ভোটার তালিকায় ভারতীয় নাগরিক!
২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম
কেউ ভারতীয় পাসপোর্টধারী। কেউ বা ভারতেই মৃত্যুবরণ করেছেন বেশ আগে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে তাদের নাম উঠছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন প্রণীত ভোটার তালিকায়। ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া হচ্ছে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট। সেটির ভিত্তিতে হয়ে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয়ত্র (এনআইডি)। আর এই এনআইডি এবং ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চলছে জমির নামজারি, নাম খারিজ এবং সম্পত্তি বেচা-কেনা। জালিয়াতিপূর্ণ দলিল দিয়ে চলছে সম্পত্তির জবর-দখল। সেই সম্পত্তি ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। গুরুতর এমন অভিযোগ মিলেছে রাজধানীসংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলায়। ভয়াবহ এই জালিয়াতির সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান- মেম্বার, গ্রাম্য টাউট, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারি, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারির রয়েছে সংশ্লিষ্টতা। আর এসব জালিয়াতির চূড়ান্ত সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছেন কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উদঘাটিত হয়েছে এসব তথ্য।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি গ্রামের ভোটার তালিকায় ৩৩৭ নম্বরে রয়েছে জনৈক ‘তপন সরকার’ (ভোটার নং- ৬৭০৫৩৪০০০০৯৮) এর নাম। পিতার নাম উল্লেখ রয়েছে ‘স্বদেশ সরকার’, তার পিতা-মৃত অনাথ বন্ধু সরকার। মাতা-শ্যামলতা সরকার। ললাটি গ্রামের স্বদেশ চন্দ্র সরকারের ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন। ‘তপন সরকার’ ছাড়াও ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে স্বদেশ সরকারের পুত্র বলে দাবি করা হয়েছে, আসিস সরকার ( ভোটার নং-৬৭০৫৩৪০০০০৯৯), সমীর সরকারকে। তাদের মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শ্যামলতা সরকারকে। ভোটার তালিকায় তাদের গ্রাম ‘ললাটি, সোনারগাঁও, নারায়ণঞ্জ’ উল্লেখ করা হলেও এ গ্রামে এসব মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই। ভোটার তালিকায় একই গ্রামের বকুল ভৌমিক ওরফে ‘খেপা’র পুত্র ঝংকার ভৌমিকের (ভোটার নং-৬৭০৫৩৪০০০১০০) নাম রয়েছে। ঝংকার ভৌমিকের পেশা দেখানো হয়েছে ‘বেসরকারি চাকরি’। অথচ ২০১১ সালে যে আদমশুমারি হয়, তখন এসব ব্যক্তি ছিলেন অনুপস্থিত। ২০২২ সালের আদমশুমারি চলাকালে ওই পাড়ায় তাদের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। পুলিশী তদন্তেও মেলেনি কথিত এ ‘দাতা’দের অস্তিত্ব।
জালিয়াতির শিকার ললাটি গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়ার পুত্র জমির প্রকৃত দাবিদার রাশেদুল মামুন নারায়ণগঞ্জ আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন মামলা (নং-৩২/১৮) করেন। দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪১৯/৩৪ ধারায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ পরিদর্শক মো: আব্দুল বাতেন মিয়া উল্লেখ করেন, ‘৯৩৮৬ নম্বর দলিলের দাতা ঝংকার ভৌমিক ওরফে ক্ষেপা, তপন কুমার পাল,আসিস কুমার এবং সমীর সরকারের পূর্বপুরুষগণ ০৫/০৩/১৯৪৫ খ্রীঃ তারিখে ২০০৮ নং সাব কবলা দলিলমূলে বাদীর পূববর্তীদের নিকট নালিশী জমি হস্থান্তর করিয়া দখল বুঝাইয়া দিয়া সুদীর্ঘ ৭০ বছরের উর্ধŸকাল পূর্বে তাঁহারা চিরতরে ভারতে চলিয়া যান।’
ললাটি গ্রামের প্রবীন বাসিন্দারাও জানান, ঝংকার ভৌমিক চাকরিতো দূরে থাক, পাড়া-প্রতিবেশী কেউ কোনোদিন তাদেরকে দেখেও নি। গ্রামের বয়ষ্ক মানুষরাও মনে করতে পারেন না, এই স্বদেশ রায়টি কে ? তবে ইউপি চেয়ারম্যান তাদের ওয়ারিশয়ান সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সেটির ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম তাদের নাম উঠেছে। হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি। বাস্তবে তাদেরকে কেউ কখনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখেনি। নির্বাচন ভোটারবিহীন হয়ে পড়ায় কে ভোট দিলো, কে দেয়নি- সেই খোঁজ কেউ রাখে না। ফলে এভাবেই চলছে ঝংকার ভৌমিকের মতো অস্তিত্বহীনদের ভৌতিক কার্যক্রম।
এভাবে ভারতীয় নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় তুলে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া এনআইডি।অনেক সময় অস্তিত্বহীন, মৃত ব্যক্তিদের নামেও তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া এনআইডি। দেশের প্রায় সব জেলায় কম- বেশি ভারতীয় নাগরিকদের ভোটার করার প্রমাণ মেলে। তবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। কারণ হচ্ছে, শিল্প-কারখানার কারণে এসব এলাকার জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। স্থাবর সম্পত্তির প্রতি লোভের দৃষ্টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। তারা যেনতেন প্রকারে জমি নিজের কব্জায় নিতে সহযোগিতা নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী টাউট,জালিয়াতচক্রের। জালিয়াতচক্রের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভা,নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি,সাব- রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস এমনকি পুলিশ প্রশাসনও।
মুন্সিগঞ্জে দলিল করছেন মৃতরা : রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ জেলা একটি ক্রমবর্ধিষ্ণু শিল্পাঞ্চল। এ জেলায় হরহামেশাই ঘটছে জাল-জালিয়াতির ঘটনা। জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ফৈনপুর গ্রামের মৃত তারাচান্দ, মাতা মৃত জয়দা সুন্দরী। ভারত বিভক্তির পর সপরিবারে ভারতে মাইগ্রেটেড হন তারা। তাদের পুত্র তুফান করাতি ওরফে তুপানি করাতির কাছ থেকে সম্পত্তি ক্রয় (দলিল নং-৫২৬৬,তারিখÑ২২/০৯/২০২০) দেখান গকূল নগর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী আশ্শাহাদাত। পরে তার কাছ থেকে জমি ‘ক্রয়’ (দলিল নং-৬২৮২,৬৩২৩,তারিখ-২৭/১০/২০২০) দেখান রোহিতপুর, কেরানীগঞ্জ নতুন শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা জাইদুল মিয়া। এ ঘটনায় গতবছর সিরাজদিখান মরিচা গ্রামের শ্রী সুনীল ঋষি দাস ওরফে সুনীল দাসসহ ৬ জন বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে মামলা (নং-৪২/২০২৩) করেন। এতে খগেন চন্দ্র সরকার,আশশাহাদাত, জাইদুল ইসলামসহ ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়। আর্জিতে উল্লেখ করা হয় যে, ৯ নম্বর বিবাদী (আশশাহাদাত) প্রতারণামূলভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নি:স্বত্ববান ও বহু আগেই মৃত্যুবরণকারী অনাথ করাতি ও তুফানি করাতি ওরফে ভুপানী করাতির নাম ব্যবহার করে তাদের পক্ষে অন্য ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে সিরাজদিখান সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে আম মোক্তারনামা তৈরি করে। সেই আমমোক্তারনামার ভিত্তিতে ১০ নম্বর বিবাদী (জাইদুল) কে দলিলে ‘গ্রহিতা’ দেখায়। সেই দলিলের ভিত্তিতে জাইদুল ‘সাফ কবলা বিক্রি’ (দলিল নং-৬৩২৩) দেখান আশশাহাদাতের কাছে। এই দলিলের ভিত্তিতে কথিত ক্রেতা নামজারিও করেন। সর্বশেষ জনশুমারির রেকর্ড এবং শেখরনগর ইউপি চেয়ারম্যানের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী, আমমোক্তার দাতা তুপানি করাতি ২০০১ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন। অনাথ করাতি মারা গেছেন ১৯৯৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। এটিকে সত্য ধরলে দলিল নম্বর ৩৫৯৮ এএস ১১৩, আর এস ২১৯ নং খতিয়ানের এস এ ৭৬ আর এস ১৬২ নং দাগে ৫৫ শতাংশ জমির দলিল রেজিস্ট্রিকালে সংশ্লিষ্ট সাব- রেজিস্ট্রার কোত্থেকে তুপানি এবং অনাথ করাতিকে কোথায় পেলেন ?
ফৈনপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তুপানি করাতি মূলত: বহু আগে ভারতের মাটিতে মারা গেছেন। অন্য নারীকে ‘তুপানি করাতি’ সাজিয়ে অস্তিত্বহীন ও মৃত ভারতীয় নাগরিক এই নারীর নাম তোলা হয় ভোটার তালিকায়। তৈরি করা হয় ভুয়া এনআইডি। উপজেলার ফৈমপুর গ্রামের একটি শক্তিশালী চক্র তুপানির সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। গ্রামের খগেন চন্দ্র সরকার, খোকন চন্দ্র সরকার, স্বাগত সরকার, সুশান্ত সরকার, হৃদয় সরকার,পলাশ সরকার,স্বপন সরকার,পবিন সরকার এই জালিয়াতচক্রের সদস্য বলে জানা যায়। সিরাজদিখান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারি, দলিল লেখক,ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এ চক্রের সঙ্গে।
হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সম্পত্তি : ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২টি পিটিশন মামলা (নং-৭০৩/২০১৭ ও ৩২১৮) হয়। এতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা এবং দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪১৯/৩৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, সোনার গাঁওয়ের বড়ৈবাড়ি মৌজাস্থিত খতিয়ান নং-সি.এস.৩৬,এসএ-১৩ এবং আরএস ৮৫ দাগ নং সিএস ও এসএ-১২১ ও ১২৪, আরএস ১৮০ ও ১৮১ এর ৯৩ শতাংশের কাতে ৭৪ শতাংশ, তার মধ্যে ৪৫ শতাংশ সম্পত্তির মূল মালিক ছিলেন হরিচরণ সরদার গং এবং পোকাই বাগমার ভুইয়া ওরফে পোকাই পাল সরকার। কয়েক প্রজন্ম হয়ে ১৯৮২ সালে ক্রয়সূত্রে (দলিল নং-১৮২২) সম্পত্তিটির মালিকানা অর্জন করেন মামলার বাদী আব্দুর রশিদ ও পরবর্তীতে তার ওয়ারিশ রাশেদুল মামুন। এজাহার মতে, জালজালিয়াতির মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওয়ারিশ দাঁড় করিয়ে এ সম্পত্তির আমমোক্তারনামা নিচ্ছে একটি চক্র। আমমোক্তার দলিল (নং-৯৩/৮৬) সৃষ্টি করেন ললাটি গ্রামের মজিবুর রহমানের পুত্র মনির হোসেন, মোসা: ইয়াসমিন আমিন শিমু, ঢাকার ৭০/এফ, ইন্দিরারোড নিবাসী হাজী নজরুল ইসলাম,আজহারুল ইসলাম ও হামিদুল ইসলাম। দলিলের ‘দাতা’ সাজানো হয় মতিলাল, ঝংকার ভৌমিক ওরফে ক্ষ্যাপা,তপন কুমার পাল,আসিস কুমার, সমীর সরকারকে। অস্তিত্বহীন এসব ব্যক্তিকে ‘দাতা’ সাজিয়ে রেজিস্ট্রি করে নেয়া সম্পত্তির সর্বশেষ ভোগকারী নজরুল,আজহারুল ও হামিদুল হচ্ছেন উড়োজাহাজ মার্কা আলকাতরা উৎপাদনকারী ‘নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স’র মালিক। শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার এই জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স।
একইভাবে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বৈদ্যের বাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৩০ শতাংশ জমির একটি আমমোক্তার দলিল (নং-৯৩৮৬) হয়। এটির গ্রহিতা নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার দেওয়ানবাগ গ্রামের মৃত আবুল বাশারের পুত্র মাহমুদ হোসেন। দাতা দেখানো হয় সুবেদ ঢালী, স্বপন চন্দ্র ঢালীকে। কথিত দুই দাতা হিসেবে সুবেদ ঢালী এবং স্বপন চন্দ্র ঢালীর এনআইডি ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে ললাটি গ্রামে এমন নামের কেউ নেই। অন্য ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে সৃষ্টি করা হয় আমমোক্তার দলিল। এর ভিত্তিতে মাহমুদ হোসেন সাফকবলা দলিল (নং-৩৫৯৬) করে দেন ঢাকার লালবাগ এলাকার নূরউদ্দিনের পুত্র হাসান উদ্দিন আহমদ,ধানমন্ডির জহিরুল ইসলামের পুত্র মো: সাইফুল ইসলাম এবং মুন্সিগঞ্জের মো: জয়নাল আবেদীনের পুত্র মো: হুমায়ুন কবিরকে।
একই বছর ২ জুন ৪৫ শতাংশ জমির আমমোক্তার দলিল (নং-১০০০০) করেন কাঁচপুর নিবাসী মো: লতিফ খানের ছেলে মনির খান। তাকে আমমোক্তারনামা প্রদান করেন মন্টু দাস। বাস্তবে মন্টু দাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্য ব্যক্তিকে মন্টু দাস সাজিয়ে সম্পাদন করা হয় দলিল। পরবর্তীতে মনির খান এ জমি সাফকবলা রেজিস্ট্রি (দলিল নং-৩৫৯৭) করে দেন হাসান উদ্দিন গংকে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল আরেকটি আমমোক্তার দলিল (নং-৪৯১৬) মূল্যে ৫৫ শতাংশ জমি বিক্রি হয় বন্দর থানাধীন কুড়িপাড়া ১নং ডিসি মেইল নিবাসী খলিলুর রহমানের ছেলে সোয়েবের কাছে। এটির দাতা আসিস সরকার,তপন সরকার,সমীর সরকার,রঞ্জিত সরকার (অরুণ)। সোয়েবের কাছ থেকে সাফকবলা দলিল করে নেন মো: হাসানউদ্দিন, সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবীর। তারা জহির স্টিল রি-রোলিং মিলসের (জেডএসআরএম) মালিক।
ইউপি চেয়ারম্যানদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ : অনুসন্ধানে জানাযায়, স্থানীয় জালিয়াতচক্রের চিহ্নিত সদস্য মো: মনির হোসেন। জাল-জালিয়াতির মামলায় তিনি কারাভোগও করেছেন। তাতেও বন্ধ হয়নি তার জালিয়াতি। তিনি ভারতীয়দের বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে সনাক্ত করে চেয়ারম্যানদের সামনে হাজির করেন। চেয়ারম্যানও কোনো প্রকার যাচাই-বাচাই ছাড়া জন্ম নিবন্ধন এবং ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ইস্যু করেন। জানাযায়, মনির হোসেন প্রায়ই ভারত যাতায়াত করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে বহু আগে ভারত পাড়ি জমানো সংখ্যালঘু পরিবারের উত্তরাধিকারদের নাম-ধাম খুঁজে বের করেন। সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় ভারতীয় হিন্দু পরিবারের সদস্যদের নাম ওঠান। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হাত করে ‘রেকর্ডীয় মালিক’ মালিক দাঁড় করান তাদের। কথিত এই মালিকদের কাছ থেকে আমমোক্তার দলিল করেন সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের নামে। এ দলিলের ভিত্তিতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাফকবলা রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়। এই চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক (লাইসেন্স নং-৬৩) মো: আমিনুল হক, মোসা: ইয়াসমিন আমিন শিমু,মনির খান, মাহমুদ হোসেন স্থানীয় দালাল হিসেবে কাজ করেন-মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভারতীয় নাগরিক সমীর সরকার,আসিস সরকার এবং তপন সরকারকে ললাটি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা উল্লেখ করে গত ০৫/০৯/২০১৯ তারিখে ওয়ারিশ সনদ প্রদান করেন কাঁচপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন। আবার এই সমির সরকারকেই জন্ম নিবন্ধন সনদ দেন (নিবন্ধন বহি-০২০, তারিখ-০৭/০৫/২০১২ ইং) সাদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা। সেখানে সমির সরকার,পিতা-স্বদেশ সরকারের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সাদীপুর ইউনয়নের নানাখি গ্রামে। একই ব্যক্তিকে দুই ইউনিয়নে দুই গ্রামের বাসিন্দা দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ মোল্লা প্রতিবেদককে বলেন, আমি অফিসে গিয়ে না দেখে কিছু বলতে পারবো না। মুখস্ত কিভাবে বলবো ?
ভারতীয় নাগরিকের নামে সনদ ইস্যু প্রসঙ্গে কাঁচপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। তারপরও যদি ভুল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার এখানে কয়েকটি জালিয়াতি ধরা পড়েছে। পরে তদন্ত করে দেখা গেলো, স্বাক্ষরগুলো জাল। তদুপরি যদি কেউ অভিযোগ করেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো। এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক রেখে এসব প্রতিষ্ঠান তুলে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি গ্রাসের অভিযেগা সম্পর্কে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় জেডএসআরএম’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে জনৈক ফারহানের একটি নম্বর দেয়া হয়। তাকে বহুবার ফোন করলেও ধরেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে এসএম দিয়েও মেলেনি সাড়া। একইভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ‘নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স’র মালিক মো: নজরুল ইসলামের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রচারিত নম্বরে ফোন করে কোনো সাড়া মেলেনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কালিয়াকৈর পুকুর থেকে নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার
চেয়ারে দাঁড়িয়ে ইয়ানসেনের ইন্টারভিউ নিলেন দুই সঞ্চালক!
আজ নায়ক রাজ রাজ্জাকের ৮৩ তম জন্মদিন
ভর্তির টাকা নেই মেডিকেলে চান্স পাওয়া প্রান্তির
খুলনায় হিফজ এ্যাওয়ার্ড ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোন জায়গা নেই -আমান উল্লাহ আমান
কুষ্টিয়ায় যুবদল কর্মীকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় হাবলু মোল্লা
কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে অস্ত্র-গুলি-ককটেল উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় ইউসুফ শেখ হত্যা মামলার পলাতক আসামী পুলিশের হাতে আটক
ঈশ্বরগঞ্জে ইউএনও’র সরকারি মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে টাকা দাবি
পটুয়াখালীতে ড.মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিল নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়
উত্তরা রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে ইনভেস্ট করতে চায়: প্রেস সচিব
দেশের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের
বিপ্লবী ছাত্রদের স্বপ্ন ভেঙে পড়ছে বেকারত্বে
মেম্বারকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
রংপুরকে মাটিতে নামাল রাজশাহী
দাম কমল রিয়েলমি সি৬৩ স্মার্টফোনের
দোয়ারাবাজারে রাস্তা নির্মান কাজে বালু ব্যবহার! কাজ বন্ধ করল এলজিইডি
ঘুমন্ত কিশোরীসহ তিন জনকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা