হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তার বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তি দাবি শিক্ষকদের
২৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম
সারা দেশে হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক-হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষক। এছাড়া চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসজুড়ে সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষকরা
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ থেকে এই দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সমাবেশে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতাও পালন করেন তারা। সমাবেশ থেকে সারা দেশে হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
সমাবেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, আজকে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক মিথ্যার ওপরে। একটা উদাহরণ থেকেই বোঝা যায়, তা হলো আবু সাঈদের এফআইআর। দেশে যা ঘটছে সাধারণ মানুষ এখন মনে করে পুলিশ যা বলে সব মিথ্যা।
শহীদ অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে অধ্যাপক শামসুজ্জোহা ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। আমরা এখানে যারা জমায়েত হয়েছি আমরা শহীদ শামসুজ্জোহার উত্তরসূরী। আমাদের ছাত্ররা যে অধিকারের জন্য, বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারা মুক্তিযোদ্ধাদেরই উত্তরসূরি। এই লড়াইয়ের ফলাফল কী হবে সেটা ইতিহাসই আমাদেরকে নির্দেশ করছে, আমাদের করণীয় কী সেটাও ইতিহাসই আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসুদ ইমরান বলেন, আমি এখানে কোনো বিচার চাইতে আসিনি, আমি ঘৃণা জানাতে এসেছি। এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঘৃণা জানাতে এসেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য সমন্বয়কদের নিয়ে রাতে যখন নাটক চলছিল তখন আমি ওই ছেলেটির মুখটিও খুঁজছিলাম। কিন্তু তাকে দেখা যায়নি। ওকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ও গেল কোথায়? আরও অনেক শিক্ষার্থীকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওরা গেল কোথায়?
শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের আশঙ্কা করে তিনি বলেন, একটা আইনব্যবস্থার মধ্যে একটি রাষ্ট্রে জোর করে মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে একটি সংস্থা। আমাকেও হয়তো রাস্তা থেকে তুলে নেবে কেউ জানতেই পারবে না। এটা কোন দেশে আছি? কোথায় আছি? আর কতদিন এভাবে চলবে? এই রাষ্ট্রব্যবস্থা, তার চেতনাজীবী, বুদ্ধিজীবী সবার প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছি। ঘৃণা জানাবার জন্যই এখানে এসেছি কোনো বিচার চাইতে আসিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, মিথ্যার প্রচারণা যারা করছেন এটা একসময় তাদের বিরুদ্ধেই বুমেরাং হবে। রাখালবালককে সত্যি সত্যি বাঘে ধরলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আজকে ১৭ বছরের বাচ্চাকে বলেন রাজাকার। আর একাত্তরের পরে যারা জন্ম নিয়েছে তাদের বলেন মুক্তিযোদ্ধা।
ঢাবির আরেক শিক্ষক চৌধুরী সায়েমা ফেরদৌস বলেন, বিচার কার কাছে চাইবো, কোথায় চাইব? আমরা ঘৃণা জানাই। ক্যাম্পাসে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঞ্চনা হয়েছে। আমি সারারাত ঘুমাতে পারি না। যে বাবা-মা’র বুক খালি হয়েছে তাদের ঘরের কী অবস্থা! আপনারা আমাদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না। জন্মেছি একবার, মরবও একবার, ভয় দেখাবেন না।
সমাবেশে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন শিক্ষকরা। সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দেশের মানুষের কথা বলার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাবি অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, বিদেশি পত্রিকা, টেলিভিশনে খবর দেখে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক অধ্যাপক আমাকে ইমেইল করেছে। সে চিন্তিত বাংলাদেশ নিয়ে। আমার দেশের শিক্ষকরা কোথায়? এখানে কেন এই অল্পসংখ্যক শিক্ষক?
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চুপ থাকা অন্যায় কিন্তু এর চেয়েও বড় অন্যায় মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া। আশা করি আজকের পর থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলো টেলিভিশন হয়ে উঠবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস বলেন, সরকার ভুল পথে নয়, মিথ্যাচারের পথে হাঁটছে। প্রথমদিনে ছাত্রলীগ, হেলমেটবাহিনী, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের পিটিয়েছিল। সেটার পরই যদি সরকার সংশোধন করে নিত আমরা বলতাম ভুল। ভুল তো বারবার হয় না। আর এটা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া- এই শপথ নিয়ে তারা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকেন তারা এতবার ভুল করতে পারেন না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইমুম রেজা, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রীতু শারমিন, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক অলিউর সানসহ আরও অনেকে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কাপ্তাইয়ে সাক্রাছড়ি জলাশয়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা
সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
তানজানিয়ায় মারবার্গ ভাইরাস সন্দেহে ৮ জনের মৃত্যু, ডব্লিউএইচওর সতর্কতা জারি
নেত্রকোণায় আ.লীগ নেতা লক্ষীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান তুহিন গ্রেফতার
শামীম ওসমান ও নানক পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদী থেকে বৃদ্ধের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব ১৮ ই জানুয়ারি শুরু
ভূয়া আসামি দাঁড় করিয়ে জামিনের ঘটনায় ৪ জনের নামে মামলার নির্দেশ
শরীয়তপুরে ওরশ পালনকে কেন্দ্র করে জেলা হেফাজতে ইসলাম ও আয়োজক - ভক্তবৃন্দের মধ্যে উত্তেজনা
কুমিল্লায় ভিন্ন ধর্মের দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ৩৯ বছর
সিএনজি চালিত অটো রিক্সাভর্তী ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার ৪
বিএমআই নয়, স্থূলতার জন্য চাই নতুন মানদণ্ড ,প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের
শিল্পকলার জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল 'সাধুমেলা'
মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের কাজে যোগ দিতে না দেওয়া ১২০ শ্রমিকদের চাকরী বহাল
হুথি লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশ
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে মৌখিক হস্তান্তর,দুটি হল পরিদর্শন রবিবার
কোটচাঁদপুরে পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার আসামি কটাকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা
শুল্ক বৃদ্ধি প্রমাণ করে সরকার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উদাসীন : বাংলাদেশ ন্যাপ
কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন