গ্রেফতার শিক্ষার্থীসহ সবার মুক্তি দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের
০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম
সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করলে লাশ হস্তান্তরের জন্য হাতে-পায়ে ধরেন, যত বীরত্ব তরুণদের ওপর : আসিফ নজরুল
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেফতার ও আটক হওয়া শিক্ষার্থীসহ সবার মুক্তি দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি করেন। তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিলেও শিক্ষার্থীসহ অনেকেই বিচার ছাড়াই পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। বিনা বিচারে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। বলা হয়েছিল আদালত বললে পরে ছাড়া হবে, এটা একটা অপপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ছেড়ে দিয়েছে। তাদের মুক্তি হয়েছে এতে আমরা খুশি। কিন্তু এখনও অনেক ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ বিনা বিচারে আটকে আছে, সে জন্য আমরা সন্তুষ্ট নই। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যে যেখানে বিনা বিচারে আটক আছে তাদের সবাইকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি। দ্বিতীয় দাবি, এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত যেভাবে দেশের নিরপরাধ মানুষ মারা গেছেন, তাদের সকলের বিচার করতে হবে। এই বিচারের জন্য জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ খুলে দিতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দেশে ইন্টারনেটের অবাধ সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে আইন সুরক্ষার পরিবেশ দ্রæত সৃষ্টি না করা হলে, এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা বলেছেন এই ঘটনার ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি। ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সরকারের। আমার ট্যাক্সের টাকায় বন্দুক কেনা হয়েছে। আমার ট্যাক্সের টাকায় গুলি কেনা হয়েছে। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি ও বন্দুক দিয়ে মানুষ মারার জন্য বাংলাদের স্বাধীন হয়নি। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু করার ওপর জোর দেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র এই ৬ জন আটকের বিষয় নয়, সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এই সংস্থাগুলো, তার পেছনে মূল বিষয় হলো দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা হয়েছে। সেই ধারণা হচ্ছে-তারা বিচারহীনতা উপভোগ করতে পারবে চিরদিন। যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কেন মিথ্যা কথা বলছেন। বন্ধ করুন মিথ্যা কথা। আপনি বলুন-আমি নির্বিচারে গুলি করেছি। ছাত্রদের হত্যা করেছি। এই মিথ্যাচার নির্ভর সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে। কারণ দেশবাসী জেনে গেছে, এটা মিথ্যাচারের কারাগার।
সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটা বিষয়ে জনগণকে মূর্খ মনে করেছে, অথচ নিজেরা যে মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে সেটা তারা ভুলে গেছে। এই মূর্খতা, অন্ধত্ব এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে তারা যে কাজগুলো করেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আইনের লঙ্ঘন করেছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে পেশাগত উৎকর্ষের কথা তারা বলে থাকেন, যে প্রশিক্ষণ তারা পেয়েছেন সেগুলোকে পদদলিত করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে তাদের মানদÐে দেশবাসীকে বিচার করার কেনো সুযোগ নেই। দেশবাসী তাদের মতো মূর্খ নয়। তারা যে মিথ্যাচার করেছে, মূর্খতা দেখিয়েছে সেটা দেশবাসী বুঝে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই আন্দোলনের সময় যেভাবে সাজোয়া যান, হেলিকপ্টার, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হয়েছে, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের লজ্জা লাগেনা। যখন সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করে, তখন কিচ্ছু করতে পারেন না? লাশ হস্তান্তরের জন্য হাতে পায়ে ধরেন, আপনাদের লজ্জা করে না? মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়ে, অ্যাটক করে আপনারা চুপ থাকেন। সব বীরত্ব, সাহসিকতা, অস্ত্র বাংলাদেশের তরুণদের ওপর। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত, এই সমস্ত বাহিনীর যারা প্রধান আছেন আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আপনাদের মনে রাখা উচিত, চরম মানবাধিকার বিরোধী কোন আদেশ মানতে আপনারা বাধ্য না। আপনারা আজকে যে কাজ করেছে, আপনাদের সন্তানদের-আপনার নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করে দেখেন ঠিক কাজ করেছেন কিনা। আমাদের টাকায় আপনাদের অস্ত্র কেনা হয়, ট্রেনিং হয়, সমস্ত সুযোগ-সুবিধা হয়, আর আমাদের তরুণ-ছাত্রদের এভাবে গুলি করেন। আমি বিশ্বাস করি না, যেভাবে গুলি করা দেখেছি, সাজোয়া যান থেকে একটা ছেলেকে যেভাবে ফেলা হয়েছে। এটা কি গাজা আর আপনারা কি ইসরাইলি বাহিনী। আপনাদের বোধদয় হোক।
তিনি বলেন, একাত্তরের কালো রাতের স্মৃতি আমার নেই, আমার মনে হয় এটাই সেই কালো রাত, এখন প্রতিটা রাত ছাত্র ও তাদের পরিবারের জন্য বিভিষীকা নিয়ে আসছে। আমি বিশ্বাস করতে পারি না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া একটা দল পাকিস্তানী বাহিনী-সরকারের মতো ভূমিকা রাখছে, এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, এতোগুলো হত্যা করার পর এধরণের আচরণ করার সাহস-মানসিকতা কিভাবে পাচ্ছে?
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, খুনি বাহিনী ও সরকারের খুনি সংস্থা যেগুলো আছে সরকার যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, আমি সরকারকে হুশিয়ারী করছি খুব দ্রæত এই গণআন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। এখনো যেন আপনাদের বোধদয় হয়। খুব দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, দায়ি পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে গ্রেফতার করেন, এই সমস্ত ভূয়া এজহার বন্ধ করেন। ছাত্র-তরুণদের যাদের আটক করেছেন তাদের দ্রæত মুক্তি দেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন, মানুষের বুকের ক্ষত দূর করেন। এটা একটা গণআন্দোলন, গণবিস্ফোরণ, আওয়ামী লীগের মতো দল যদি এটা বুঝতে না পারে! জনধিকৃত শাসকে পরিণত হওয়ার আগে যেন আপনাদের বোধদয় হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষক বলেন, একটা স্বাধীন দেশে এতো ভয়ে বাঁচবো কেন? চুপ থাকি বলেই এরা সাহস পায়। আমার ছাত্রের মুখ চেপে ধরার, কলার ধরার সাহস কোথায় পায় এরা? কয়জনের মুখ বন্ধ করবেন? একজনের করলে ১০ জন দাঁড়াবো, ১০ জনের করলে হাজার জন দাঁড়াবো। ১৮ কোটি বাঙালি নামবে এখন।
তিনি বলেন, এদের যে আত্মঅভিমানে আঘাত দিয়েছেন এই ক্ষত দূর করবেন কিভাবে? কাদের দিয়ে দেশ গড়বেন আপনারা? উন্নয়নের কথা বলেন, কোথায় যাবে উন্নয়ন, কে করবে উন্নয়ন? ১৬-১৭ বছরের ছেলেটার কোমড়ে দড়ি বেধেছেন, বাধলেন কেন? এতো বড় অপমান। কার কোমরে কে দড়ি বাধায় সময় বলে দেবে আপনাদের।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, শিক্ষার্থীদের রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয়েছে। একটা ব্যাপক ভয় আছে। মায়েরা ঘুমাতে পারছেন না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকছেন তারা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিলেও রাজধানীর সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক জায়গা থেকে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের অংশ হিসেবে নয়, বাংলাদেশের পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহŸান জানিয়েছেন।
ফরিদা আক্তার, শিরীন হক, নুর খান লিটন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, মির্জা তসলিমা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফাসহ মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরীদি শুক্রবার বিকেল ৩টায় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশ ‹দ্রোহ যাত্রা› ঘোষণা করেন। তারা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহŸান জানান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা
উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা