শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড
১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৫ পিএম
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন কালের কণ্ঠ পত্রিকার ১৫ বছর পূর্তিতে শূভেচ্ছা জানিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ফ্যাসিবাদের দোসর মিডিয়াটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তোপের মুখে পড়েন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান।
একই বিতর্কে জড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা। এনিয়ে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কালের কণ্ঠ বিতর্কে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী ছিল সবচেয়ে নিপীড়িত ও নির্যাতিত রাজনৈতিক দল। জামায়াতের সিনিয়র নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে। আমার দেশ পত্রিকায় সেই স্কাইপি কেলেঙ্কারি প্রকাশ করা হয়। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সুখরঞ্জন বলিকে দিয়ে জোর করে স্বাক্ষী দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল- ইত্যাদি নানা ঘটনায় প্রমাণ করে বিচারের নামে আওয়ামী লীগ কি ধরনের প্রহসন মঞ্চস্থ করেছিল। তৎকালীন জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দড়ির সামনে দাঁড়িয়েও আপোষ না করার যে মনোভাব ছিল সেই দৃঢ়চেতা মনোভাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব বসুন্ধরার পকেটে ঢুকে গেছে ৫ আগস্টের পরপরেই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাভাবিকভাবে হাসিনার অন্যতম দোসর ও মিডিয়া সহযোগী আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহআলমের মিডিয়া গ্রুপটি ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ভাঙচুরের শিকার হয়েছিল। তখন তাদের শান্তনা দেওয়ার জন্য প্রথমেই হাজির হয়েছিলেন জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান।
ভূমিদস্যু বসুন্ধরার সাথে জামায়াতের এই যে সখ্যতা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরইমধ্যে জামায়াতের আমিরের একটি ছবি সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে তার পেছনে বসুন্ধরা এয়ারওয়েজের একটা লোগো দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই ভুলবশত দাবি করে বসেন, তিনি নাকি বসুন্ধরার হেলিকপ্টারে চড়েছেন বিনামূল্যে।
তখন জামায়াত আমিরের ব্যবহার করা হেলিকপ্টারটি যে বসুন্ধরার নয় এই ব্যাখ্যাটি জামায়াতকে দিতে হয়েছিল জাতির সামনে। ধারণা করা হয়েছিল, সাধারণ মানুষ যেহেতু বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না, এই ঘটনার পর বসুন্ধরার সাথে জামায়াত আর কোন সংশ্লিষ্টতা রাখবে না। ওই সমালোচনায়ও জামায়াতের টনক নড়ে নাই বরং বসুন্ধরার সাথে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে মন্তব্য করে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
তারা বলেন, এই গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায় বসুন্ধরা মালিকানাধীন কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ১৫ বছর পূর্তিতে তাদের শূভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ডাঃ শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য কালের কণ্ঠের ভুইসী প্রশংসা করেন।
ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কালের কণ্ঠের সেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান শ্রোদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এই গণআকাঙক্ষা সফল করার জন্য লক্ষ-কোটি মানুষের এই আন্দোলনের পাশে কালের কণ্ঠ ছিল।
ডাঃ শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পাঠক সমাদৃত এবং ডিজিটাল ভারসনের শ্রোতা-দর্শকদের কাছে প্রিয় একটা পত্রিকা। কালের কণ্ঠ বলা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এদেশের মানুষের জনগণের কল্যাণে এবং তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে।
শিবির সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, কালের কণ্ঠ বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে কাভারেজ ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তারা দিয়েছে নিঃসন্দেহে সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। জামায়াতের সমালোচনা করে আলোচিত সাংবাদিক নাজমুস সাকিব বলেন, ব্যক্তিগতভাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাথে আমার তেমন একটা যোগাযোগ না থাকলেও মিডিয়াতে কাজ করার সুবাদে মীর কাশেম আলীকে আমি চিনতাম। তার পরিচালিত দিগন্ত টিভি ও ইসলামী ব্যাংক প্রমাণ করেছে ব্যবসায়ী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি কতটা সফল।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্যতম একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করেছিলেন। কারাগারে যখন তাকে কন্ডেম সেলে ঢোকানো হয়েছিল তিনি সেখানে অত্যন্ত সাধারণভাবে সাধারণ কয়েদীদের সাথে থাকতেন। কোথাও ভিআইপি সেবা তিনি নেননি।
নাজমুস সাকিব বলেন, কিন্তু আজ প্রশ্ন জেগেছে, মীর কাশেম আলী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পর জামায়াতের এই প্রজন্মের যারা তাদের উত্তরসুরি হিসেবে সামনে এসেছেন তারা কতটা আপোষকামি। তাদের আপোষকামিতা দেখে জামায়াতের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি জামায়াতকে নিকট ইতিহাস স্মরণ করে দিয়ে বলেন, মাত্র ৫ মাস আগের ইতিহাসকে বিকৃত করে এই শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এই কালের কণ্ঠ কী ভূমিকা রেখেছিল সেটা কেউ ভুলে নাই। হাসিনার পতনের ৫দিন আগেও পত্রিকাটি জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সংবাদ উৎসাহের সাথে প্রথম পাতায় ছাপায়। জামায়াত কি এই ঘটনা ভুলে গিয়েছে। মুগ্ধের মৃত্যুর দায় শিবির ও ছাত্রদলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল এই কালের কণ্ঠ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেপথ্যে তারা জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ ৫০ নেতাকে দায়ী করে প্রথম পাতায় লিড নিউজ প্রকাশ করে। কিছু ধান্দার জন্য হলুদ সাংবাদিকতার দিকপাল বসুন্ধরার মালিকানাধীন পত্রিকাটির প্রশংসা করলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় এসব নেতা। তাদেরই আরেকট পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন পিনাকী ভট্টাচার্য, টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিবকে বেপরোয়া শীর্ষ সাইবার অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করে বড় করে সংবাদ প্রকাশ করে।
ফেসবুকে সাদিক খান নামে একজন লিখেছেন, শফিক রেহমান যাইয়া বসুন্ধরা গ্রুপের কেক খাইয়া বসুন্ধরারে আদর করে দিয়ে আসলো। জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানের সাথেও শুনেছি আজকাল বসুন্ধরার সম্পর্ক খুব ভালো। আজকে শিবির সেক্রেটারি বললেন, বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা কালের কন্ঠ নাকি আন্দোলনের পক্ষে ছিলো। (অথচ এই পত্রিকা শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে ৪ পেইজের একটা ক্রোড়পত্র পর্যন্ত বের করেছিলো)। রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র ....দের মতো হবে, এইটা স্বাভাবিক। এটাই এক্সপেক্টেড। বাট, নিজের ভাইয়ের রক্ত যাদের হাতে, তাদের ....... এই ...পনা আপনি আর কোন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাবেন না। এদের জন্য থুথু ফেলতেও ঘেন্না লাগে।
এসকে ওমর শরিফ লিখেছেন, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমান, বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান-সহ বিভিন্ন দলের বিভিন্ন বয়সের বহু সংখ্যক নেতা জুলাই অভ্যুত্থানে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন কালের কণ্ঠ পত্রিকার ন্যক্কারজনক ভূমিকার ব্যাপারে যেভাবে মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা অত্যন্ত গর্হিত অন্যায়।
যে দেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতা খুব সহজেই নিজেদের শত্রু-মিত্র চিনতে পারেন, সেখানে তথাকথিত এই নেতারা কিভাবে জনগণের চোখে ধুলা দিবেন!বরং এই বিক্রিত ও বিকৃত বক্তব্যদাতারাই নেতৃত্ব থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন।ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতা গত জুলাইতেই খুব সহজ ভাষায় রাষ্ট্রের ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন:
"লাখো শহীদের রক্তে কেনা
দেশটা কারো বাপের না!"
আবু সাঈদ-ওয়াসিম-শান্ত-মুগ্ধ-ফাইয়া
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বৈঠক
নিরাপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তির দাবি করলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা আবু হানিফ
সিলেটের টানা জয়ে উচ্ছ্বসিত স্বাগতিক দর্শকরা
সংবিধানে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ থাকতে হবে - সারজিস আলম
মুরাদনগরে শীতার্ত মানুষের মাঝে পীরসাহেব চরমোনাই'র পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ
লিটনকে সেরা ছন্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতে চাই: প্রধান নির্বাচক
মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিতরণ করলো ১ লক্ষ কেজি চাল
লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা
সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশ
উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস
২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১