বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ তিন বিভাগের যে বিভাগটি সরাসরি জনগণের সেবার সাথে ওঁতোপোতোভাবে জড়িত সেই শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ নিয়ে বর্তমানে সারাদেশে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো- বৈষম্য। বৈষম্য নিয়ে হাজার মানুষের রক্তে রক্তাক্ত রাজপথ স্বাভাবিক হতে, না হতেই বৈষম্যের প্রাতিষ্ঠানিক নগ্নরূপ পুনরায় বের হয়ে আসছে। জনগণের সেবার জন্য যারা নিয়োজিত সেই সিভিল সার্ভিসের এই অনগ্রসরতার কারণ কী?
কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাবে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১৪টি সাধারণ ক্যাডার এবং ১২টি পেশাগত ক্যাডারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০,০০০ জন। ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৭০৭৬ জন, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩২,০০০ জন, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ১৫,৫০০ জন, বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩,২০০ জন, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৩,১০০ জন, বিসিএস (পশু সম্পদ) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ২,০৯৩ জন, এবং বিসিএস (কর) ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ১৫৩৩ জন; অন্যান্য ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এই ক্যাডার অফিসারগণের মধ্যে প্রায় সকল মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান প্রশাসন ক্যাডারের সচিবগণ এবং নির্বাহী প্রধান রাজনৈতিক দলের মন্ত্রীগণ। তাদের নেতৃত্বে বৈষম্যের ডালপালা যেভাবে ছড়িয়েছে তার পূর্ণ ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। তবুও যে-সকল বৈষম্য বেশি চোখে পড়ছে এবং জনগণের সেবার মান দিনদিন নিম্নগামী হচ্ছে, সেগুলো হলো-
প্রথমত: সচিবগণের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতার প্রায় শতভাগ রক্ষিত থাকায় অন্যদের প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ প্রশাসনিক ক্ষমতায় বৈষম্য আকাশ-পাতাল।
দ্বিতীয়ত: সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সচিবগণ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হওয়ায় আর্থিক ক্ষমতা শতভাগ তার; সরকারি কাজ দ্রুত করার স্বার্থে আর্থিক ক্ষমতা কিছুটা বণ্টন করেন। কিন্তু অন্য ক্যাডারের আর্থিক ক্ষমতা শূন্য হওয়ায় অবণ্টিত ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ নাই। সরকারি কাজও হচ্ছে ধীরগতিতে।
তৃতীয়ত: প্রশাসন ক্যাডারের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যারিয়ার প্লানিং নিয়ে কাজ করেন। তাদের সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়; সেই পরিকল্পনা শুধু তাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে। সেখানে সাধারণ জনগণের ঠাঁই নাই। কত বছর পর কোন কর্মকর্তা কোন পদে পদায়িত হবেন, পদোন্নতি পাবেন তা নির্ধারিত থাকে, কিন্তু; বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তার ছাত্র সচিব গ্রেড-১ প্রাপ্ত হলেও শিক্ষক চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপক হতে পারেন! অন্য ক্যাডারেরও একই অবস্থা!
চতুর্থত: পদোন্নতির বৈষম্য এতটাই আপত্তিকর যে, ২৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার ষষ্ঠ গ্রেডের সিনিয়র সহকারী সচিব এবং পঞ্চম গ্রেডের উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২৯/৩০ ব্যাচের অনেকে আজও যোগদানের ৯ম গ্রেডের প্রভাষক বা মেডিকেল অফিসার! শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২০/২৫ বছরে একটি পদোন্নতি হতে পারে, নাও হতে পারে; দ্বিতীয় পদোন্নতি স্বপ্ন।
পঞ্চমত: শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন যোগদানের সময় ২৩,১০০ টাকা মূল বেতনে মোট ৩৫,০০৫ টাকা প্রাপ্ত হন। কিন্তু তার ঊর্ধ্বতন গ্রেড-১ বা সচিব মহোদয় মাসিক ৭৮ হাজার টাকা মূল বেতনে বাড়ি ভাড়া ৩৯ হাজার, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, শিক্ষা ভাতা ১ হাজার, মোবাইল ভাতা ১,৫০০ টাকা, টেলিফোন ভাতা নগদায়ন ২,৮০০ টাকা, ইন্টারনেট ৩,৮০০ টাকা, আপ্যায়ন ২ হাজার, ইন্টারনেট মডেম ৫ হাজার, বাবুর্চি ভাতা ১৬ হাজার, নিরাপত্তা ভাতা ১৬ হাজার, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ৫০ হাজার মোট ২,১৬,০০০ টাকা এবং ৩০ লক্ষ টাকার গাড়ি ক্রয় ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। আবার গ্রেড-২০ এ কর্মরত একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে ১৫,৮৫০ টাকা প্রাপ্ত হন। অথচ তাদের একই বাজার থেকে বাজার করে একই অফিসে একই সামাজিকতা বজায়ে রেখে চাকুরি করতে হয়; তারাও মানষ!
ষষ্ঠত: নবম পে-স্কেলে পেশাগত ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা ক্যাডার। পূর্বের ন্যায় সিলেকশন গ্রেড থাকলে গ্রেড-১, গ্রেড-২ এবং গ্রেড-৩'তে পদায়নের সুযোগ ছিল, কিন্তু; বর্তমানে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় শিক্ষা ক্যাডার পদোন্নতি যেমন বঞ্চিত তেমনি গ্রেড-১ প্রাপ্ত হওয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
সপ্তমত: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ প্রথমে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই প্রথম পদোন্নতি ষষ্ঠ গ্রেডের সিনিয়র সহকারী সচিব, দ্বিতীয় পদোন্নতিতে পঞ্চম গ্রেডের উপসচিব, তৃতীয় পদোন্নতিতে তৃতীয় গ্রেডের যুগ্মসচিব হন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ দ্বিতীয় পদোন্নতিতে পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপক এবং তৃতীয় পদোন্নতিতে চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপক প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব কিংবা সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কোন পদক্রম শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিসে না রাখায় তাদের ৩য়, ২য় এবং ১ম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
অষ্টমত: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হাতে আর্থিক ক্ষমতা থাকায় তারা প্রতিযোগিতা করে সরকারি দপ্তরগুলো ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে অফিস কক্ষ স্বর্গ তৈরি করায় তাদের পরিবেশ আর অন্যান্য ক্যাডারের কর্ম পরিবেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ দেখা যাচ্ছে। আর এই ইন্টেরিয়রের কারণে সচিবালয়ের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে গেছে; ক্ষতির পরিমাণ সকলেই জেনেছি।
নবমত: ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের ৩৩% কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পর্যায়ে কর্মরত এবং অন্য ক্যাডারের ৬৭% কর্মকর্তা থাকলেও বাংলাদেশের মোট যুগ্মসচিবের ৭৫% এর বেশি প্রশাসন ক্যাডারের যার ৫৬% কোটায় নিয়োগ প্রাপ্ত যারা অন্যান্য ক্যাডারের মেধায় নিয়োগ প্রাপ্তদের চেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত হয়ে বিসিএস সদস্য। অথচ তাদের বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৭০৭৬ জন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এই কারণে তারা প্রেষণ-লিয়েন সুবিধা গ্রহণ করে নিজ পদের বাহিরে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রেষণ লিয়েনে অন্য ক্যাডারকে তেমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
দশমত: বিসিএস কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রায় শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের হাতে থাকায় অন্য ক্যাডার পদায়নের ক্ষেত্রেও বঞ্চিত হচ্ছেন; কারণ জনসংশ্লিষ্ট ডেস্কেগুলো প্রশাসন তাদের কর্মকর্তাকে পদায়ন করার পর পদ অবশিষ্ট থাকলে অন্যরা পদায়ন পান; কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন প্রদান করেন।
একাদশতম: বাংলাদেশে জুডিশিয়াল সার্ভিস থাকলেও সামান্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রশাসন ক্যাডার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করেন, কিন্তু; স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সকল ক্যাডার এই ভূমিকা পালনে সক্ষম হলেও তাদের বঞ্চিত করায় কাজে গতি নাই; সাধারণ জনগণ বঞ্চিত।
দ্বাদশতম: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দুই বছর করে (কিছুটা কমবেশি হয়) একটি কর্মস্থলে কাজ করেন; নিয়মিত বদলি সুবিধা প্রাপ্ত হন। কিন্তু; অন্যান্যদের বদলি পদায়নে দেখা যায় একজন কর্মকর্তা চাকুরির শুরু থেকে শেষ অবধি একটি কর্মস্থলে অবহেলিত থাকেন। অথচ, বদলি পদায়নের টার্নওভার হার বৃদ্ধি পেলে কাজের মান বৃদ্ধি পায়।
তেয়োদশতম: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাগণ উপসচিব হলেই ৩০ লক্ষ টাকার ঋণ সুবিধা পান, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) প্রাপ্ত হন। তারা কোটি টাকা গৃহ ঋণ প্রাপ্ত হন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ঊর্ধ্বতণরা কোটি টাকার গাড়ি সুবিধা ও বাড়ি সুবিধাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারে এই সুযোগ নাই; সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করে তাদের বঞ্চিত করা হয়।
চতুর্দশতম: প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসের পদক্রম সহকারী কমিশনার থেকে বিভাগীয় কমিশনার/সদস্য, ভূমি প্রশাসন বোর্ড পর্যন্ত উপজেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু; অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের ন্যায় শিক্ষায় উপজেলা, জেলা এবং বিভাগ পর্যন্ত অর্গানোগ্রাম নাই; জনগণের সেবার জন্য কেন্দ্রে দৌড়াতে হয়, ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। তবুও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পূর্ণ পদক্রম মিসিং রাখা হয়েছে। এছাড়াও অভ্যান্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বৈষম্য, উচ্চতর শিক্ষা সুযোগের বৈষম্য, অর্জিত ছুটির বৈষম্য ইত্যাদি সীমাহীন বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১; কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস, ১৯৮০ এবং সিনিয়রিটি রুলস, ১৯৮৩ মোতাবেক সকল ক্যাডার একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রিত হলেও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিস প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে আর্থিক ও অনার্থিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তারা নিজেদের মেধাবী দাবি করে প্রতি বছর ক্ষমতার তালিকা বৃদ্ধি করছেন। আসলে তারা কতটা মেধাবী? ৩৩তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে মোট ২৯৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ লাভ করেন, এর মধ্যে ১৩৫ জন মেধা কোটায় এবং ১৬১ জন বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ লাভ করেন। এই ১৬১ জনের চেয়ে বেশি নম্বর প্রাপ্ত হয়ে অসংখ্য কর্মকর্তা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার পান নাই, অন্যান্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। বিসিএস ২৫ ব্যাচের মেধাতালিকার শেষ ৩০ জন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন কোটার কারণে। বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরেও সীমাহীন বৈষম্য চলমান পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাঁদের ভাষায় বাংলাদেশে বিগত ১৫ বছরে একমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত! এই সময়ে অন্য কোন ক্যাডার বঞ্চিত হয় নাই; সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হয় নাই! তাদের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার সময়ের বোঝাপড়ার বিভিন্ন বাঁকে বৈষম্যের ধারাবাহিকতায় সরকারের বিশেষ পদ উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদে ৭৫% কোটায় প্রশাসন ক্যাডার ভোগ করছেন। এই কোটা ১০০% বৃদ্ধি করার অভিপ্রায় প্রশাসন ক্যাডারের সকলের। অথচ এই বিশেষ পদ উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব এর উপর সকল ক্যাডারের মেধাবীদের সমান অধিকার। মূলত: মেধার মূল্যায়ন না করার কারণে সিভিল সার্ভিসের মোট ৬০,০০০ (প্রায়) কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের কমপক্ষে ৫২,৯২৪ জন কর্মকর্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাডার অফিসার হিসেবে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে অংশীজন হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ডিসি ৩০২ কমিটির সভাপতি এবং ইউএনও ১৬৭ কমিটির সভাপতি হওয়ায় ব্যস্ততা, কাজের আধিক্যে এবং মেধা শূন্যতার কারণে কাজের মান খুবই নিম্ন। যা গবেষণার তথ্য থেকে পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্টাডি বলছে- বিশ্বের সবচেয়ে এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম হলো সুইজারল্যান্ড; এবং এফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম হিসেবে বাংলাদেশ ৮৯টি দেশের মধ্যে ৭১তম! অর্থাৎ তাহলে আমরা আনঅফিসিয়েন্ট ব্যুরোক্রেটিক টিম কি না? যুক্তরাজ্যের আরেকটি গবেষণা বলছে- পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন্ডেক্সের তালিকায় বাংলাদেশ ১১৮টি দেশের মধ্যে ৯৩তম! এই গবেষণায় পাবলিক পলিসিতেও শোচনীয় অবস্থা বাংলাদেশের; ১২০টি দেশের মধ্যে আমরা ১১৩তম। পাবলিক লিডারশিপের ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১২০টি দেশের মধ্যে ৯৩তম। বিশ্বাস ও মর্যাদায় ১২০টি দেশের মধ্যে আমরা ১১২তম। ব্যুরোক্রেটিক সিস্টেমে ১২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ৯৩তম; আইন ও পলিসি মেকিং এ আমরা ১১৩টি দেশের মধ্যে ৯৮তম; এই ইন্ডেক্স মাঠপর্যায়ে তথ্য আরো শোচনীয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মকর্তাদের আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে। পরিসংখ্যানে এই যখন অবস্থা তখনই সেবার মান উচ্চ মানের না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। পূর্বে দেখা গেছে, যত সংস্কার কমিশন কাজ করেছেন তারা জনগণকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসনকে গুরুত্ব প্রদান করে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে। যে সকল সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হয় নাই।
সুপারিশ: ‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’ বাস্তবায়ন করে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সাথে মিল রেখে অন্যান্য ক্যাডারের পদ আপগ্রেডেশন, নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান করে আর্থিক ও অনার্থিক সকল বৈষম্য দূর করতে হবে, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে অন্য ক্যাডারগুলোর স্থান স্পষ্ট করতে হবে, সচিবালয় থেকে অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সকল ক্যাডারের দপ্তর ও পদবিন্যাস এবং অর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে, বদলি পদায়ন টার্নওভার বৃদ্ধি করতে হবে, ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন করে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন, বিভিন্ন ক্যাডারের তফশিল ভুক্ত পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পার্শ্বপ্রবেশ বন্ধ করে স্ব-স্ব ক্যাডারকে পদগুলো ফিরিয়ে দেওয়াসহ, প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য হ্রাস করে জনস্বার্থে জনগণ কেন্দ্রিক সেবা প্রদানের মতো কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে অংশীজনদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করতে হবে এবং কল্যাণকর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং কর্মকর্তাদের লাটসাহেব কিংবা প্রভুরূপী আচরণ-দুর্ব্যবহার ত্যাগ করে জনগণের সেবক হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। অন্যথায় যা হচ্ছে তা সুশাসনের সকল বৈশিষ্ট্যের বিপরীত এবং অন্যতম বড় বাঁধা হয়ে কাজ করবে যা প্রত্যাশিত নয়। পূর্বে যাই হোক না কেন, বর্তমানে জনবান্ধব জনপ্রশাসন গড়তে হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে এবং সমৃদ্ধিতে জনবান্ধব জনপ্রশাসনের বিকল্প নাই।
লেখক: প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান), রামগড় সরকারি কলেজ, খাগড়াছড়ি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসিম : সিলেটে কাইয়ুম চৌধুরী
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ : সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধুর মৃত্যু
কর্মীদের বীমা সুরক্ষা প্রদানে ঢাকা ব্যাংক ও মেটলাইফের চুক্তি স্বাক্ষর
পাঠ্যবইয়ে নাম যুক্ত হওয়ায় আমার চেয়ে পরিবার বেশি খুশি: নিগার
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন- ২০২৫ অনুষ্ঠিত
শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আভাস, বাড়বে রাত-দিনের তাপমাত্রা
বগুড়ায় শিবিরের সাবেক কর্মী সাথী ও সদস্যদের মিলন মেলায় রাফিকুল ইসলাম খান
ক্যাম্পাসভিত্তিক জুলাইয়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখার আহ্বান প্রেস সচিবের
শিবালয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর পদ্মায় ভেসে উঠলো বারেক মেম্বরের লাশ
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: যাদের উপর থাকবে নজর
এবি পার্টির কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি
হ্যানয় গ্র্যান্ড মাস্টার্স-২ দাবায় ফাহাদের হার
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা : লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
মানিকগঞ্জে নিখোঁজ সাবেক ইউপি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
পাঠ্যবই সংশোধনের আহ্বান বিএনপির
৭১'র পরাজিত শক্তি ২৪'র আন্দোলনকে ব্যবহার করে ৭১'র গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়: নাছির
সীমান্তে অস্থিতিশলীতাই প্রমান করে ভারত কোন দিনই আমাদের বন্ধু ছিলো না : পীর সাহেব চরমোনাই
নাইজেরিয়ায় অতর্কিত বন্দুক হামলা, সরকারি বাহিনীর ২১ সদস্য নিহত