আমি ক্ষমতায় থেকে জীবন নেব, হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হওয়া সহিংসতায় হওয়া মৃত্যুর দায় কার সে বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘এবারও প্রায় ২’শ এর উপর মানুষ মারা গেল। ১৭ তারিখে আমি টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে অভিভাবক, শিক্ষকদের বলেছিলাম, যেখানে আপনাদের সন্তানের জীবনের ঝুঁকি আছে, আপনারা সন্তানদেরকে বের হতে দিয়েন না। আমি তো জানি, এদেশে ওই জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাসবাদ কতদূর কি করতে পারে। তারপরেও তারা না থেমে আজকে যে সারা বাংলাদেশে এতগুলি প্রাণ ঝঁড়ে গেল, এর দায়দায়িত্ব কার?’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামার বাড়ীর কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মস‚চি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘একটা জিনিষ গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। আমি তো নিজেই সবকিছু হারিয়েছি এবং গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা ও সরাসরি গুলি করে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তারপরেও আমি সাহস নিয়ে কাজ করে গেছি। ভয়ও পাইনি, পিছুও হটিনি। কারণ আমার লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন- সে কাজটা আমাকে করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশে^ বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেটা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সেই মান সম্মান সব নষ্ট করা হচ্ছে। এটার বিচার আমি জনগণের কাছেই দিচ্ছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আপনজন হারিয়েছেন, যে মা তার সন্তান হারিয়েছেন, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছেন তাদের কি কষ্ট সেটা আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি। স্বজন হারাবার বেদনা নিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এদেশে ফিরে এসেছিলাম যেন দেশের মানুষ দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে একটা সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, স্বাধীনতার সুফল পায়- সে আশায়।
তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জসহ প্রতিটি জনপদ ও মানুষের জীবন উন্নত করে দেওয়াটাই কি তাঁর অপরাধ? আজকে নানাভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম। আমি জানি, আমি আত্ম বিশ^াস নিয়ে, সততা নিয়ে কাজ করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। আমি এদেশের কৃষক ও শ্রমিকসহ প্রতিটি মেহনতী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি।
এ সময় ‘নিষিদ্ধের পর জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে’ এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এদেরকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে। নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াত-শিবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, এরা তো জঙ্গিবাদি হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদেরকে মোকাবেলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সকলকে মিলে করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মাটিতে জঙ্গীদের ঠাঁই হবে না। সেইভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে এবং তাদের সহযোগিতা চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি বার বার আঘাত আসবে, আমি পরোয়া করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছে, একদিন নিয়েও যাবে। কিন্তু যেখানে মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ, সে কল্যাণের কাজ আমরা করেই যাবো।’
শোকাবহ আগস্টের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১ আগস্ট রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যম আমরা শোকের মাস শুরু করেছি। সকল সংগঠনের নেতাদের এই শোকের মাসে শুধু শোক পালন নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা তো এ জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। কাফনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে যাননি। শুধু দিয়েই গেছেন। তার সেই আদর্শ আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।’
কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মুল কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সা¤প্রতিক সময়ে নিহতদের স্মরণে ও ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এ দিকে গতকাল গণভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সা¤প্রতিক সহিংসতায় জামায়াত-শিবির তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাÐে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মো. নুর এলাহি মিনা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (জামায়াত-শিবির) ছাত্রদের শিল্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। জামায়াত-শিবির, বিএনপি আগুন দিয়ে পোড়ানো, গণহত্যায় অভ্যস্ত। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ধ্বংসসহ সা¤প্রতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
উপ-প্রেস সচিব মো. নুর এলাহি মিনা বলেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত উনি বলেছেন, সহিংসতাকারীরা বাংলাদেশের যে আধুনিকায়নের প্রতিকগুলো আছে সেগুলোকে তারা টার্গেট করে হামলা করেছে। ইতালির রাষ্ট্রদূত জনগণের সম্পদ ধ্বংস এবং জীবনহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জানান নুরএলাহি মিনা।
ইতালির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপে আহতদের দেখতে হাসপাতাল যাওয়ার কথা এবং তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রদূত বলেছেন সম্পদ ধ্বংস বা গোটা বিষয়ের যেন বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। নুর এলাহি মিনা বলেন, সা¤প্রতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হ্যান্ডেল (সামাল) করেছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত তার প্রশংসা করেছেন।
এছাড়া হোলি আর্টিজানের পরে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে ইতালির রাষ্ট্রদূত তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জানান, ইতালির রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন সা¤প্রতিক এই ঘটনার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে ইতালির আগ্রহী বলে জানান নুরএলাহি মিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জানান, ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যখন জনগণ বিভিন্ন বিক্ষোভ করে বা কোন ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, এই ক্ষেত্রে ইতালিয়ান পুলিশের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইতালির পুলিশ ধাপে ধাপে এই অজ্ঞিতা অর্জন করেছে। এই বিষয়ে তারা বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে চায়।
পুলিশের প্রশিক্ষণ বিষয়ে ইতালির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়ে নুরএলাহি মিনা বলেন, উনি বলেছেন যে এটা ভালো প্রস্তাব। আমরা সামনের দিনগুলোতে এটা কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে অবশ্যই কথা বলবো।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির ঐতিহাসিক এবং চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রো।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতালিতে যে দুই লাখের মতো প্রবাসী আছে তারা একটা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবেন। বিশেষ করে জ্বালানি, এসএমই, স্পেস টেকনোলজি, জাহাজ নির্মাণ সেক্টরে কাজ করবেন। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে বৈধ অভিবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইতালির রাষ্ট্রদূত।
সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অসিম কুমার পাল গ্রেফতার।
জাল স্টাম্প-কোর্ট ফি তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতো চক্রটি
উত্তরায় শিকলে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় ২ কিশোরকে নির্যাতন, আটক ২
শৈলকুপায় চাঞ্চল্যকর ‘ফাইভ মার্ডার’ মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন
চাঁবিপ্রবি’র ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হলেও দীপু মনির চাপে গোপন রাখা হয়
ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খুলতে চায় জাতিসংঘ : সমকামিতা প্রসারের আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে নারী প্রতারক আটক
গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের বেতন-টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত
জর্জির ১০০, দ. আফ্রিকার ২০০
আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে কাশ্মিরে গেরিলা যোদ্ধা নিহত ১
দুদকের চেয়ারম্যান মইনুউদ্দীনসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগ
সৎ ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা, সৎ মা নিজেই হত্যার শিকার হয়
ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ডেথ স্কোয়াড’, দুতার্তের স্বীকারোক্তি
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস র্যাগিং ও মাদক মুক্ত ঘোষনা
রাজবাড়ীতে অস্ত্র মামলায় এক সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
জর্জি-স্টাবসের শতরানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা
মহেশপুরে অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রয়ের অপরাধে কসাই আটক, জেল-জরিমানা
ব্যবসা নয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাজীদের সেবা করা
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত