ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আবু সাঈদকে নিয়ে হাসিনার দাবি কতটুকু সত্য

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ।

 

তার মৃত্যু নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড পোস্ট করা হয়েছে।

 

১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায় ‘গুলি খাওয়ার পরে আবু সাঈদকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

 

আবু সাঈদ গুলি খাওয়ার পর তার সঙ্গী-সাথীরা যে তাকে টেনে নিয়ে গেল, কোথায় নিয়ে গেল? যার গুলি লাগবে তাকে তো সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়ার কথা।’

 

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘হাসপাতালে নেবে, অপারেশন করবে, বুলেট বের করবে, বাঁচানোর চেষ্টা করবে। আবু সাঈদকে কিন্তু হাসপাতালে নেয় নাই। নিয়েছিল কিন্তু চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে।

 

চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা যখন তাকে চিকিৎসা করে, তখন সে মৃত্যুবরণ করে।’

 

শেখ হাসিনার এ দাবি কতটুকু সত্য?

 

 

১৬ জুলাই দৈনিক কালের কণ্ঠে ৪টা ১৩ মিনিটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যুসনদের বরাত দিয়ে বলা হয়, আবু সাঈদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

 

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের বাংলা সংস্করণেও ৪টা ১৩ মিনিটে আবু সাঈদের মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটের তথ্য দিয়ে লিখেছে, আবু সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

 

 

ওই দিনের ঘটনা নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়।

 

 

১৬ জুলাই দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে শুরু হওয়া লাইভটির ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের মাথায় আবু সাঈদকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। এর পরই আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে সেখান থেকে নিয়ে যান। এর আগে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ১৬ জুলাই বিকেল ৪টা ১ মিনিটে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে।

 

 

প্রতিবেদনটিতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলীর বরাত দিয়ে বলা হয়, আবু সাঈদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তিনি আবু সাঈদের মরদেহ দেখেননি। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষতের চিহ্ন আছে।

 

 

দৈনিক প্রথম আলোয় ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন বেলা ২টার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

 

 

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কী আছে?

 

 

 

শেখ হাসিনা সরকার পতনের প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আবু সাঈদের মৃত্যুর দুই মাস আট দিন পর তাঁর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

 

প্রতিবেদনে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম উল্লেখ করেন, সাঈদের শরীরজুড়ে ছররা গুলির চিহ্ন ছিল। গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফলে মৃত্যু হয় তাঁর। তা ছাড়া, খাদ্যনালি ও ঊরুর রক্তনালিতেও জখমের কারণে রক্তজমাট বেঁধে গিয়েছিল।

 

 

 

আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে ডা. রাজিবুল ইসলাম যমুনা টিভিকে বলেন, ‘ফরেনসিক টার্মে ছররা গুলি ১০ থেকে ৩০ মিটার দূর থেকে করা হলে সেটাকে আমরা লেখাল বলি। ১০ মিটারের দূর থেকে গুলি করায় তার শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটো হয়ে গিয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় তার।’

 

 

মামলার অভিযোগে কী বলা হয়েছে :

 

সরকার পতনের আগে ১৭ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট থানায় আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা হয়। তবে ওই ঘটনায় এসআই বিভূতি ভূষণ রায় আগের রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু ১৭ জুলাই তারিখে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

 

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে একজন শিক্ষার্থীকে পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন তার সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকেল ১৫.০৫ (৩টা ৫ মিনিটে) ঘটিকার সময় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।’

 

 

ফলাফল :

 

সংবাদমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন, ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে ১৬ জুলাই বেলা সোয়া ২টার দিকে আহত হওয়ার পরপরই তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। পরে হাসপাতাল থেকে তাঁর মৃত্যুসনদে সময় উল্লেখ করা হয় ৩টা ৫ মিনিট এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

 

কাজেই শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আহত হওয়ার পর চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারে যে দাবি করেছেন তা সঠিক নয়। আবু সাঈদ আহত হওয়ার পরপরই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং আহত হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
আরও

আরও পড়ুন

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ