ওরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঢাল বানিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য দূর করার দাবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং শান্তিপূর্ণ ছিল। খুনি সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তা দমন করতে গিয়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে থাকে। নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর কারণে ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনের সাথে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ একাত্ম হয়, যার ফলশ্রুতিতে এক পর্যায়ে দীর্ঘ দিন ধরে চেপে থাকা জালিম সরকারের পতন হয় এবং দেশবাসীর বহুল প্রত্যাশিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড.মুহাম্মাদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত এই সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই এবং এই সরকারের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করি।
দেশের মানুষ দীর্ঘদিন পর্যন্ত নানা রকম বৈষম্য ও দমন-পীড়নের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত ছিল। মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। পতিত শ্বৈরাচার সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে তার নৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে দিয়েছে। দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ও আজ্ঞাবহ প্রশাসন দিয়ে গোটা দেশে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এহেন পরিস্থিতিতে ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং স্বাধীনতার মুক্ত বাতাস পেতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত এই গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সকল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আত্মোৎসর্গ করেছেন আমরা তাদের প্রত্যেকের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি,তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং আহত হয়ে এখনো পর্যন্ত যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা কামনা করছি।
নতুন সরকারের সামনে আমরা একসাথে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ দেখছি, যেমন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা,মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা বিধান করা, বিচারবিভাগ ও প্রশাসনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা,গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,অর্থনীতির চাকা সচল রাখা,দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তবিক অর্থেই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা,সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনা,শিক্ষাঙ্গনে পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা,বিজাতীয় আগ্রাসন ও হিন্দুত্ববাদ থেকে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিকে মুক্ত করা, শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী বোধ-বিশ্বাসের আলোকে শিক্ষা কারিকুলামকে ঢেলে সাজানো, সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখা,দেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব ও অখ-তাকে যে কোন প্রকার হুমকি থেকে মুক্ত করা, হারিয়ে যাওয়া কিংবা কেড়ে নেওয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নতুন সরকারকে মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এ সব চ্যালেঞ্জের প্রতিটাই গ্রহণ করতে হবে এবং সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নচূড়ায় আরোহন করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পথ চলতে হবে। সদিচ্ছা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্তর্র্বতী সরকার জনআকাঙ্খা পুরণে নিরলস ভাবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর সাথে আমরাও সাধ্যমত সর্বাত্মক সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ। আমরা আর হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতে চাই না, আশান্বিত হতে চাই। আমরা আশা পোষণ করি নতুন সরকার তার কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনেও মনযোগী হবে। এ দেশের মানুষ পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের কাছ থেকে বন্ধুসুলভ আচরণের পরিবর্তে বরাবরই বিমাতাসূলভ আচরণ পেয়ে আজ এতটাই মর্মাহত যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। স্বাভাবিক কারণে নতুন সরকারের কাছ থেকে জনগণ এমন কোন পররাষ্ট্রনীতি আশা করে না,যার ফলে আবারো কোন রাষ্ট্র আগ্রাসী দৃষ্টি দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ পায়। এ বিষয়ে আমরা এই সরকারের কাছে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দূরদর্শিতা প্রত্যাশা করি।
আজ পুরানা পল্টনস্থ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি পেশ করা হয়,দাবিগুলো হচ্ছে, একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর একশ্রেণির মানুষ ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। কেউ কেউ আবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঢাল বানিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। সুতরাং সরকারকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি,সহায়-সম্পত্তি ও উপাসনালয়সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং দেশপ্রেমিক জনগণকে যে কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদের পরিবারকে সরকারী ভাবে যথোপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে,অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে মুক্তি পেতে গার্মেন্টস,শিল্প,কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা সচল রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, পিলখানায় বিডিআর হত্যকা-,২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচী চলাকালীন শাপলাচত্বরের বর্বরোচিত গণহত্যা এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গণহত্যার যথোপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আর কাউকে এ রকম নির্মমতা ও বর্বরতার শিকার হতে না হয়, বিগত ১৬/১৭ বছর মেয়াদে যত গুম-খুন হয়েছে সেগুলোর প্রতিটার বিচার নিশ্চিত করতে হবে,
২০১৩ সালে শাপলা ট্রাজেডির পর এবং ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে যে সকল আলেমের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে ঐ সব মিথ্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত সম্মানিত আলেম-উলামা অনেককেই কোর্টে নিয়মিত হাজিরার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নতুন সরকারকে অবিলম্বে এ সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে,তাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব নির্বাচনে এর কোন বিকল্প নেই,দলীয়করণের মাধ্যমে পুরো বিচারব্যবস্থাকে কুক্ষিগত রাখা হয়েছিল এর কারণেই গতকাল জুডিশিয়াল ক্যু'র চেষ্টা করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে সরকারকে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘ সূত্রিতার অবসান ঘটাতে হবে। গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
গত ১৭ বছর যাবত লুটপাটকারী মন্ত্রী,এমপি,আমলা ও আওয়ামিলীগ দলীয় নেতাদের ফিরিস্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করে বিচার করতে হবে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দেশের কোন কোন সংবাদ মাধ্যমে একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি হল: আদালত পতিত সরকারকে এই মর্মে একটি পরামর্শ দিয়েছে যে,বাংলাদেশের সকল সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরেখা থেকে ১০ কি.মি.এলাকা ছেড়ে দিতে হবে, এই ১০ কি.মি.এলাকার মধ্যে সীমান্ত রেখা থেকে ৮ কি.মি. এলাকায় কোন স্থাপনা ও বাড়িঘর রাখা যাবে না। বাকি ২ কি.মি.এলাকায় সীমান্তরক্ষীদের বাসস্থান ও প্রশিক্ষণশিবির নির্মিত হবে। আদালতের এমন প্রস্তাবনায় দেশবাসীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আমরা নতুন সরকারকে প্রস্তাবিত এই বিষয়টির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক,মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী,মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া,মাওলানা তাফাজ্জল হক আজীজ,মাওলানা লোকমান মাজহারী,মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরী,মুফতী মুনীর হোসাইন কাসেমী,মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী,মুফতী নাসীরুদ্দীন খান, মুফতী আফজাল হোসাইন রহমানী, মাওলানা মকবূল হোসাইন কাসেমী,মাওলানা আবুল বাশার,মাওলানা নূর মোহাম্মাদ কাসেমী,মুফতী বশীরুল হাসান খাদিমানী,মাওলানা মাহবুবুল আলম,মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মুফতী এমরানুল বারী সিরাজী ও মাওলানা রিদওয়ান মাজহারী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’
'সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীর যানজট নিরসন করা হবে' ---বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
রাজশাহী সীমান্তে গভীর রাতে বিএসএফের দফায় দফায় গুলি বর্ষন
আজীবন সন্মাননা পাচ্ছেন আবদুল হাদি-খুরশিদ আলম
প্রকৌশলীর দুর্নীতির ৮ প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক
পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু: যাত্রীদের মাঝে ব্যপক সাড়া
বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি রুপি পায় ত্রিপুরা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
লক্ষ্মীপুরে দুই নারীকে পিটুনি, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার
নওগাঁর রাণীনগরে জাতীয়তাবাদী প্রবাসী ঐক্য পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
বিনিয়োগ ‘ধ্বংসের’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি এস আলমের
বাতিল হলো মৌলভীবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প
সাভারে বাস চাপায় সিআরপি শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক পেলেন ৭২ বিজিবি সদস্য
শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জনজীবন স্থবির
খুবির নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ উপাচার্যের
নওগাঁ শহরের দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হলো জয় বাংলা
জাহাজে ছিল ৫ জনের লাশ, হাসপাতালে মারা গেলেন আরও ২ জন
বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালইজড হাসপাতালে পুনরায় শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত কিডনি প্রতিস্থাপন
নওগাঁয় নতুন পুলিশ সুপার সাফিউলের দায়িত্বভার গ্রহণ