দুর্নীতিমুক্ত হাতিয়া গড়ার প্রতিশ্রুতি গণঅভ্যুত্থানের নায়ক মাসুদের
১০ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম
নিজ জন্মভূমি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার আমুল পরিবর্তন করে দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত একটি সুন্দর হাতিয়া গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বৈরাচার পতনের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
বৈষম্যবিরোধী হাতিয়াবাসীর আয়োজনে শনিবার (১০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই প্রতিশ্রুতি দেন মাসুদ৷ অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করেন হাতিয়া ছাত্র ফোরাম ঢাকা।
নাগরিক সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন দ্বীপ হাতিয়ার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, হাতিয়া দ্বীপ সমিতি, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জতন, সহ-সভাপতি ইডেন মহিলা কলেজের প্রফেসর সুফিয়া আক্তারসহ ঢাকাস্থ দ্বীপ হাতিয়ার বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, দ্বীপ হাতিয়ার মানুষ পরিবেশগতভাবেই সংগ্রামী। আমার এই বিপ্লবী হয়ে উঠার পেছনের কারণই হচ্ছে হাতিয়ার মাটিতে জন্ম। আজকে আমরা একটা সংগ্রাম করে এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের এই স্বাধীনতাকে অক্ষত রাখতে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
মাসুদ বলেন, অবুঝ শিশুর যখন ক্ষুধা পায় তখন সে কান্না করে। কিন্তু আমরা আমাদের ক্ষুধা লাগলেও কান্না করতে পারি না। এটাই পরাধীনতা, এটাই পরাধীনতার শৃঙ্খল। আমরা চাই এই শৃঙ্খল ভেঙে দিতে। আমরা ভয়ের পরিবেশ ধ্বংস করে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুষ্ঠু সুন্দর দেশ গঠনে এগিয়ে আসব। তারই অংশ হিসেবে আমার প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়ার সকল মানুষ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত, জুলুমমুক্ত সুষ্ঠু সুন্দর হাতিয়া গড়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। সরকার যদি আমাদের হাতিয়ার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ নাও দেয় তবে আমাদের প্রত্যেকে নিজের পকেট থেকে ১০ টাকা করে দিয়ে হলেও একটু সুন্দর হাতিয়া গড়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আমি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে যতটুকু পারি হাতিয়ার উন্নয়নে কাজ করব।
মাসুদ আরো বলেন, হাতিয়াতে লঞ্চ চলবে, সেখানে কেবিনের জন্য কারো লবিং লাগবে না। হাতিয়াতে সকাল সন্ধ্যা সীট্রাক চলবে। সিএনজি চলবে কিন্তু মোড়ে মোড়ে ১০ টাকা করে দিতে হবে না। দলমত নির্বিশেষে সবাই যদি একতাবদ্ধ হই তাহলে আর কেউ ভবিষ্যতে স্বৈরাচার হতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ হাতিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারা সকলেই ছাত্র নেতা মাসুদের নেতৃত্বে একটি সুন্দর হাতিয়া গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে গুটিকয়েক ছাত্র শহীদ হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের এই স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থী স্বৈরাচারের বুলেটের আঘাতে শহীদ হয়েছে। আর এই রক্তাক্ত আন্দোলনের অন্যতম নেতা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়ার কৃতি সন্তান আব্দুল হান্নান মাসুদ। আমরা তাকে নিয়ে সত্যিই গর্বিত, আনন্দিত। সে আমাদেরকে পুরো হাতিয়াবাসীর সাহসের প্রতীক। যেই হাতিয়াবাসী সারাজীবন অনেক সংগ্রাম করে জীবন যাপন করেন। হাতিয়াকে এখন নগন্য ভাবার সুযোগ নেই। কারণ হাতিয়ার মানুষ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। গোটা বিশ্বের ন্যায়ের সংগ্রামের এই অনন্য ইতিহাস রচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ। সেই সমাজের একজন মহানায়ক আমাদেরই প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়ার কৃতি সন্তান আব্দুল হান্নান মাসুদ। আমরা সত্যিই তার মতো একজন তরুণকে পেয়ে গর্বিত। হাতিয়ার বৈষম্য দূর করার জন্য আব্দুল হান্নান মাসুদকে বলব আপনি আমাদের নেতৃত্বে থাকেন। আমরা সবসময় আপনার সাথে রয়েছি। আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্মের রাজতন্ত্র চাই না। জয় হোক তারুণ্যের, জয় হোক ছাত্র সমাজের।
হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জতন বলেন, আমি একাত্তর দেখেছি, আমি ২০২৪ ও দেখেছি। একাত্তরের ঘটনার চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ছিল এই ২০২৪। যারা এই আন্দোলন থেকে জীবন নিয়ে ফিরেছে তাদের শুধু এই সংবর্ধনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। আমরা চাই তরুণ প্রজন্মের এই হিরো আব্দুল হান্নান মাসুদের নেতৃত্বে একটি সুন্দর হাতিয়া গড়ার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে। আমরা চাই প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাতিয়াসহ পুরো দেশের সংস্কার করতে। আমরা চাই আব্দুল হান্নান মাসুদের নেতৃত্বে একটি সুন্দর হাতিয়া গড়তে। আমরা এই জলদস্যুর (হাতিয়ার বর্তমান এমপি মোহাম্মদ আলি) কবলে থাকতে চাই না।
ফিউচার ডিজাইন গ্রুপের এমডি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ কে এম আজিজুল হাই বলেন, আমরা চাই না একটা দেশের শাসনক্ষমতা নির্দিষ্ট কোনো পরিবারের হাতে জিম্মি থাকে। অতীতে হাতিয়ায় কেউ নির্বাচনের নমিনেশন ফর্ম পর্যন্ত নেওয়ার সাহস করতো না। যাতায়াত থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে হাতিয়ার মানুষ বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্যের চির অবসান আমরা চাই। আমরা চাই যেসব তরুণের হাত ধরে এই দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তাদের হাতেই দেশের শাসন ব্যবস্থা থাকুক। আমরা তারুণ্যে বিশ্বাস রাখতে চাই।
আব্দুল হান্নান মাসুদের নেতৃত্বে হাতিয়া যেন সিঙ্গাপুর হতে পারে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সহ-সভাপতি ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক সুফিয়া আক্তার। তিনি বলেন, যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার। তরুণদের হাত ধরেই আমরা একটি সুন্দর দেশ পাব বলে আশা রাখছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়াও উন্নয়নের শেখরে উন্নিত হবে ইনশাআল্লাহ।
হাতিয়া উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, খুনি ফ্যাসিবাদী অবৈধ একটা সরকার আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল। সকল ধরনের অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম। এদেশের তরুণ সমাজ, যাদের নিয়ে অনেকে হতাশা প্রকাশ করতো তারাই আজকে পুরো জাতিকে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম কতটা রয়েছে। অনেক দল যেটা পারেনি সেটা এই তরুণ সমাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে। এবং সেই ছাত্র সমাজের এক অগ্রনায়ক ছিলেন আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়ার কৃতি সন্তান আব্দুল হান্নান মাসুদ। যখন সবাই ভয়ে ভীত ছিল তখন এই আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম নায়ক হলেন আমাদের আব্দুল হান্নান মাসুদ। আমরা তার উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনা করছি। আমরা আব্দুল হান্নান মাসুদের নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জনপদ হাতিয়ার উন্নয়ন প্রত্যাশা করছি।
হাতিয়া দ্বীপ সমিতি, গাজীপুরের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য আফসার উদ্দিন বলেন, আমরা শুধু হাতিয়া না বরং পুরো বাংলাদেশের পরিবর্তন চাই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দেশ গড়তে হলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।
হাতিয়া ছাত্র ফোরাম, ঢাকার সভাপতি মুহাইমিনুল ইসলাম সালমান বলেন, আব্দুল হান্নান মাসুদ ছোট কাল থেকেই ছিলেন একজন ক্লিন ইমেজের লোক। তার বাবা একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ওনাকে কখনোই আমরা আগে সালাম দিতে পারিনি। আমরা এখন আশা করব আমাদের নতুন দিগন্তের এই মহানায়কের মাধ্যমে হাতিয়ার ইতিহাস যেন বদলে যায়।
হাতিয়া ছাত্র ফোরাম, ঢাকার সিনিয়র সহ-সভাপতি মানসুরুল হক তানভীর বলেন, আমরা এমন একটা হাতিয়া চাই, যেখানে শান্তি বিরাজ করবে, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা থাকবে না। সুন্দর একটা হাতিয়া গড়তে হলে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথ চলি তাহলে অবশ্যই আমাদের হাতিয়া পরিবর্তন হবে। হাতিয়ার পরিবর্তন পুরো দেশের পরিবর্তনের একটা মাইলফলক হবে। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল সেক্টরে আমুল পরিবর্তন আনতে চাই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ