আন্দোলন এখন কোটাবিরোধী নয়, বৈষম্যবিরোধী : গণতন্ত্র মঞ্চ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম

 

 

 

শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী যে আন্দোলন শুরু করেছিল সেটা এখন কেবলমাত্র কোটা আন্দোলন নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই আন্দোলন এখন সরাসরি এসব হত্যার (আন্দোলন যাদের হত্যা করা হয়েছে) বিচার চায়, ওই সমস্ত মন্ত্রী যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, উস্কে দিয়েছেন ছাত্রলীগকে তাদের পদত্যাগ চায় দল থেকে এবং সরকার থেকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সমস্ত হত্যাকা-ের দায় নিয়ে যাতে জনগণের কাছে ক্ষমা চান সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) দাবি করেছে। এগুলো মানতে হবে। কারণ সরকারের মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গেছে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোটা বিরোধী আন্দোলনে সাথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) তোপখানা রোড়ে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে বাঁধার বিন্দাচল ছিলো, যে ভয়ের পাহাড় ছিলো, যে ভয়ের চাঁদর ছিলো ওগুলো চলে গেছে। যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষার্থীরা, যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষকরা, গুনীজন, মুরুব্বীরা, আইনজীবীরা, সাংবাদিকরা-সবাই যেরকম করে নেমেছে তাতে এই সরকারের মৃত্যুঘন্টা বেজেছে।

তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি, এই পরিস্থিতি ওরা (সরকার) গায়ের জোরে মোকাবিলা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের টোটাল ফোর্স নামানো হয়েছে মুভমেন্ট যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে। থামাতে তো পারেননি। সরকার সব রকম নির্যাতন করবার পরেও পারেনি এই আন্দোলন বন্ধ করতে। এই আন্দোলন বাড়ছে, আন্দোলন আরও বাড়বে। গণতন্ত্র মঞ্চ তার সাথে শুরু থেকে ছিলো, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পরাজয় না হয়।

মান্না বলেন, আমরা ‍শুরু থেকে বলেছি, তোমরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছো, নির্বাচন করছো না। অতএব নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকতে গেলে আরও বল প্রয়োগেই তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। একদম চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা-হত্যাকারীর জায়গায় পৌঁছাবার আগেই ক্ষমতা থেকে চলে যাও। আমাদের আজকে একই আবেদন, এখনো হয়ত সময় আছে, আমি বলছি, এখনো হয়ত সময় আছে পদত্যাগ করো। তারপরে দেশ কিভাবে চলবে সেটা এদেশের জনগণ বুঝবে। তোমরা জনগণের দুশমনে পরিণত হয়েছো, তোমরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না। বোধ-বুদ্ধি যদি এখনো থাকে তাহলে জনগণের কথা শুনে, দেয়ালের কথা শুনে পদত্যাগ করেন। যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবেন ততই ভালো। অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, খারাপ লাগে শুনতে। এতো বড় নেত্রী, বাপরে বাপ। বাঘে-মহিষে একসাথে পানি খায়, তিনি এরকম করবেন। কিন্তু ইতিহাস এমন, তার চাইতে বড় বড় মানুষের এই কাজগুলো করতে হয়েছে। আমি বলব, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন। যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করছেন এই নির্যাতন বন্ধ করেন। অবিলম্বে তাদেরকে মুক্তি দেন। এটা যদি না করে তাহলে শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটাও আপনারাও দেখবেন।

সরকারের ভেতরে গৃহদাহ শুরু হয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদককে (ওবায়দুল কাদের) নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ভূয়া ভূয়া শুনে সভাস্থল তাকে ত্যাগ করতে হয়েছে। তার মানে সরকারের যখন শেষ দিনগুলো পার করে হয়ত আমরা আগামীতে এই ধরণের অনেক ঘটনা দেখব।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের ছাত্র-তরুনদের আন্দোলনের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা একভাবে বিদায় দিয়ে দিয়েছে। এখন সরকার টিকে আছে কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরে। তারা যদি কেবলমাত্র রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের বাহিনী হিসেবে পেশাদারী নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন এই সরকারের একদিন বা এক মুহুর্তের জন্য আর ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ বাস্তবে কোনো অবকাশ নেই।

সাইফুল হক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এলিট বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাতে চাই, যে তরুণরা শিক্ষাঙ্গনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুলে, কলেজে তারা বুক চিতিয়ে দিচ্ছে তারা। তারা হয় আপনার সন্তান, আপনার ভাই, আপনার আত্মীয়। তাদের বুকে গুলি চালাবেন না। জনগণের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে জনগণের বুকে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, ছ‌ররা গুলি নিক্ষেপ করবেন না। সরকারকে আমরা খুব করে বলতে চাই যে, আমাদের বাহিনীগুলো কোনো ভাড়াটিয়া বাহিনী না, এদেশের তারা বাহিনী। এই বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সরকারের পদত্যাগই সংকটের সমাধান মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে বাংলাদেশে এরকম একটি হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে এই লাশের কারবালায় দাঁড়িয়ে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। এই কথা এখন বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। দেখেছেন তাদের (সরকার) রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখান করে সারা দেশের মানুষ লাল কাপড়ে, লাল ফিতায়, ফেইসবুক লাল প্রতীকে ভরে দিয়েছে। এই যে গণ অনাস্থা এটা জনগণের এই সরকারের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে।

তিনি বলেন, এই অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা সরকারকে বলি, এটা একটা রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। সমাধান হচ্ছে পদত্যাগ করুন এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।

সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।###

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১