বগুড়ার পরিবহন জগতের শাহেনশাহ ও শ্রমিক নেতা মৃত. আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল ইসলাম গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর উধাও। কিন্তু কেনো? তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত। গত জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ভোট করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। পৈতৃক সূত্রে রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের দিক থেকে তিনি আদর্শিক আওয়ামী লীগের নন। পরিবহন জগতে কর্তৃত্বের স্বার্থে তিনি হাইব্রিড হিসেবে আওয়ামী লীগের যুব ও মূল সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী রেজিমেন্টের গত ১৬ বছরে কখনো আওয়ামী লীগের গোত্রপতি মনজুরুল আলম মোহন, মমতাজ উদ্দিন, কখনো শাজাহান খান এমপির ছত্রছায়ায় থেকে পরিবহন সেক্টরে অবৈধ অর্থ কামিয়েছেন কোটি টাকা গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ব্যক্তিগত স্বার্থে বদলাতে থাকেন প্রভু। লেখাপড়া বা ব্যবসা বাণিজ্যের সফল ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও হয়ে ওঠেন ‘শাহ ফতেহ আলী’ নামের ব্যানারে অনেকগুলো যাত্রীবাহী কোচের মালিক হন। বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মালিক সমিতির সভাপতি পদ লাভ করে প্রথমে লাখপতি, পরে কোটি তারপর দ্রæততম সময়ে হাজার টাকার সম্পদের মালিক হন। একই সাথে বগুড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে এলাকায় তিনি শাহেন শাহ বনে যান। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে তার প্রভাব প্রতিপত্তি বিত্ত¡ বৈভব। স্ত্রী থাকতেও বিয়ে করেন একজন হিন্দু বিবাহিত নারী চিকিৎসককে। ওই নারীকে নিয়ে এয়ারপোর্টে ধরাও পড়েন অস্ত্রসহ। এরকম বহু ঘটনায় আলোচিত হতে থাকেন মিডিয়ায়। কিন্তু অর্থের জোরে সবকিছুই সহজে ম্যানেজ করে নেন।
মাঝে একবার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মনজুরুল আলম মোহন বাস, মিনিবাস, কোচ মালিক সমিতি সাংগঠনিক ও আইনিপন্থায় দখলের চেষ্টা করলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আমিনুল। প্রতিপক্ষের আইনজীবী ও পরিবহন মালিক অ্যাড. মাহবুব আলম শাহীনকে খুন করান ভাড়াটে খুনিকে দিয়ে। কেবল নিজের চেয়ার নিস্কন্টক করতেই বগুড়ার একজন প্রভাবশালী আইনজীবীকে খুন করায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন আমিনুল। গ্রেফতার হয়ে জেলে পর্যন্ত যান। আবার জেল থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হাইকোর্টের ভুয়া জামিনের কাগজ ব্যবহার করে কারামুক্ত হন। পরে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে ফের মিডিয়ায় আলোচিত হতে থাকেন তিনি।
তবে কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে তিনি বগুড়া শহরের চারমাথা বাস স্টপেজ, থেকে পশ্চিমে এরুলিয়া ইউনিয়ন ও কাহালু উপজেলার পূর্বদিকের প্রায় সবগুলো সরকারি খাস ও ব্যক্তিগত মালিকানার পুকুরগুলো লিজের নামে কার্যত পৈতৃক সম্পত্তির মতই ভোগ দখল করে আসছেন। বগুড়া ও ঢাকা মিলিয়ে সম্পদ গড়েছেন এর বাজার মূল্য হবে হাজার কোটি টাকা।
গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক বৈরিতা, ব্যক্তিগত শত্রæতা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের ভয়ে তিনি বগুড়ায় থাকা নিরাপদ মনে করেননি। নিরাপত্তার স্বার্থে সবকিছু ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন শাহেনশাহ খ্যাত আমিনুল। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, অজ্ঞাতস্থানে থেকে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন হারানো সা¤্রাজ্য ফিরে পেতে ।