ছাত্র-জনতার গণমিছিল আজ : দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিবাদের মিছিল
০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩৯ এএম
বৃষ্টিতে ভিজেই কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা : ছাত্রদের বিভিন্ন স্থানে বাধা
পক্ষকালের কম সময় আগেই নিহত হয়েছেন দুই শতাধিক, আহত কয়েক হাজার, এই সময়ে দেশজুড়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিনে শিথিল থাকলেও রাতে থাকছে কারফিউ। মোড়ে মোড়ে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর প্রহরা, এখনো রাতে অভিযান চলছে বিভিন্ন এলাকায়। দেশজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু এর কোনকিছুই যেন টলাতে পারছেনা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করা শিক্ষার্থীদের। হত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবি লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে তারা। আর তাদের এই কর্মসূচিতে ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছেন শিক্ষক, অভিভাবক, সুশীল সমাজ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাংষ্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরের সেলিব্রেটিরাও। সময় যতই গড়াছে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের এই মিছিল হচ্ছে আরো দীর্ঘ। সর্বস্তর থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের দাবি। তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে পালন করছে কর্মসূচি। যদিও এখনো রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করতে গেলে গ্রেফতার করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, বাধা ও হামলা করছে পুলিশÑছাত্রলীগ। কোন কোনটিতে ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন শিক্ষক-সহপাঠিরা। আবার আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিতে থানায় অবস্থান নিচ্ছেন শিক্ষকরা। সাহস ও উৎসাহ দিচ্ছেন রিক্সা-চালক, চায়ের দোকানদার, পথচারী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বিগত কয়েকদিনের আন্দোলনে হত্যার শিকার ও আহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে দিয়েছেন বক্তব্য, লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এদিকে আজ শুক্রবার গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর যিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সকল উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্র জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের প্রাণের জন্মভ‚মি আজ এক মহাসংকট কাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা পরিচালনা করে শান্তি প্রিয় ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করছে। কারো পরিচয় শিক্ষার্থী হলে তার ফোন চেক করে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। শিক্ষা জাতির মেরুদÐ অথচ আজ ছাত্র হওয়া যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজও রক্ষা পাচ্ছে না তাদের নির্যাতনের হাত থেকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতেও ছাড়ছে না। শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমর্থনকারী ছাত্র জনতা কাউকে পেলেই গ্রেফতার ও এর মাধ্যমে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে বাছাই করে পাড়া মহল্লায় রেইড দিয়ে গণ গ্রেপ্তারের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গুম করার হুমকি দিয়ে আদায় করছে মোটা অংকের অর্থ। কেন্দ্রীয় ৬ সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অসংখ্য ছাত্র জনতাকে কারাগার ও রিমান্ডে নির্যাতন করছে। জুলুম নির্যাতনে নিষ্পেষিত ছাত্র জনতা মুক্তির প্রহর গুনছে। অসংখ্য ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চোখ, কান, হাত, পা কিংবা শরীরের অন্য কোন অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে।
এতে বলা হয়, আজ ছাত্রসমাজ ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। প্রতিমুহূর্তে কাটাতে হচ্ছে গ্রেফতার ও গুম হওয়ার আতঙ্কে। শহীদ ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে বাংলার আকাশ বাতাস। এছাড়াও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলীর উপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশ নামক সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আপনারা জানেন আমরা আমাদের কোন ব্যক্তি স্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কি অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কি অপরাধে শত শত ভাইদেরকে হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানিনা। কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলনকে থামাবো না। জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার হওয়া সকলের স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী ‹প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল› কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
শ্রমিক, পেশাজীবি, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবি, আলেম-ওলামা সহ বাংলাদেশের সকলস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলা হয়, কর্মসূচিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করে তুলুন। মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলা হয়, আপনারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে চুপ থাকবেন না। মসজিদের মেম্বার থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি আপনারাই জাতির দুর্দিনের কান্ডারী। এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে গণহত্যা ও গণ গ্রেফতার এর প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাদ জুমা মসজিদ ও মাদরাসা থেকে ‘ছাত্র জনতার গণমিছিল’ মিছিল বের করুন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভ‚ঁইয়ার ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ ও দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রতিক‚ল আবহাওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকরা প্রথম দিকে ছাতা নিয়ে দাঁড়ালেও এক শিক্ষকের ‘শিক্ষার্থীদের রক্তের কাছে এ বৃষ্টি কিছুই না’ বক্তব্যের পর তারা ছাতা গুটিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই কর্মসূচি পালন করেন।
সমাবেশে শিক্ষকদের হাতে ‘সকল হত্যার বিচার চাই’, ‘শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধ কর’, ‘দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘টিচার্স ফর স্টুডেন্ট’, ‘জুলাই ম্যাসাকার’, ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশ থেকে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- ১। গ্রেফতারকৃত সকলকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ২. অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. সকল ধরনের হয়রানি বøকেড দিয়ে ছাত্রদের গ্রেফতার করা এবং অন্যান্য যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে। ৪. অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। ৫. এপর্যন্ত যত হত্যাকান্ড হয়েছে সকলের পরিচয় শনাক্ত করে সকল হত্যাকান্ডের তদন্ত সহকারে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের কর্মসূচিতে ঢাবির আইন বিভাগের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যাকাÐের বিচার এ সরকার করবে না। কারণ সরকার নিজেই খুনি। আজকে খুনি বাহিনী-খুনি সংগঠনকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুনি খুনির বিচার করবে না। খুনের বিচারকে অন্য খাতে বইয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বুকে গুলি করা হচ্ছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের অনিরাপদ রেখে আমরা শান্তিতে বসে থাকব না। আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হানা হয়েছে। বাংলাদেশের বুকে গুলি করা হয়েছে। তরুণ হচ্ছে বাংলাদেশের হৃদয়। এই হৃদয়কে আঘাত করা হবে আর আমরা চুপচাপ মেনে নিব এটা যেন সরকার না ভাবে। আজকে দাবি এসেছে সরকারের পদত্যাগের, খুনের বিচার না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
আসিফ নজরুল আরো বলেন, চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের ইউনিফর্ম পরে গুলি করা হচ্ছে। ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কীভাবে গুলি করা হচ্ছে। যুবলীগ ছাত্রলীগের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। অথচ বলা হচ্ছে আমাদের ছাত্ররা নাকি মারা গেছে সন্ত্রাসীদের গুলিতে!
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর তানজীমউদ্দিন খান বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরের শাসনামলে আমরা আসলে একটা মিথ্যার ডিবি তৈরি করেছি; উন্নয়নের খোলস, বিভিন্ন চেতনার খোলস। সেই খোলসগুলে আজ ভেঙ্গে পড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলনের বিকাশ ঘটিয়েছিল সেটা সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে।
ঢাবির ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যেই লাশগুলো কবরে পড়ে গেছে, যেই রক্ত ঝরেছে, এই লাশ আর রক্ত আমরা ভুলব না। এই দেশটা আমরা কাউকে লিজ দেই নাই। আমরা আমাদের দেশকে উদ্ধার করে ছাড়ব। আমরা সন্তানদের এত অল্প বয়সে মরতে দেখতে চাই নাই। যারা মরেছে। আমরা তাদের ভুলব না। অতি দ্রæত আমাদের দেশকে উদ্ধার করে ছাড়ব।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, কার সাথে যুদ্ধ করেছেন? বাচ্চাদের সাথে? উত্তরায় বাচ্চাদের মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী গুলি করেছে। গাজীপুর থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী এনে গুলি করিয়েছে। কী যুদ্ধে আপনারা নেমেছেন। আল জাজিরায় একজন বলছেন, বাংলাদেশ গাজা হয়ে গেছে। গাজা বিশেষজ্ঞ আপনি ইসরায়েলের মত নির্বিচারে গুলি করলেন কেন? এই ১৫/১৬ বছরের বাচ্চাদের বুকে গুলি করলেন কেন? শত শত বাচ্চাদের হত্যা করে আপনারা মায়া কান্না কাঁদছেন। যে মায়ের বুক খালি করতে পারে, সে প্রকৃত শোক জ্ঞাপন করতে পারে না।
ক্যাম্পাসে গেটে গেটে পুলিশের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করে ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. রুশাদ ফরিদি বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঢুকবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশ তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছে না। এটা কোন দেশ? পুলিশের ঘাঁটি আজকেই প্রত্যাহার করতে হবে। যদি প্রত্যাহার না করেন তাহলে কারো পরিণতি ভালো হতে যাচ্ছে না। আমি দয়া করে সুবুদ্ধি উদয় করুন, এটাই প্রত্যাশা করি। ১৫ জুলাই ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ঢাবি প্রশাসনের পদত্যাগের দাবি তোলেন তিনি।
সমাবেশ ঢাবির এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকের পর পিতামাতার স্থান। যেখানে আমাদের শিক্ষকদের ওপর হাত তোলা হচ্ছে। সেখানে আমরা তাদের হাত গুঁড়িয়ে ফেলা ছাড়া আর কিছু করার নাই। শিক্ষকের গায়ে হাত তুললে শান্তির দিন থাকবে? আমরা সেই শিক্ষকদের কথা বলতে চাচ্ছি। আপনারা হিরক রাণীর রক্তিম আঁচলের নিচে থেকে কিচ্ছু বলছেন না। আপনাদের আমার দরকার ছিল। একসময় ভেবেছি আপনাদের মতো মানুষ হব। কিন্তু আজ দেখছি আপনারা কখনোই মানুষ ছিলেন না।
কর্মসূচিগুলোতে আরও বক্তব্য রাখেন লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর নাজনীন ইসলাম, প্রফেসর ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, প্রফেসর সাদিক হাসান, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এম এম আকাশ, প্রফেসর সেলিম রায়হান, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মাসুদা ইয়াসমীন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বায়েজিদ ইসলাম কিশোর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘ক্যাম্পাসে হামলা, রুখে দাঁড়াও বাংলা’ ইত্যাদি ¯েøাগানে ভিসি চত্বরসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।
জাবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভ‚মিকায় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ওয়ার্ডেন সহকারী অধ্যাপক মো.শামীম হসেন। তিনি বলেন, ১৫ জুলাই রাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কিছু শিক্ষকদের জন্য বিভীষিকার ছিলো। সে রাতে নির্মমভাবে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু সেসময় প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব ছিল। যে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে আমি কাজ করতে চাই না। এজন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।›
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা এবং কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে সংহতি জানিয়ে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকেরাও অংশ নেন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নির্মাণাধীন ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া একই দাবিতে শহিদ মিনারে ‘পারফরমেন্স আর্ট’ পরিবেশন করেন চারুকলা ও নাটক ও নাট্যতত্ত¡ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
দর্শন বিভাগের প্রফেসর রায়হান রাইন বলেন, ‘বর্তমান সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ত্রাস এবং ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতা সেই ভয়কে জয় করেছে। তারা এখন বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে জানে। এই যে সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সমস্ত কর্তৃত্ববাদকে অকার্যকর করে দিয়ে আজকে নতুন করে আমাদের স্বাধীন হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে, ছাত্ররাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেটি শুরু করেছিল। এখন শুধু ছাত্ররা না যাদের সন্তান প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে তারা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। এ আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজে কোন লাভ নেই। আমাদেরকে নতুন করে নতুন পথ সৃষ্টি করতে হচ্ছে।’
দর্শন বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আজ শিক্ষাঙ্গন। সবাই সরকারের চাল বুঝে গিয়েছে, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’ খেলা খেলছে তারা।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আপনি এখনও মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা বলতে বলতে আপনি সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন যে আপনি একটা মিথ্যুক। আপনি যে কান্না করেন তাকে বিশ্বমিডিয়া ‘ক্রোকডাইল টিয়ারস’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আপনার লজ্জা থাকা উচিত ক্রমাগতভাবে বিশ্বমিডিয়া আপনাকে যা বলছে আপনি তা বুঝছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা যে পথ দেখিয়ে গেছে আমরা শিক্ষকরা সেই পথে হাটবো, আপামর জনতাও হাটবে। মনে করি, আমরা যে রাষ্ট্র নির্মাণে করতে চাই, আপনি সেই পথে বাঁধা হিসেবে উপনীত হয়েছেন। আপনার বিদায় ছাড়া এই দেশ আর শান্তি পাবে না। যতক্ষণ না আমরা আপনাকে বিদায় করে ছাড়বো ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার হুস হবে না। লজ্জা থাকলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। আগামীতে যদি এভাবে জেলে নিতে থাকেন তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। প্রয়োজনে জেল ঘেরাও করবো। তবুও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কুন্ঠিত হবো না।’
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর শামছুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নির্দেশ দিলেন আবার তারাই নাকি কান্না শুরু করেছেন। অর্থাৎ জুতা মেরে, গরু দান করছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘যোক্তিক ও ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষিকাকে পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বাসভবনে বোমা হামলা হয়েছে। এমনকি বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিয়নসহ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাই।’
শাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলা
শাবি সংবাদদাতা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) মূল গেইটে শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ার পূর্বেই তাদের ওপর হামলা করে উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ভোররাতে সিলেটের আখালিয়া এলাকায় মেসে তল্লাশি চালিয়ে শাবির দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি যেন শাবির মূল গেইট থেকে শুরু করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে পুলিশ। তবে পরে আন্দোলনকারীরা শাবির মূল গেইটের পাশ্ববর্তী এলাকা সুরমায় জড়ো হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ পালন করে। এসময় তেমুখী বাস ট্যান্ডে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে সাঈদুর মিয়া নামের এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ওসমানীনগরের বুরঙ্গা গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে এবং বুরঙ্গা ইকবাল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষার্থী। এর আগে ভোরবেলায় আখালিয়া আবাসিক এলাকায় শিক্ষার্থীদের মেসে তল্লাশি চালিয়ে শাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী মনির হোসেন এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সোহাগকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে তাদের দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
রাবিতে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়ার চেষ্টা পুলিশের
রাবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে লাল কাপড় মুখে বেঁধে মৌন মিছিল করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক সমাজ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিলে অংশ নেয়। মৌন মিছিলে অংশ নেওয়ায় মিছিল শেষে শিক্ষার্থীদেরকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান সিভিল ড্রেসে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এমন ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, সারাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে লাল কাপড় মুখে বেঁধে রাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে এক মৌন মিছিল বের করেন শিক্ষক নেটওয়ার্ক। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে গেলে এমন ঘটনা ঘটে। তবে শিক্ষকরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে শিক্ষার্থীদের আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জানান, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করতে বলি। তবে যদি কোনো বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তাহলে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। বর্তমানে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমার শিক্ষার্থীরা বাসায় আছে। কোনো ছাত্রের হয়রানি হোক আমরা এমনটা কখনোই চাইনা। আমরা জানতে পেরে সকল শিক্ষার্থীকে কাজল গেইট পর্যন্ত নিয়ে তাদেরকে গাড়িতে তুলে দেই।
ইবিতে মৌন মিছিল
ইবি সংবাদদাতা জানান, নিহতদের স্মরণে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মৌন মিছিল করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
ময়মনসিংহে অবস্থান কর্মসূচি
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে কবি সাহিত্িযক ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় দিকে নগরীর টাউন হল মোড়ে সরেজমিনে দেখা গেছে এই চিত্র। এর আগে সকাল পৌনে ১১টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান আশিক, আরিফুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল নাকিবসহ প্রমুখ।
হবিগঞ্জের প্রধান সড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচির ব্যানারে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাদের এ কর্মসূচিতে জেলা সদরের বৃন্দাবন সরকারি কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের পৌর টাউন হল এলাকায় ব্যানার নিয়ে জড়ো হন। পাশাপাশি তাদের হাতে ছিল নানা প্ল্যাকার্ড। বেলা যত বাড়তে থাকে, জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে টাউন হলের সামনে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এ উপস্থিতি শহরের প্রধান সড়কের দক্ষিণ দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং উত্তরে তিন কোনা পুকুরপাড় এলাকা নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুরো শহরজুড়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা ¯েøাগান দিতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এ সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।
চাঁদপুরে ছাত্রলীগের হামলা
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, ‘রিমেমবারিং দ্য হিরোজ’ কর্মসূচি পালনে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে (চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে) আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর চড়াও হয়ে মারধর করে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কর্মসূচি পালনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। চুল ধরে টানাটানি করেছে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিপরীত পাশে সড়কে অবস্থান নেয়। অপরদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সড়কের বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ কয়েকটি অটোরিকশা এনে ছাত্রছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সড়কে অবস্থান নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল সোয়া চারটায় আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখ থেকে শহর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।
মাগুরায় ৩ ছাত্র জেল হাজতে
স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরায় গ্রাফিতি ও দেয়াললিখনের অভিযোগে আটক চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনকে ভিন্ন একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কলেজ রোডে গ্রাফিতি ও দেয়াললিখনের সময় ওই চার শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় গতকাল বুধবার তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কারাগারে পাঠানো ওই তিন শিক্ষার্থী হচ্ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সিফাতুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান মুন্না ও ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সানি। তারা পরস্পরের বন্ধু। সবার বাড়ি মাগুরার শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া সিয়াম বিন আইয়ুব নামের আরও এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও গতকাল তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ে বিক্ষোভে পুলিশের বাধা
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় লিচুতলা ন্যাশনাল ব্যাংক সংলগ্ন এলাকা থেকে বের করে, মিছিল নিয়ে তারা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হলে, পুলিশ ইসলামবাগ এলাকায় বাধা দেয়। পরে তারা মহাসড়কের পাশে রফিজল প্লাজার সামনে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও দেওয়াল লিখন কর্মসূচি পালন করে। পরে শিক্ষার্থীরা আবারও সামনের দিকে আগাতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় সতর্কতা অবস্থায় ছিল পুলিশ। আগামীতে সকল কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলেও জানান।
টাঙ্গাইলে দেয়াল লিখন কর্মসূচি পালিত
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে দেয়ালিকা লিখন কর্মসূচী পালন করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে নয়টার দিকে শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে দেয়ালে তারা অংকন করে এ কর্মসূচি পালন করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে তারা দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান লেখেন। এর মধ্যে হলো সোনার বাংলায় শুকুনের থাবা, রক্তাক্ত জুলাই ২৪, রক্তের দাগ শুকায় নাই ইত্যাদি।
বৃষ্টিতে ভিজে ভোলায় বিক্ষোভ
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টিতে ভিজে ভোলা সরকারি স্কুলের সামনে থেকে গতকাল মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। পরে মিছিল নিয়ে কালিনাথ বাজার, মহাজনপট্টি, চকবাজার ও নতুন বাজার ঘুরে একই স্থানে আসেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে মানুষ ও ব্যাবসায়ীরা তাদের মিছিল ও আন্দোলনকে উপভোগ করেন। শ্লোগান সহকারে মিছিলের সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সমাবেশ থেকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। এছাড়া দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়।
কুড়িগ্রামে ছাত্রদের সমাবেশ
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, গ্রেফতারকৃত শিক্ষক আসিফ মাহতাব ও ফাহাদসহ বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশি বাঁধার মুখে পরে। এসময় বেরিকেড ভাঙতে না পেরে সেখানেই ছাত্ররা দেড় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এদিকে কলেজ মোড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান করায় শহরের টানটান অবস্থা বিরাজ করে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বের হতে না পেরে সেখানেই অহিংস বিক্ষোভ করে চলে যায়।
নোয়াখালীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি
নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, বিরামহীন বৃষ্টি উপেক্ষা করে নোয়াখালীতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ (আমাদের নায়কদের স্মরণ) কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটা থেকে শিক্ষার্থীরা নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর মোহাম্মদিয়া মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে তিনটার পরও বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলছিল। কর্মসূচি চলার সময় শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অবস্থান কর্মসূচির আগে ববির ১২ শিক্ষার্থী আটক, পরে মুক্তি
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ ও মাহামুদুল হাসান তমালসহ ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সংহতি কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। এসময় সুজয় শুভসহ ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে। তবে বিকেলে আটক ১২ জনকেই ছেড়ে দিয়েছে থানা পুলিশ।
আন্দোলনের সমন্বয়ক সেজুতি জানান, আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিতে তারা শতাধিক শিক্ষার্থী বরিশাল বন্দর থানার দিকে রওয়ানা করলে পুলিশ ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে তাদের গাড়ি আটকে দেয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে।
সমন্বয়ক সেজুতি জানান, বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে তাদের পূর্বনির্ধারিত ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সংহতি কর্মসূচি ছিলো। যা শুরুর আগেই পুলিশ আমাদের সমন্বয়কদের আটক করে।
তবে এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল সাংবাদিকদের জানান, ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ১২ শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিকেলে ববির শিক্ষক, আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে আটক শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সন্ধ্যায় ক্যাম্পান শান্ত ছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা
ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব
বন্দরের অন্ধকার কেটে যাবে, দ্রুত আলো ফিরবে- এইচ এম শফিকুজ্জামান