ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের রঙ বদল!

Daily Inqilab স্টালিন সরকার

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম

‘লজ্জা-ঘৃণা-ভয়/তিন থাকতে নয়’ প্রবাদের প্রতিফলন ঘটেছে দেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতায়। এখন প্রবাদটি হয়েছে ‘লজ্জা-ঘৃণা-ভয়/গণমাধ্যম সাংবাদিকতায় এই তিন থাকতে নয়’। রাজনৈতিক পালাবদলে এখন দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিশাল অংশ গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে শুরু করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ দিন (৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়ন) পর্যন্ত যে গণমাধ্যমগুলো হাসিনা রেজিমের পক্ষে ছিল; ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উষ্মা প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, পুলিশ বাহিনীকে ‘দানবে পরিণত’ করতে শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে; এমনকি হাসিনার পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন, জুডিশিয়াল ক্যু, ১৫ আগস্ট ১০ লাখ লোকের ঢাকায় অবস্থান এমনকি আনসারের সচিবালয় ঘেরাও নিয়ে ‘পজেটিভ খবর’ প্রচার করেছে; তারা এখন রঙ পাল্টাতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর নির্যাতন না করার’ আহবান জানিয়ে শতাধিক নোবেল বিজয়ী বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তি খোলা চিঠি দিয়েছিল শেখ হাসিনার কাছে; ওই খোলা চিঠিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ দাবি করে যে ৫০ জন সম্পাদক প্রতিবাদী বিবৃতি দিয়েছিলেন এবং তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়; সেই সম্পাদকরাও এখন গিরগিটির মতো রঙ বদল করে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে ‘আমরা তোমাদের লোক’ প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যারা শেখ হাসিনাকে গত জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় ইন্ধন দিয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’র পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে হাসিনাকে সহায়তা করেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে টিভির টকশো এবং গণমাধ্যমে সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখেছেন, পতিত হাসিনার সুরে সুর মিলিয়ে ড. ইউনূসের মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে ‘সুদখোর’ তকমা দিয়েছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন; তারা এখন নতুন সরকারের সবকিছুতেই সামনের কাতারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সবকিছুতেই তারা সামনের কাতারে থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, নীতি কথা শুনিয়ে ছবক দিচ্ছেন। এমনকি সরকারি বিজ্ঞাপন কব্জা করতে ডিএফপির মিডিয়া তালিকায় সামনে থাকার কায়দা-কসরত করছেন। ‘গায়ে মানে না আপনে মোড়ল’ প্রবাদের মতোই বক্তব্য-বিবৃতি এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে অন্তর্বর্তী সরকারকে উপদেশ দিচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে গণমাধ্যমের এই গিরগিটিদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে কি কোনো ভূমিকা আছে? এক কথায় উত্তর নেই। এরা শেখ হাসিনা ও ভারতকে খুশি করতেই মহাব্যস্ত ছিল এবং সব সময় নিজের বু্িদ্ধবিবেককে সে কাজে লাগিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে কোটা আন্দোলন করে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় ছাত্র আন্দোলনে জনতা অংশ নেয়ার পর শেখ হাসিনা বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ব্যবহার করে সেনাবাহিনী নামিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। এ সময় আন্দোলন ঠেকাতে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ¯œাইপার দিয়ে গুলি, ব্রাশ ফায়ার করে কয়েকশ’ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ-বিজিবির গুলিতে হাজারো ছাত্র-জনতার কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পঙ্গু হয়েছেন। রাজপথ ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে এবং প্রতিদিন মৃত্যের তালিকা বাড়ছে অথচ কিছু গণমাধ্যম নামের প্রচারমাধ্যম টকশোতে এবং সাংবাদিকতার নামে শেখ হাসিনাকে উস্কে দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে দানবের মতো গুলি করে মানুষ হত্যার মন্ত্রণা দেয়। টিভির টকশোতে আন্দোলন ঠেকাতে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সম্পাদকদের সংলাপে ছাত্রনেতারা প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও টিভি মিডিয়াগুলো আন্দোলনে সমর্থন দেয়নি বলে জানিয়েছেন। ওই মতমিনিময়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া তার বক্তব্যে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের কঠিন সময়ে যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন প্রিন্ট মিডিয়াই ছিল নির্ভরতার জায়গা। অনেক দূর হেঁটে পর্যন্ত প্রিন্ট পত্রিকা সংগ্রহ করেছি।’ অথচ হাসিনার তাঁবেদার ওই গণমাধ্যমগুলো এখন অন্তর্বর্তী সরকারের লোক হিসেবে জাহির করছেন। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর যেন খারাপ কিছু না করা হয় সে দাবি জানাচ্ছেন। একাত্তর টিভির ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ নামের দু’জন সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। নাসির হাসান রিয়াদ নামের এক ছাত্র হত্যার বিচার চেয়ে তার পিতার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৯ আগস্ট দায়ের করা মামলায় অর্ধশত আসামির মধ্যে ২৯ জন সাংবাদিকের নাম রয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যম-সাংবাদিক-সম্পাদক-সুশীল-বুদ্ধিজীবীদের উদ্বেগের শেষ নেই। অথচ ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত করার পরও সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এরা উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। ছাত্রলীগ-যুবলীগের পাÐারা ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রংপুর আদালত চত্বরে দৈনিক ইত্তেফাকের এক সময়ের সম্পাদকমÐলীর সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে নাজেহাল করলেও এই সুশীল-সাংবাদিকদের বিবেক নাড়া দেয়নি। তখন এরা গণভবনে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে তোষামোদির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিলেন। হাসিনার শাড়ি-বøাউজ আর পিঠাপুলির প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার পেঁয়াজ ছাড়া পিঁয়াজু, কুমড়া দিয়ে বেগুনি, কাঁচামরিচ ফ্রিজে রেখে খাওয়ার উক্তির প্রশংসা করেছেন। পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যা বা বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা এদের হৃদয়ে নাড়া দিতে পারেনি।

শেখ হাসিনা দেশ শাসনের নামে ১৫ বছর যে নিষ্ঠুরতা করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। গতকালও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাসিনার অপকাÐ ও ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার চিত্র তুলে ধরেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, তার একজন উপদেষ্টা, এমপি এবং গণহত্যার নির্দেশ পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে তুলে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। রিমান্ডে তারা পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। তাদের বক্তব্য হলো শেখ হাসিনা উপদেষ্টা-মন্ত্রী কারো কথাই শুনেননি। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেছেন তিনি সংকটের সুরাহা করার এবং শেখ হাসিনাকে গণহত্যা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। একই ধরনের কথা বলেছেন সালমান এফ রহমান। তাদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা নিজের কিছু পছন্দের ব্যক্তি এবং গণমাধ্যমের কিছু দলদাসকে নিজের লোক হিসেবে মনে করতেন এবং তাদের উস্কানিমূলক কথাবার্তাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। ফলে গণমাধ্যমে দলদাস সাংবাদিকরা কী জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দায় এড়াতে পারেন? সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, টিপু মুনশিরা তো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজেরা গুলি চালাননি। গুলি চালানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশনাও দেননি। এমনকি লুটেরা এস আলম গ্রæপের সাইফুল আলম, ওরিয়নের ওবায়দুল করিম, সামিটের আজিজ গংরা পুলিশকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনা দেয়নি। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যাংক লুট করেছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। তারা যে অপরাধ করেছেন সে বিচার হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। কিন্তু কিছু টিভি মিডিয়ায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগ রেজিমে যারা লাইসেন্স পেয়ে কর্পোরেট হাউজে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা টকশো ও সংবাদ প্রচারের নামে প্রতিদিন শেখ হাসিনাকে উস্কিয়েছেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঠেকানোর জন্য শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাদের ইন্ধনেই শেখ হাসিনা ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর হয়ে উঠেন এবং পুলিশ বাহিনীকে দানবে পরিণত করে ছাত্র-জনতাকে রাজপথ থেকে হটাতে গুলি চালানোর নির্দেশনা দেন। ফলে গুলি করে, ব্রাশফায়ার করে, ¯œাইপার দিয়ে বহুদূরে গুলি করে শত শত ছাত্র-জনতা হত্যা করা হয়। সাংবাদিকতার নামে এতগুলো মানুষকে হত্যার এই উস্কানিদাতারা দায় এড়াবেন কিভাবে? অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সুযোগ সন্ধানী এই মুজিববাদী সাংবাদিক নামধারী তোষামোদকারীরা দেশের গণমাধ্যমকে কলুষিত করেছেন। গণমাধ্যমের চরিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। এদের অপসাংবাদিকতার কারণে গণমাধ্যমের বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি মানুষ ঝুঁকছে। দালাল শ্রেণির এই সাংবাদিকরা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পাতানো নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণে শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন। বিনিময়ে নিজেরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ প্লট, ফ্ল্যাট নিয়েছেন, কেউ তদবির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন, কেউ কেউ আবার বিভিন্ন কর্পোরেশন, দূতাবাস, সেক্টর, ব্যাংক-বীমার মালিক হয়েছেন। কেউ সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবি এবং বিশ্ববিদ্যারয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে অর্থসম্পদ লুট করেছেন। দেশের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এখনো অর্থাভাবে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারেন না। অথচ এরা হাসিনার ১৫ বছরে কেউ দশ, বিশ কোটি এবং শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এই নীতিহীন, আদর্শহীন, চরিত্রহীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে গণহত্যা করে শেখ হাসিনা পালানোর পর যে সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে তারা কী ধোয়া তুলসি পাতা! তারা যদি অপরাধে জড়িত না থাকে তাহলে তো এমনিতেই তদন্তে তাদের নাম বাদ যাবে। চিন্তার কি আছে?

গিরগিটির মতো রঙ বদলানো সাংবাদিক-সম্পাদকদের মতো কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, এনজিও কর্মী কয়েজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা ও সাংবাদিক দম্পতিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করছেন এবং মানবাধিকার প্রসঙ্গ সামনে আনছেন। প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে গণমাধ্যম, দালাল সাংবাদিকদের মানবাধিকার নিয়ে এত মায়াকান্নার নেপথ্যের রহস্য কি? দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়া পলাতক হাসিনার তল্পিবাহক সাংবাদিকদের কেবল মানবাধিকার আছে অন্যদের নেই? ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, রাষ্ট্রচিন্তক ড. মাহবুবউল্লাহকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল ছাত্রলীগ। একজন বুদ্ধিজীবীকে রক্তাক্ত করা কী এই সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলদের বিবেক নাড়া দিয়েছিল? ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরে পুলিশের ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতায় কওমী মাদরাসার অসংখ্য গরিব শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই খবর মাসের পর মাসজুড়ে শিরোনাম হয়েছে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা হত্যাকান্ড নিয়ে এদের প্রাণ কাঁদেনি। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে আলেম সমাজ মিছিল করেছিল। এ সময় তাদের ওপর যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয় তা বর্ণনাতীত। এসব ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর পৈশাচিকতার মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে বলে মুখচেনা সুশীল-বু্িদ্ধজীবীরা হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তোলার প্রয়োজন বোধ করেননি। এমনকি ইনকিলাব অফিসে তালা ঝুলিয়ে ছাপানো বন্ধ করা (প্রায় এক মাস পর আদালত পত্রিকা খুলে দেয়), সম্পাদক-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, আমার দেশ, দীগন্ত টিভি, দৈনিক দিনকাল, ইসলামী টিভিসহ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ায় হাজার হাজার মিডিয়াকর্মী বেকার হয়ে বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করেছে। তাদের জন্য মুখচেনা এই সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সুশীলদের প্রাণ কাঁদেনি। বরং ওই সব গণমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের পক্ষে য্ুিক্ত তুলে ধরে টকাশো প্রচার করা হয়েছে। মুখচেনা সাংবাদিক-সুশীলদের প্রাণ কাঁদছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যায় ইন্ধন দেয়া তথাকথিত দালাল সাংবাদিক ও বৈধ-অবৈধপথে উপার্জিত অর্থ রক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত কর্পোরেট হাউসগুলোর মালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলোর জন্য! ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছিল। খুলনার একটি সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতে পাচারের চেষ্টার সময় তাকে র‌্যাব উদ্ধার করে। ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর সাংবাদিকতার নামে তাকে (একাত্তর টিভি ও সময় টিভি) উল্টো প্রশ্ন করে আপনি নিখোঁজ হলেন কেন? এত জায়গা থাকতে আপনাকে কেন ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়? নাকি নিজেই নিখোঁজ হয়ে প্রচারণায় এলেন? এসব প্রশ্ন কী কোনো সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে?

ড. ইউনূসকে নাজেহাল না করার আহবান জানিয়ে বিশ্বের শত নোবেল বিজয়ীসহ আন্তর্জাতিক নেতাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ‘খোলা চিঠির’ প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেয়া ৫০ জন সম্পাদকের অনেকেই দেখা গেল যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সম্পাদকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে। যমুনায় ড. ইউনূসের সামনে তারা কত হাসিখুশি সাবলীল। গ্রিসের রাজা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট প্রায় দুই হাজার বছর আগে ভারত উপমহাদেশ সম্পর্কে তার সেনাপতি সেলুকাসকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’ এখন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সুবিধাবাদী গণমাধ্যম ও সুবিধাবাদী সাংবাদিকদের তৎপরতা দেখে বলতে ইচ্ছে করে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার বিচিত্র কী রূপ’।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পক্ষে বিপক্ষে অভিযোগ : গুরুতর আহত ৫

পক্ষে বিপক্ষে অভিযোগ : গুরুতর আহত ৫

আখাউড়ায় শিক্ষকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

আখাউড়ায় শিক্ষকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা আ.লীগ সভাপতি খোকন কল্যানপুরে গ্রেফতার

আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা আ.লীগ সভাপতি খোকন কল্যানপুরে গ্রেফতার

কুতুবদিয়া উপজেলাধীন লেমশীখালীতে কোস্টগার্ডর অভিযান

কুতুবদিয়া উপজেলাধীন লেমশীখালীতে কোস্টগার্ডর অভিযান

যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সভাপতি মালেকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় সিলেটে মামলা

যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সভাপতি মালেকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় সিলেটে মামলা

দুই পুলিশ সদস্যকে রিমান্ড শেষ না হতেই কারাগারে প্রেরণ

দুই পুলিশ সদস্যকে রিমান্ড শেষ না হতেই কারাগারে প্রেরণ

গেঞ্জির পেছনে নাম দেখে সনাক্ত হয় দগ্ধ কামালের লাশ

গেঞ্জির পেছনে নাম দেখে সনাক্ত হয় দগ্ধ কামালের লাশ

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে

আদানি পাওয়ার বিদ্যুতের দাম বেশি নিচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ

আদানি পাওয়ার বিদ্যুতের দাম বেশি নিচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ

নেত্রকোনা পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

নেত্রকোনা পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

প্রাথমিক শিক্ষার ‘এডহক’ কমিটির ১১ সদস্যের

প্রাথমিক শিক্ষার ‘এডহক’ কমিটির ১১ সদস্যের

গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অস্থিরতা ও দীর্ঘসূত্রিতা কোনটাই কাম্য নয় -এবি পার্টি

গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অস্থিরতা ও দীর্ঘসূত্রিতা কোনটাই কাম্য নয় -এবি পার্টি

গণমাধ্যমের সাথে আলোচনা করে কমিশন করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা

গণমাধ্যমের সাথে আলোচনা করে কমিশন করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা

ওরসের নাম ভাঙিয়ে কিছু কুচক্রি মহল দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন ও মাজারের পবিত্রতা বিনষ্ট করতে পারে

ওরসের নাম ভাঙিয়ে কিছু কুচক্রি মহল দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন ও মাজারের পবিত্রতা বিনষ্ট করতে পারে

মাওলানা হাজী ইউছুফের নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন

মাওলানা হাজী ইউছুফের নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন

গোবিন্দগঞ্জে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার

গোবিন্দগঞ্জে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে পড়াশুনার ব্যাপক মানোন্নয়ন হবে: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে পড়াশুনার ব্যাপক মানোন্নয়ন হবে: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী

মাগুরা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কমিটি বাতিল

মাগুরা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কমিটি বাতিল

বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ

বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ

রাজবাড়ীতে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদ সভায় হামলা-ভাংচুর,  আহত ১০

রাজবাড়ীতে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদ সভায় হামলা-ভাংচুর, আহত ১০