পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবন : বন্যায় দুর্গতিতে সিলেট
২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম
তিস্তা-ধরলার পানি বিপদসীমার ওপরে : সরকারি সাহায্যের আশায় বানভাসিরা : কমলগঞ্জে ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা : বন্যার পানিতে ডুবে দুই কিশোরের মৃত্যু : সিলেটে স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
সিলেট অঞ্চলে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি, বন্যায় দুর্গতিতে সিলেটবাসী। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। চার জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। মানবেতর দিন কাটছে বানভাসিদের। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে শিক্ষাবোর্ড। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানিবন্দিদের উদ্ধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। অনেকে গরু-বাছুর নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রকেন্দ্রে। শঙ্কাউজানের ঢলে ১০ থেকে ১২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে’র প্রতিবেদনে-
সিলেট ব্যুরো জানায়, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত। এতে পানিবন্দী হয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ। গত বুধবার রাতে সিলেটে ও উজানের দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধীর গতিতে কমছে পানি। তবে বর্তমানে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছে বন্যা প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। শঙ্কাউজানের ঢলে সিলেট অঞ্চলের আগাম বন্যায় এখন ১০ থেকে ১২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ছয়টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার পর অবশেষে গতকাল সিলেটের আকাশে দেখা মিলেছে এক টুকরো রোদের। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় একদিনের ব্যবধানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে এরই মধ্যে ১৭ লাখের অধিক মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। যত সময় গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা। অপরদিকে, সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের ১৫ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল। এতে কি পরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখন নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে পানি নেমে যাওয়ার পর নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর। এদিকে, স্থগিত করা হয়েছে সিলেট বিভাগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। বন্যা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত থাকবে আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত এ পরীক্ষা।
সিলেট জেলা প্রশাসনের হিসাবে সিলেট জেলায় প্রায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ। গতকাল বিকেলে ১৩ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৪২টি ্ওয়ার্ডের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এতে জেলার ৬৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭৮৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে ওসমানীনগরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ও গোয়াইনঘাটে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩০টি ইউনিয়নের ১হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। সিলেট নগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডেও টুকেরবাজার এলাকার শাদীখাল পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কমলগঞ্জে ধলাই নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তির্ণ এলাকা। কমলগঞ্জে ধলাই নদীর সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকার এবং রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের খুশালপুর গ্রামে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দিয়েছে। ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে নারায়নপুর, চৈতন্যগঞ্জ, বাঁধে উবাহাটা, খুশালপুর ছয়কুট, বড়চেগ, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, গোপীনগর, আধকানী, কাঁঠালকান্দিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করছে।
মনু ও ধলাই নদীর বাঁধের ১৯টি স্থান ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারে ৭টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া পৌর সভার ৩টি ওয়ার্ড। এছাড়াও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ ও জুড়ী উপজেলা পরিষদে। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ গ্রামীন রাস্তা তলিয়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কের অনেক স্থানে পানি উঠেছে। বাড়ি ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি রয়েছেন ৭ উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। জেলার ৪০ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল ইনকিলাবকে জানান, জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উজানে ভারত অংশে বৃষ্টি না হলে পানি কমতে শুরু করবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান গুলো মনিটরিং রাখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে আমরা সবসময় তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের বন্যার পানি উজানে কিছুটা কমলেও ভাটি প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজর উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমলেও শান্তিগঞ্জ উপজেলা, দিরাই, শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ৫টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। জেলার ভাটি অঞ্চল দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সুনামগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক ও ছাতক-গোবিন্দগঞ্জসহ জেলার চারটি আঞ্চলিক সড়ক। এসব সড়কে গত চারদিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। এরমধ্যে ছাতক শহরে ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং দোয়াবাজার উপজেলায় ৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দোয়ারাবাজারে একটি গবাদিপশুর আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতাকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে জেলার ছাতক উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপদসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৬ টায় সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। এ কারণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। এদিকে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শহরের নবীনপর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, হাজীপাড়া, নতুনপাড়া, শান্তিবাগ, বনানীপাড়ার কিছু ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান জানান, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে
বন্যার ক্ষতি গ্রস্থ মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ দিকে পানি সম্পদ মন্ত্রী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা বিরামপুর বেরিবাঁধ পরিদর্শন করেন। পরে উপজেলার মইনপুর, জগন্নাথপুর বন্যার্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয় বৃষ্টি -পাত কম হওয়ায় জেলার অনেক জায়গার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। সকলকে ধৈর্য্যরে সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করেন। তিনি আরো জানান পানি বন্ধী মানুষের খাবারের কোন কষ্ট হবে না, সরকারের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে পানিতে ডুবে হৃদয় আহমেদ ও ছাদি মিয়া নামে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুই কিশোর হলো, পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের টাওয়ার রোডের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় ও পছন মিয়ার ছেলে ছাদি। মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনোর রশিদ এ তথ্য জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা লুতফুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কলাগাছের ভেলায় করে হৃদয় ও ছাদি তারা দুজন শ্যামেরকোনা এলাকার খেওয়াঘাট চলে যায়। সেখানে কলাগাছের ভেলা ভেঙে গিয়ে ডুবে যায়। এই সময় তাঁরা দুজন সাঁতার কাটতে কাটতে ডুবে গিয়ে কিছু দূর ভেসে ওঠে। পরে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, ধলাই নদী চৈত্রঘাট এলাকায় ভেঙে চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার সময় গতকার সকালে হৃদয় ও সাদি কলাগাছের ভেলা বানিয়ে ঘুরাঘুরি করছিল। খেওয়াঘাট তাদের কলাগাছের ভেলা ভেঙে যায়। এসময় তাদের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গত পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে যে কোনো সময় ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিতে পারে। উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি উঠে ফসল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হয়েই সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চরাঞ্চলগুলোর কিছু-কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। একারণে নদীপারের মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলোতে নদীর পানি ঢুকে বন্যায় রূপ নিয়েছে। অপরদিকে ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ী, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের ২০ টি চরের মানুষ ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে রয়েছেন। দেখা যায়, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ কারনের নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর ও বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে বা উচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোলরুম থেকে গতকাল দুপুরে জানা যায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর সুন্দরগঞ্জ এলাকায় পানি বিপদসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার্থে সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বন্যা কবলিত লোকজনের জানমাল রক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা-তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬ নদীর পানি বেড়েই চলছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলার পানি তালুকশিমুল বাড়ি পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব নদ-নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নদ-নদীর অববাহিকার নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাচা সড়ক। ডুবে গেছে সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের চর রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, কয়েকদিন থেকে পানি বারার কারণে আমার এখানে সেই নদী ভাঙছে। আমারও বাড়ি ভেঙে অন্য স্থানে নিচ্ছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, আরও ২ থেকে ৩ দিন নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেসব এলাকায় রয়েছে সেখানে ভাঙন রোধে আমাদের কাজ চলছে।
এদিকে, কুড়িগ্রামের উলিপুরের সাদুয়া দামারহাট এলাকায় তিস্তা নদীতে ২৬ জন যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। ১৭ জন জীবিত উদ্ধার হলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজন শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল । আরো ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
উলিপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, নৌকা ডুবি ঘটনা শোনার পর আমরা উদ্ধার চালাই। মোট ২৬ জন যাত্রীর মধ্যে শুরুতে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে ১ জন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উলিপুর থানার ওসি গোলাম মর্তুজা জানান, তিস্তায় প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে। নিহত শিশুটির এখন পর্যন্ত কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে যমুনার পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গতাকাল সকালে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭৭ মিটার। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৫ মিটার। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েক দিন ধরেই দ্রæত বাড়ছে যমুনা নদীর পানি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দীর্ঘ ১১ মাস পর আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন শুরু
শাহ্ সিমেন্ট-একেএস কাপ গলফ টুর্নামেন্ট শুরু
ভাঙ্গায় ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত
চোটের কারণে কোর্ট ছাড়লেন জোকোভিচ,ফাইনালে জভেরেভ
কালীগঞ্জে ট্র্যাক-ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে পা হারালো নলকূপ মিস্ত্রী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান সমিতির আনন্দ উৎসব
যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউএইচও ত্যাগের সিদ্ধান্তে আফ্রিকার জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
হালুয়াঘাটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জিরা আটক করেছে বিজিবি
গোয়ালন্দে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী গৃহবধূ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়ল আফগান শরণার্থীরা
বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের বৃহৎ স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন
সৈয়দপুরে শীতার্তদের মাঝে উপদেষ্টা সজিব ভুঁইয়ার পাঠানো শীতবস্ত্র বিতরণ
ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসায় সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
কিশোরগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশ অফিসে ভয়াবহ আগুন, নথিপত্র ভস্ম
বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি বিএসএফের, মহড়া বৃদ্ধির নির্দেশ
জাপানি স্কুলবাসে হামলার দায়ে চীনা নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড
১১ মাস পর আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন শুরু
বাংলাদেশে প্রত্যেকটা খুনের বিচার চাই, কুড়িগ্রামে ডা. শফিকুর রহমান
আজ ঢাকা মাতাবে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশ
জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফিরে আসবে ফ্যাসিস্টরা- কুড়িগ্রামে জামায়াত আমির