বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য: ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ই সমাধান

Daily Inqilab মো. আব্দুর রাজ্জাক

০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১০ এএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য তিনটি বিভাগ বিভাগ রয়েছে। একটি আইন বিভাগ, দ্বিতীয়টি শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ এবং তৃতীয়টি হলো বিচার বিভাগ। এই শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগের দুইটি পার্ট-(১) স্থায়ী জনবল এবং (২) অস্থায়ী রাজনৈতিক নেতৃত্ব। স্থায়ী জনবল সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে পরিচালিত হয় এবং অস্থায়ী রাজনৈতিক জনবল মন্ত্রীপরিষদকে বোঝায়। ২০১৫ সালের নতুন পে-স্কেল চালু করার পর সরকারি কর্মচারীদের প্রথম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত বিভক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজন পূর্বে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। বর্তমানে প্রচলিত প্রথম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি কর্মচারী বা চাকুরীজীবীদের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক্যাডার কর্মকর্তারা ২৮টি ক্যাডারে বিভক্ত থাকলেও পথপরিক্রমায় বর্তমানে ২৬টি ক্যাডারে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট যোগ্যতা সাপেক্ষে প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন শেষে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। বিপিএসির মাধ্যমে একই প্রশ্নপত্রে প্রিলিমিনারি ও লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

 

 

২৬টি ক্যাডারের নিয়োগ প্রক্রিয়া একই হলেও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিস প্রায় সকল মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান সচিব বা সিনিয়র সচিব হন এবং রাজনৈতিক মন্ত্রীগণ নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাকী ২৫টি ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত হতে পারেন। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডার ২৬টি ক্যাডারের একটি হলেও বাকী ২৫টি ক্যাডারকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করছেন।

 

 

৫ আগস্ট, ২০২৪ খ্রি. তারিখে সরকার ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ০৯টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। ০৯টি কমিশনের একটি হলো জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের প্রধান কাজ ২৬টি ক্যাডারের বৈষম্য হ্রাস করে জনপ্রশাসনকে জনগণের সেবাবান্ধব করে সেবা সহজিকরণ করা এবং জনপ্রশাসনকে জনগণমুখী করে গড়ে তোলা। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি প্রেস ব্রিফিং জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেন।

 

 

এর পর থেকে দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়- ক) (১) বিসিএস ( সাধারণ শিক্ষা) এবং (২) বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার সার্ভিসকে ক্যাডার সার্ভিসের বাহিরে নিয়ে পৃথক সার্ভিস গঠন করা; খ) সিনিয়র সার্ভিস পুল (উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব) পদে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ভোগকৃত ৭৫% কোটা হ্রাস করে ৫০% এবং অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের ভোগকৃত ২৫% কোটা বৃদ্ধি করে ৫০% এ উন্নীত করে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করার প্রস্তাব করা হবে। অর্থাৎ দুইটি ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত করা ও উপসচিব পদে নিয়োগের প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫% ও অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের জন্য ২৫% কোটাকে ৫০%/৫৫% কোটা বহাল রেখে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদানের প্রস্তাব প্রকাশিত হয়েছে।

 

 

এই সকল ঘটনার কারণে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার দাবি করছেন সংস্কার মানে উপসচিব পদে তাদের ১০০% কোটাই সংরক্ষণ করতে হবে এবং কোন প্রকার লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। অপরদিকে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডার দাবি করছেন কোটা বাতিল করে ১০০% উন্মুক্ত করে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব পদে নিয়োগ প্রদান করতে হবে এবং অতীতের ধারাবাহিকতায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারকে ক্যাডারের মধ্যেই রাখতে হবে। সকলে নিজ নিজ পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন।

 

 

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষে স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আলোচনা সভা হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিজেদের দাবি করে বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করছেন এবং তাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু খুব কম কর্মকর্তাই তাদের দাবির সাথে জনস্বার্থকে লিংক করে লিখতে পেরেছেন। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ হলে প্রকৃতপক্ষে জনগণের কী লাভ? প্রশ্ন থাকে। জনগণের কল্যাণের জন্য কী করা উচিত? তাও কী বিবেচ্য নয়?
বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার দাবি করেছেন উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো তাদের সহজাত ও লাইন পোস্ট! অন্যান্য ২৫ ক্যাডার দাবি করেছেন উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো সরকারের বিশেষ পদ; এই পদ কোন ক্যাডারের সহজাত বা লাইন পোস্ট নয়। এ কারণে এই পদে মেধার ভিত্তিতে কোটা বিলোপ করে নিয়োগ দিতে হবে।

 

 

 

আমাদের প্রথমে জানা দরকার বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের যে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয় তাদের তার মূল ভিত্তি হলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১; কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস, ১৯৮০ এবং সিনিয়রিটি রুলস, ১৯৮৩ এর বিধি-৪ মোতাবেক এসআরও-২৬২এল/৮৬/এমই/আইসি-১/৮৬; তারিখ ১ জুলাই ১৯৮৬ খ্রি. এর তফশিল মূল ভিত্তি। এই প্রেক্ষিতে ১৯৮৭ সালে গেজেটেড তফসিলভুক্ত পদগুলোতে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পদগুলি ম্নিরূপ-
(০১) বিভাগীয় কমিশনার/সদস্য, ভূমি প্রশাসন বোর্ড- মোট ০৬টি পদ; চেয়ারম্যান, ভূমি প্রশাসন বোর্ড ০১টি পদ; (০২) মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ বোর্ড/ ভূমি সংস্কার কমিশন/ পরিচালক, সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস মোট ০৩টি পদ; (০৩) অতিরিক্ত কমিশনার/ উপ পরিচালক, সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস মোট ১০টি পদ; (০৪) সচিব, ভূমি প্রশাসন বোর্ড/ পরিচালক, ভূমি রেকর্ড/ পরিচালক, জরিপ/ সামরিক এসেস্ট অফিসার, পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম/সেনানিবাস/ভূমি সংস্কার উপ-কমিশনার মোট ০৮টি পদ; (০৫) জেলা প্রশাসক/ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/ অতিরিক্ত প্রধান মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/ ঊর্ব্ধতণ সহকারী সচিব/ সেটেলমেন্ট অফিসার/ উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার)/ সেনানিবাস নির্বাহী অফিসার/ উপজেলা নির্বাহী অফিসার/ সহকারী সচিব (ভূমি প্রশাসন বোর্ড)/ সামরিক এস্টেট অফিসার মোট ৮৩৬টি পদ; (০৬) সহকারী পরিচালক (স্থানীয় সরকার)/রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর/ ভূমি হুকুম দখল অফিসার/ সিনিয়র সহকারী কমিশনার/ বিচারক-ম্যাজিস্ট্রেট/ সিটি ম্যাজিস্ট্রেট/ চার্জ অফিসার/ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার/ উপ পরিচালক জরিপ/ উপ পরিচালক ভূমি রেকর্ড/ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মোট ৪৪১টি পদ; (০৭) সহকারী কমিশনার/উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট/উপজেলা রাজস্ব অফিসার/ সেনানিবাস নির্বাহী অফিসার/ শাখা প্রধান (ভূমি প্রশাসন বোর্ড)/ প্রেস অফিসার (সেটেলমেন্ট প্রেস)/ ম্যাজিস্ট্রেট, মেরিন কোর্ট (শিপিং বিভাগ)/স্পেশাল অফিসার, মেরিন নিরাপত্তা (শিপিং বিভাগ)/ ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা পৌর কর্পোরেশন/ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশন/ ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ/ ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মোট ১৭৯২টি পদ; সর্বমোট ১৭৯২টি পদ। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তফশিল ভুক্ত যে পদগুলোর বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয় বর্ণিত পদগুলোর মধ্যে উপ সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো নাই। তফসিলভুক্ত পদে অন্য ক্যাডারের পার্শ্বপ্রবেশের সুযোগ নাই।

 

 

 

উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদগুলো বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদের অন্তর্ভুক্ত নয়; কারণ উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদগুলো বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ পদ। এই পদগুলোতে বাংলাদেশ সরকার সকল ক্যাডার সার্ভিস থেকে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে সিনিয়র সার্ভিসে নিয়োগ করেন। এই পদগুলোতে শুধুমাত্র বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার থেকে ৭৫% কোটায় এবং অবশিষ্ট ২৫টি ক্যাডার থেকে মাত্র ২৫% সিনিয়র সার্ভিসে এসএসবি'র মাধ্যমে নিয়োগ করা হচ্ছে। সংস্কার সামনে রেখে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার থেকে ৫০% কোটায় এবং অবশিষ্ট ২৫টি ক্যাডার থেকে মাত্র ৫০% কোটায় এই সিনিয়র সার্ভিসের জনবল নিয়োগ ও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত করে এই সিনিয়র সার্ভিস বা সরকারের বিশেষ পদে নিয়োগের পথ বন্ধ করার প্রস্তাব করার অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১৪টি সাধারণ ক্যাডার এবং ১২টি পেশাগত ক্যাডারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০,০০০ জন। ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৭০৭৬ জন, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩২,০০০ জন, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ১৫,৫০০ জন, বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩,২০০ জন, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩,১০০ জন, বিসিএস (পশু সম্পদ) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ২,০৯৩ জন, বিসিএস (কর) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ১৫৩৩ জন; এছাড়াও সংখ্যায় ছোট বিসিএস (আনসার), বিসিএস (পররাষ্ট্র), বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি), বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব), বিসিএস (সমবায়), বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা), বিসিএস (খাদ্য), বিসিএস (তথ্য), বিসিএস (ডাক), বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক), বিসিএস (বাণিজ্য), বিসিএস (সড়ক ও জনপদ), বিসিএস (গণপূর্ত), বিসিএস (বন), বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল), বিসিএস (পশুসম্পদ), বিসিএস (মৎস্য), বিসিএস (পরিসংখ্যান), বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা)। মোট ৬০,০০০ ক্যাডার থেকে কৌশলে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ও বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের ৪৭৫০০জনকে ক্যাডার বহির্ভূত করতে পারলে অবশিষ্ট ক্যাডার থাকে ১২,৫০০ জন যার মধ্যে ৭০৭৬ জন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার এবং অবশিষ্ট ২৩টি ক্যাডারের সমষ্টি ৫৪২৪ জন! সেক্ষেত্রে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো দখলে বর্তমানের চেয়ে সুবিধা হয়।

 

 

উপসচিব থেকে সচিব বা সিনিয়র সচিব পর্যন্ত পদগুলোর অধিকাংশ বর্তমানে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার থেকে নিয়োগের কারণে প্রকৃত পক্ষে রাষ্ট্রের কী কী সমস্যা হচ্ছে এই বিষয় বিবেচনা করা দরকার।

 

প্রথমত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সরকারি কর্মচারী হলেও তারা অধিক ক্ষমতা পাওয়ায় লাট সাহেব হয়ে অফিস কক্ষের সামনে তাদের চেয়ে উপরের প্রাধিকারে সিনিয়র আইন প্রণেতা এমপিদেরকেও সারাদিন বসিয়ে রাখতে দ্বিধা করেন না। অন্য সাধারণ জনগণ তাদের নিকট খুবই তুচ্ছ। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার পত্রপত্রিকার খবর পুরো ক্যাডার সার্ভিস সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে এবং সাধারণ জনগণ প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

 

দ্বিতীয়ত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে সকল মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদ সচিব বা সিনিয়র সচিব থাকার কারণে সরকারের সিভিল সার্ভিসের অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের অফিসারগণ নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে অংশীজন হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে সরকারের নীতি নির্ধারণে অহরহ ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে। ভুল সিদ্ধান্তের আউটপুট ও আউটকাম পর্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে এই গরীব দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে; বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ব-স্ব বিশেষজ্ঞ ক্যাডারকে সুযোগ দেওয়া হলে সরকারি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জনপ্রশাসনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে। সরকারের অপচয় হ্রাস পাবে। জনগণের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

 

 

তৃতীয়ত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে সকল মন্ত্রণালয়ের সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থাকায় তারা ইচ্ছাকৃত সীমাহীন আর্থিক ও অনার্থিক এবং ক্ষমতার বৈষম্য সৃষ্টি করায় ২৬টি ক্যাডারের ২৫টি ক্যাডারের কমপক্ষে ৫২,৯২৪ জন কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বৈষম্যের মধ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতা ও আর্থিক ক্ষমতার বৈষম্য, ক্যারিয়ার প্লানিং বৈষম্য, বেতন ও ভাতা বৈষম্য, পে-স্কেলে গ্রেডিং বৈষম্য, দপ্তরের কর্মপরিবেশের বৈষম্য, প্রেষণ-লিয়েন সুবিধার বৈষম্য, পদায়নের বৈষম্য, বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বৈষম্য, বদলি পদায়নের টার্নওভার বৈষম্য, পরিবহণ সুবিধার বৈষম্য, পদক্রমের বৈষম্য, পদোন্নতির বৈষম্য, ক্ষমতার বৈষম্য, প্রযুক্তি ব্যবহারের বৈষম্য, সরকারের সাথে সিভিল সার্ভিসের আন্তঃসম্পর্কের বৈষম্য অর্গানোগ্রামের বৈষম্য, যোগাযোগ সুবিধার বৈষম্য, অভ্যান্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বৈষম্য, উচ্চতর শিক্ষা সুযোগের বৈষম্য, অর্জিত ছুটির বৈষম্য ইত্যাদি সীমাহীন বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।

 

 

চতুর্থত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের নিয়োগের ৪৪% মেধা কোটায় হলেও ৫৬% কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছেন বিভিন্ন কোটায় প্রাধিকারের ভিত্তিতে। ফলে অন্যান্য ক্যাডারের মেধায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকার পরেও কোটার কারণে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে জায়গা পান নাই, তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের বাহিরের অন্য ক্যাডারে। অথচ মেধাবী কর্মকর্তা অধিক নম্বর প্রাপ্ত হয়েও কোটার কারণে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্ত হন নাই। অথচ প্রাধিকার কোটায় অনেক কম নম্বর প্রাপ্ত হয়েও কমপক্ষে ৫৬% কর্মকর্তা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন তাদের বর্ণিত তফশিল ভুক্ত পদের জন্য। যেমন-৩৩তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে মোট ২৯৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ লাভ করেন। ২৯৬ জনের মধ্যে ১৩৫ জন মেধা কোটায় এবং ১৬১ জন প্রাধিকার কোটায় (বিভিন্ন কোটা) নিয়োগ লাভ করেন। এই ১৬১ জনের চেয়ে বেশি নম্বর প্রাপ্ত হয়ে অসংখ্য কর্মকর্তা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার পান নাই, অন্যান্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। বিসিএস ২৫ ব্যাচের মেধাতালিকার শেষ ৩০ জন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন কোটার কারণে। এইভাবে অধিক নম্বর প্রাপ্ত মেধাবী প্রাধিকার কোটাবিহীন কর্মকর্তা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের তফশিল ভুক্ত পদে নিয়োগ প্রাপ্ত না হলেও তিনি সরকারের বিশেষ পদ উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার অধিকার রাখেন। এই অধিকার হরণ করার কারণে একটি ক্যাডার সকল ক্ষমতা ভোগ করছেন। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রশাসন মেধা শূন্য হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্টাডি বলছে বিশ্বের সবচেয়ে এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম হলো সুইজারল্যান্ড; এবং এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম হিসেবে বাংলাদেশ ৮৯টি দেশের মধ্যে ৭১তম! অর্থাৎ তাহলে আমরা আনঅফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা বলছে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন্ডেক্সের তালিকায় বাংলাদেশ ১১৮টি দেশের মধ্যে ৯৩তম! এই গবেষণায় পাবলিক পলিসিতেও শোচনীয় অবস্থা বাংলাদেশের; ১২০টি দেশের মধ্যে আমরা ১১৩তম। পাবলিক লিডারশিপের ইন্ডেক্সে বাংলাদেশ ১২০টি দেশের মধ্যে ৯৩তম। বিশ্বাস ও মর্যাদায় ১২০টি দেশের মধ্যে আমরা ১১২তম। ব্যুরোক্রেটিক সিস্টেমে ১২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ৯৩তম; আইন ও পলিসি মেকিং এ আমরা ১১৩টি দেশের মধ্যে ৯৮তম; এই ইন্ডেক্স মাঠপর্যায়ে তথ্য আরো শোচনীয়। মূলত একটি ক্যাডারের অধিক ক্ষমতা ভোগ ও সেবায় মনোযোগ না দেওয়ার কারণে আমাদের জনপ্রশাসন জনবান্ধব ও জনগণের সেবামুখী হতে পারে নাই। কিন্তু সরকারের বিশেষ পদ সিনিয়র সার্ভিসের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হলে এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম গঠন সম্ভব হবে। এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম গঠন হলে জনপ্রশাসন জনবান্ধব ও জনগণের মানসম্মত সেবা প্রদানে সক্ষম হবে। অন্যথায় জনপ্রশাসন দিনদিন আরো মেধা শূন্য হবে। মেধা শূন্য জনপ্রশাসন দ্বারা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া কঠিন।

 

 

 

পঞ্চমত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের হাতে সকল ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা থাকায় তারা তাদের জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান করে অন্যান্য ক্যাডারের ১০/১৫ ব্যাচ সিনিয়র ক্যাডারের উপরে অবস্থান তৈরি করে দিচ্ছেন। সুপার নিউমারারি পদে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে; অথচ অন্যান্য ক্যাডারে শূন্য পদে নিয়মিত পদোন্নতি প্রদানে সচিবের মনখারাপই অন্যতম ভূমিকা পালন করে, সভা পিছিয়ে দেওয়া হয়। ফলে জনপ্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। সিনিয়রগণ কাজের মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন। জনগণ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ পদোন্নতির কর্তৃপক্ষ স্বস্ব ক্যাডার হলে পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় এমন বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। জনজন সঠিক সেবা পেত। এর সমাধান পদোন্নতির কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করা।

 

 

ষষ্ঠত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার থেকে প্রায় সকল উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব নিয়োগ হওয়ায় মেধা শূন্য জনপ্রশাসনের সৃজনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। সৃজনশীলতা হ্রাসের অন্যতম উদাহরণ বর্তমানের আন্দোলন কেন্দ্রিক তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের নামে একটি লোগো তৈরি করেছেন; যে লোগো ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের লোগোর সাথে ৯০% মিল পাওয়া যায়! জনপ্রশাসনের কাজগুলোতে সৃজনশীলতা, সৃষ্টিকর্ম না থাকলে গবেষণার অনুপস্থিতি মেধা শূন্যতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু সকল ক্যাডার থেকে মেধাবী কর্মকর্তাদের বেছে নিয়ে জনপ্রশাসন গঠন করলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে এর বিকল্প নাই।

 

 

 

সপ্তম: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যগণ সাধারণত ভূমি সংক্রান্ত কাজে বিশেষায়িত হয়ে থাকেন। বিষয়টি তাদের তফসিলভুক্ত পদের তালিকা থেকে বোঝা যায়। অন্যান্য কাজে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে কাজ করেন। তারা ভূমি সংক্রান্ত বিষয় ব্যতীত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য, অর্থনীতি, জননীতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নন। কিন্তু বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার সার্ভিস শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনা, কারিকুলাম, সিলেবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশাসন, শিক্ষার অন্যান্য প্রশাসন, শিক্ষার্থী-অভিভাবক, শিক্ষক, পুরো শিক্ষা পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেন। সেই সাথে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয় পদ্ধতি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, নথি ব্যবস্থাপনা, অফিস ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ প্রদান, পাঠ্যবই লিখন, ছাপানো, বিতরণ পর্যায়ের সাথে সরাসরি জড়িত থাকেন। দেশের আইন, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, সরকারি চিঠিপত্র তৈরি, নিদের্শনা নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার নিয়মিত কাজ করছেন। এমনকি সংসদে শিক্ষা মন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের জবাব তৈরি করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এইচআর উইং নিয়মিত কাজ করছেন। শিক্ষা ক্যাডার যেভাবে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে পারবেন সেভাবে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের কোন কর্মকর্তার দক্ষতা দেখানো সম্ভব নয়; যা সম্ভব তা হলো অ্যাভারেজ কাজ চালিয়ে নেওয়া। শিক্ষার মত বিসিএস (স্বাস্থ্য), বিসিএস (কৃষি) সকল ক্যাডারের জন্য একই বিষয় প্রযোজ্য। এ কারণে বিশেষায়িত মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে ক্যাডার যাপর, মন্ত্রণালয় তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

 

 

 

অষ্টমত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসের একজন ডিসি ৩০২টি কমিটির সভাপতি এবং একজন ইউএনও ১৬৭ কমিটির সভাপতি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তার হাতে এতগুলো কমিটির সভাপতির পদ থাকলে এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত হলে যে কোন ব্যক্তি কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পাদন করতে হিমশিম খাবেন এবং জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। বাংলাদেশে হচ্ছেও তাই। ৩০২টি কমিটির অধিকাংশই তাদের অধিক্ষেত্রের বাহিরের বিষয়। তাদের হস্তক্ষেপের কারণে কাজগুলো সঠিকভাবে হয় না কিংবা কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলে। অথবা অন্য কর্মকর্তার সম্পাদিত কাজে সভাপতিত্ব করে শুধু ক্রেডিট ছিনতাই করা হয়; এতে করে কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়, মনোবল ভেঙে যায়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর যে, শিক্ষক দিবস পালনেও সভাপতি ইউএনও কিংবা ডিসি! ১০/১৫ ব্যাচ সিনিয়র হয়েও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের সভাপতিত্বে সভা করতে হয়, যা শৃঙ্খলার যেমন সমস্যা করছে তেমন আন্তঃসম্পর্ক নষ্ট করছে। তাতে কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যায়; ফলে জনগণ সেবা পায় না। আবার অনেক ক্ষমতা ও অনেক কাজ নিজেদের দখলে রাখায় কাজগুলো সঠিক ভাবে হয় না, অন্যরাও কাজগুলো করার সুযোগ পায় না। অপরদিকে এত বেশি কলোনিয়ালিজম এবং ভারসাম্যহীন ক্ষমতা শুধুমাত্র একটি ক্যাডার সার্ভিসকে প্রদানের ফলে তারা অজান্তেই স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হচ্ছেন; নিজের খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত প্রদান করে পেশাদারিত্বকে প্রশ্নে সম্মুখীন করছেন।

 

 

 

উপসচিব পদের বণ্টন নিয়ে বর্তমান কোটা সিস্টেম ও আদালতের রায় এবং পর্যবেক্ষণ: উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদগুলো বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ পদ; এগুলোকে সরকারি পদ বলা হয়। এই পদগুলো ২৬টি ক্যাডারের শিডিউল বা তফসিলভুক্ত পদ নয়। এই পদের ক্ষমতা, গুরুত্ব, স্বার্থ, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও নীতিনির্ধারণ, সরকার পচিালনায় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করেন।
৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ খ্রি. ১৭ জুলাই ১৯৮৯ খ্রি. তারিখের প্রজ্ঞাপন এসআরও ২৬১-আইন/৮৯/সম(বিধি-২)-এস,এস,পি-১/৮৯ তে সংশোধন করে ০৩নং অনুচ্ছেদে লেখা হয় "৩। বাংলাদেশ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ও উপ-সচিবরে পদগুলি সরকার বিভিন্ন ক্যাডারের এবং এক্স ক্যাডারের যোগ্য কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করতে পারবে।" আবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ খ্রি. তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৫৫.১৫..০২৮.১৩-৩৮০ স্মারকপত্রে বলা হয়, "উপসচিব হতে সচিব পর্যন্ত পদসমূহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পদ। সেইসব পদে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ পদোন্নতি পেয়ে থাকেন; অর্থাৎ এর মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।"

 

 

২০১০ সালের উচ্চ আদালতের যে রায় নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, উক্ত রায়ে কোথাও প্রশাসন ক্যাডারকে ৭৫% এবং অন্য ক্যাডারকে ২৫% প্রদানের রায়/আদেশ নাই। সেখানে আংশিক প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষে রায় প্রদান করা হয়। বৃহৎ পর্যবেক্ষণ লেখা হয়। উক্ত পর্যবেক্ষণকে রায় বলে প্রচার করা হচ্ছে যা ভুল। রায় এবং পর্যবেক্ষণ এক জিনিস নয়। এই বিষয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণকে মানসম্মত সেবা প্রদানের স্বার্থে সরকার পারিপাশ্বির্ক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে মেধার ভিত্তিতে সরকারের সিনিয়র সার্ভিসের পুল ঠিক করতে পারেন। সরকারের এই কাজে কোনোভাবেই কোন মামলার পর্যবেক্ষণ বাঁধা হয় না; সংস্কারের ক্ষেত্রে তো বাঁধা হয়'ই না। সরকার ইচ্ছে করলে ৫০% কোটা প্রশাসন ক্যাডার ও ৫০% কোটা অন্যান্য ক্যাডারকে অথবা ৩০% কোটা প্রশাসন ক্যাডার ও ৭০% কোটা অন্যান্য ক্যাডারকে কিংবা ১০০% কোটা প্রশাসন ক্যাডার ও ০০% কোটা অন্যান্য ক্যাডারকে অথবা ২০% কোটা প্রশাসন ক্যাডার ও ৮০% কোটা অন্যান্য ২৫ ক্যাডারকে দিতেই পারেন। এই বিষয়ে সরকারের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা রয়েছে। তবে মেধার ভিত্তিতে জনপ্রশাসন গড়তে হলে সরকারের এই সিনিয়র সার্ভিস পুলে কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে সকল মেধাবীর জন্য পথ খোলা রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা যেতে পারে। ১৬ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে কোটার জন্য শতশত মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলো পদোন্নতির ক্ষেত্রে আবারও সেই কোটা বহাল থাকা সমীচীন নয়।

 

 

 

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ উপ-সচিবের দায়িত্ব পালনে ক্যাপাবল কিনা? বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় মোট ২২টি মডিউলে। এই ২২টি মডিউল বিসিএস (প্রশাসন)সহ ২৬টি ক্যাডারের একই; প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় মডিউল ধরে ধরে। পরবর্তীতে যে সকল প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় সকল প্রশিক্ষণে সকল ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান হিস্যা আছে। সকল ক্যাডার নিজ নিজ প্রশাসন পরিচালনা করেন, পরিকল্পনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয়, নথি ব্যবস্থাপনা, বাজেটিং, বাজেটীয় নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, প্রকল্পের ডিপি তৈরি, প্রকল্প বাস্তবায়ন-পরিচালনা, শৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারের মিশন-ভিশন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো কাজে সমান অংশীজন হিসেবে কাজ করেন। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ টুলস ব্যবহারে প্রায় সকল ক্যাডার কর্মকর্তাই খুব কাছাকাছি মানের। উপ-সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সিনিয়র সার্ভিসের পদগুলোতে যে সকল কাজ হয় ঐ সকল কাজে সকল সার্ভিসের ক্যাডার অফিসার ক্যাপাবল। তবে অধিক দক্ষ, অধিক যোগ্য, অধিক অভিজ্ঞ মেধাবীদের নিয়োগ করার জন্য কোটা পদ্ধতি পরিহার করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হলে জনগণ তার সুফল পাবেন। আর ৫৬% কোটায় কম নম্বর পেয়ে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ঢালাওভাবে অতীতের মতো সিনিয়র সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়া হলে সেবার মান নিম্ন হবে, ভারসাম্যহীন জনপ্রশাসনের ক্ষমতার দাপট বৃদ্ধি পাবে তার ভোগান্তিও জনগণকেই ভোগ করতে হবে। উল্লেখ্য, ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা পারবেন না একটি বিষয় তা হলো- "আমিই একমাত্র মেধাবী, আমাকে ছাড়া সরকারের চলবে না, গদি থাকবে না, অন্যরা পারবেন না , আমার বিকল্প নাই, আমিই সব, আমার আরো চাই।" এই ধরনের বর্তা এতদিন সরকারকে দিতে পারেন নাই, হয়ত পারবেন না।

 

 

 

এখন আসি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার ও বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার সার্ভিসকে ক্যাডার সার্ভিসের বহির্ভূত করা হলে জনগণের সেবায় কী কী প্রভাব পড়বে? বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার সার্ভিসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা না থাকার পরও অনেক মেধাবী বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার সার্ভিসে আসেন মর্যাদার কারণে। ক্যাডার না থাকলে মর্যাদা থাকবে না, চাকুরির নিরাপত্তা থাকবে না, মেধাবীরা এই পেশায় আগ্রহ হারিয়ে অন্য পেশায় চলে যাবেন কিংবা বিদেশ পাড়ি জমাবে। অর্থাৎ মেধা পাচার হবে। বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৮০% উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর এবং কমপক্ষে ৬৫% উচ্চ শিক্ষায় পড়ুয়াদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাদের পরফমেন্সে শিক্ষা পরিবারের অভিভাবকগণ আজও চোখ বন্ধ করে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার দ্বারা পরিচালিত ও পাঠদানকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা করেন। মেধাবীরা এই পেশায় বিমুখ হলে এই ভরসার জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে; শিক্ষাখাত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বর্তমানে চাকুরিতে আছেন এই শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে ক্যাডার থাকায় চাকুরি করছেন। ক্যাডার থেকে তাদের বাদ দেওয়া হলে বড় অংশ স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যেতে পারেন। বর্তমানে দীর্ঘ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধাবী শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু; বিপিএসসি থেকে বের করে কমিশনের মাধ্যমে শর্টকাট পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে শিক্ষার গুণগত মান আরো নিম্ন হবে, দক্ষ শিক্ষক পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে বর্তমানে যে ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখা যাচ্ছে অন্যদের ক্যাডারে রেখে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ও বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে বের করে দেওয়া হলে আরো ভারসাম্যহীন হয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির সম্ভাবনা আছে।

 

 

বাংলাদেশ এডুকেশন সার্ভিস সৃষ্টি করা হলে কী সমস্যা? ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ খ্রি. দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুসারে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক প্রতিষ্ঠা হয়। এই দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুদকের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তারা আসীন আছেন। দুদক যতই কমিশন হোক না কেন দুদক কোনভাবেই বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের প্রভাবের বাহিরে যেতে পারেন নাই। একজন ইউএনও যদি দুদকের সহকারী পরিচালককে ফোন করে বলেন, "তুমি নাকি আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফাইল রেডি করছো? আসলে কী সত্য?" তখনই কিন্তু দুর্নীতি দমনের কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। কারণ ঐ সহকারী পরিচালক জানেন আজ হোক কাল হোক প্রশাসন ক্যাডারের ঐ কর্মকর্তা তার মহাপরিচালক কিংবা সচিব কিংবা কমিশনার অথবা চেয়ারম্যান হয়ে আসতে পারেন। এ কারণে দুদকের কাজের সুফল পাওয়া যায়নি এবং জনগণ প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একইভাবে জুডিশিয়াল সার্ভিসের উদাহরণ প্রযোজ্য। দীর্ঘ সংগ্রামের পরও জুডিশিয়াল সার্ভিসের উপর থেকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের প্রভাব যায় নাই, আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় নাই; তাদের মন্ত্রণালয়ে শতভাগ জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে নিয়োগ আজ পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই। পদে পদে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার। একইভাবে যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের হাতে রেখে বাংলাদেশ এডুকেশন সার্ভিস তৈরি করা হয় তাহলে বৈষম্য ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন থেকে শুরু করে শিক্ষায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার জায়গা শূন্যেতে নেমে আসবে। ফলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে কিন্তু সবকিছু প্রশাসন ক্যাডার কেন্দ্রিক হয়ে দেশ ভারসাম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের নিকট শিক্ষার প্রশাসন, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের নিকট স্বাস্থ্যের প্রশাসন, বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের নিকট কৃষির প্রশাসন, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের নিকট পুলিশের প্রশাসন বুঝে দেওয়া। অর্থাৎ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় (ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার) প্রতিষ্ঠা করে যিনি যে পেশায় অভিজ্ঞ, দক্ষ, বিশেষায়িত তাকে সেই পেশায় কাজে লাগানো উচিত। মেধা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বিবেচনা করে জনগণ কেন্দ্রিক জনবান্ধব প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কার প্রয়োজন। আর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আরো ক্ষমতাবান করতে চাইলে ভিন্ন কথা; সেখানে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।

 

 

সতর্কতা: অতীতে দেখেছি, বছর বছর ডিসি সম্মেলন হয় আর দাবির তালিকা দাখিল হয়। মজার বিষয় দাবিগুলো ভিজিবিলিটি যাচিাইবাছাই না করে গবেষণা না করে মেনেও নেওয়া হয়! বিভিন্ন সময়ে পট পরিবর্তন হয়েছে আর বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে করতে বর্তমানে ভারসাম্যহীন একটি অবস্থায় পৌঁছেছে, যা রাষ্ট্রের জনগণের মানসম্মত সেবা প্রদান ও সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্তরায়। ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার তাদের ভারসাম্যহীন ক্ষমতাকে আরো ভারসাম্যহীন করার জন্য নজীরবিহনি শোডাউন থেকে শুরু করে হুমকি ধামকি এমন কী ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে হয়রানি করতে দ্বিধা করছেন না। এইবারও যদি সরকারের সরকারি বিশেষ পদগুলো তারা এককভাবে ১০০% কোটা নিয়ে নেন তাহলে লাট সাহেব আরো বড় জমিদারে পরিণত হবেন; তারা জনগণ থেকে আরো ধরাছোঁয়ার বাহিতে চলে যাবেন এতে কোন সন্দেহ নাই। রাষ্ট্রের জনগণের সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে সকল ক্যাডারের মধ্যে দায়িত্ব কর্তব্য এবং ক্ষমতার ভারসাম্য অতীব জরুরি।

 

 

করণীয়: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের পদ আপগ্রেডেশন, নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান করে আর্থিক ও অনার্থিক সকল বৈষম্য দূর করতে হবে, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে অন্য ক্যাডারগুলোর স্থান স্পষ্ট করতে হবে, সচিবালয় থেকে অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সকল ক্যাডারের দপ্তর ও পদবিণ্যাস এবং অর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে, বদলিপদায়ন টার্নওভার বৃদ্ধি করতে হবে, ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন করে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন, বিভিন্ন ক্যাডারের তফশিল ভুক্ত পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পার্শ্বপ্রবেশ বন্ধ করে স্ব-স্ব ক্যাডারকে পদগুলো ফিরিয়ে দেওয়াসহ, প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য হ্রাস করে জনস্বার্থে জনগণ কেন্দ্রিক সেবা প্রদানের মতো কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে অংশীজনদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করতে হবে এবং কল্যাণকর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ অতিসাধারণ থেকে যাবেন এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাকুরিতে থাকাকালীন লাটসাহেব এবং অবসরের পর এমপি-মন্ত্রী হতেই থাকবেন। আর এগুলো সুশাসনের অন্যতম বড় বাঁধা হয়ে কাজ করবে যা প্রত্যাশিত নয়। তারপরেও আমি বিশ্বাস করি এবার অন্তত: জনগণকে প্রাধান্য দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার করা হবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনায়ন করা হবে। যাতে করে ভবিষ্যৎ এ কেউ জনপ্রশাসনকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে যুগের পর যুগ অধিষ্ঠিত করতে না পারেন। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে এবং সমৃদ্ধিতে জনবান্ধব জনপ্রশাসনের বিকল্প নাই।

 লেখক: প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান), রামগড় সরকারি কলেজ, খাগড়াছড়ি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশীয় ফ্রিজ এসি-মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম
বাজারে চালের ঘাটতি নেই, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা
‘শয়তানও মনে হয় শেখ হাসিনার কাছে হার মানবে’
আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ , জানাল আবহাওয়া অফিস
সীমান্ত পেরিয়ে মৈত্রী ! দিল্লি কি অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে?
আরও

আরও পড়ুন

আরোহী যুবক নিহত

আরোহী যুবক নিহত

দেশীয় ফ্রিজ এসি-মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

দেশীয় ফ্রিজ এসি-মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

বাজারে চালের ঘাটতি নেই, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাজারে চালের ঘাটতি নেই, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

এবার অস্ট্রেলিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৩

এবার অস্ট্রেলিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৩

‘শয়তানও মনে হয় শেখ হাসিনার কাছে হার মানবে’

‘শয়তানও মনে হয় শেখ হাসিনার কাছে হার মানবে’

আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ , জানাল আবহাওয়া অফিস

আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ , জানাল আবহাওয়া অফিস

ঘুষের মামলায় অধ্যক্ষ মুস্তাফিজ ও শিক্ষানুরাগী মান্নান কারাগারে

ঘুষের মামলায় অধ্যক্ষ মুস্তাফিজ ও শিক্ষানুরাগী মান্নান কারাগারে

আসামিরা বিদেশে, জামিন নিলো কারা?

আসামিরা বিদেশে, জামিন নিলো কারা?

আ'লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ত্যাগের নয় ভোগের বস্তু মনে করেছিল: আল্লামা মামুনুল হক

আ'লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ত্যাগের নয় ভোগের বস্তু মনে করেছিল: আল্লামা মামুনুল হক

কিশোরগঞ্জে হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ

কিশোরগঞ্জে হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট

কানাডায় নিখোঁজ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

কানাডায় নিখোঁজ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ

সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ

অবতরণের পর বিমানে মিল ২ লাশ

অবতরণের পর বিমানে মিল ২ লাশ

গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে, সময়সীমাহীন ঘোষণা কাতারের

গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে, সময়সীমাহীন ঘোষণা কাতারের

বাহরাইনের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বাংলাদে‌শি দূতের সাক্ষাৎ

বাহরাইনের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বাংলাদে‌শি দূতের সাক্ষাৎ

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া: বাংলা‌দে‌শি জাতীয়তাবা‌দের প্রতীক

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া: বাংলা‌দে‌শি জাতীয়তাবা‌দের প্রতীক

৭০ বছর ধরে হাদিসের দরস দানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শায়খুল হাদিস আল্লামা মুকাদ্দাস আলীর ইন্তেকাল

৭০ বছর ধরে হাদিসের দরস দানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শায়খুল হাদিস আল্লামা মুকাদ্দাস আলীর ইন্তেকাল

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত

মোংলায় ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ৬ চোরাচালানকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

মোংলায় ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ৬ চোরাচালানকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড