ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এডিস মশার ভয়াবহ রূপ : একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৯ জনের মৃত্যু

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ জনে। এছাড়া গত একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও এক হাজার ২১৪ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৮২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৪৩০, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৯৫, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪১, খুলনা বিভাগে ১১৭ জন রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে ৩৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯১ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ১১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৮৪ হাজার ৩৬৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী রয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪৩৬ জনের। এর মধ্যে মহিলা ৫০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং পুরুষ ৪৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এর আগে, ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মশা নিধনে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। বরং ডেঙ্গু রোগী যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর হার। একই সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য মশার উপদ্রব। এমন প্রেক্ষাপটে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকের কার্যকারিতা ও মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কীটতত্ত¡বিদরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকে কার্যকরী উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকলে সুফল পাওয়া যেত। যেহেতু সুফল মিলছে না, তাই এই কীটনাশক কীটতত্ত¡বিদদের উপস্থিতিতে ল্যাবে পরীক্ষা ও মান যাচাই করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ থেকে আবার মনিটরিংয়েরও তাগিদ তাদের।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে দুই সিটিতে মশা নিধনে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে (ডিএসসিসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশক কিনতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় রাখা হয়।
মশা নিধনে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশক কিনতে রাখা হয় ৬৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহন, ব্লিচিং পাউডার ও জীবাণুনাশক এবং মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি কিনতে বরাদ্দ রাখা হয়। গত ১৩ বছরে ঢাকার মশা নিধনের নানা পদক্ষেপের পেছনে খরচ হয়েছে এক হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

উভয় করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ও টেকসই সমাধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে গঠিত ছয় সদস্যের দুটি পৃথক বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে মশাবাহিত রোগের ওপর একটি পৃথক জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি কীটনাশকের মানসম্মত ডোজ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন।

কীটতত্ত¡বিদরা মনে করেন, মনিটরিং ব্যবস্থায়ও গাফিলতি আছে। যারা মনিটর করছেন, তাদের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য পৃথক টিম থাকা দরকার। এ ছাড়া মনিটরিংয়ের কাজে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। একদল শিক্ষার্থীর মনিটরিংয়ের পর আরেকদল গিয়ে তা মনিটর করতে হবে, যাতে মনিটরিংয়ের কার্যক্রমে কোনো ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ না থাকে। যেখানে মশা বা লার্ভা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তার আশপাশের এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মশালার আয়োজন করতে হবে, যাতে স্থানীয়রা সচেতন হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান