ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ছাত্রদের আন্দোলন : মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ মানবাধিকার কর্মীদের

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৬ পিএম | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:২০ পিএম


বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা বুধবার বলেছেন যে, তারা দেখেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে সরকার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। শাসক দলের কর্মী ও পুলিশের সাথে সাত দিনের প্রাণঘাতী সংঘর্ষে বুধবার পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে যাদের বেশির ভাগই ছাত্র এবং আহত হয়েছে কয়েক হাজার। অধিকার কর্মীরা বলছেন যে, দেশের ইতিহাসে এ ধরনের বর্বরতা নজিরবিহীন, কারণ কোনো একক আন্দোলন ঠেকাতে অভিযানে এত ব্যাপক প্রাণহানি আগে কখনো ঘটেনি।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আশা করছেন সরকার এ বিষয়ে সব তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমি যেসব স্থানে ব্যাপক ভাংচুর হয়েছে সেসব স্পট পরিদর্শন করছি। আমি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কার্যালয় পরিদর্শন করেছি এবং নিজের চোখে ক্ষতি দেখতে সেতু ভবন পরিদর্শন করব’।
কোনো হাসপাতাল বা নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও না, তবে আমরা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় এমন বর্বরতা তিনি জীবনে দেখেননি।
‘আমরা মানবাধিকারের সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে নিরস্ত্র জনগণের আন্দোলন প্রতিরোধে ব্যাপক স্তরে নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যধিক ব্যবহার দেখেছি,’ তিনি বলেন, এ ধরনের বর্বরতা কোনো কিছুর দ্বারা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। সরকার এখন রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দোষ চাপিয়ে এটিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম তারা তাদের দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর, তারা আবাসিক এলাকায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করে তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনা শেয়ার করেছিল। তিনি বলেন, বলপ্রয়োগ ও নৃশংস হত্যাকা-কে ‘গণহত্যা’র সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
সরকারের উচিত মৃত্যু ও আহতের প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা, তিনি বলেন, প্রাণহানির চেয়ে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যার ঘটনা তিনি খুঁজে পাননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা এইমাত্র প্রত্যক্ষ করেছি যে, কীভাবে সরকার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করেছে’। তিনি বলেন, এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত এ ধরনের নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য স্বাধীন, নিরপেক্ষ, দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা এবং মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সেল বলেন, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনের সব নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন প্রাণহানির বিষয়টি উপেক্ষা করে সরকার জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অন্য ক্ষয়ক্ষতি দেখাতে ব্যস্ত যে, ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমরা ভাঙচুরের বিষয়ে সঠিক তদন্ত চাই, তবে যে কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষ হত্যাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেন গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, জাতিসংঘের এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত, কারণ এ সময়ে নিরস্ত্র মানুষের প্রতিবাদের মোকাবিলায় জাতিসংঘের লোগোসহ হেলিকপ্টার এবং সাঁজোয়া কর্মী বাহক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
মৃত্যুর সংখ্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহার ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অবিলম্বে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সূত্র : নিউ এজ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা