ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

জাতীয় নাগরিক কমিটিকে সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ মুক্ত হতে হবে

Daily Inqilab মেহেদী হাসান পলাশ

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম

ছবিটা দেখার পরে বেশ কিছুক্ষণ আমি হতবাক হয়েছিলাম। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছাত্র নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক স্কুলিং, গ্রুমিং সম্পর্কে আমার স্টকে থাকা ধারণার সাথে এই ছবি মেলাতে পারছিলাম না। জাতীয় নাগরিক কমিটির অমুসলিম সদস্যরা যদি এই মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করতো তাহলে আমার হতবাক হওয়ার কোন ঘটনা ঘটতো না, বরং সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু মুসলিম ছাত্ররা যাদের অধিকাংশ শিবির বা গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছে তাদের কাছে এই ধরনের কর্মসূচি পালন অবাক হওয়ার মত ব্যাপার বৈকি।

 

যারা দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন তাদেরকে মুসলিমরা যখন স্মরণ করবেন সে তিনি যে ব্যানারেই করুন তাকে একটি কোড অফ কন্ডাক্ট মেনে চলতে হবে। ইসলাম ও সনাতন ধর্মে মৃত স্বজন বা মানুষকে স্মরণ করার জন্য কিছু বিধি-নির্দেশ ও পন্থা রয়েছে। এই পন্থা অনুযায়ী মুসলমানরা মৃত স্বজন ও প্রিয়জনদের জন্য বা আরেক মুসলমানের জন্য দোয়া করেন, দান সাদকা করেন। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তাদের জন্য আলোচনা বা স্মরণসভা আয়োজন করার প্রচলন রয়েছে।

 

অন্যদিকে হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। হিন্দু ধর্মমতে, জীবিত ব্যক্তি ও মৃত ব্যক্তির যোগাযোগের মাধ্যম অগ্নি। এ কারণে, মানবজাতি ও পৃথিবীর মঙ্গল কামনায় সহস্র প্রদীপ জ্বেলে দীপাবলির মধ্য দিয়ে পালিত হয় শ্যামাপূজা বা কালীপূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দির, শ্মশান ও তাদের নিজ নিজ গৃহে প্রদীপ জ্বেলে এ দীপাবলি উৎসব উদযাপন করেন। পরে মধ্যরাতে মাতৃজ্ঞানরূপে অনুষ্ঠিত হয় শ্যামাপূজা। শ্যামাপূজার অন্যতম অংশ হলো দীপাবলি পালন। একই পরিবারের ও আত্মীয় স্বজনের মৃত ব্যক্তির নামে শ্মশান ঘাটে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। এর ফলে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা স্বর্গীয় অবস্থান লাভ করে- এ ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দীপাবলি অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ কারণে বাড়ির আঙিনায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করে থাকে এজন্য যে, তাদের মৃত স্বজনের আত্মা ওই বিশেষ রাতে বাড়িতে আসতে পারে।

 

সনাতন ধর্ম অনুসারে এই সমগ্র পৃথিবী পঞ্চ মহাভুত দিয়ে বানানো হয়েছে। সকল জীব উদ্ভিদ পঞ্চ মহাভুত দ্বারা সৃষ্টি এবং পঞ্চ মহাভুতের কারণেই বেঁচে আছে। এই পঞ্চ মহাভুতকে একসাথে ভগবান বলেও ডাকা হয়। এই পঞ্চ ভূত হচ্ছে: ভূমি, গগন, বায়ু, আগুন ও নীর। এদের একসাথে মেলালে ভগবান নামটি হয়। এ কারণে হিন্দু ধর্মে আগুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, হরিবংশ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থে ‘অঙ্গীরার পুত্র’, সন্ধিলার প্রপৌত্র, ব্রহ্মার জ্যেষ্ঠ পুত্র, দক্ষকন্যা স্বাহার স্বামী(অগ্নীপুরাণ), ধর্মের ঔরসে ও বসুভার্যার গর্ভে অগ্নির জন্ম(মহাভারত অনুশাসন)। উপমহাদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে অগ্নি প্রত্যক্ষ দেবতারূপী ভগবান। ঋগ্বেদে অগ্নিকে পার্থিব দেবতাদের মধ্যে প্রধান বলে দাবী করা হয়েছে। অগ্নি দেবতা ও মানবের মধ্যস্থতাকারী- যজ্ঞ সারথী। অগ্নি নিজের রথে দেবতাদের বহন করে যজ্ঞস্থলে বা মঙ্গলকাজে নিয়ে আসেন। সেকারণে অগ্নির অপর নাম যজ্ঞ পুরোহিত। ঋগ্বেদে সংহিতায় ২০০ সুক্তে অগ্নির স্তব করা হয়েছে, যা দেবরাজ ইন্দ্র ভিন্ন অন্য কোনো দেবতার বেলায় করা হয়নি।

 

ঋগ্বেদ শুরু হয়েছে অগ্নি বন্দনা দিয়ে এবং শেষও হয়েছে অগ্নি বন্দনা দিয়েই। মহামুণি বশিষ্ঠকে ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য অগ্নি দেবতার মুখ থেকে যে ১৫৪০০টি শ্লোক নির্গত হয় তাই অগ্নিপুরাণ নামে খ্যাত। দেবতাগণ অগ্নি ব্যতিত যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হন না। সেকারণেই হিন্দুরা জন্ম, মৃত্যু, বিয়েসহ সকল মঙ্গলকাজে অগ্নিকে সাক্ষী রাখে, সম্মুখে রাখে। শুধু মানুষ নয়, রামায়ণে দেবতা রামকেও দেখা যায় তার স্ত্রী সীতার পবিত্রতা প্রমাণে অগ্নিস্নানের নির্দেশ দিতে।

 

এই যে মৃত স্বজনের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এটা মূলত পৌরাণিক সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত। এর সাথে প্রেতলোক, স্বর্গলোক, মানবাত্মা, প্রেতাত্মা ও পরমাত্মার বিশ্বাস জড়িত। পূর্বে মাটির প্রদীপ জ্বালানো হতো এবং আধুনিককালে এই প্রদীপ প্রজ্বলন মোমবাতি প্রজ্জলন রূপে পরিণত হয়েছে। ফলে সেবা পূজায় বা দীপাবলিতে শ্মশানে মন্দিরে বা বাড়িতে আমরা এখন মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করতেই দেখি।

 

এই মোমবাতি প্রজ্বলন হিন্দু ধর্ম ছাড়াও শিখ ও জৈন ধর্মে প্রচলন রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে ফানুস ওড়ানোর লক্ষ্যটাও প্রায় কাছাকাছি। পৌরাণিক বিশ্বাসে প্রদীপ প্রজ্বলনের বিভিন্ন বয়ান রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কেতাবে। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে এই মোমবাতি প্রজ্বলন উৎসব পালিত হলেও কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

 

ওড়িশায় এই কালী/শ্যামা পূজা (দেবী কালীর উপাসনা) ছাড়াও দীপাবলি, ওডিয়াতে মূলত পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানোর একটি উৎসব। বিশ্বাস করা হয়, মৃত পূর্বপুরুষরা মহালয়ায় (দীপাবলির আগের অমাবস্যার দিন) পৃথিবীতে নেমে আসেন। দীপাবলির রাতে তারা তাদের আবাসে ফিরে আসে। এজন্য অনেক লোক এই দিনে তাদের পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধ (আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা) প্রদান করে। তাদের বিদায় জানানোর উপায় হিসাবে আলো এবং প্রদীপ জ্বালানো হয়। অন্ধকারে ভূত, প্রেত বা পাপাত্মা বসবাস করে, এরা যেন পূর্বপুরুষের আত্মাকে গৃহে আসতে বাধা দিতে না পারে সেই জন্য বাড়ির আঙিনায় সহস্র প্রদীপের আলোয় আলোকিত করা হয়।

 

মৃত পূর্বপুরুষদের চৌদ্দ প্রজন্মের স্মরণে কেউ কেউ দীপাবলির সন্ধ্যায় বাড়ির চারপাশে চৌদ্দ দীপ জ্বালান। এ সময় মন্ত্র পাঠ করা হয়:

বরবড়ুয়া হো! আন্ধারে আসি আলুয়ারে জা।
গঙ্গা জা গয়া জা। কাশি জা পুরুষোত্তমারে শ্রীক্ষেত্রে অব্রাহা
মহাপ্রসাদ খাই বাইশি পাহাচে গড়াগড়ু থা।

হে মহান পূর্বপুরুষ! তুমি অন্ধকারে এসেছ কিন্তু আলোতে ফিরবে। গঙ্গা, গয়া এবং কাশী/বারাণসীতে যান। পরিশেষে পুরুষোত্তমা শ্রীক্ষেত্রে এসে এবং অবধ/মহাপ্রসাদ গ্রহণ করার পর পবিত্র বাইশ ধাপে [পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথের মন্দিরে] গড়িয়ে পড়ুন।

 

শুধু মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যে এই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল না। মোমবাতি প্রজ্বলনের পর নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত কন্ঠে গেয়েছিল:
যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা এখনও জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি।

যাঁরা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা
মৌল মলিন মুখে জোগালো ভাষা
‎আজি রক্ত কমলে গাঁথা
আজি রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি
বিজয় লক্ষ্মী দেবে তাঁদেরই গলে।
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে।


গানটির গীতিকার মোহিনী চৌধুরী। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আদি বাড়ি হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভারতে স্থায়ী। গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।

 

আমরা বাঙালি মুসলিমরা শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময় সচেতনতার পরিচয় দেই না। বিশেষ করে অনেক মুসলিম কবিরাও হীনমন্যতা থেকে দেদারসে উপনিষদ ও পৌরাণিক উপমার শব্দ ইসলামী বর্ণনায় ব্যবহার করে থাকে। এই মিশ্রণটি প্রথম শুরু করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তবে ফররুখ আহমদ এবং দ্বিতীয় ভাঙ্গনের পর আল মাহমুদ এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।

 

'শহীদ' একটি ইসলামী পরিভাষা। যারা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বা তার পথে বা তার নির্দেশে প্রাণ দান করেন তারা শহীদ হন। আর হিন্দু ধর্ম মতে যখন কোন প্রাণ দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয় বা হত্যা করা হয় বা ত্যাগ করা হয় তাকে 'বলিদান' বলা হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত হিন্দু ভাইয়েরা তাদের প্রাণ বলিদান করেছেন তারা তাদের ধর্ম মোতাবেক প্রাপ্য পুরস্কৃত হবেন, স্বর্গগত হবেন, জাতীয়ভাবে সম্মানিত হবেন। কিন্তু তারা শহীদ নন।

 

শহীদ শব্দটি কেবলমাত্র মুসলিম ও ইসলামের জন্য প্রযোজ্য। এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা উপরে দেয়া হয়েছে। কাজেই মুক্তিযুদ্ধে যে সকল মুসলিম দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন তারা শহীদ হয়েছেন। এবং তারা মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কার আখেরাতে পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এবং দুনিয়াতে তাদের শহীদ হিসেবে আমরা সম্মানিত করি।

আগস্ট বিপ্লবে যারা মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে তারা যে আত্মত্যাগ করেছেন তার জন্য অবশ্যই তারা তাদের ধর্ম মোতাবেক পুরস্কৃত হবেন এবং জাতি হিসেবে দুনিয়াতে আমরা তাদের সম্মানিত করবো। কিন্তু তারা শহীদ নন। শহীদ কেবল এসময় যে সমস্ত মুসলিম নিহত হয়েছেন তারাই। কেননা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ ইসলামে শাহাদাতের মর্যাদা দান করা হয়েছে। এই মুসলিম তরুণগণ যারা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে অকাতরে প্রাণ দান করেছেন তারা মূলত শাহাদাতের তামান্না থেকে করেছেন। কোন 'মন্দিরের সোপান তলে' 'প্রাণ বলিদান' করেননি। তারা শাহাদাত বরণ করেছেন।

 

হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা 'প্রাণ বলিদান' করেছেন তারা তাদের ধর্ম অনুযায়ী স্বর্গগত হতে পারেন। বিজয় লক্ষ্মী দেবী তার গলায় মাল্যদান করতে পারেন, কিন্তু জান্নাতে যেতে পারেন না। জান্নাতে যেতে পারেন কেবল শহীদগণ, বলিদানকারী কোন প্রাণ নয়। বলিদানকারী প্রাণ স্বর্গগত হতে পারে।

 

আমাদের মিডিয়াতে মুসলিম সেলিব্রেটি যুগলের বিবাহের নিউজ করতে গিয়ে লেখা হয়, গাঁটছড়া বাঁধলেন অমুক জুটি, বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন অমুক জুটি। প্রকৃতপক্ষে কোন মুসলিম বর কনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয় না, গাঁটছড়া বাঁধা হয় না। হিন্দু বাঙালি বিয়ের রীতিতে বর কনেকে আলাদা আলাদা পিঁড়িতে বসানো হয় এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কণের মুখে পান পাতা রেখে বরের চারদিকে কণেকে সাত পাক ঘোরানো হয় এবং মালা বদল করা হয়। এবং এই সাত পাকে সাতটি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। অন্যদিকে হিন্দু বিয়ের রীতিতে কনের শাড়ি বা চোলির আঁচলের সাথে বরের উত্তরীয়র কোণা গিঁট দিয়ে বাঁধাকে গাঁটছড়া বাঁধা বলা হয়। এই গাঁটছড়া বাঁধা অবস্থায় পাত্র-পাত্রী আবার প্রজ্বলিত অগ্নির চারদিকে সাত পাক ঘুরে থাকেন। কোন মুসলিম বিয়েতে এই রীতি অনুসরণ করা হয় না। তবুও আমাদের মিডিয়াতে মুসলিম বিয়ের সংবাদে উক্ত শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়।

 

শুধু মিডিয়া নয়, আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারেও আমরা মুসলিমরা কারো মেয়ের প্রশংসা করতে বলে থাকি, আপনার মেয়েটা লক্ষ্মীর মত, আপনার ছেলেটা কার্তিকের মত সুন্দর, অমুকের স্ত্রী সতী সাবিত্রী। এভাবে আমরা বেখেয়ালে মুসলিমদের হিন্দু দেব-দেবীদের সাথে বা তাদের গুণের সাথে তুলনা করে অবচেতনে শিরকের সাথে নিজেদের জড়িত করছি। আমরা শিরক থেকে বিরত থাকতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামের শোভাযাত্রা বা এই শোভাযাত্রায় মনসার পট, লক্ষীর সরা থাকার বিরোধিতা করছি। আবার আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে এই গান দেদারসে বাজাই। কোন হিন্দু যেমন শাহাদাত বরণ করতে পারেন না, তেমনি কোন মুসলিম, প্রাণ বলিদান করতে পারেন না।

 

পৌরাণিক এই উৎসব, বিশ্বাস ও লোকাচার থেকে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও ছায়ানটী সংস্কৃতিক কর্মীরা সুকৌশলে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন চালু করে। বাংলাদেশে ভারতীয় সংস্কৃতিক আগ্রাসন ও হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি অনুপ্রবিষ্ট করার লক্ষ্যে সুকৌশলে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি বাংলাদেশে প্রচলন করে। ছায়ানটি, উদিচী, বামপন্থী, বামপন্থী, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই কর্মসূচি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সুকৌশলে এর সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে। অসচেতন বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী এ কর্মসূচির উৎস এবং লক্ষ্য না বুঝেই তা গ্রহণ করে এবং নিজের অজান্তে নিজেকে শিরকের মত পাপের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে। ঠিক যেভাবে অধুনাকালে পহেলা বৈশাখে কপালে রাজটিকা, চন্দন তিলক, উলকি আঁকা, নববর্ষ শোভাযাত্রাকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পরিণত করা, হোলি উৎসবকে মুসলিম তরুণ তরুণীদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলনের প্রচেষ্টা চলেছে। এভাবেই বাঙ্গালি মুসলিম সমাজকে সংস্কৃতির মোড়কে পৌরাণিক বিশ্বাস, লোকাচার ও রীতিগুলোকে চাপিয়ে দিয়ে শিরকে সাথে জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

 

এই অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, 'আমরা গর্ব করে বলতে চাই, আমরা এই বাংলাদেশের নাগরিক। কোনো দেশের দাসত্ব মেনে নেওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ জীবন দেয়নি।’

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই বিজয়, সবকিছুকে এত দিন ভারতের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়েছিল।’ এছাড়াও কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন,
'বিজয়ের দিনে আমরা শপথ নিচ্ছি, আওয়ামী লীগের বিচার আমরা করব, বিচারের পর তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনে যাবে।’

শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। পরে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে টিএসসির দিকে যান জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা।

এই স্লোগান এবং প্রায় সকল বক্তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় এই তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভারতীয় আধিপত্যবাদ সম্পর্কে সচেতন এবং তারা এই আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরোধী। অথচ তারা বুঝতে অক্ষম যে তারা নিজেরাই অবচেতনে এই আধিপত্যবাদের সাংস্কৃতিক রূপের চরম শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ভূখণ্ডগত আগ্রাসনের রূপ লাভ করে। কিন্তু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে সনাক্ত করা এবং তার থেকে নিজেকে রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ অভিনিবেশ, জ্ঞান চর্চা ও অনুশীলন। আগস্ট বিপ্লবের এই মাথা নত না করা তাজা তরুণ সকল ধরনের আধিপত্যবাদের শিকল চিহ্নিত করে ছিঁড়ে ফেলে আগামীতে আধিপত্যবাদ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করবেন যা স্ব মহিমা ও সংস্কৃতিতে বিশ্বের বুকে প্রজ্জ্বলিত থাকবে চিরদিন এই প্রত্যাশা দেশের ১৮ কোটি মানুষের।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাক্ষাৎ
আরও

আরও পড়ুন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা