঠেকাল বাঁদর বাহিনী!
বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা: ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম গ্রেফতার
চলতি হেমন্তকালই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে: জেলেনস্কি
নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি বার্তা দূতাবাসের
সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না: ওয়াকার-উজ-জামান
শেরপুরে জেল পলাতক হত্যা মামলার আসামি স্বপন মিয়া গ্রেপ্তার
প্রস্তরযুগের শতাধিক জেড ড্রাগনের সন্ধান
নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূস-বাইডেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ
জাপানকে হারিয়ে উত্তর কোরিয়ার রেকর্ড
তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়
ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক
১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!
গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন
চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির
পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই
জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬
'ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য'
লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২
নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান