পুলিশকে যদি গুলি চালাতেই হয়, তবে পায়ের দিকে লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে: শুনানিতে আইনজীবী
৩০ জুলাই ২০২৪, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৮:০১ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে আরও শুনানি ও আদেশের জন্য বুধবার (৩১ জুলাই) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন। এদিন শুনানিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মহড়া ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের খবরের বিষয় উঠে আসে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনির, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এস কে) মোরশেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। শুনানিতে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া ও শাহ মঞ্জুরুল হক।
শুনানিতে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘পুলিশকে যদি গুলি চালাতেই হয়, তবে পায়ের দিকে লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে। রাতের বেলায় কেউ ডাকাতি করতে গেলে আত্মরক্ষার্থে সরাসরি গুলি করতে পারবে।’ এরপর অন্য আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে আরও শুনানি ও আদেশের জন্য মুলতবি করেন আদালত।
এ সময় আদালত বলেন, ‘এমন কোনো কাজ করবো না যাতে জাতির ক্ষতি হয়। সব মৃত্যুর ঘটনায় আমরা লজ্জিত।’ অনীক আর হক বলেন, ‘জাতির ক্ষতি বলতে শুধু কিছু ভবন, স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি বোঝালে হবে না, জীবনের ক্ষতিও জাতির ক্ষতি। আগে বিক্ষোভ দমন বা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গরম পানি, মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতো।’
তখন আদালত বলেন, ‘টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তার আগে মাইকিং করে সতর্ক করতে হবে। আমরা কেউই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি না। পুলিশ কখন আর্মি কল করতে পারে সেটিও আইনে বলা আছে। পুলিশকে যে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তার খবর ও ছবি খুব একটা প্রচারে আসেনি।’
এ সময় আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘ছয় সমন্বয়ককে যে হেফাজতে রাখা হয়েছে, এটা তো স্বীকৃত। আইন কর্তৃত্ববহির্ভূতভাবে কাউকে এভাবে হেফাজতে রাখার সুযোগ নেই। আইনি ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। বলা হচ্ছে, তাদের আত্মীয়স্বজনরা দেখা করতে পারছেন। কিন্তু তারা (ছয় সমন্বয়ক) কার সঙ্গে দেখা করতে চান বা চান না সেটা জানার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে একটি নিয়ন্ত্রণ চলছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘প্রসেসের ভেতরে আটকাতে হবে। হয় রিমান্ডে নেন, নয় কোর্টে তুলুন।’শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, ‘একটা লোকের জীবন হুমকিতে আছে, তাকে মেরে ফেলবে।’
আদালত বলেন, ‘তাকে যে মেরে ফেলবে সে কথাটা তাকেই বলতে হবে। সে তো আশ্রয় চায়নি।’ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘রিট আবেদনকারীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য এসেছেন। তারা একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই এই কমিশনের সদস্য। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। কমিশনের চেয়ারম্যান একজন আবেদনকারীর বাবা।’
জাতিসংঘের একটি চার্টার উদ্বৃত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। ওই চার্টার অনুসারে অনুপেক্ষিত ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীরা গুলি চালাতে পারবে। কোনটা অনুপেক্ষিত পরিস্থিতি সে সিদ্ধান্তও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই নিতে হবে। এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ‘আমরা কোর্টের ভেতরে আছি। আইনের মধ্য থেকে কথা বলবো। এমন কিছু বলবো না যাতে কেবল মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়।’ আদালত তখন বলেন, ‘বিষয়টি সব পক্ষেরই খেয়াল রাখা দরকার। এখন দেশে যে অবস্থা, সে পরিস্থিতিতে ছয় সমন্বয়ককে পুলিশ আটক রাখতে পারে কি না।’
তখন আইন কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ‘দেশে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাকে কীভাবে রাখবে সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোটা নিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেখানে সর্বোচ্চ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। আদালত আশা প্রকাশ করেছেন, যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে সে কমিশনে প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত হবে। তা সত্ত্বেও তারা গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছে।’
সভা-সমাবেশের অধিকার নিয়ে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনি বিধিনিষেধ সাপেক্ষে সভা-সমাবেশের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে বল প্রয়োগ করেছে, তার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।’
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। তারা হলেন- আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি। এরপর এ বিষয়ে গতকাল ও আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও এদিন পুরো কোর্ট রুমে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন। রিটকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মুকসুদপুরে ৪৬তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন
পাঁচ দিনব্যাপী ইবি ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা উৎসব শুরু
মির্জাপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান তিন ব্যবসায়ীর জরিমানা
কেরানীগঞ্জে হযরতপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান : ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
বরিশালে গানমাধ্যম সংস্কার কমিশন সংবাদ কর্মীদের মতামত গ্রহন করল
বার্সার কাছে হেরে খুবই হতাশ রিয়াল কোচ
২৫ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের
১৯ জানুয়ারি ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন সফল করার আহ্বান"
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সিলেটে কোরআন খতম ও দোয়া
অধ্যক্ষ হয়ে ভাগ্য বদলে যায় অনুতোষ কুমারের
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামা হবে : কর্নেল অলি
ভুল এমনি এমনি হয় না, এর পেছনে কারো না কারো হাত থাকে : ইসি
সিলেটকে উড়িয়ে জয়ের ধারায় চট্টগ্রাম
ঈশ্বরগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সচিবালয়ের পথে জবির অনশনকারী শিক্ষার্থীরা
হাজীগঞ্জে ছেলের ঘুষিতে বাবার মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা: চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা
নরকিয়া ও এনগিডিকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ. আফ্রিকা দল
বান্দরবানে দূর্বৃত্তের গুলিতে মার্মা নারী আহত
‘বিতর্ক ওঠায়’ পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল