জাতীয় নাগরিক কমিটি নিয়ে নাগরিক ভাবনা
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
গত ৮ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠন করা। কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও এবি পার্টির সাবেক গবেষণা ও তথ্য বিষয়ক সহকারী সম্পাদক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী সদস্য সচিব করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেন কে অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রচিন্তার সাবেক সদস্য সামান্তার শারমিনকে কমিটির মুখপাত্র করা হয়েছে। ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে আরো যারা স্থান পেয়েছে তারা প্রায় সকলেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সহ সমন্বয়ক কিংবা এই আন্দোলনের সাথে কোন না কোন ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এই কমিটি তাদের প্রাথমিক কাজ হিসেবে ইতিমধ্যেই আট দফা দাবি দিয়েছেন। যাতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা পরিচালনার বিচার করা এবং হতাহতদের পুনর্বাসন, সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রসংস্কার প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়াও গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরীর জন্য আলোচনা করার কথা ও বলা হয়েছে তাদের দাবিতে।
কমিটির প্রকৃতি সম্পর্কে সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "এটা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তবে এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করছি না। দল হিসেবে কার্যক্রম কবে কিংবা কিভাবে হবে সেটা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।"
আক্তার হোসেনের বক্তব্যে বোঝা যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নাগরিক কমিটির নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা এখনই নিজেদেরকে দাবি করছে না। যদিও এখন তারা যেসব সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সারা দেশব্যাপী তা একপ্রকার রাজনৈতিক।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ প্রত্যেকের রয়েছে। সেই হিসেবে জুলাই বিপ্লবে যারা সফল হয়েছেন তারা অবশ্যই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন। যদিও এই আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তাদের বক্তব্যে ও ব্যানারে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল।
জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের পর আন্দোলনের সমন্বয়কারীগণের পরবর্তী দুই দিনের কার্যক্রম এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সাথে আলাপ করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।
অনেকেই যেমন এই রাজনৈতিক কমিটি গঠন সমর্থন করছেন আবার অনেকেই সমর্থন করলেও এখনই বা এত দ্রুত রাজনৈতিক দল গঠন করা সঠিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্ধিহান হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক দল গঠন কতটা সমীচীন তা নিয়ে প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোকে কোন প্রকার রাজনৈতিক দল গঠন বা গঠনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি তবে ২০০৬ সালের ফখরুদ্দিন - মইনুদ্দিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ফোরামে তাদেরকে কিংস পার্টি হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ কারণে জাতীয় নাগরিক কমিটি কোন কিংস পার্টি কিনা সে প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছে কাউকে কাউকে।
আরেকটি অভিমতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নাগরিক কমিটির সরকারে পরিণত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার ভাগীদার জাতীয় নাগরিক কমিটির ওপর বর্তায়।
একটি গোষ্ঠীর অভিমত, ১৯৭১ একদিনে আসেনি। '৫২, '৬২, '৬৯ এবং '৭০ এর বিপ্লবী পথ বেয়ে অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ এবং স্বাধীনতা এসেছে। সে কারণে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের শহীদরা যেমন স্মরণীয় হয়ে আছেন, তেমনি সালাম, বরকত, রফিক ও আসাদেরাও স্মরণীয় ও বরণীয়। একারণেই একটি আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ১৭ বছরে যে সকল মুক্তিকামী জনতা গুম হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, আহত বা পঙ্গু হয়েছেন, আত্মত্যাগ করেছেন, নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হয়েছেন- বিএনপি, জামায়াত, গণপরিষদ, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সহ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের যে সমস্ত নেতাকর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ যারা বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে নতুন বিপ্লবের স্বাধীনতার সলতে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন, আয়না ঘর নামক টর্চার সেলে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন, তবুও ফ্যাসিবাদকে সমর্থন জানাননি- তাদেরকে ভুলে গিয়ে কেবল জুলাই বিপ্লবের শহীদ, আহত ও নায়কদেরকে ফোকাস করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও পেশাজীবী মানুষ যারা ফ্যাসিবাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করার দায়ে বছরের পর বছর ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে দেশে ও দেশের বাইরে নির্যাতিত জীবন পার করেছেন, তাদেরকেও সমভাবে মূল্যায়নের দাবি উক্ত শ্রেণীর মানুষের। শুধু নিজের বা পরিবারের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কত লাখ লাখ তরুণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে না পেরে সম্ভাবনাময় জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, হতাশায় ডুবে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে আজন্ম লালিত স্বপ্ন, তাদের এই ত্যাগ ভুলে গেলে চলবে কি করে। জুলাই বিপ্লবও বিপুল অশ্রু ও রক্তের সুদীর্ঘ পথ বেয়ে চূড়ান্ত রূপে এসেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই সমস্ত শহীদ, আহত, নির্যাতিত, মজলুম মানুষ ও পরিবারের কথা জুলাই বিপ্লবের নায়কদের মুখে সেভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না।
একই প্রসঙ্গে বিএনপি সমর্থক কিছু মানুষের সাথে কথা হয়েছে। নতুন করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সিন্ডিকেট তৈরির যে আলোচনা এখন খুব জোরেশোরে সমালোচিত হচ্ছে সে ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাদের অভিমত হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলীয়করণ করেছিল। বঙ্গভবন থেকে ফুটপাত পর্যন্ত মাঠ, ঘাট, বাজার মসজিদ কমিটি, স্কুল কমিটি, সমাজ কমিটি, এফবিসিসিআই থেকে শ্রমিক ইউনিয়ন, বাস টার্মিনাল সবকিছু তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার এসব দোসররা এই সমস্ত কমিটিতে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে। সরকার নির্বাহী আদেশে সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কমিটি ভেঙে দিলেও অন্যান্য অসংখ্য জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরা বসে রয়েছে। তাদেরকে মুক্ত করা ছাড়া প্রকৃত ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। তাদেরকে এ সকল পথ থেকে সরাতে না পারলে বর্তমান সরকারকে নানা ধরনের সাবোটাজের মুখোমুখি হতে হবে এবং আগামী নির্বাচনী পরিবেশ কখনোই অনুকূলে আসবে না।
একজনের মন্তব্য, আজকে বর্তমান সরকার বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শাস্তিমূলক পদচ্যুতি, চাকরিচ্যুতি, বদলি প্রভৃতি যেমন করছে, তেমনি নিজেদের লোক মনে করে অনেককে ডবল পদোন্নতি ও পদায়ন করছেন। এই পরিবর্তন ছাড়া তাদের পক্ষে কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা ও তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তারা নিজেরাও নিরাপদ নয়।
ঠিক তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্র দেহের বিভিন্ন বেসরকারি কাঠামোতে ফ্যাসিবাদের যেসব দোসরা ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদেরকে সেখান থেকে অপসারণ করা না গেলে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনভাবেই ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারেনা। আগামী দিনে বর্তমান সরকার যদি কোনভাবে বিপদে বা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তখন এই সমস্ত ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টরা মাথাচাড়া দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে। এবং রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এই সরকারের যে সময় প্রয়োজন সেই সময় পর্যন্ত এই সরকারের মেয়াদ নিরাপদ করতে রাষ্ট্র ও সমাজদেহের সকল সিন্ডিকেট ফ্যাসিবাদ মুক্ত করা অতি আবশ্যক। কিন্তু কাজটি সহজ নয় এবং তারা খুব সহজে এ সকল অবস্থান ছাড়তে চাইবে না।
তার মতে, এই কাজটি করার জন্য বর্তমান মুহুর্তে বিএনপি ছাড়া এমন কোন সংগঠন নেই যারা সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে এককভাবে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। সে কারণে সরকার যেমন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে কাজটি করছে, বিএনপি সামাজিক ও বেসরকারি পর্যায়ে একই কাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা অস্বীকার করছি না এই কাজ সর্বত্র ত্রুটিমুক্ত হচ্ছে। আপনাদের গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে আমরা অনেক জায়গা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত খবর পেয়েছি। আমাদের দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা বারবার দেয়া হয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক সিনিয়র নেতাও রয়েছে।
তিনি আরো যোগ করে বলেন, আমাদেরকে স্বীকার করে নিতে হবে, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সিস্টেমে একটি অত্যন্ত দুর্বল জায়গা রয়েছে। আর তা হল, একটি রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য অর্থের সুনির্দিষ্ট কোন সংস্থান নেই। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি'র মত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিষ্ঠিত কোনো আর্থিক উৎস নেই। বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তার মাধ্যমে এই দলগুলো পরিচালিত হয়। এর আয় ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ নয়। এর সুযোগ নিয়ে উক্ত শুভাকাঙ্ক্ষীরা কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত ফায়দা লুটে থাকে। আয় ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্ছিত হলেও এই দুর্বলতা বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে। তিনি আরো প্রশ্ন করেন, বর্তমান সমন্বয়কেরা এই যে সারাদেশে বিভিন্ন কার্যক্রম করছেন এগুলোর ফান্ডিং কোথা থেকে আসছে? এই প্রশ্নের মধ্যেই এ সংক্রান্ত সব উত্তর রয়েছে বলে তার অভিমত।
জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের পর বিগত দুই দিনে সমন্বয়কেরা যে সকল জেলা সফর করেছেন সেখানকার পরিস্থিতির উপর খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, সমন্বয়কেরা অনেক জায়গাতেই প্রতিবাদ ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক জেলাতেই কমিটি করতে পারেননি। কোথাও প্রোগ্রাম স্থগিত করতে হয়েছে বা ভেন্যু পরিবর্তন করতে হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতেই বিভিন্ন স্থানে হাতাহাতি, মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সহ বিব্রতকর পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেছে।
গণমাধ্যম কর্মীদের অভিমত, অনেক স্থানে ফ্যাসিবাদের দোসররা ভোল পাল্টে আন্দোলনের সমর্থক সেজে সমন্বয়কদের কাছাকাছি চলে গিয়েছে বা অনুষ্ঠান মঞ্চে অগ্রণী ও তৎপর ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণ ছাত্র জনতা তাদের মেনে নিতে পারেনি। এদের অনেকেই নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন না থাকায় সমন্বয়কদের এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় তারা খুব সহজেই কাছে ভিড়তে পেরেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণে অনেক জায়গায় সমন্বয়কেরা জুলাই বিপ্লবে যারা রাস্তায় ফ্যাসিবাদের সমর্থক হয়ে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়েছে, তাদের তাদের হতাহত করেছে- এমন সব আওয়ামী লীগ নেতাদের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন, তাদের বাড়িতে খাবার খেয়েছেন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সাধারণ মানুষের বক্তব্য হচ্ছে, রাজনৈতিক কমিটি গঠনের ফলে এদের লক্ষ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যেমন সন্দিহান হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি তারা নিজেরা রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে বিদ্যমান অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্টার হিসেবে নিজেদের দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। ফলে এই কমিটি গঠনের পূর্বে আন্দোলনের সমন্বকেরা যেভাবে সকল দল, মত ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত সমর্থনে সম্বর্ধিত হচ্ছিল, রাজনৈতিক কমিটি গঠনের পর বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কার্যক্রমের প্রতি অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করছে। কেউ কেউ তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে উক্ত দলে নেয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, আবার অন্য কেউ কেউ তাদের আগামীর স্বপ্নে বা ক্ষমতার নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এই কমিটিকে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। ফলে সমন্বয়কদের প্রোগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ যেমন পূর্বের থেকে হ্রাস পেয়েছে, তেমনি সমর্থনের স্বতঃস্ফূর্ততাও হারিয়ে গেছে। হয়তো একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পর আহুত পরিবর্তন স্থায়ী করার স্বার্থে এই মুহূর্তে তাদের অনেকেই এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য না করলেও পরিস্থিতির উত্তরণের সাথে সাথে তাদের উচ্চকণ্ঠ প্রকাশিত হতে শুরু করবে। এদিকে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা তাদের প্রতিশোধ ও পাল্টা আঘাত করার ন্যূনতম সুযোগ তারা হাতছাড়া করছে না। বেশ কয়েকটি জায়গাতেই ভিন্ন দলীয় স্লোগান দিয়ে তাদের পাল্টা হামলা করার বা 'আগের সরকারই ভাল ছিল' এ ধরনের কথা জনগণের মনে ও মুখে বসিয়ে দেয়ার জন্য সব ধরনের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিক থেকে। জুলাই বিপ্লব সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো উল্লেখিত কারণে সমন্বয়কদের সাথে মাখামাখির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের সুযোগে ফ্যাসিবাদী কর্মী ও সমর্থকদের টার্গেটে পরিণত করার ক্ষেত্রে বেশ সুবিধা করে দিয়েছে।
একারণে কিছু কিছু সচেতন ও সাধারণ মানুষের অভিমত, রাজনীতি করার এবং ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনা করার অধিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে সকলের রয়েছে। জুলাই বিপ্লবীদেরও রাজনৈতিক দল গঠন ও নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনা করার ন্যায্য হক রয়েছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মাত্র ক্ষমতাসীন হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা তাদের ক্ষমতাকে নিরাপদ করতে পারেনি। তারা যে সমস্ত সংস্কারের কথা বলছেন তার জন্য যে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন তাতে তাদের ক্ষমতা নিরাপদ করা ব্যতীত ভিন্ন কোন উপায় নেই। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভারতে পালিয়ে থেকে একের পর এক বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তার পৃষ্ঠপোষক ও দেশীয় অনুগতদের সহায়তায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এর মতো একের পর এক সরকার উৎখাত পরিকল্পনা আছে পড়ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনমতের যুথবদ্ধতা, ইস্পাত কঠিন ঐক্যতা। কিন্তু জুলাই বিপ্লবীদের অতি দ্রুত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন সেই ঐক্যে একটি বড় ফাটল ধরিয়েছে বলেই নাগরিকদের অভিমত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডিভোর্সের শুনানি চলাকালে বউকে কাঁধে নিয়ে পালানোর চেষ্টা স্বামীর
মুন্সীগঞ্জে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন
‘ইসলামপন্থীদের ফাঁদে ফেলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে’
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম হামলা: নেতানিয়াহু
সিলেটের ১২ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় ক্রীম সহ একটি প্রাইভেটকার আটক : পুলিশের মামলা
উত্তাল পাকিস্তান ইমরান খানের মুক্তির দাবি।
আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শৌখিন পণ্য
গাজা যুদ্ধের বছর পূর্তিতে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ
এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ব্যবহার করা যাবে না পেজার ও ওয়াকিটকি!
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিক্ষোভ
বাজার সিন্ডিকেটবাজদের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর হুঁশিয়ারি
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ইতিহাস! বিনা খরচে জন্মাল টেস্ট টিউব বেবি
গ্রেপ্তারের তালিকায় ৯০ পুলিশ কর্মকর্তা!'
সিরাজগঞ্জে ছাত্র-জনতার মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণকারী আওয়ামী দুর্বৃত্ত আবু মুছা কক্সবাজারে গ্রেপ্তার
সিলেটে আন্দোলনে নিহত ২২ জনের দাফন ময়নাতদন্ত ছাড়াই, লাশ তোলা হবে ৯ জনের
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নির্যাতন ঢাবিতে : গবেষণা
তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে রাশিয়া।
বিভিন্ন পক্ষ ইইউ’র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করে
বন্যায় শেরপুরের অবস্থা ভয়াবহ, মৃত্যু বেড়ে ৭, পানিবন্দী লাখো মানুষ
৭৫ বছর ধরে বিশ্বের শান্তি রক্ষায় কাজ করছে চীন