ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১

গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা: জোনায়েদ সাকি

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ৭৫ সালের বাকশাল ছিল ৭২-এর সংবিধানে ক্ষমতার কাঠামোর ধারাবাহিকতা। শেখ হাসিনাও বাকশাল ২.০ তৈরি করতে চেয়েছিলেন ওই একই সংবিধানে। তিনি ভেবেছিলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল চলবে। সেটাই তিনি কায়েম করতে চেয়েছিলেন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য’ গণসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছে। তারা নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আছে? আমরা কি ছাত্র-জনতাকে এখনও ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে পেরেছি? এই অভ্যুত্থান দাবি করে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। কাজেই আগামী নির্বাচনের আগেই আমাদেরকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া কোনো চাকরি নয়, কোনো পদোন্নতি নয়, কোনো বদলি নয়, যে সার্ভিসেই যান। পুরো রাষ্ট্রটাকে সাজানো হয়েছিল বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের জন্য। তাদের ভয় দেখানোর জন্য। তাদেরকে ক্রসফায়ারে গুলি করা, নিয়ে গিয়ে গুম করে দেওয়া। কিংবা মধ্যরাতে একটা স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য ক্লাস টেনের একজন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে আসা। এই ছিল তাদের শাসন। ত্রাসের রাজত্ত কায়েম কর, এভাবে টিকে থাক।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, এই শাসনব্যবস্থায় তারা এভাবে টিকে থেকে মনে করেছে এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে। এইখান থেকে আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি যখন নির্বাচনটা করে ফেলতে পারলো। ২৮ অক্টোবর আমাদের যে সমাবেশগুলো ছিল। তখন তারা বিএনপির সমাবেশ, মিছিলে এজেন্ট ঢুকিয়ে পরিকল্পিত সন্ত্রাস তৈরি করে তারা সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে। তারা ভেবেছিল ছাত্রদের কেউও একইভাবে দমন করে ফেলা যাবে। শেখ হাসিনা তো তুরি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ১৪ তারিখে শেখ হাসিনা ছাত্রদের অপমান করলেন। ভাবলেন এদের (ছাত্রদের ) যদি রাজাকারের নাতি-পুতি বলা যায়—তাহলে হয় তো এই দেশের মানুষ ঘুরে যাবে। কিন্তু ঘুরে যায়নি মানুষ।

তিনি বলেন, বহুবার আমরা বলেছি, মানুষের জীবনের চেয়ে সম্মান অনেক বড়। যখন সম্মান কিংবা ইজ্জতে আঘাত লাগে, তখন মানুষ জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। আমরাও দেখেছি শিক্ষার্থীরা ১৪ তারিখ রাতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাস ও ছাত্রীরা হল ভেঙে বেড়িয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছে—‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। ১৫ তারিখ বিক্ষোভ হয়েছে শেখ হাসিনা ভেবেছেন তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে দাবড়ানি দিয়ে ভয় দেখালে ছাত্ররা সড়ে যাবে। কিন্তু যায়নি। এই রাষ্ট্র আমরা বদলাতে চাই। যাদের আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। তারা আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে। আয়না ঘরে নিয়ে ঢুকিয়ে রাখে। শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত স্মরণ করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ওনারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে চায়। শেখ হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। প্রশাসনকে তারা এইভাবে ব্যবহার করেছে। প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান, জেনারেল আজিজ সম্পত্তি কীভাবে বানিয়েছে! ওই বেনজির আহমেদ কীভাবে সম্পদ গড়েছে! এরা এইভাবে লোভ-লালসা ও লুটের ভাগ-বাঁটোয়ারা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। আমরা পরিস্কারভাবে বলি—একটা সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুলসিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে-সব কর্মকর্তারা কুলসিত করেছে লুটপাত করে। তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ন্যায় বিচার হবে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা। সবার কাছে বার্তা থাকা দরকার। কোনো সরকারি কর্মকর্তা কোনো অবৈধ সরকারের এই রকম পা চেটে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নেয় তার শাস্তি কি হবে এটা বাংলাদেশের সবার খেয়াল রাখা দরকার।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের সংস্কার করতে হবে। আর তার ভিত্তিতে এমন নির্বাচন ব্যবস্থা আয়োজন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কেউ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন হয়েছে। আপনারা (নির্বাচন কমিশন) এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে আর কেউ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যদি পেতে হয়, তাহলে আমাদের একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। তার ভিত্তি হবে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান নয়, হতে হবে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান।

গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ। বিশেষ বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু। জেলার সদস্য সচিব জুয়েল রানা এই গণসংলাপ সঞ্চালনা করেন। গণসংলাপে রাজশাহীর শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কালীগঞ্জে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে জরিমানা

কালীগঞ্জে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে জরিমানা

৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণমূখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে: সাইদ সোহরাব

৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণমূখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে: সাইদ সোহরাব

ইবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ২৫তম ফ্যামিলি ডে উদযাপন

ইবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ২৫তম ফ্যামিলি ডে উদযাপন

মাদারীপুরে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

মাদারীপুরে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

বগুড়ায় বিএনপি নেতা সাজুর ওপর হামলার প্রতিবাদে সভা

বগুড়ায় বিএনপি নেতা সাজুর ওপর হামলার প্রতিবাদে সভা

ডিআরইউ সদস্য ও সদস্য সন্তানদের উশু প্রশিক্ষণ শুরু

ডিআরইউ সদস্য ও সদস্য সন্তানদের উশু প্রশিক্ষণ শুরু

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ১৫, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটের অভিযোগ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ১৫, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটের অভিযোগ

গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে আবারো ঘুরে দাড়াতে চায় ই'কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ

গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে আবারো ঘুরে দাড়াতে চায় ই'কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ

দেবোত্তর বাজারে লিফলেট বিতরণ করলেন জেলা সমন্বয়ক প্রধান ফাহাদ

দেবোত্তর বাজারে লিফলেট বিতরণ করলেন জেলা সমন্বয়ক প্রধান ফাহাদ

‘আগস্ট বিপ্লবে ইসলামপন্থিদের বাদ দিয়ে কোনো ইতিহাস রচিত হতে পারে না’

‘আগস্ট বিপ্লবে ইসলামপন্থিদের বাদ দিয়ে কোনো ইতিহাস রচিত হতে পারে না’

পালালেন এক ওসি, প্রত্যাহার আরেক ওসি

পালালেন এক ওসি, প্রত্যাহার আরেক ওসি

মাগুরার শ্রীপুরের কোদলা গ্রামে দু দলের সংঘর্ষে আহত ১৭ একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর

মাগুরার শ্রীপুরের কোদলা গ্রামে দু দলের সংঘর্ষে আহত ১৭ একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর

২০১৮ এর  কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হতো না : আবু হানিফ

২০১৮ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হতো না : আবু হানিফ

বগুড়ায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মামুন

বগুড়ায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মামুন

আলফাডাঙ্গায় হালি পেঁয়াজের চাড়া রোপনের ধুম পড়েছে

আলফাডাঙ্গায় হালি পেঁয়াজের চাড়া রোপনের ধুম পড়েছে

শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ড. সোহেল, সদস্য সচিব ড. মাসুদ

শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ড. সোহেল, সদস্য সচিব ড. মাসুদ

মাস্ক, ঘোমটা ও ভুয়া পাসপোর্টসহ 'কট' নিপুণ! তদন্তে রহস্যময় তথ্য

মাস্ক, ঘোমটা ও ভুয়া পাসপোর্টসহ 'কট' নিপুণ! তদন্তে রহস্যময় তথ্য

খুনিরাই খুনিকে সহযোগিতা করেছে : সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ

খুনিরাই খুনিকে সহযোগিতা করেছে : সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ

নাটোরে মহাশ্মশানের মন্দিরে তরুণ দাস হত্যার মূল আসামি গ্রেপ্তার

নাটোরে মহাশ্মশানের মন্দিরে তরুণ দাস হত্যার মূল আসামি গ্রেপ্তার

টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা! শফিক রেহমান সম্পর্কে যা বললেন ডা: জাহেদ

টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা! শফিক রেহমান সম্পর্কে যা বললেন ডা: জাহেদ