দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে: নাহিদ ইসলাম
২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কার করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির সাথেই এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নাহিদ ইসলামের নামে একটি বক্তব্য পোস্ট করা হয়। সেখানে নাহিদ ইসলামের বরাতে এসব কথা বলা হয়।
ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্য: চলমান আন্দোলনের সকল শহীদদের স্মরণ করছি এবং প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিকদের স্যালুট জানাচ্ছি। আপনারা জানেন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে আলোচনার জন্য বলা হচ্ছিল। আমরা বলেছিলাম আমাদের ভাইদের শহীদ করা হয়েছে, আমাদেরকে হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, রাজপথে এখনো গুলি চলছে, এই অবস্থায় আমরা কোনো ধরনের সংলাপে যাবো না। সরকারকে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শুক্রবার ১৯ জুলাই রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাকে নানা পক্ষ থেকে জোরাজোরি করা হয় সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য এবং কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য। আমি সংলাপের আহ্বানকে বরাবরের মত প্রত্যাখান করি। পরে কারফিউ এর ভিতরও শাটডাউন কর্মসূচী অব্যাহতের ঘোষণা দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখি এবং বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে মেসেজটি পৌঁছাই। কিন্তু কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদটি রাতে প্রচার করা হয়নি। পরের ঘটনা আপনারা সকলেই জানেন, আমাকে সেই রাতেই তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সমন্বয়ককে সেই রাতে গুম করা হয়। পরের ঘটনাক্রম থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে এবং আমাদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনা ঠেকাতে এই গুমের পরিকল্পনা। ইন্টারনেট বন্ধ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ সরকারের কব্জায় থাকায় যেসব সমন্বয়ক বাহিরে ছিল তাদের নির্দেশনা প্রচার করা হয়নি অথবা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। পুরো সময়টায় আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিক শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। শত শত মানুষ শহীদ হয়েছে। আমরা তখন তাঁদের পাশে থাকতে পারিনি। এজন্য আমাদের ক্ষমা করবেন। আমি বের হয়ে আহত অবস্থায় যথাসম্ভব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং অন্য সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। গতকাল (বুধবার) গুম হওয়া আসিফ মাহমুদ ও বাকেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আসিফ মাহমুদের স্ট্যাটাসে নাহিদ ইসলামের বরাতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু কথা:
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসদের সাথে আলোচনা ব্যতীত জারিকরা কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে আমরা গ্রহণ করছি না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী যায়গায় সকলপক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।
সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই ইচ্ছামত কোটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারে। তাই অংশীদারদের অংশগ্রহণে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে যা কোটা পদ্ধতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে। কোটার যেকোনো পরিবর্তন এই কমিশনের সুপারিশ সাপেক্ষে হতে হবে। এবং আমাদের একদফায় সংসদে আইন পাশের বিষয়টি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কোটা সমস্যার এখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। ২০১৮ সালেও আন্দোলনের চাপে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল ৬ বছরেই সেটা বাতিল করা হয়। আমরা এই পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপনের খেলায় আর বিশ্বাস করি না।
দ্বিতীয়ত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তাই প্রজ্ঞাপন জারির সাথেই এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা-নিপীড়ন চালিয়ে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হত্যা, গুম, গ্রেফতার, ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন ও প্রোপাগান্ডা— রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল শক্তিকে ব্যবহার করে সরকার আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেছে। ফলে বাংলাদেশে গণহত্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণেই এই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই নিতে হবে।
সরকার এখন এসব দমন-পীড়ন ও হত্যাকে আড়াল করছে এবং মিডিয়াকে ব্যবহার করে কেবল নাশকতার ঘটনা প্রচার করছে যার সাথে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। এবং পুরো ঘটনাকে 'সরকার বনাম বিরোধী দলের সংঘাত' হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই আন্দোলন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের পাশে অভিভাবকসহ সর্বস্তরের নাগরিকে রাজপথে নেমে এসেছিল। ছাত্র-নাগরিকরাই সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আট দফা ও নয়দফা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আট দফা ও নয় দফার সাথে কোনো নীতিগতবিরোধ নেই। মূল বক্তব্য একই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে সকলের সাথে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত বক্তব্য ও কর্মপরিকল্পনা সকলের সামনে পেশ করবো।
এখন আমাদের জরুরি চারটি দাবি হলো- ইন্টারনেট খুলে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে সকল ক্যাম্পাসের হল খুলে দেওয়া, কারফিউ প্রত্যাহার করা এবং সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমাদের দুটি দাবি ইতোমধ্যে আংশিক পূরণ হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে ও কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে। সারাদেশের অনেক সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন, করনীয় জানতে চাইছেন।
আন্দোলনকারী সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- ১. রংপুরের আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্মরণ করুন। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করুন। তাঁদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করুন। শহীদদের কবর জিয়ারত করুন। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করুন। ২. হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে যান, তাঁদেরকে যথাসম্ভব সহোযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আমরা ঢাকা থেকে দ্রুতই একটা ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিবো। ৩. এখনো অনেক লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় নি। সক্ষমতা থাকলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন। মর্যাদার সাথে তাঁদের দাফন করুন। জানাযায় অংশগ্রহণ করুন। ৪. প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও এলাকায় কারা শহীদ হয়েছে ও আহত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করুন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা পরবর্তীতে সমন্বয় করবো। ৫. যেসকল সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল তাদেক চিহ্নিত করে রাখুন।
৬. যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন নতুন করে সংগঠিত হন। সকলে নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন এবং গ্রেফতার এড়ান। ফেসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠের প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেট নির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা ভাবুন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সকলের সাথে যোগাযোগ করবো। ৭. শিক্ষার্থীরা যার যার ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৮. যেসকল শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা প্রবাসে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার করুন। বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।
সকলকে ধৈর্য ধরার ও মনোবল শক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে যখন ধরে নিয়ে গিয়েছিল একটা জিনিসই ভাবছিলাম রাজপথে এখনো মানুষ লড়ছে। যত নির্যাতনই করুক আমাকে সরকার মেরে ফেলতে পারবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। বাংলাদেশে ছাত্রদের কখনই দমন করা যায়নি এবারও যাবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা
ভোরে মিলল রাস্তার পাশে শিশু সাফওয়ানের লাশ
রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও আইএসপিতে ভ্যাট আরোপ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার
লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা
দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
মোংলায় ভটভটি উল্টে ২ জন নিহত, আহত ২
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ প্রকাশ
নাম ভাঙিয়ে তদবির-টেন্ডারবাজি: সতর্ক করলেন সারজিস
গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালিত ছেলে’ গ্রেফতার
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা
শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি
দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি
দুর্নীতির মাধ্যমে পুতুলের ডব্লিউএইচও'র পদ পাওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ভর্তি
রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নেতার পিতা বাচ্চু সরকারের দাফন সম্পন্ন
মোংলায় সড়কের ওপর রাখা পাথরের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ভটভটিতে থাকা দুই যাত্রীর মৃত্যু, আহত ৪