গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব
০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ এএম

প্রশাসনে পদোন্নতি হওয়া কর্মকর্তাদের আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা নতুন করে দেখা দিয়েছে। বৈষম্যের শিকার এখনো প্রশাসনে বঞ্চিত সকল ক্যাডার-নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্ত সুবিধা না দিয়ে পতিত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীদের একের পর এক সচিব পদে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার।
অন্যদিকে প্রশাসনে সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য গত ৬ মাস আগে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নামসহ প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর করা সার-সংক্ষেপ আটকে রেখেছেন প্রধান উপদেষ্টার কাযালয়ের মূখ্য সচিব-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। বঞ্চিতরা সচিব পদে নিয়োগ পাওযার জন্য এসব কর্মকর্তা প্রতিদিনও মূখ্য সচিব-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব দেখা করছেন,তাদের আশার বানী শোনালেও পদায়ন করা হচ্ছে না। স্বৈরাচার হাসিনার আমলে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মুজিব ও আওয়ামী বন্দনার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শাহাবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের একজন পুরোধা ও অর্গানাইজার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল নূর চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদে সংযুক্ত ড. এ কে এম শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজনকে সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি সার-সংক্ষপ পাঠানো হয়েছে। এদিকে ফ্যাসিষ্ট দোসর ও দুনীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি-পযায়নে যারা পৃষ্টপোষকতা করছেন এবং করবেন তাদের জবাবদিহিতার আওয়ায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
গতকাল সোমবার বৈষম্য বিরোধি কর্মচারী ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে জুলাই-আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধি কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। বৈষম্য বিরোধি কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বিএম আব্দুল সাত্তার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। দাবি গুলো হচ্ছে, সিভিল প্রশাসনে কর্মরত সকল ক্যাডার,নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিষ্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ণ তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে ববে। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে সকল চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে বৈষম্যের শিক্ষার বর্তমান কর্মরত সকল ক্যাডারে,নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা-অধিদপ্তর এবং গুরুরত্বপূর্ণ দপ্তরের পদে পযায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার এখনো প্রশাসনে বঞ্চিত সকল ক্যাডার,নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্ত সুবিধা প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিষ্ট দোসর ও দুনীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি-পযায়নে যারা পৃষ্টপোষকতা করছেন এবং করবেন তাদের জবাবদিহিতার আওয়ায় আনতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যে কয়েজন কর্মকর্তার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তারা হলেন, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল নূর চৌধুরী (৬৩৬২) তিনি চরম সুবিধাবাদি কর্মকর্তা। আওয়ামীআমলে সব সুবিধাপ্রাপ্ত। শেখ মুজিব এর মাজার জিয়ারতকারী ও ব্যাচের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হওয়াই ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করেছেন। স্বৈরাচারের আমলে নিজের পদ-পদবী রক্ষার্থে অপর ব্যাচমেটদের বলি দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না এই কর্মকর্তা। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে সবাই কে বলতেন। এখন ভোল পাল্টানো শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন অর্থ বিভাগে থেকে চাকরি করার সুবাদে আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তাদের ও মন্ত্রী এমপিদের মানি লন্ডারিং এর সাথে যুক্ত আছেন বলে শোনা যায়। সাবেক বাংলাদেশ গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের প্রিয়ভাজন হওয়ায় তার সমস্ত কুকীর্তি সাথে জড়িত আছে বলে শোনা যায়। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে কিভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা যায় সেই নীতি নির্ধারণী মহলের সাথে কাজ করেছেন। শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের একজন পুরোধা ও ওরগানাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। একে সচিব পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের ঘোর বিপদ ঘটিয়ে ফেলবে। এ কেমন মরণখেলা শুরু করলো অন্তর্বতী বাংলাদেশ সরকারের কর্নধার সচিবরা। ডক্টর ইউনূস কি জানেন, তার প্রভাবশালী চুক্তির আমলারা তাকে নিত্য চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছে? আওয়ামী ল্যাসপেন্সার সচিবদেরকে এখনও বাড়ি পাঠায়নি তারা, উপরন্তু আরও আওয়ামীদের সচিব বানাতে যাচ্ছে, অথচ ড. ইউনূসের অনুমোদিত সিনিয়রমোস্ট ব্যুরোক্রেটকে তার ন্যায্য প্রাপ্য চেয়ারে বসতে দিচ্ছে না গিরিঙ্গিবাজী করে আসছেন বলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান (৬২৫৪) তিনি আওয়ামী অর্গানাইজার। প্রচন্ডভাবে আওয়ামী ল্যাসপেন্সার। আওয়ামী আমলে যথাসময়ে সকল পদোন্নতিপ্রাপ্ত। আওয়ামীলীগ সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় ভাল-ভাল জায়গায় চাকরি করেছেন। প্রত্যেকবার পদোন্নতি প্রাপ্তির পর পদোন্নতিপ্রাপ্ত সবাইকে শেখ মুজিবের মাজার জিয়ারতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বৈরাচারের আমলে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মুজিব ও আওয়ামী বন্দনার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শাহাবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের একজন পুরোধা ও অর্গানাইজার। স¤প্রতি তিনি সচিব পরিচয় দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঢুকে পড়লে বিনা পাশে। শেষে ধরা খেয়ে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (সংযুক্ত) ড. এ কে এম শাহাবুদ্দিন পরিচিতি নং (৬৩৫৯) ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের আমলে সকল পদোন্নতি প্রাপ্ত। শেখ মুজিবরের মাজার জিয়ারতকারী ও নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা। আওয়ামীলীগ সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় ভাল ভাল জায়গায় চাকরি করেছেন। স্বৈরাচার আমলে নিজের পদ-পদবি রক্ষার্থে অপর ব্যাচমেটদের বলি দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না এই কর্মকর্তা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে সবাইকে বলতেন। এখন ভোল পাল্টানো শুরু করেছেন। এরা দুজনেই অর্থ মন্ত্রনালয়ে থাকতে মানি লন্ডারিংয়ের সাথ জড়ত ছিল। এদিকে পতিত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনে বঞ্চিত থাকা ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে অবশেষে ভ‚তাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, গ্রেড-১ পদে ৪১ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তারপর অনেক কর্মকর্তা বঞ্চিত রয়েছে। এ সময়ে কমিটি ১৫৪০ জন কর্মকর্তা আবেদন করেছিলো। তা যাচাই-বাচাই করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ আদেশ জারি হওয়ার পরে সচিবালয় জুড়ে বঞ্চিত থেকে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের উল্লাস দেখা গেছে। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে নামের বানান ও পদোন্নতির তারিখে ভুলে ভরা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও এখনো তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনে পদোন্নতি হওয়া কর্মকর্তাদের আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের সঙ্গে থাকা কিছু সচিব বর্তমান সরকারে সাথে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম অস্তিরতা শুরু করেছে। আবার অতি উৎসাহী কিছু সরকারি কর্মকর্তা (রাজনৈতিক) দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করেছে। অনেক কর্মকর্তাকে সচিব করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করেছেন। তারপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হচ্ছে না। সব মিলে এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ড.সুরতুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচার সরকার এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার রোশনালে পড়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সার্ভিস প্রশাসন এর বহু কর্মকর্তা পদবঞ্চিত ও অসম্মানিত,নিপীড়িত হয়েছি। আমাদের পদোন্নতি দিলেও পদায়ন করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত জনপ্রশাসন থেকে ফ্যাসিষ্ট হাসিনার কর্মকর্তাদের সচিবপদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ কিভাবে দেয়া হচ্ছে। আমারদের দাবি হচ্ছে তাদের পদায়ন বাতিল করে বঞ্চিত দের পযায়ন করতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির