কঠিন কষ্টের জীবনধারণ
২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৬ এএম
দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের রুজি-রোজগারে মহাসঙ্কট : কবে ফিরবে স্বাভাবিক জনজীবন
কোটা সংস্কার আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সহিংসতা এবং কারফিউর প্রেক্ষিতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তরাও। আর্থিক অনটন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং পণ্যের স্বল্পতায় অনেকেই চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষের যেন কষ্টের সীমা নেই। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে তৈরি প্রতিবেদন :
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে শফিউল আলম জানান, ‘সকাল ১০টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি, মাত্র ছয়টি ক্ষ্যাপ মেরে ভাড়া পেয়েছি ১৮০ টাকা। এর মধ্যে রিকশার মালিকের জমা ১২০ টাকা। বলেন দেখি- বাদবাকি ৬০ টাকা দিয়ে কী কিনি, কীভাবে চলি, কী খাই? আর এক ঘণ্টা পরে কারফিউ শুরু হলে যাত্রীও তো পাব না’।
গতকাল মঙ্গলবার তখন বিকাল ৩টা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের চকবাজার কাপাশগোলা মোড়। এই কথাগুলো বললেন রিকশাচালক মো. মাসুদ (৪৫)। তার বাড়ি রংপুরে। মাসুদের মতো দিনে এনে দিনে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের এক-দু’বেলা খাবার যোগাড় করতে গিয়ে এখন হিমশিম অবস্থা। তাদের জীবন ধারণ কঠিন কষ্টের। ভ্যানচালক, ঠেলাচালক, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, বন্দর-ঘাট শ্রমিকদের রুজি-রোজগার মহাসঙ্কটে। গতকাল বন্দরনগরীর কাজির দেউড়ি, জুবলি রোড, মমিন রোড, জামাল খান ও চট্টেশ্বরী রোডজুড়ে নিম্ন আয়ের কয়েক জন মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ। প্রধান সমুদ্রবন্দর অচলপ্রায়। কর্ণফুলির লাইটারের ঘাটগুলোতে কর্মহীন খাঁ খাঁ অবস্থা বিরাজ করছে। সামুদ্রিক মাছের অবতরণকেন্দ্র ফিরিঙ্গিবাজার ঘাট প্রায় ফাঁকা। সদরঘাটের লবণঘাট প্রায় জনশূন্য। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর এবং শিল্পাঞ্চলগুলোতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজের ওপর যাদের আয়-রোজগার নির্ভরশীল, তারা উপায়হীন, চোখে-মুখে অন্ধকার।
সবার চোখে-মুখে প্রশ্ন- দেশে চলমান অশান্তি-অস্থিরতা, সঙ্ঘাত-হানাহানি আর কারফিউ কতদিন ধরে চলবে, কবে শুরু হবে স্বাভাবিক জীবনযাপন।
চরম দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে চলমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সারা দেশে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনায় কারফিউ জারির ফলে কুড়িগ্রামের হতদরিদ্রের ত্রাহিঅবস্থা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে ছিল শান্ত। এছাড়া র্যাব বিজিবি পুলিশ আনসার সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর তৎপরতার কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি তেমন কোনো দৃশ্যমাণ ছিলো না। হাটবাজার দোকানপাট খোলাবাজার মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতোন। হঠাৎ করে কারফিউ জারির আওতায় কুড়িগ্রামকে অর্ন্তভ‚ক্ত করায় মানুষের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। জেলায় অতিদরিদ্র ৫৩.৯%, দিনমজুর ৩৭.২%, ভ‚মিহীন ৭%, রোগব্যাধিতে আক্রান্ত ৫৭% (সূত্র) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
তাছাড়া সম্প্রতি বন্যায় সরকারি হিসাব মতে প্রায় পৌণে ২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কুড়িগ্রাম কারফিউ জারি থাকায় মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। সেই সাথে পুরো কুড়িগ্রাম দমকে গেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবি মানুষরা পড়েছে মহাবিপাকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কুড়িগ্রাম আদর্শ পৌর বাজারে কারফিউ শিথিল হওয়ার সাথে সাথে বেচাকেনার আশায় দোকানপাট খুললেও ক্রেতাশূণ্য। তাছাড়া দিনমজুরা হচ্ছে তাদের প্রধান ক্রেতা তাদের হাতে কাজ না থাকায় তাদের হাতে টাকা পয়সা নেই। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নি¤œমুখী করা হলেও তাদের ক্রয়ের সামর্থ্য নেই।
কুড়িগ্রাম আদর্শ পৌর বাজার সমিতির সভাপতি, আব্দুল ওয়াদুদ মন্ডল জানান, জনগণের জন্য পৌর বাজারে খাদ্য পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। ক্রেতা সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁচামাল সেই সাথে ফলমূল নষ্ঠ হয়ে গেছে। এইরকম চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা। শান্তিপ্রিয় কুড়িগ্রাম জেলার মানুষকে বাঁচাতে হলে কুড়িগ্রামকে স্বাভাবিক ভাবে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে ভেবে দেখা উচিত।
কুড়িগ্রাম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আয়নাল হক জানান, সংগঠনের সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে তার মধ্যে সাড়ে ৩শ বিভিন্ন জেলায় আটকা পড়েছে। তাদের পরিবারসহ অসংখ্য শ্রমিক খাদ্যসামগ্রীর আশায় তার বাড়িতে ভিড় করছে। এই আপদকালীন সময়ে উত্তরণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তা নাহলে শ্রমিকরা আরো বিপদে পড়বে।
কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্জ আব্দুল আজিক মিয়া বলেন, কুড়িগ্রাম স্বভাবগত ভাবেই শান্ত জেলা। এখানে রাজনৈতিক সহিংসতা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে কারফিউ জারি করায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সঙ্কটের কারনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কুড়িগ্রামকে স্বাভাবিক রাখতে অচিরেই প্রশাসনের সাথে আলোচনা করবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীক ইনকিলাবকে জানান, কুড়িগ্রাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সমন্বয়ে কঠোর নজরদারী কারণে কোনো প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। আজ সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
ফরিদপুরে জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ
আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে জানান, কারফিউর চতুর্থ দিনে জেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। নিñিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল সমগ্র জেলা। সরকারি দুটি হাসপাতালসহ ৩৫টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। জরুরি সেবার মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা নিতে ওষুধ মিলছে তো ডাক্তার মেলেনি, ডাক্তার মিলছে তো ওষুধ মেলেনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা সদরের শরীয়তুল্লাহ বাজার। প্রতিদিন দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলা থেকে এখানে কাঁচামাল সরবরাহ করা হলেও কারফিউর কারণে সেগুলো আসছে না। জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে লালবাতি জ্বলে ওঠার উপক্রম হয়েছে। পেঁয়াজ রশুন এবং পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুর সালথা ও নগরকান্দা। সেই বাজারগুলো এখন প্রায় ব্যবসায়শূন্য। ফলে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ আকারের ব্যবসাগুলো সঙ্কটে পড়েছে। খাঁ খাঁ করছে কাঁচামালের আড়ৎগুলো। পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা না থাকায় ব্যাংক, বীমা, বিকাশের লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। মানুষের প্রয়োজনের এটিএম বুথগুলো থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাজারের ব্যাগ নিয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন।
ফরিদপুর সদর থানার ৮/৯টি বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-ভোক্তাদের সাথে কথা বললে তারা ইনকিলাবকে জানান, সব পণ্যের মূল্যই আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। পাশাপাশি নদীতে বাড়ছে বন্যার পানি। মাথার ওপর বৃষ্টি। তলিয়ে গেছে শহরের নিম্নাঞ্চল। শহরের অনেক জায়গায় ড্রেনেজ অব্যবস্থার কারণে প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথায় গিরা পানি জমে রয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শত শত একর জমি ফসলসহ তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সব্জি খেত। জেলার চতুর্দিকেই সীমাহীন দুর্ভোগ, গো-খাদ্যেরও চরম সঙ্কট। জনজীবন একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে।
আর্থিক কষ্টে দুর্বিষহ জীবন মানুষের
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, অব্যাহত কারফিউয়ে মাদারীপুরের জনজীবন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এবং কোনো কাজকর্ম করতে না পারায় মানুষ আর্থিক কষ্টে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনা সদস্য এবং পুলিশের কড়া টহলের কারণে মাদারীপুরে জনশূন্য পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যেন ফাটল সৃষ্টি না হয় : সালাহউদ্দিন
জুলাই-আগস্ট নৃশংসতা: জাতিসংঘে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠিয়েছে সরকার
ইসলামি আদর্শের প্রতি বিদ্বেষ রেখে কোন দল ক্ষমতার চিন্তা করতে পারবে না: এএমএম বাহাউদ্দীন
দুদকের মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে পদোন্নতি
বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে সৈয়দপুরে রেস্তোরাঁ মালিকদের মানববন্ধন
ব্যর্থ ও দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় চায় না: ইসলামী আন্দোলন
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
চাঁদাবাজির তকমা থেকে পরিবহন সেক্টরকে বের হতে হবে : শিমুল বিশ্বাস
ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক হলেন জাফর ইকবাল
প্রথম ম্যাচের অর্থ পুরস্কার দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের দিলেন ফ্রিটজ
শুধু ঘোষণাপত্র নয়, ১৬ বছরের আন্দোলনের স্বীকৃতি চায় ১২ দলীয় জোট
‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ হতে হবে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি - খেলাফত মজলিস
পাহাড় কাটা মনিটরিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : রিজওয়ানা হাসান
মেট্রোরেলের শুক্রবারের সময়সূচি পরিবর্তন
লৌহজংয়ে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
নবাব সলিমুল্লাহ অসংখ্য নেতা তৈরির মৌলিকক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন : বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
আগামী সপ্তাহে সুইজারল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
নালিতাবাড়ীতে মোবাইল কোর্টে ৭ ব্যক্তির কারাদন্ড
জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে সে জমি খাস হিসেবে রূপান্তর করা হবে : ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসন
গণঅভ্যুত্থানের শুধু ঘোষণাপত্র নয়, ১৬ বছরের আন্দোলনের স্বীকৃতি চায় ১২ দলীয় জোট