রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর পদ থেকে পতিত স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহদের উৎখাত করতে না পারলে স্থিতিশীলতা আসবে না- নেটিজেনদের অভিমত
১১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম
তিনদিন পর হতে চললো অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন। কিন্তু অস্থিরতা কাটছে না কিছুতেই। স্যোশাল মিডিয়া জুড়ে নানা ধরণের গুজবের ছড়াছড়ি। ক্যান্টনমেন্টে উত্তেজনা, বিপ্লব বেহাত হওয়া নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা লেখা হচ্ছে। নতুন আইজিপির বারংবার আহ্বান সত্ত্বেও অধিকাংশ পুলিশ এখনো কাজে যোগ দেয়নি। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধুয়া তুলে, ডাকাত পার্টি নামিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা বিদ্যমান। এরমধ্যেই জুডিশিয়ার ক্যু-য়ের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়েছে ছাত্র জনতা। থানাগুলো পাহারা দিচ্ছে এখনো সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা। এরই মধ্যে আজ অস্থায়ী আনসার সদস্যরা ‘চুক্তি থেকে মুক্তি’র দাবি নিয়ে হাইকোর্টের সামনে জড়ো হয়েছে। দেশের এই অস্থির সময়ে হঠাৎ তাদের এই দাবী নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে নেটিজেনরা। তাদের মতে, সরাসরি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারের সাথে জড়ির এই আনসার সদস্যদের বিভিন্ন দুর্যোগকালীন ও ভোটের সময় ব্যবহার করতো শেখ হাসিনার সরকার। তখন তারা চুক্তি থেকে মুক্তির দাবি না করে এখন কেন চুক্তি থেকে মুক্তির দাবি নিয়ে হাইকোর্টে এলেন। তাদের মতে, মূলত পুলিশের মতো আনসার সদস্যদের মধ্যেও বিদ্রোহ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই অস্থির সময়ে এহেন দাবি মুখে তুলে তাদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
আর এসবের পেছনে সরকারের বিভিন্ন স্পর্শকাতর পদে হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া কর্মকর্তাদের গোপন উষ্কানি ও ষড়যন্ত্রকে দায়ী করছেন নেটিজেনরা। তাদের মতে, এসকল পদ থেকে হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া তার প্রতি ও তার বিদেশী প্রভু ভারতের প্রতি অতি অনুগত কর্মকর্তারা এখনো হাল না ছেড়ে নানা কৌশলে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে পতিত স্বৈরীনীকে পুণরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। এদের অধিকাংশই সরাসরি আওয়ামী পরিবারের সদস্য এবং ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের। জন্ম ও আত্মীয়তার সূত্রে গোপালগঞ্জ জেলার সাথে সম্পর্কিত। গতকাল গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর উপর হামলা, তাদেরকে আহত করা, তাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া- এসব ষড়যন্ত্রের আলামত বহন করে। কেননা, মাসব্যাপী এতো বড় বিপ্লব করলো শিক্ষার্থীরা। অথচ কোথাও সেনাবাহিনীর জানমালে হামলা তো দুরের কথা, তাদের দিকে কটুক্তিও করেনি তারা। তাই এসব পদ থেকে এদেরকে দ্রুত অপসারণ করা অত্যন্ত জরুরী বলে তাদের মত।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেলিব্রেটি পিনাকি ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে দুই দিন আগেই লিখেছেন, “ আগামীকাল প্রফেসর ইউনুসের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনী নিক, এস এস এফ না। এস এস এফ এর অফিসারদের অনেকেরই হাসিনার প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য আছে। আমি সেনাপ্রধানকে রিকুয়েষ্ট করবো, আপনি সম্ভবত কাল উনাকে রিসিভ করতে যাবেন। আপনার নিজস্ব নিরাপত্তা প্রটোকলেই উনাকে নিরাপত্তা দিতে পারেন।
বিষয়টা অতীব গুরুত্বপূর্ণ”।
Alifaa Hossen লিখেছেন, “কাল রাতেও বলেছি এখনো আবার বলছি,
DG DGFI, DG NSI, DG SFF, Commandment PGR (President Guard Regiment). এই চারটা পদের শীর্ষ প্রধানদের অতি দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। যতদ্রুত সম্ভব। Otherwise ড. ইউনূস স্যারের লাইফ পুরোপুরি রিস্কে থেকে যাবে। এনাদের অপসারণ এর দাবি তুলুন প্লিজ....এখন সারাদিন আনন্দ করার সময় নয়। সব কিছু সমাধান হয়নি...প্লিজ এটা নিয়ে কথা বলুন।”
Imran hassan, “বিএনপির হাই কমান্ড মিছিল মিটিং বাদ দিয়ে স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট সরকারী অফিসারদের লিস্ট করে সরকারের কাছে পেশ করে দ্রুত আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত করুন। এখনো ডিজিএফআই, এনএসআই, এসএসএফ এর ডিজি সহ বড় বড় মন্ত্রনালয়ে শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত সচিবরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যেটা বর্তমান সরকারের জন্য মারাত্মত হুমকি স্বরুপ। ফেয়ার ইলকশন হলে ক্ষমতায় আপনারাই আসবেন। তাই ফেয়ার ইলেকশন নিশ্চিত করতে এইসকল গুরুত্বপূর্ন পদে যারা আছেন তাদের লিস্ট করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করুন। রাজনিতীর মাঠে আপনাদের যতটুকু দৌড়ঝাপ সেটা সরকারের উপদেষ্টাদের নেই। তাই আপনারাই এই যায়গায় সরকারকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন। মনে রাখবেন এই সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন আপনারা। Bangladesh Nationalist Party-BNP আশা করি আপনারা ব্যাপরটি গভীরভাবে ভাববেন।”
MD Raihanul Islam লিখেছেন, “স্বাধীনতার সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথেই তা অস্তমিত করার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েগেছে। ছয়জন কুলাঙ্গার জেনারেল তাদের প্রভু দেশ ভারতের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছে।
১/ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান
২/মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (নাটের গুরু)
৩/ডিজিএফআই ডিজি জেনারেল হামিদ
৩/এনএসআই সাবেক ডিজি জেনারেল জোবায়ের
৪/এসএসএফ ডিজি জেনারেল নাজমুল
এদিকে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অধিকাংশই এখনো কাজে যোগ দেয়নি। অনেকে আবার রং বদলে দ্রুতই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে এরাও ভেতর থেকে সাবোটাজ করতে পারে বলে নেটিজেনদের আশঙ্কা। তাদের মতে, পুলিশ কোন ট্রেড ইউনিয়ন নয় যে, দাবি না মানলে কাজে যোগ দেব না- এই জাতীয় শর্ত আরোপ করতে পারে। এটি একই সাথে সরকারি চাকরিবিধি এবং পুলিশের শৃঙ্খলার চরম পরিপন্থী একটি কাজ। সাধারণ সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হতো। পুলিশ যখন সরকার বা সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশ শুনে হায়েনার মত সাধারন জনগণের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, হানাদারদের মতো নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে জনগণের উপরে, শত শত মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, তখন তো তাদের মধ্যে এই মোরাল কারিজ দেখিনি। তখন তো তারা বলেনি, আমরা রাষ্ট্রের চাকর, জনগণের সেবক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। সরকারের নির্দেশে জনগণের উপরে নির্বিচারে গুলি চালাতে পারি না। যখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জনগণের ধাওয়ায় টিকতে না পেরে জীবন বাঁচাতে দলে দলে থানায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তখনো তাদের গ্রেফতার করেনি।
বরং তাদের সাথে যোগ দিয়ে ওই সন্ত্রাসীদের বের করে দেয়ার দাবিতে থানা ঘেরাও করা জনগণের উপরে সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এরপর গুলি ফুরিয়ে গেলে সিভিল ড্রেসে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা মিলে থানার পেছন দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে। এমনকি আটকে পড়া পুলিশদের উদ্ধারে যখন সেনাবাহিনী এগিয়ে এসেছে তখন সেনাবাহিনীর উপর গুলি করেছে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা একজোট হয়ে। এতে অনেকেই আহত হয়েছে বলে শোনা গেছে।
এখন তারা বলছে পুলিশ হত্যার বিচার চাই। অবশ্যই এই দেশে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। এদিকে আন্দোলনকারীরা নির্বিচারে জনগণের উপর গুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করার ঘটনার বিচার দাবি করছে। সাধারণ মানুষ চায় সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। আগের ও পরের। 'জীবন রক্ষার্থে' কারাগারের অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কারণে যদি নরসিংদী কারাগারের সকল কারারক্ষী দায়ী হয়ে শাস্তি ভোগ করে, তাহলে অস্ত্রসহ থানা ত্যাগ করে যারা পালিয়ে গেছে তাদেরকে কি এর দায় নিতে হবে না?
আজকে তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া না মানলে সরকারি কাজে যোগ না দেয়ার যে হুমকি দিচ্ছে এটি আসলে এক ধরনের অসহযোগিতা। এর মাধ্যমে তারা পরোক্ষভাবে পতিত স্বৈরাচারের উদ্দেশ্য সফল করছে।
পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশী প্রভু বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আবার পূর্বের পথে ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও নীল নকশা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতের আড়ালে এটিও মূলত তারই অংশবিশেষ বলে অনেকের ধারণা। এই ষড়যন্ত্রের আরও একটি অংশ ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতন। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা ছাত্ররা যখন রাত জেগে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও জান-মাল পাহারা দিতে শুরু করেছে তখন তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতে শুরু করেছে। এরপর শুরু হয়েছে ডাকাত নামানো। মূলত পুলিশকে কাজে নামতে না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম করে দেশের মধ্যে একটি অরাজকতা সৃষ্টি করা উক্ত গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আজ রবিবার বলেছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, তাঁদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তাঁরা চাকরিতে ইচ্ছুক নন। তার এই বক্তব্য নেটাগরিকরা প্রশংসা করেছে। তারা মনে করে, এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর হওয়া উচিত। বিশেষ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পতিত স্বৈরাচারের যেসব আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা রয়েছে, তাদের অতি দ্রুত সরাতে না পারলে এই সরকার স্থিতিশীল হবে না। একই সাথে প্রধান উপদেষ্টা সহ অন্যান্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় তথ্যের গোপনীয়তার জন্যও তা হুমকি স্বরূপ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতাপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি
‘রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ পেল হংকংয়ে বসবাসরত ১০ বাংলাদেশি নারী
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
মার্কিন সিইও হত্যাকাণ্ড, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিপজ্জনক প্রভাব
গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু
হাসিনাকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী