ঢাকা   শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০ মাঘ ১৪৩১

ঈদের আনন্দকেও বাকশালীকরণ করা হয়েছে : রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশকে দখল করে নিয়েছে দূর্বৃত্ত সন্ত্রাসী আর সিন্ডিকেটবাজরা। নৈরাজ্যের কালো ছায়া যেন সারা বাংলাদেশকেই ঢেকে ফেলেছে। ঈদের আনন্দ উৎসবকেও বাকশালীকরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন অদম্য জমিদার হয়ে উঠেছে। দেশের কোথাও কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতার জায়গা নেই। ক্ষমতাসীনরা সবকিছু তাদের করায়াত্ব করার জন্য চোখ রাঙিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্তানরাও নিজেদের জমিদার সন্তান ভাবছেন। তারা মনে করেন আইন যেন তাদের হাতের মুঠোয়। ঈদের দিন রাতে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার প্রবাসী মেয়ের গাড়ির সাথে একটি বাইকের ধাক্কা লাগায় দুইজন বাইক আরোহীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতার লোকজনরা ক‚পিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ঈদের দিন মানুষ হত্যার উন্মাদনার মধ্য দিয়েই আওয়ামী ক্যাডাররা উৎসব পালন করছে।
তিনি বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে যেন বন্যা ও ধ্বংস সমার্থক হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ঢল ও মেঘ-ভাঙ্গা বৃষ্টিপাতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে বন্যা ধ্বংসের তান্ডব চালাচ্ছে। বহু মানুষ বসতবাড়ি, ক্ষেতখামার প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস কাছারি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও ক্ষেতের ফসল। সিলেটে জলধারাবর্ষণে মনে হয় যেন পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে। প্রতিবছর বারবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচন্ড তান্ডবে সরকারের উদাসীনতা বিস্ময়কর। দেশের ভেতরের বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে দিশেহারা মানুষ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে না। ঘরের ভেতর উঁচু মাচা করার পরেও টিকতে পারছে না।
তিনি বলেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলের রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অবস্থাও মারাত্মক সঙ্গীন। উজানের প্রবল ঢলে সিলেট ও রংপুর বিভাগে নদীগুলো উপচে দুই পাশে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। লাখ-লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। সরকারের ভুল নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে আজ বন্যাউপদ্রæত মানুষদের। বিশেষজ্ঞদের অভিমত সিলেটের হাওর উন্নয়নের নামে চলছে অপরিকল্পিত কর্মকান্ড। নদীতে বাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক গতি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার কারণেই বন্যার প্রকপ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অঞ্চলে প্রতিবছর বন্যা হওয়ার পরেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি সরকার।
রিজভী বলেন, মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যে সরকারের কর্মসূচি, সে সরকারের দ্বারা একটি জাতির সর্বাঙ্গীন উন্নতি লাভ কখনোই সম্ভব নয়। আজ ডামি সরকারের লুটেরা নীতির জন্যই ভুক্তভোগী জনগণের মর্মভেদী অশ্রুপাতের কারণ। আওয়ামী সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে নিজের ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য উন্নয়নের কর্মকৌশল নির্মাণ করেছেন। সুতরাং সেই উন্নয়ন মধ্যে পাটকাঠির কাঠামো রয়েছে বলেই সেটি ধ্বসে পড়ছে, আর দেশের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্যোগ ও দুর্ভোগ। এর উপর বিশ্বের শীর্ষ বায়ু দূষণ শহর ঢাকা। কারণ অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলো প্রচন্ড বায়ু দূষণে নিমজ্জিত। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নেই বলেই বাংলাদেশের বায়ু ক্রমাগতভাবে দূষিত হচ্ছে। বৃহত্তর সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে পানিবন্দি মানুষের কাছে কোন ত্রাণ পৌঁছায়নি। এক অসহায় বিপন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে লাখ-লাখ বন্যা উপদ্রæত মানুষেরা। আমি উক্ত অঞ্চলে বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরকে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জোর আহŸান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া এবারও বিক্রি হয়নি। আড়তদাররা কোরবানির চামড়া ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাও সিন্ডিকেটবাজদের কারসাজি। গরিবের হককে বঞ্চিত করে একচেটিয়াকরণ করার জন্যই দেশের কোরবানির চামড়া সিন্ডিকেটওয়ালারা কৌশলে মূল্যহীন করেছে। প্রশাসনের নির্ধারিত দামেও চামড়া কেনেননি আড়তদাররা। কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। এমনিতেই এবারে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষেরা কোরবানী দিতে পারেনি।
সরকারি হিসাবে অবিক্রিত থেকেছে ২৫ লাখ ৮১ হাজার গবাদী পশু। বাস্তবে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এরপরেও চামড়ার দাম নিয়ে এহেন নৈরাজ্য কেবলমাত্র শেখ হাসিনার শাসনেই সম্ভব। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার সব অবলম্বনকেই এরা নিরুদ্দেশ করে দিতে চায়।
রিজভী বলেন, যে দেশে সবজি-সালাত শুটকিতে মানবদেহের ক্ষতিকারক কীটনাশকের সন্ধান পাওয়া যায়, সে দেশের সরকার যে সিন্ডিকেটবাজদেরই সরকার তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যখন কোনো জবাবদিহিতা থাকেনা তখন সব সেক্টরে সরকারের দোসররাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুরদিকে ঠেলে দিতেও তাদের দ্বিধা হয় না। বাংলাদেশের মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার।
রিজভী বলেন, আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। প্রতিবছর ২০ জুন এই আন্তর্জাতিক দিবসটি জাতিসংঘকে কর্তৃক উদযাপিত হয়। এটা সারাবিশ্বের উদ্বাস্তুদের সম্মান করার জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়। নিজ দেশের সংঘাত ও নিপীড়ণ থেকে পালিয়ে আসে শুধু অভয়ারাণ্য খুঁজে পেতে এবং উন্নত জীবনযাপনের আশায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধান শরণার্থী সমস্যা রোহিঙ্গা। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পাহাড় ধ্বসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ জন মারা গেছে। কিন্তু তাবেদার নতজানু সরকার তাদের নিজ দেশে ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। এদেরকে নাগরিক হিসেবে নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। কিন্তু অতীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেও এমন ঘটনা ঘটেছিলো। সেসময় সফল ক‚টনৈতিক তৎপরতায় তাদেরকে ফেরত পাঠাতে তারা সক্ষম হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোটি-কোটি যুবক এখন বেকার। শুধুমাত্র ভিন্ন মতের কারণে অনেক তরুণ যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভ‚মধ্যসাগরসহ বিভিন্ন সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই সলিল সমাধি হচ্ছে। বহুসংখ্যক বাংলাদেশীরা এখন নিজ দেশেই পরবাসী। একদলীয় শাসনে নিজ দেশেরই ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারণে নিপীড়ণ ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এরা দেশ ছেড়ে বিভিন্ন উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করছে। হিংস্র কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণেই বহুদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ অন্যদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। আমি সারাবিশ্বের শরনার্থীদের প্রত্যাশা ও উন্নত জীবনের আকাঙ্খার প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শাহ্ সিমেন্ট-একেএস কাপ গলফ টুর্নামেন্ট শুরু

শাহ্ সিমেন্ট-একেএস কাপ গলফ টুর্নামেন্ট শুরু

ভাঙ্গায় ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

ভাঙ্গায় ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

চোটের কারণে কোর্ট ছাড়লেন জোকোভিচ,ফাইনালে  জভেরেভ

চোটের কারণে কোর্ট ছাড়লেন জোকোভিচ,ফাইনালে  জভেরেভ

কালীগঞ্জে ট্র্যাক-ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে পা হারালো নলকূপ মিস্ত্রী

কালীগঞ্জে ট্র্যাক-ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে পা হারালো নলকূপ মিস্ত্রী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান সমিতির আনন্দ উৎসব

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান সমিতির আনন্দ উৎসব

যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউএইচও ত্যাগের সিদ্ধান্তে আফ্রিকার জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউএইচও ত্যাগের সিদ্ধান্তে আফ্রিকার জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

হালুয়াঘাটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জিরা আটক করেছে বিজিবি

হালুয়াঘাটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জিরা আটক করেছে বিজিবি

গোয়ালন্দে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী গৃহবধূ

গোয়ালন্দে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী গৃহবধূ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়ল আফগান শরণার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়ল আফগান শরণার্থীরা

বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের বৃহৎ স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন

বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের বৃহৎ স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন

সৈয়দপুরে শীতার্তদের মাঝে উপদেষ্টা সজিব ভুঁইয়ার পাঠানো শীতবস্ত্র বিতরণ

সৈয়দপুরে শীতার্তদের মাঝে উপদেষ্টা সজিব ভুঁইয়ার পাঠানো শীতবস্ত্র বিতরণ

ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসায় সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসায় সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

কিশোরগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশ অফিসে ভয়াবহ আগুন, নথিপত্র ভস্ম

কিশোরগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশ অফিসে ভয়াবহ আগুন, নথিপত্র ভস্ম

বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি বিএসএফের, মহড়া বৃদ্ধির নির্দেশ

বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি বিএসএফের, মহড়া বৃদ্ধির নির্দেশ

জাপানি স্কুলবাসে হামলার দায়ে চীনা নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড

জাপানি স্কুলবাসে হামলার দায়ে চীনা নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড

১১ মাস পর আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন শুরু

১১ মাস পর আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন শুরু

বাংলাদেশে প্রত্যেকটা খুনের বিচার চাই, কুড়িগ্রামে ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশে প্রত্যেকটা খুনের বিচার চাই, কুড়িগ্রামে ডা. শফিকুর রহমান

আজ ঢাকা মাতাবে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশ

আজ ঢাকা মাতাবে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশ

জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফিরে আসবে ফ্যাসিস্টরা- কুড়িগ্রামে জামায়াত আমির

জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফিরে আসবে ফ্যাসিস্টরা- কুড়িগ্রামে জামায়াত আমির

ঝিনাইদহে প্রবাসীর স্ত্রী’র রহস্যজনক মৃত্যু, আদালতে মামলা

ঝিনাইদহে প্রবাসীর স্ত্রী’র রহস্যজনক মৃত্যু, আদালতে মামলা