স্বপ্ন ছিল ২০৩০ সালে নির্বাহী পরিচালক পদ বাগানো : আধিপত্যের নেপথ্যে আওয়ামী ব্যবসায়ী গ্রুপ
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম
বহাল তবিয়তেই আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ। ঘুরে-ফিরে গত ২৩ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থান ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরাচার হাসিনার সময়ে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি রাজনৈতিক আজ্ঞাবহে রূপ নিয়েছিল। বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে রক্ষায় নেমেছিল এখানকার কর্মকর্তা সিআইবির বর্তমান পরিচালক মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ। তার ক্ষমতার কাছে অসহায় ব্যাংকের একই বিভাগের অন্যরা। গত ৫ ডিসেম্বর ‘টানা ২৩ বছর একই বিভাগের মুুন্সী ওয়াকিদ’ দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও গত ১৫ বছর নির্যাতিত-বঞ্চিত তিন ছোট কর্মকর্তাকে সিআইবি থেকে বদলি করা হয়েছে। অথচ এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন মুন্সী ওয়াকিদ। পাশাপাশি অভিযোগ আছে, মুুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিন ছোট কর্মকর্তাকে বদলি করিয়েছেন।
সূত্র মতে, দেশের সমস্ত ঋণগ্রহীতার তথ্য সংরক্ষিত হয় ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি)। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। ঋণ তথ্যের গোয়েন্দা বিভাগও বলা হয় এটিকে। যেখানে দেশের সমস্ত ঋণগ্রহীতার তথ্য সংরক্ষিত হয়। ব্যাংকিং খাতের ঋণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এই বিভাগ ভ‚মিকা রাখে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নমিনেশনের ক্লিয়ারেন্স এই বিভাগ থেকেই দেয়া হয়। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য সিআইবি থেকে সংগ্রহ করে। এই ক্লিয়ারেন্সের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি বা পরিচালক হতে পারবেন কি-না, সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি-না, বা বিডা থেকে বিনিয়োগ পেতে পারবেন কি-না। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগে দীর্ঘদিন ওয়াকিদের থাকার নৈপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন ব্যাংক খাতের মাফিয়া এস আলম গ্রæপ, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, নাসা, সামিট, আরামিট, জেমকন, এইচআরসি, থার্মেক্সসহ একাধিক গ্রæপ ও ব্যক্তি। এসব গ্রæপের কর্ণধাররা দীর্ঘদিন থেকে সুবিধা পেয়ে আসছিলেন তাই মুন্সী ওয়াকিদের জন্য, তাদের কমিটমেন্ট ছিলÑ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তাকে নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পদে পদোন্নতি দেবেন।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সিআইবিতে ঋণের তথ্য হালনাগাদের নিয়মে পরিবর্তন আনার নির্দেশ দেন তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদের বুদ্ধিতে গভর্নরের নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের ঋণের তথ্য সরাসরি সিআইবির ড্যাশবোর্ডে আপলোড করার ক্ষমতা পায়। সেই সুযোগে সরকারের মদদপুষ্ট অনেকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে সিআইবি রিপোর্টে পরিবর্তন করে খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখিয়েছেন। এমনকি প্রকৃত ঋণখেলাপি হয়েও সিআইবির রিপোর্ট পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
গত ১৫ বছর আওয়ামী সুবিধাভোগী হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এইচআর বিভাগ তার বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক আওয়ামী দোসরদের চাকরি ছাড়তে হলেও মুন্সী ওয়াকিদ এখনো বহাল তবিয়তে অফিস করছেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তার সুরক্ষায় উঠেপড়ে লেগেছে আওয়ামী দোসরদের একাংশ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন ডেপুটি গভর্নর ও সিআইবির নির্বাহী পরিচালক মানসুরা পারভীন। মানসুরা পারভীন গোপালগঞ্জ সদর থানার বাসিন্দা। তার পুরো পরিবারই কট্টর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত।
গোপালগঞ্জের অধিবাসী মানসুরা পারভীন সিআইবির নির্বাহী পরিচালক হওয়ার আগে জিএম (বর্তমান পরিচালক) পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময় মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ সিআইবির ডিজিএম (বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক) ছিলেন। মানসুরা পারভীন তাকে বিশেষ প্রাধান্য দিতেন। তার স্বামী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আখতার হোসেন, যিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দুই ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান ও খুরশিদ আলমের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই সিন্ডিকেটের প্রভাবে সিআইবির অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবহেলা করা হতো, যা বিভাগের সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে। কারণ, সিআইবির অধিকাংশ সিদ্ধান্ত শুধু ওয়াকিদ-মানসুরার দ্বারা পরিচালিত হতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ পরিচালক পদে পদোন্নতি পান এবং তাকে পরিসংখ্যান বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই, ১৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে, পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি পুনরায় সিআইবিতে ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পর মানসুরা পারভীন সিআইবির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুন্সী ওয়াকিদকে স্বপদে বহাল রাখতে বিভিন্ন ইডি ও ডিজিদের দুয়ারে দুয়ারে দৌড়ঝাপ করেছেন মানসুরা পারভীন। উদ্দেশ্য একটাই, মুন্সী ওয়াকিদকে যেকোনো মূল্যে সিআইবিতে বহাল রাখতেই হবে। পরিসংখ্যান সাইডে আরো ১২ জন পরিচালক থাকা সত্তে¡ও এক দুর্নীতিবাজ পরিচালক মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদকেই কেন এই পদে বহাল রাখতে হবে এবং তার প্রতিই মানসুরা পারভীনের বিশেষ কেন এত দরদ, কেনই বা তাকে বারবার সুরক্ষা দিতে চাচ্ছেন তা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন। এদিকে মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ ও মানসুরা পারভীনকে বহাল তবিয়তে রেখে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের স্বার্থরক্ষা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার।
সিআইবিতে কিভাবে ২৩ বছর এ নিয়ে কথা হলে মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ ইনকিলাবকে জানান, একটানা ২৩ বছর না, একই পদে। মাঝে অন্য বিভাগে বদলি হয়েছে। যদিও বদলির তথ্যে দেখা গেছে, তা কখনো ছয় মাসের বেশি নয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি আবার সিআইবিতে ফিরেছেন।
সিআইবির নির্বাহী পরিচালক মানসুরা পারভীনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে মোবাইলে কল করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
হাসিনাকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা