ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
শাহ কামাল গ্রেফতার-অধরা সাইদ কামালরা

গরীবের ত্রাণের টাকা আমলাদের পকেটে

Daily Inqilab সাঈদ আহমেদ

১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম

 টন প্রতি ২২ হাজার টাকা অগ্রিম কমিশন
 অনুসন্ধানে আগ্রহ দুদকের- মামলায় অরুচি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বাসায় প্রাপ্ত ৩ কোটি টাকা মূলত: বিশাল বরফখন্ডের চূড়া মাত্র। এর চেয়েও বেশি নগদ অর্থ মিলতে পারে মন্ত্রণালয়ের ছোটখাটো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বাসায়ও। কারণ দেড় দশকের দুর্বৃত্তায়িত শেখ হাসিনা সরকারের অতি দুর্নীতিপ্রবণ দফতর হিসেবে চিহ্নিত ছিলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ত্রাণ কার্যক্রমের সুবিধাভোগী প্রান্তিক পর্যায়ের দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে ৬০ থেকে ৮০ ভাগই ঢোকে দুর্বৃত্তদের পেটে। ঘাটে ঘাটে বখরা দিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাবিখা-কাবিটার ফাইল ছাড় করাতে হয়। নিচের পর্যায়ের অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে অর্থ লেনদেন। একজন এমপি’র ডিও লেটার পাস করাতে লাগে অর্থ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রাণের জন্য ‘ডিও লেটার’ সংগ্রহ করে আনে একশ্রেণির দালাল। এই দালালরা যোগাযোগ করে মন্ত্রণালয়ে গড়ে ওঠা ত্রাণ সিন্ডিকেটের সঙ্গে। মন্ত্রণালয়ে ‘পাস’ হলেও সেই কাগজটি বিক্রি করে দেয়া হয় স্থানীয় মহাজনদের কাছে। মহাজনরা এই কাগজ দেখিয়ে স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে চাল বা গম ছাড় করিয়ে নেন। সেই গম বিক্রি করে দেন খোলা বাজারে।
ত্রাণে চাল এবং গম আত্মসাতের বহু অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তাধীন রয়েছে। এমন একটি তদন্ত দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে গাইবান্ধা-৪ আসনের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ও আওয়ামীলীগ নেত্রী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। যারা কোনো ধরণের কাজ না করেই পরস্পর যোগসাজশে ৫৮২৩ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করেন। এতিমখানা,লিল্লাহ বোর্ডিং, শিশুসদন, অনাথ আশ্রম, মুসাফিরখানার নামের ১৭৮টি ডিও লেটার ইস্যু করেন গোবিন্দগঞ্জের তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: আব্দুল হান্নান। এর বিপরীতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ২২৫৩ জন প্রকল্প সভাপতির অনুকূলে ৫৮২৩ মেট্টিক টন চাউল বরাদ্দ নেন। এ দুর্নীতির অভিযোগে দুদক অদ্যাবধি উম্মে কুলসুম স্মৃতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি।
এ দুর্নীতির ছায়া তদন্তে নেমে এ প্রতিবেদক দেখতে পান, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের টেবিল পরিবর্তন হলেও ভাগ-বাটোয়ারায় কমতি থাকে না। সদ্য উৎখাত হওয়া সরকারের পুরো সময় জুড়ে মন্ত্রণালয়ের করিডোরে সারাক্ষণ ভীড় লেগে থাকতো ত্রাণের ডি.ও. লেটার নিয়ে আসা দালালদের। তারা এমপিদের ডিও লেটার নিয়ে যোগাযোগ করেন মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ কর্মসূচি-২ অধিশাখার উপ-সচিব আবু সাইদ মো: কামালের সঙ্গে। কামাল প্রথম ডিও লেটার পাস করানো ‘অসম্ভব’ বলে রিফিউজ করেন। পরবর্তীতে ওই দালাল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন একান্তে। প্রতি মেট্রিক টন গমের বিপরীতে ২২ হাজার টাকা অগ্রিম সাইদ কামালকে পরিশোধ করার পর তিনি ত্রাণের জি.ও. তে স্বাক্ষর করেন। তার নেতৃত্বে গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের বড় অংশীদার মন্ত্রণালয়ের অডিট সেলের ফ্যাইন্যান্স অফিসার (সিভিল রিলিফ) মো: নাসির খান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) মো: মনির হোসেন।
সারা বছরই কাবিখা এবং কাবিটার অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়। তবে লুটপাটের হাট বসে প্রতিবছর ‘জুন ক্লোজিং’ এ। চলতিবছর জুন ক্লোজিংয়ে সাইদ কামাল সিন্ডিকেট ত্রাণের যে অর্থ হাতিয়েছেন সেগুলোর ছোট্ট একটি ভাগ পেয়েছিলেন সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল। সাইদ কামাল, নাসির খান এবং মনির হোসেনের বাসা এবং স্বজনদের বাসায় তল্লাশি চালালে এর চেয়ে বেশি নগদ অর্থ মিলতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।
প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ময়মনসিংহ সদর, নোয়াখালির হাতিয়া (হাজী মোজারুল হকের রাস্তা সংস্কার), কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ (পশ্চিম তালতলার হাওলাদার বাড়ি সামাজিক কবরস্থান সংস্কার), পটুয়াখালি বাউফল ( বানা জোড়া দুর্গা মন্দির সংস্কার), নীলফামারী সদর (আংগারপাড়া পুলের হাট ওয়াক্তিয়া জামে মসজিদ নির্মাণ), নোয়াখালি সোনাইমুড়ী (হাজী আব্দুল কাদের জামে মসজিদের রাস্তা সংস্কার), সিরাজগঞ্জ সদরের মোট ২৫টি প্রকল্প এবং ভোলার লালমোহনে খোকন মিয়ার বাড়ি থেকে কায়ছার আহম্মদ মিয়ার বাড়ির রাস্তা মেরামত, অজিউল্যাহ মিয়ার বাড়ি থেকে সেলিম পাটোয়ারির বাড়ির রাস্তা মেরামত বাবদ অন্তত: ৮ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরকম শত শত জিও স্বাক্ষর করেন আবু সাইদ মো: কামাল। এসব স্বাক্ষরের বিপরীতে শুধু এবারের জুন ক্লোজিংয়েই তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত: ২০ কোটি টাকা। নাসির খান, মনির হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বাসায় কিংবা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যায় প্রায় সমপরিমাণ ত্রাণের অর্থ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ ( রোববার) দুপুরে যোগাযোগ করা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু সাইদ মো: কামালের সঙ্গে। তাকে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অনুসন্ধানে জানাযায়, মহা-দুর্নীতিবাজ আবু সাইদ মো: কামাল পড়াশুনা করেছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন-এ কথা তিনি গর্ব বলেই প্রচার করেন। পেশায় ভেটেরিনারি সার্জন হলেও তিনি মাইগ্রেট হন প্রশাসন ক্যাডারে। আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত বিধায় তিনি বিপুল অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং নেন ঘুষের টেবিলে। পদোন্নতি লাভের চিন্তা তিনি নিজ থেকেই কখনো করেন নি। ঘুষই হয়ে ওঠে তার মূল টার্গেট। কোথায় কোন্ দেবতা কিসে তুষ্ট-এ তা তার রপ্ত। ফলে দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে তার চাকরি করতে এতোটুকুন বেগ পেতে হয়নি। সরকার পরিবর্তন হলেও বহাল রয়েছে তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির সিন্ডিকেট।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আবু সাইদ মো; কামাল সাধারণ একজন উপ-সচিব হলেও গড়ে তুলেছেন পর্বত সমান সম্পদ। নিজ শহর ময়মনসিংহে রয়েছে তার বিশাল বাড়ি। গড়েছেন মার্কেট। রাজধানীর মিরপুরে ৬০ ফিট রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় আছে ফ্ল্যাট। দেশে নামে- বেনামে রয়েছে বাড়ি,প্লট ও ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ। বিপুল অর্থ পাচার করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ছেলেকে পড়াচ্ছেন সেখানে রেখে। অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। তবে এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট উৎখাত হয় দুর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগ সরকারের। আর তাতেই গুবলেট হয়ে যায় সাইদ কামালদের প্ল্যান-পরিকল্পনা। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও অদৃশ্যকারণে স্বপদে বহাল রয়েছে তার সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে আগ্রহ দুদকের-মামলায় অরুচি : শাহ কামাল কিংবা আবু সাইদ মো: কামাল। গরীবের ত্রাণ সামগ্রিতে থাবা বসান ত্রাণের বিভিন্ন চেয়ারে আসীন সকল ‘কামাল’রা। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেও লাভ হয় না। ঘুষের অর্থে আরেকটি ভাগ বসে মাত্র। অকাট্য প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও ত্রাণের চাল-গম-টিন-টাকা আত্মসাতের ফাইলগুলো দুদকে চাপা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। অনুসন্ধানের নামে বছরের পর বছর ফাইলপত্র টানা- হেছড়া হয়। মামলা অবধি গড়ায় না। দায়মুক্তি কিংবা ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয় অধিকাংশ অভিযোগ। গ্রেফতার হওয়ার সাবেক ত্রাণ সচিব শাহ কামালের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দুদকে ‘অনুসন্ধানাধীন’ ছিলো দীর্ঘদিন। কিন্তু আমলা শাসিত কমিশন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র আমলা শাহ কামালের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রুজু করেনি। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার দেয়া ত্রাণের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি গোপনেই ‘নিষ্পত্তি’ করে দেয় বর্তমান কমিশন।
দুদক সূত্র জানায়, শাহ কামালের বিরুদ্ধে ত্রাণের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয় ৪ বছর আগে। সেখানে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন অভিযোগ ছিল। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দুর্নীতির প্রমাণও মেলে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে থমকে যায় সেই অনুসন্ধান।
সূত্রমতে, শাহ কামালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার মতো যথেষ্ট উপকরণ ছিলো। অনুসন্ধানে (নথি নং ০০.০০০০.০০০০.৯০০.১১.০২১.২০) মামলা করার মতো যথেষ্ট উপাদান ছিলো। তাতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ৩০ জুন শাহ কামাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে অসর-পূর্ব ছুটিতে যান। স্ত্রী ফারজানা সিদ্দিকা পেশায় গৃহিনী। তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ফারিয়া কামাল পেশায় ডাক্তার। ছোট মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। ছোটটি পড়ে ইন্টারমিডিয়েট। শাহ কামাল চাকরি জীবনের শুরুতে গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিগঞ্জ ও গাজীপুর সদরের উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীর জামিন দিতেন। ঘুষ না দেয়ায় নিরপরাধীকে সাজা দিতেন। ২০০৩ সালে শরীয়তপুরের এডিসি (সাধারণ) ছিলেন। ২০১১ সালে ০৬ মাসের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ছিলেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আসীন হন। তার কর্মকালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে ০২টি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ নিয়োগের মধ্য দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার একান্ত সচিব শাব্বির আহম্মদ ও প্রোগ্রামার আবদুল কাদেরের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ আদায় করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এসএনএসপি (সেফটিনেট সিস্টেম ফর প্যুওরেস্ট প্রজেক্ট) বা অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প বাস্তায়িত হয়। এটি দেশব্যাপি ‘৪০ দিনের কর্মসূচী’ নামে পরিচিত। গ্রামীণ সড়কে ছোট বড় সেতু কালভার্ট নির্মাণ, এইচবিবি, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (২য় পর্যায়) ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পগুলো অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হয়। লবণাক্ততায় জর্জরিত উপকূলীয় কয়েকটি উপজেলার জন্য ট্রাক মাউন্টেড সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পটি সরাসরি জাইকার অর্থায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। ‘আরবান রেসিলিয়েন্স প্রজেক্ট’টি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তায়িত হয়। এছাড়া সদ্য উৎখাত হওয়া আওয়ামী সরকারের অর্থায়নে ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ ও সংস্কার’ প্রকল্প থেকেও তিনি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
প্রাথমিক গোপন অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শাহ কামালের বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে জেলা প্রশাসন, গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চারির সূত্রে আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিনিয়র সচিব জনাব শাহ কামাল কর্তৃক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলী ও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তা তার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি-না সেটি যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই অনুসন্ধান ‘ গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ হিসেবে গোপনেই নিষ্পত্তি করা হয়।
উদ্ধারকৃত অর্থের অঙ্ক নিয়ে সন্দেহ-ধূ¤্রজাল
এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাবর রোডে এফ ব্লকের ২৯/২ ও ৩ নম্বরস্থ শাহ কামালের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ৩ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা, ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দামের ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড। ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশী মুদ্রা। বিদেশী মুদ্রার মধ্যে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চীনা ইউয়ান রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে উদ্ধারকৃত অর্থ জব্দকরণে।
আইনানুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতি, ঘুষের আলামত জব্দ করার এখতিয়ার দুদকের। ঘটনার দিন ছিলো শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দুদকও ছিলো বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে অর্থ জব্দকরণে ঢাকার পুলিশ কমিশনার দুদকের সহযোগিতা কামনা করেন। বিষয়টি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন অবহিত হলে তিনি একজন মহাপরিচালককে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন। মহাপরিচালকের নির্দেশে দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই জনের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ অভিযানের বিষয়ে কমিশন অবহিত ছিলেন না। ফলে এ নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় সন্দেহ। এমন অভিযোগও ওঠে,অভিযানের আগেই শাহ কামালের বাসা থেকে ৫ বস্তা টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আজ ( রোববার) অবস্থান পরিষ্কার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৬/০৮/২০২৪ তারিখ শুক্রবার বিকেল ৫ ঘটিকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচালিত একটি অভিযান চলমান রয়েছে মর্মে উল্লেখপূর্বক কমিশনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। এ ক্ষেত্রে অভিযানে উদঘাটিত ঘটনা কমিশনের কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় এতদসংক্রান্ত জব্দকৃত আলামতের ইনভেন্টরি/জব্দ তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে আইনগত ও কার্যকরি পরামর্শ প্রদানের জন্য কর্মকর্তা প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়,ঢাকা-১ এবং অন্য একজন উপ-পরিচালককে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পুলিশ বিভাগ কর্তৃক শেয়ারকৃত লোকেশনে কমিশনের কর্মকর্তাগণ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় উপস্থিত হয়। তারা সেখানে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাগণকে তল্লাশিরত অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাইরে স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তল্লাশিকালে প্রাপ্ত আলামত জব্দ/ইনভেন্টরি করার প্রক্রিয়া এবং তৎপরবর্তী জিডিভুক্ত করাসহ অন্যান্য আইনানুগ বিষয়ে যাচিত পরামর্শ প্রদানপূর্বক পুলিশ বিভাগের কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় কমিশনের কর্মকর্তাগণ ৬.৪৫ এর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি দলও উপস্থিত ছিলো।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
আরও

আরও পড়ুন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?