বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফিরেছে লোডশেডিং। গ্রামে দিন-রাতে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কোথাও কোথাও এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ যাচ্ছে। শহর গুলোতেও ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় গত কয়েকদিনে ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি ছিল বিদ্যুতের। তবে স্বস্তিতে রয়েছে রাজধানীবাসী, এখানে বিদ্যুৎ যাচ্ছে না। দফায় দফায় বাড়িয়েও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না হওয়ার পেছনে আছে অপচয়-দুর্নীতি, আছে সরকারের ভুল নীতিও। বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখলে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। গ্রীষ্মের শুরুতেই যদি প্রতিদিন তিন ঘণ্টা থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আশ্বিন মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে।
সরকার শহরে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রেখেছে সম্ভবত বিক্ষোভের ভয়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে রাখা উচিত, গ্রামের মানুষও ক্ষুব্ধ হতে জানে। অতীতে তারা বিদ্যুৎ–সারের দাবিতে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে। সে রকম পরিস্থিতি হোক, সেটা কারও কাম্য নয়। সরকারকে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে।বাংলাদেশের সকল জনগণের জন্য গুণগত মানের বিদ্যুৎ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল জনগণের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো)।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে শনিবার সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ শনিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিম এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।
লোডশেডিংয়ের কারণে গত মে ও জুন মাসের প্রথম দিকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল দেশের মানুষকে। বৃষ্টির কারণে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। লোডশেডিংও কমে যায়। ফলে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বেশ স্বস্তিতে ছিল বিদ্যুৎ বিভাগও। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল দৈনিক ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ২০০-৩০০ মেগাওয়াট। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ৯-১০ জুলাইয়ের পর থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা মাঝে মাঝে ১৫ হাজার মেগাওয়াট পেরিয়ে যায়। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সেভাবে বাড়েনি। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে মাঝরাতে কোনো কোনো দিন ২০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়। এর প্রভাব রাজধানীতে তেমন ছিল না। গ্রাম এবং মফস্বল ও জেলা শহরগুলোতে লোডশেডিং বেশি করা হয়। তবে ছুটির দিন হওয়ায় গত দুই দিন শুক্র এবং শনিবার বিদ্যুতের ঘাটতি একটু কম ছিল।
এদিকে সাতদিন বন্ধ থাকার পর আবারো উৎপাদনে ফিরেছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট। সম্প্রতি ৩ টা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট।সারা দেশে দৈনিক ২ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা এবং শহরে বিদ্যুৎ থাকছেনা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত। জ্বালানি সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ বিভিন্ন কারণে কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনা না করে জ্বালানির আমদানি নির্ভরতাই সংকটের মূল কারণ। যা সহসাই কাটবে না। বড় পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটি গত রোববার সকাল ১০ টায় টায় চালু হয়। আর বিকেল তিনটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় ইউনিটটি। ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বর্তমানে এ ইউনিট থেকে উৎপাদিত ২০০ থেকে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এ নিয়ে বর্তমানে বড়পুকুরিয়ার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও তৃতীয় ইউনিট চালু হলো। এখন দুইটি ইউনিট থেকে ২৬০ থেকে ২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। উল্লেখ্য, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড় পুকুরিয়ার ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ৭ সেপ্টেম্বর এবং আরেকটি ৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। সবশেষ গত সোমবার বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় ও শেষ ইউনিটটির উৎপাদন। খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ওই সময় সরবরাহ ঘাটতি ছিল ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এর পুরোটাই করা হয়েছে মূলত ঢাকার বাইরে, দেশের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকায় লোডশেডিং নেই দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক এলাকায় দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্যদিকে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। কোথাও দিনে সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম. লালমনির হাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের একজন কৃষক বলেন, যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া না যায়, তাহলে ভরসা করতে হবে ডিজেলের ওপর। সে ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ। গ্রীষ্ম মৌসুমে গত দুই বছরে দিনে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না হলেও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার কারণে খরচ বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিবছর বাড়ছে ভর্তুকি। গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনছে পিডিবি।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, তাদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। একই সময় তারা সরবরাহ পেয়েছে ৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে আরইবির এলাকায়। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, সারা দেশে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হলে ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এ হিসাবে ২ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতির জন্য দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এ রকম ইতিহাস আর হবে না’: জয়নুল আবেদীন ফারুক
হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড পটুয়াখালীর বাউফল
বড় পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ
বেগমগঞ্জে নামাজ পড়ে ফেরার পথে প্রাণ গেল বৃদ্ধের
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানগ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যাওর্য়াডস পেল ইসলামী ব্যংক
কোন শ্রমিক তার কারখানার ক্ষতি করবে না: শ্রম সচিব
নাঙ্গলকোটে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন যারা
সিলেটে বজ্রপাতে পৃথক স্থানে নিহত ২
আ'লীগের চিহ্নিত সুবিধাভোগী সিলেট করিমউল্লাহ মার্কেট মালিকপক্ষের প্রতারণার শিকার এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর আর্তনাদ !
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে শহিদ ছাত্র-জনতা চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে গেছেন-বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি
লৌহজংয়ে বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত
শান্তর ফিফটির পর দিনের খেলার ইতি
নিউইয়র্কে বৈঠকে বসছেন তৌহিদ-জয়শঙ্কর
ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক
ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের
মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ
রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর
ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি
আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা