ইন্ধনদাতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় : সেনাবাহিনী

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম

বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে বনানীর সেনা অফিসার্স মেসে এক বিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন যে,ইন্ধনদাতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।হয়তো একেকজনের মতলব একেক রকম।তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক স্বার্থ থাকতে পারে।সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হলো ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া।

 

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া।তাহলে ইন্ধনদাতাদের প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সামাজিকমাধ্যমে কোনো ইন্ধনদাতা একটি পোস্ট করার পর সেটি না বুঝেই অনেকে ছড়িয়ে দেন।যেসব ইন্ধনদাতা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে,তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় গত মঙ্গলবারের বিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

 

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের পর থেকে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করেছে।চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।তবে এরপরও কেন হত্যাকাণ্ড এড়ানো যায়নি?– এমন প্রশ্নের জবাবে ইন্তেখাব বলেন,মৃত্যুর ঘটনা অবশ্যই অত্যন্ত বেদনাদায়ক।আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা থাকবে,যেকোনো ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধ করা।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত না থাকলে সেখানে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত। সময়মতো পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।আপনারা জানেন, সেখানে বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় কত ছিল।আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে।তাদের একটি হলো চিহ্নিত অপরাধী গোষ্ঠী,যাদের কাজই হচ্ছে অপরাধ করা।আরেকটা হচ্ছে ইন্ধনদাতা,তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করছে।

 

আরেকটা বড় গ্রুপ দেশের সাধারণ মানুষ।যেমন ছাত্ররা বা গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর মূল ভূমিকা চিহ্নিত অপরাধী ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে।ছাত্ররা যখন কারও ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে পথভ্রষ্ট হয়,তখন তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের একটু চিন্তা করতে হয়।ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলন করে দেশের এমন একটা পরিবর্তন এনেছে।আশা করি, দেশটা ভালো অবস্থায় যাবে।এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন– গোয়েন্দা ঘাটতি আছে, সেটা বলব না।

 

গোয়েন্দা, পুলিশসহ সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করছি।কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা করে কাজ করতে হচ্ছে।এতে অনেকের মনে হতে পারে,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক ঘটনা আগেভাগে প্রতিরোধ করা গেছে।

 

ব্রিফিংয়ে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন,গত ১৩ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ২৪টি অবৈধ অস্ত্র ও ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ,সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ জন এখনও চিকিৎসাধীন।এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি আহত ব্যক্তির অস্ত্রোপচার হয়েছে।এছাড়া, চারজন গুরুতর আহত রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।গত ২০ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর ১ জন কর্মকর্তা নিহত এবং ১২২ জন সদস্য আহত হওয়ার তথ্য ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা গত ১৫ নভেম্বর ফের ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার

টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার

দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের

দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের

হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত

হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত

শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন

শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি

লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি

এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’

এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’

এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার

এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা  বাড়ছে

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে

আজ গরম চা দিবস

আজ গরম চা দিবস

এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল

এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল

গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা

গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা

জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন

জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই

হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক

সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত