এবার এলপিজি ট্যাংকারে আগুন
১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন-বিএসসির দুটি অয়েল ট্যাংকারের পর এবার এলপিজি ট্যাংকারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। কুতুবদিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শনিবার দিবাগত রাতে এলপিজির দুটি ট্যাংকারে অগ্নিকান্ডে এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বিদেশি পতাকাবাহী বড় এলপিজি ট্যাংকারের আগুন কিছু সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও দেশীয় ছোট ট্যাংকারের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে গতকাল রোববার বিকেলে ১১ ঘণ্টা পর।
আগুন লাগার পর ছোট ট্যাংকারের নাবিক ও কর্মী মিলে মোট ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের নৌসীমানায় জ্বালানিবাহী জাহাজে অগ্নিকাÐের এটি তৃতীয় ঘটনা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বিএসসির মালিকানাধীন বাংলার জ্যোতি নামের একটি অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে বাংলার সৌরভ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে। ওই জাহাজটিও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিএসসির মালিকানাধীন। দ্বিতীয় দুর্ঘটনার পর জাহাজে আগুনের ঘটনাকে নাশকতা ও দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘিœত করার চক্রান্ত বলে আশঙ্কা করে বিএসসি কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে এলপিজি ট্যাংকারে আগুনের ঘটনা ওই চক্রান্তের অংশ কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রæপের মালিকানাধীন এলপিজি সোফিয়া ট্যাংকার আগুনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্যাংকারটিতে এলপিজি গ্যাস বোঝাই ছিল। তবে এলপিজি নিয়ে আসা তানজানিয়ার পতাকাবাহী বড় ট্যাংকার ক্যাপ্টেন নিকোলাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাÐের পর সোফিয়া ট্যাংকারের ১৮ জন নাবিক, দুজন মুরিং ম্যান, তিনজন পাহারাদার এবং ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে প্রাণ ভয়ে সাগরে ঝাঁপ দেওয়া আটজন পাহারাদারকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোফিয়াতে থাকা উদ্ধার করা নাবিকদের মধ্যে নয় জন বাংলাদেশি, আটজন ইন্দোনেশিয় এবং একজন ভারতীয়।
চট্টগ্রাম বন্দর, কোস্ট গার্ড ও ট্যাংকারের স্থানীয় এজেন্টে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার পর আগুনের ঘটনা ঘটে। এলপিজিবাহী ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ ট্যাংকার থেকে ছোট ট্যাংকার ‘এলপিজি সোফিয়া’তে গ্যাস স্থানান্তর করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ক্যাপ্টেন নিকোলাস জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট সি ওয়েভ মেরিন সার্ভিসেসের কর্ণধার মো. সামিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে সোফিয়া ট্যাংকারে তিন হাজার ৩৫০ টন এলপিজি স্থানান্তর করা হচ্ছিল। গ্যাস স্থানান্তর করার একপর্যায়ে সোফিয়ার ডেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ক্যাপ্টেন নিকোলাসের ডেকে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ট্যাংকারটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ সময় রশি ছিড়ে যাওয়ার কারণে সোফিয়া ট্যাংকারটি দূরে সরে যায়। এ কারণে ক্যাপ্টেন নিকোলাস ট্যাংকারটিতে থাকা প্রায় ৩৬ হাজার টনের বেশি এলপিজি অক্ষত রয়েছে। দুর্ঘটনার পর সোফিয়ার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বন্দরের অগ্নিনির্বাপণ জাহাজ। কোস্টগার্ড ইস্ট জোনের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্যাসভর্তি থাকায় ট্যাংকারের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আগুন নেভাতে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বন্দরের অগ্নিনির্বাপক জাহাজ কাজ করে। সোফিয়া ট্যাংকারের আগুন কয়েক ঘণ্টায় মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে। মাদার ভেসেলের আগুন ভোররাত ৩টার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে গ্যাস থাকায় সোফিয়া ট্যাংকারে থেমে থেমে আগুন জ্বলে। পুরো আগুন নেভাতে সময় লাগে। ট্যাংকারে থাকা নাবিক-কর্মী সবাই উদ্ধার হয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত বি-এলপিজি সোফিয়ার শুধু পেছনের দিকে একটি অংশে আগুন জ¦লেছে। বাকিটা নেভানো সম্ভব হয়েছে। ট্যাংকারটির পেছনের একটি অংশে কার্গোহোল্ডে পর্যাপ্ত গ্যাস রয়ে যাওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। আগুন নিভে যাওয়ার পর আবারও জ্বলে উঠেছে। মাদার ভেসেল থেকে বি-এলপিজি সোফিয়ায় এলপিজি নেওয়ার সময় বসুন্ধরা গ্রæপেরই আরেকটি টাগবোট কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। দুর্ঘটনার খবরে এই টাগবোটটিই প্রথম এগিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং ৩১ জনকে উদ্ধার করে।
টাগবোটের মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হাফ নটিক্যাল মাইলের মধ্যেই ছিলাম। খবর পেয়েই দ্রæত সেখানে পৌঁছে দেখতে পাই দুটি জাহাজেই আগুন ধরেছে। আমার ধারণা মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাসের ক্রুরাই সেখানে লাগা আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন জহিরুল জানান, কোস্ট গার্ড রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অগ্নিনির্বাপক টাগবোট প্রমত্ত, একটি টহল বোট ও আটটি স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। নৌবাহিনীও অগ্নিনির্বাপক টাগবোট পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে জানা যায়, ক্যাপ্টেন নিকোলাস ট্যাংকারে করে মোট ৪২ হাজার ৯২৫ টন এলপিজি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস আমদানি করেছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি ট্যাংকারে গত পরশু তিন হাজার ২৫০ টন এলপিজি স্থানান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় স্থানান্তর করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটল।
এদিকে এ ঘটনা তদন্তে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমানকে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে।
‘বারবার জাহাজে আগুন লাগার বিষয়টি উদ্বেগজনক’
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পর বারবার জাহাজে সিরিজ আগুন লাগার বিষয়টি উদ্বেগজনক। সাগরে বারবার এভাবে জাহাজে আগুন লাগার বিষয়টি কাকতালীয় না নাশকতা? তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে এলপিজিবাহী একটি লাইটারেজ জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার ভোর পর্যন্ত কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল ওই জাহাজ থেকে ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কুতুবদিয়া পয়েন্টের দক্ষিণে নোঙর করা বিএলপিজি ‘সুফিয়া’ জাহাজে এ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
কোস্টগার্ড সূত্রমতে, খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ, একটি টাগবোট ও চারটি স্পিডবোট উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পোর্টের অগ্নিনির্বাপক দলসমূহ যৌথভাবে কাজ করছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানান, গভীর সাগরে নোঙর করা জাহাজটিতে হঠাৎ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সিনিয়র নাবিক আতিক ইউ খান জানিয়েছেন, লাইটারিং অপারেশন শেষে এলপিজি ক্যারিয়ার্স সোফিয়াকে মাদার ভেসেল নিকোলাস থেকে আলাদা করার সময় অগ্নিকাÐের সূত্রপাত হয়।
এ বিষয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গভীর সাগরে নোঙর করা জাহাজে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলার জ্যোতি নামের একটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে। ওইদিন আগুন লাগার একপর্যায়ে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটলে দগ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ফোরম্যান নুরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. হারুন। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভবিষ্যতে পুতিনের সাথে সরাসরি কথা বলতে চান শলৎজ
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর ২২০০ সহিংসতা নিয়ে ভারতের তথ্য বিভ্রান্তিকর : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
রাবিতে অপরাধে জড়িত ৬ শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার, শাস্তি পেল মোট ৩৩ জন
রাণীশংকৈলে ফিল্মি স্টাইলে দোকান চুরি, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও চোর ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন