ঢাকা   বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জীবন থাকতে জুলাই গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার করে যাব: আসিফ নজরুল

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পিএম

 

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জীবন থাকতে জুলাই গণহত্যার দায়ে পতিত স্বৈরাচারী হাসিনার বিচার করে যাব। তিনি বলেন, আমি আইন উপদেষ্টা। আমার দায়িত্ব হচ্ছে, একটা সুবিচার নিশ্চিত করা। সেটা করতে পারি নাকি দেখেন, যতদিন বেঁচে আছি এই লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হব না। তিনি বলেন, যারা জুলাই হত্যাকাণ্ড করেছে, অবশ্যই বাংলাদেশে তাদের বিচার হবে। অবশ্যই তাদের বিচার হবে।তার এমন ঘোষণায় উচ্ছাস প্রকাশ করে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন দেশের আপামর জনগণ।

 

তিনি বলেন, মাহমুদ ভাই আমার চেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক। অন্য কারো নাম বললে আমি সন্দেহ করতাম। কিন্তু মাহমুদ ভাইয়ের নাম যদি কেউ বলে, আমি সন্দেহ করবো না। যেভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অবিশ্বাস্য মাত্রায় চলে গেছে। মাহমুদ ভাই নিশ্চয়ই আপনি তিন মাসের মধ্যে টের পাচ্ছেন আমাদের এখানে এমনকি একটা সামান্য বিয়ের প্রোগ্রামের মধ্যেও আমি দেখি আমার নিজের চোখে দেখা হিজাব করা মেয়ে সেও হিন্দি নাচের তালে তালে ড্যান্স করছে। এমন ভাবে অনুপ্রবেশ করিয়েছে ভারত বাংলাদেশে কোন জিনিস ফ্রি দেয় না। এতগুলো টিভি কেন ফ্রি দিয়েছে? এই সামান্য প্রশ্ন আমরা করতে ভুলে গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমি খুব সামান্য কয়েকটা কথা বলবো। আমরা জাস্ট ছোটবেলা থেকে শুনে এসছি নজরুল হচ্ছে জাতীয় কবি। অথচ তা আমি আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে, সাহিত্য চর্চার মধ্যে, আমাদের সামাজিক চর্চার মধ্যে কোথাও এটার ছাপ পাই না। জাতীয় কবিকে যেভাবে চর্চা করতে হয়, যেভাবে উদযাপন করতে হয়, যেভাবে তুলে ধরতে হয়, আমি সেটার ছাপ কখনো দেখি নাই। অনেস্টলি বলছি, আমি আমার সারাজীবনে দেখেছি, রবীন্দ্র চর্চা যত রকম সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আছে, গান হোক, নাচ হোক, আবৃত্তি হোক, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান হোক, বেতার টিভি সব জায়গাতে আমি সবচেয়ে প্রাধান্য ওভারওয়েল দিয়ে বেশি দেখেছি রবীন্দ্র চর্চা।

তিনি বলেন, আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হতো যে, একজনকে আমরা বানিয়েছি রাজনৈতিক জগতের ঈশ্বর। আরেকজনকে আমরা মানে শেখ হাসিনার সরকার আরেকজনকে বানিয়েছি হচ্ছে সাংস্কৃতিক জগতের ঈশ্বর। এই ঈশ্বরদের দাপটের কাছে নজরুলের মত গণমানুষের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, তাদেরকে আসলে কোনদিন সেভাবে তুলে ধরা হয় নাই। এটা আমার জাস্ট অনেস্ট রিয়ালাইজেশন তবে আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, আমাদের জাতীয় জীবনে আমাদের যে রাজনৈতিক চরিত্র রয়েছে, আমাদের যে সামাজিক চরিত্র রয়েছে, এই রাজনৈতিক সামাজিক চরিত্রে নজরুল অনেক অনেক বেশি রেলিভেন্ট। কারণ, তিনি বিদ্রোহের কবি। আমরা বারবার বিদ্রোহ করি। আমরা যখন আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম, অধিকাংশ মানুষ এবং আমরা যখন নিয়তির মতই ধরে নিয়েছিলাম যে, হিসাব করতাম যে ২০৪২ নাকি ৮২ আর গুনতাম কত বয়স হলে একজন মানুষ আসলে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, মাঝে মাঝে আমি দুঃখ করে বলতাম যে, আমার মনে হয় উনি আমাদের সবাইকে আউটলিভ করবেন। আউটলিভ করা তো বুঝছেন, আমরা মরে যাব কিন্তু উনি বেঁচে থাকবেন।

তিনি বলেন, আমাদের তরুণরা যেই বিদ্রোহ করল যে অবিশ্বাস্য বিদ্রোহ করলো, জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমার তো ওদের সাথে অনেক কথা হয়, জাস্ট মনে হয়েছে আমাকে মাঝে মাঝে বলে নাহিদ-আসিফরা বলতো, ২০১৮ তে যারা আন্দোলন করেছিল, তারা আর তাদের সাথে তাদের একটা পার্থক্য আছে। ২০১৮তে যারা আন্দোলন করেছিল, তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আসতে পারে নাই এবং ওরা ডিটারমাইন ছিল মরে গেলে মরে যাব, রাজপথ ছাড়বো না। এই সাহস তারা আমাদের মত বৃদ্ধ মানুষদের মনে সঞ্চারিত করতে পেরেছিল। এরকম একটা মানে বিদ্রোহী জাতি এরকম একটা অপরাজেয় জাতি। তার জন্য তো সবচেয়ে বেশি রেলিভেন্ট নজরুলের হওয়ার কথা। সকল চর্চার মধ্যেই উনার উপস্থিত থাকার কথা। আমি তো কবিতা পড়তে পারি না, বাট যখন আমরা এই কবিতার লাইনগুলো শুনি যে, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেইদিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’, এর চেয়ে মহান কথা আর কি থাকতে পারে?

তিনি বলেন, নিজের সাহস এবং দেশপ্রেম নিয়ে আমার একটু আত্মতৃপ্তি আছে কিন্তু আমি যখন মাহমুদ ভাইয়ের দিকে তাকাই আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে মাহমুদ ভাই কি আমার চেয়ে সাহসী? আমি বলব অবশ্যই সাহসী মাহমুদ ভাই আমার চেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক। অন্য কারো নাম বললে আমি সন্দেহ করতাম কিন্তু মাহমুদ ভাইয়ের নাম যদি কেউ বলে সন্দেহ করবো না। আমরা সেই শাহবাগের দিনগুলোতে আপনাদের একটু মনে করিয়ে দেই, আমার রুমে আগুন দেওয়া হয়েছিল ১৬ থেকে ২০ টা ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছিল।বলা হতো, আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে।আমার প্রচন্ড অদ্ভুত লাগতো। এরকম একটা সময় বাংলাদেশে আসবে যে সামান্য একটা কথা বলার জন্য রুমের মধ্যে আগুন দিয়ে দিল! তখন একটু নিজেও একটুখানি অবদমিত হয়ে গিয়েছিলাম ভাবতাম যে আর কত রিস্ক নেব? একটু বুঝে চলা শুরু করেছিলাম। সেরকম সময় একদিন দেখলাম প্রথম আমার দেশে আট কলাম হেডিং ছিল, একটা আট কলাম বড় বড় অক্ষরে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি। আমি বিশ্বাস করতে পারি না, ওই সময় বসে এরকম একটা হেডলাইন করা আমার তো মনে হয় মাহমুদ ভাই, শুধু এই হেডলাইনের জন্য বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এবং প্রতিবাদের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি বলেন, আমার একটা জিনিস মনে আছে, যেদিন উনাকে আদালত প্রাঙ্গণে আক্রমণ করা হয়, যেদিন উনার শরীর রক্তাক্ত ছিল। কয়েকদিন আগে ভিডিওটা আবার দেখেছি। আমার মনে হয় যে সবাইকে জানাই, এই দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং জুলুমের বিরুদ্ধে উনি যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন, তা হলো নজরুলের কবিতার মতো।‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে’। আমাদের তরুণরা আমাদের যুবকরা আমাদের ছাত্ররা যেভাবে প্রাণ দিয়েছে, তারা জেগে উঠেছে, জেগে উঠেছিল দেখে রাতটা চলে গেছে। আমার কাছে মাঝে মাঝে সংশয় লাগে, আমাদের কি রাত আসলে চলে গেছে? আমাদের একটা রাত চলে গেছে আমাদের আরো রাত ভবিষ্যতে আসবে। আমাদের এখানে এই রাত আনার যে এজেন্টরা, তারা সক্রিয় আছে। কাজেই আমাদেরকে যে দীর্ঘস্থায়ী রাত যারা উপহার দিয়েছিল, যারা চাপিয়ে দিয়েছিল, আমাদের অবশ্যই তাদের বিচার করতে হবে।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় জরুরি : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
মুজিববর্ষের বাজেট বরাদ্দ বাতিল
নতুন আইজিপি বাহারুল আলম পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুমোদন
সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া
আরও

আরও পড়ুন

বিতর্কিত কর্মকর্তা কুমিল্লার এসপি হারুনের সহযোগি জিএমপিতে

বিতর্কিত কর্মকর্তা কুমিল্লার এসপি হারুনের সহযোগি জিএমপিতে

জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় জরুরি : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় জরুরি : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

৩০ কোটি টাকায় বিক্রি ৪০০ বছরের রুপোর মুদ্রা

৩০ কোটি টাকায় বিক্রি ৪০০ বছরের রুপোর মুদ্রা

কেরানীগঞ্জে কোন্ডা ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জে কোন্ডা ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি গ্রেফতার

সালথায় প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে চার সাংবাদিক লাঞ্চিত: মুলহোতা গ্রেপ্তার

সালথায় প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে চার সাংবাদিক লাঞ্চিত: মুলহোতা গ্রেপ্তার

যশোরে দুই সাংবাদিককে মারপিট, ক্যামেরা ভাংচুর

যশোরে দুই সাংবাদিককে মারপিট, ক্যামেরা ভাংচুর

সৈয়দপুরে দুই কাঁচা বাজারের কমিটির দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীদের উপর হামলা ও মহাসড়ক অবরোধ

সৈয়দপুরে দুই কাঁচা বাজারের কমিটির দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীদের উপর হামলা ও মহাসড়ক অবরোধ

মুজিববর্ষের বাজেট বরাদ্দ বাতিল

মুজিববর্ষের বাজেট বরাদ্দ বাতিল

নতুন আইজিপি বাহারুল আলম পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী

নতুন আইজিপি বাহারুল আলম পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী

‘শাহজাদপুরে যমুনা ভাঙন রোধের শতশত কোটি টাকা লুটপাট করেছে আ.লীগ’

‘শাহজাদপুরে যমুনা ভাঙন রোধের শতশত কোটি টাকা লুটপাট করেছে আ.লীগ’

নতুন লোগো নিয়ে হাজির হচ্ছে জাগুয়ার, কবে থেকে চালু হবে?

নতুন লোগো নিয়ে হাজির হচ্ছে জাগুয়ার, কবে থেকে চালু হবে?

রাজশাহীতে নাশকতার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৮

রাজশাহীতে নাশকতার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৮

মস্কো-ওয়াশিংটন হটলাইন এখন ব্যবহার হচ্ছে না: ক্রেমলিন

মস্কো-ওয়াশিংটন হটলাইন এখন ব্যবহার হচ্ছে না: ক্রেমলিন

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের তালা ভেঙ্গে অনুপ্রবেশ- ব্যবস্থাপনা কমিটির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের তালা ভেঙ্গে অনুপ্রবেশ- ব্যবস্থাপনা কমিটির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা

চবি ছাত্রশিবিরের ১৭ জনের কমিটিতে ৪ জন সমন্বয়ক

চবি ছাত্রশিবিরের ১৭ জনের কমিটিতে ৪ জন সমন্বয়ক

সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু জ্বরে যুবকের মৃত্যু

সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু জ্বরে যুবকের মৃত্যু

গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নের কাজী মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নের কাজী মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের ইন্তেকাল

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুমোদন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুমোদন

আত্মরক্ষার অধিকার রাশিয়ার আছে: এরদোগান

আত্মরক্ষার অধিকার রাশিয়ার আছে: এরদোগান

র‍্যাব-পুলিশ ছিলো, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা ছিলো না: যুবদলের সাধারণ সম্পাদক

র‍্যাব-পুলিশ ছিলো, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা ছিলো না: যুবদলের সাধারণ সম্পাদক