পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ভারতপ্রীতি : মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক কানাঘুষা!

কুটনৈতিক সংবাদদাতা

১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক যখন নাজুক, তখন চীন সফরে চমক দেখিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চারদিনের সফরে চীনের কাছ থেকে বিশাল অংকের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রæতি নিয়ে এসেছেন। একইসঙ্গে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নেও মিলেছে প্রতিশ্রæতি। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সফরের মধ্যে দিয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। প্রফেসর ইউনূস সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন উভয় দেশের শীর্ষ নেতা। একইসঙ্গে ‘এক চীন নীতিতে’ বাংলাদেশ তার অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছে চীনের কাছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তিস্তা প্রকল্প নিয়ে হঠাৎ করেই ভারতের সহযোগিতা নেয়ার কথা বলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্টো সুরে কথা বলেছেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার নীতিগতভাবে সম্মত ছিল।

স¤প্রতি প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় সরকার। তবে সরকার এ বিষয়ে উদারনীতি গ্রহণ করেছে এবং এ প্রকল্প নিয়ে ভারত বা চীন উভয়ের সঙ্গেই আলোচনা করার সুযোগ থাকবে। খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন প্রধান উপদেষ্টা এই ক’দিন আগে চীন সফরের সময় ‘এক চীন নীতিতে’ একমত পোষণ করে আসার পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে আবার সর্বনাশী ভারতের সহযোগিতার কথা টানেন। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা শোনা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসলে কী চাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। তিনি যে আসলেই ভারতপ্রেমী তা-ই হয়তো তার কথায় প্রতিফলিত হয়েছে। এতে করে সরকারের কূটনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে তাতে তারা সহজেই সফল হবে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের উপদেষ্টা যখন আওয়ামী সরকারের আমলে ভারতের দেয়ার প্রতিশ্রæতির কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, ঠিক তখনই ভারত বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে বাংলাদেশকে বাণিজ্য ঘাটতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে প্রমাণিত হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের পক্ষ নিয়ে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতপ্রীতির কারণেই বর্তমান উপদেষ্টা জসীম উদ্দিনকে পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে নিয়োগ দিয়ে মেধাবী ও আওয়ামীবিরোধী কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। হাসিনার আমলে অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত জসীম উদ্দিনও এক সময় ভারতের তাবেদারিতে ব্যস্ত ছিলেন। এখন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সচিব জসীম উদ্দিনকে সাথে নিয়ে একই পথে হাঁটছেন। তা না হলে তিনি হঠাৎ করে তিস্তা নিয়ে ভারতের অপশন টানবেন কেন? জানা গেছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। সেই থেকে ভারতের সাথে তার পুরনো সখ্যতা। একজন কর্মকর্তা বলেন, পুরনো প্রেম নতুন করে জাগলে দোষের বা কী আছে? তবে প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয় তা লক্ষ্য করছেন। উদাহরণ স্বরূপ ওই কর্মকর্তা বলেন, চীন সফরের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিফ করার কথা। কিন্তু তা না করে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে ব্রিফ করতে দেখা গেছে। তার অর্থই হলো চীন নিয়ে হয়তো পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরূপ মনোভাব ছিল। সে কারণেই ড. খলিলুর রহমানকে ব্রিফ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ব্যর্থতার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ক‚টনীতির ক্ষেত্রে এখন ড. খলিলুর রহমানকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনূস সরকার। এটা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বোঝেন কী বোঝেন না তা স্পষ্ট নয়!

বিভাগ : জাতীয়