রিকশায় বিশৃঙ্খল ঢাকা
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
সারা শহরে কত সংখ্যক রিকশা চলাচল করছে
সে হিসাব এখন আর নেই সিটি
করপোরেশনের কাছে, অনুমতি না নিয়েই
রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়
রাজধানী ঢাকার সর্বত্র রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিনই আসছে ঢাকার আশপাশ এলাকা থেকে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে তীব্র যানজট হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসী। সারা শহরে কত সংখ্যক বিকশা চলাচল করছে সে হিসাব এখন আর নেই সিটি করপোরেশনের কাছে। কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়েই নিজেরাই রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি শহরের যানজট সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়াই চলাচলকারী এই যানবাহনগুলো প্যাডেল রিকশা চালকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও তারা যুক্তি দিচ্ছেন। এছাড়াও বাড়ছে দুর্ঘটনা।
রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কুড়িল, ভাটারা, জুরাইন, রামপুরা, বনশ্রী, মুগদা, বাসাবো, মিরপুর, গাবতলি, মোহাম্মদপুর এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা। এছাড়া অন্য এলাকাগুলোতেও রয়েছে এসব রিকশার দাপট। তবে এসব এলাকায় কত সংখ্যক রিকশা রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পায়েচালিত রিকশার গ্যারেজেই দেখা মিলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। সাধারণ রিকশা মালিকরা বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতি। ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে আয় প্রায় তিন গুণ।
নগরবাসী বলছেন, যানজটের ওপর দৃশ্যমান প্রভাব সত্তে¡ও রিকশার সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বর্তমানে ঢাকার ১০ শতাংশ বাসিন্দা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করেন, ২৫ শতাংশ গণপরিবহন, ৫ শতাংশ অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ব্যবহার করেন। কিন্তু অটোরিকশার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে যানজট বেড়েছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত গতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অনেক অটোরিকশা চালকের অভিজ্ঞতাও নেই, যারা সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও বিপদে ফেলছে। যদিও রিকশা পরিবেশবান্ধব এবং কোনো ক্ষতিকর নিঃসরণ করে না, কিন্তু এগুলোর ধীর গতি ও ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ঢাকার যানজট বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখছে।
জানা যায়, রিকশার মালিকানা একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় কিছুলোক দ্রæতই রিকশা তৈরি করে চালকদের হাতে তুলে দেন। একটি নতুন বা মেরামত করা রিকশার দৈনিক জমা দিতে হয় ২০০ টাকা। পাঁচটি রিকশার জন্য এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ছয় মাসের মধ্যে লাভবান হতে পারেন বিনিয়োগকারী। ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রিকশার নম্বর প্লেট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও এটি থামেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জারি করা আরেকটি নির্দেশনায় এ ধরনের রিকশা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ঢিলেঢালা আইন প্রয়োগের কারণে ঢাকার সড়কে এসব বাহনের লাগামহীন বৃদ্ধি ঘটছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নামে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তিন দশক আগে প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ, যানজটের জন্য এসব রিকশাই ভ‚মিকা রাখে। ঢাকায় অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯টি, যার মধ্যে ডিএনসিসির ৩০ হাজার ১৬২টি এবং ডিএসসিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ২১৭টি। কিন্তু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় ঢাকায় প্যাডেল রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ নিবন্ধিত রিকশা। রাজনীতিবিদ, প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণে রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। এই গোষ্ঠীগুলো রিকশা খাতের মুনাফা এবং সরকারি রাজস্বে এর ন্য‚নতম অবদান বিবেচনা করে অবৈধভাবে রিকশা পরিচালনার সুরক্ষা এবং সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এক প্যাডেল রিকশাচালক বলেন, আমরা যে অর্থ উপার্জন করি, তার বেশিরভাগই মালিকদের দিতে হয়। প্রতিদিনের সঞ্চয়, রাস্তার খরচ এবং যেকোনো ক্ষতির জন্য অর্থ দিয়ে থাকি। একটি রিকশা হারিয়ে গেলে কিস্তিতে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রিকশার মালিকানা ব্যয়বহুল এবং এলাকার উপর নির্ভর করে। আরেক রিকশাচালক বলেন, এখন সবকিছুর দাম বেশি, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পক্ষে এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. শামছুল হক বলেন, জনবহুল এই নগরীতে পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকার কারণেই অবৈধ রিকশা বেড়েছে। রিকশার কারণে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে, যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রিকশা চলাচলের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ার নন্দীগ্রামে তারুণ্যের ফুটবল প্রতিযোগিতার উৎসব
দেশে অবস্থানরত অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের আবারও সতর্ক করল সরকার
কালীগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞান মেলার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী
বাউফলে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়কের বহিষ্কার দাবি
স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর জানালেন জয়
খালেদা জিয়া অনেকটা ভালো আছেন : মির্জা ফখরুল
সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ হবেনা- কমিশন প্রধান
সিংগাইরে স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
মালি আছে, বাগান নেই
পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ
নতুন খেলোয়াড় চান গুয়ার্দিওলা
এস আলমের ৬৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, জব্দ ১৬ সম্পদ
সিলেটসহ দেশের পাথর ও বালু মহাল নিয়ে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
দৌলতপুরে নগদের মার্কেটিং অফিসারকে কুপিয়ে জখম
গোলের সুযোগ নষ্ট, হাভার্টজের পরিবারকে হত্যার হুমকি
ইসলামী আন্দোলনের আয়োজনে ভোলা জেলার উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
প্লট দুর্নীতি : শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা
নেছারাবাদে গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষন গ্রেফতার-৩
পিরোজপুরে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী পরিষদের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ
হামাসের নতুন নেতা কে এই মোহাম্মদ সিনওয়ার?