মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা কেন?
১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে একটি মঙ্গল শোভা যাত্রা বের করে। ইতোমধ্যেই এই শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও এর সাথেও আমাদের হাজার বছরের নববর্ষ উৎযাপনের ঐতিহ্যের কোনো মিল নেই। মূলতঃ ১৯৮৫ সালে চারুপীঠ নামের একটি সংগঠন সর্বপ্রথম যশোরে বাংলা নববর্ষে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন করে। তারই অনুকরণে ১৯৮৯ সালে চারুশিল্পী সংসদ ঢাকায় নববর্ষে মঙ্গল শোভা যাত্রার প্রচলন করে। এ শোভা যাত্রাকেও ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির নগ্ন প্রদর্শনী বলা চলে। মনসাপট, লক্ষীর সরা, উপনিষদ, বেদ-এ বর্ণিত নানা দেবদেবীর বাহন বিভিন্ন পশুপাখির ডামি, পূরাণের নানা অসূর, রাক্ষস, ভূত-প্রেত, প্যাঁচার মুখোশ সহকারে এই শোভাযাত্রা বের হয়। আগামী বছরের সুফলা কামনা করে ধনের দেবী লক্ষ্ণীর সরা রাখা হয়, বিদ্যার উন্নতি কামনা করে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর বাহন হংস ও বীণা রাখা হয়, অমঙ্গল থেকে দুরে থাকতে অমঙ্গলের দেবী মনসার পট রাখা হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়। আর মুসলিম তরুণ তরুণীরা সংস্কৃতির নামে তা গলাধঃকরণ করে নিজের অজান্তেই শিরক-এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
এই মঙ্গল যাত্রার উদ্বোধনী গান হিসাবে গাওয়া হয়:
‘দ্বার খোল দ্বার খোল
ওহে পুরবাসী
জলে স্থলে বনতলে লাগলো যে দোল..।’
বলাবাহুল্য এটি হিন্দু ধর্মের দোল পূজার বা হোলি উৎসবের অভিন্ন অনুষঙ্গ দোল যাত্রার উদ্বোধনী গান। অবতার শ্রী কৃষ্ণ একদা বৃন্দাবনে রাধা ও তার সখীদের সঙ্গে লীলারত ছিলেন। সে সময় হঠাৎ শ্রী রাধার রজঃশ্রাব শুরু হয় এবং তাতে তার বসন রঞ্জিত হয়। এতে করে শ্রী রাধা ও শ্রী কৃষ্ণ লজ্জিত ও বিব্রত হয়ে পড়েন। এ সময় শ্রী কৃষ্ণ রাধার লজ্জা ঢাকতে এবং বিষয়টি তার সখীদের নিকট গোপন করতে শ্রী রাধা ও তার সখীদের সাথে আবীর খেলা শুরু করেন এবং তাদের আবীর দিয়ে রাঙিয়ে দেন। শ্রী কৃষ্ণ, রাধা ও তার সখীদের এই আবীর খেলার স্মরণে হিন্দু সমাজে হোলি উৎসবের প্রচলন হয়েছে। বাংলাদেশে এই হোলি উৎসব দোল উৎসব নামে সমধিক পরিচিত। এই দোল বা হোলি উৎসবের উদ্বোধনী গান উদ্বোধনী গান ‘‘দ্বার খোল দ্বার খোল ওহে পুরবাসী..’’ গাওয়া হয় নববর্ষের মঙ্গল যাত্রায়। ইতিহাস যাই হোক এটা হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠান, এ নিয়ে মুসলিমদের কিছু বলার থাকতে পারে না।
ইসলামী সংগঠনগুলো মঙ্গল শোভা যাত্রাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছে।। ঢালাওভাবে এই ফতোয়া সঠিক নয়। এদেশের ইসলামী সংগঠনগুলো হিজরী নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রালি করে থাকে, এবারে ঈদ শোভাযাত্রা হলো- সেগুলো যদি জায়েজ হয়, বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে র্যালি করা হারাম হবে কেন? প্রশ্ন, থাকতে পারে মঙ্গল শোভা যাত্রাকে যেভাবে পৌত্তলিকতার উপাদানে ও মোড়কে আবৃত করা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য সেটা জায়েজ কিনা? উত্তর- পৌত্তলিকতা সম্পৃক্ত কোন কিছুই মুসলমানের জন্য জায়েজ নয়, আলাদা করে মঙ্গল শোভা যাত্রা নয়। কিন্তু ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন উপায়ে এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে যদি নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে র্যালি করা হয় তাহলে ইসলামে বাধা কোথায়? এই ঢালাও ফতোয়াগুলো মুসলমানদের ক্ষতি করছে।
তবে বাঙালি হিন্দু যদি পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভা যাত্রা করে তাতে সমস্যা কোথায়? এটা তো তাদেরও অনুষ্ঠান। তবে কোনো বাঙালি মুসলিম সেই মঙ্গল শোভা যাত্রায় শামিল হতে পারবে না। কেননা, আকীদাগতভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের এই মঙ্গল- অমঙ্গলের ধারণার সাথে বিরোধ রয়েছে। একজন মুসলিম কখনোই বিশ্বাস করতে পারে না যে, কোনো শোভাযাত্রা কোনো মঙ্গল করতে পারে বা মঙ্গল বয়ে আনে। এটা সরাসরি শিরক। ইসলামে মঙ্গল বা কল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাছাড়া এই মঙ্গলশোভা যাত্রায় পৌরাণিক বিভিন্ন দেবদেবী চরিত্র, পৌত্তলিকতার উপাচার যুক্ত করা হয় তাতে মুসলমানদের সামিল হওয়া সম্ভব নয়। লক্ষীর সরা রাখায় নতুন বছর সম্পদ ও ফসলে ভরে উঠবে, স্বরস্বতীর বীণা রাখায় বিদ্যা লাভ হবে, মনসার পট রাখায় অকল্যাণ দুরীভূত হবে- এমন ধারণা কোনো মুসলিম পোষণ করতে পারে না বা এমন ধারণার চর্চায় সামিল হতে পারে না।
ইসলাম মূর্তিকে হারাম ঘোষণা করেছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্বলিত মূর্তি রাখা হয়। যার বিরোধিতা মুসলিমগণ করে আসছে। এবছর ঈদ শোভাযাত্রায় মুসলিম চরিত্রের মুর্তি বানিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিসমিল্লাহ বলে মদ খেলে যেটা যেমন জায়েজ হয়ে যায় না। ঠিক তেমনি মুসলিম রাজা-বাদশাহদের মুর্তি বানালে তা হালাল হয় না। এদের থামাতে হবে, নয়তো এরা একদিন শাহজালাল, শাহপরাণ, খানজাহান আলী (রহ.) কেও হয়তো একদিন মূর্তি বানিয়ে শোভাযাত্রায় হাজির করবে। আসলে এটি একটি ধোঁকা। মুসলিম চরিত্রের মুর্তি বানিয়ে মূলত মুর্তিকে বৈধতা দেয়ার সুক্ষ্ণ কৌশল। মূর্তি হারাম- সেটা আওলিয়ার হোক বা শয়তানের হোক।
কিন্তু বাঙালি মুসলিম নববর্ষকে বরণ করে নিতে যদি তাদের ধর্মীয় বিধি নিষেধের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন উপায়ে স্বাগত মিছিল করে তাতে তো কোথাও বাধার কিছু দেখি না। যারা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হারাম ঘোষণা করেছে। তাদের জবাবে বলতে চাই, এটা ইবাদত নয়। সংস্কৃতি। ইসলাম নির্দোষ স্থানীয় সংস্কৃতিতে নিষিদ্ধ করেনি। যেমন রসুল সা. যখন মদীনায় হিজরত করেন তখন মদীনার আনসারগণ তাকে খেজুরের ডাল উঁচিয়ে, দফ বাজিয়ে বরণ করেছিলেন। এটা ছিলো মদীনার তৎকালীন সংস্কৃতি। ইসলামের নামে কঠোরতা, রুঢ়তা দেখানো যাবে আর খুশী হওয়া যাবে না- এটা ইসলাম নয়। মুসলমানদের জীবনে আনন্দ থাকবে না, তারা খুশী হতে পারবে না- তা ইসলাম নয়। সবচেয়ে বড় কথা হিজরী সনকে স্বাগত জানিয়ে যদি মিছিল করা যায়, তবে বাংলা সনকে কেন স্বাগত জানানো যাবে না? স্থানীয় উৎসবগুলো হারাম ও বিদাআত বলে বর্জন করায় মুসলিম জীবনে আনন্দ বিদায় নিয়েছে। ফলে মুসলিম তরুণরা অমুসলিমদের আনন্দ উৎসবে যোগ দিচ্ছে, নয়তো চরমপন্থী মতবাদ বা মাদকের ছোবলে কুপকাত হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আদালতের রায়ে সাড়ে তিন বছর পর চেয়ারম্যান নির্বাচিত জামায়াত নেতা সাইয়েদ

ঘোড়াঘাটে বাড়ীতে আগুন ৪টি ঘর পুড়ে ছাই ১০ লাখ টাকার ক্ষতি

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দিলেন কর্তৃপক্ষ

বন্দরে বজ্রপাতে মাধ্যমিকের ছাত্র নিহত

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দিলেন কর্তৃপক্ষ

রেকর্ড ছয় কোটিতে দিল্লি ক্যাপিটালসে ডাক পেলেন মুস্তাফিজ

উলিপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি গঠন

সাভার ও আশুলিয়ায় লাইসেন্স বিহীন এলপি গ্যসের দোকান, বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা

ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যুফেতে বিকাশ পেমেন্টে ‘বাই ওয়ান গেট থ্রি’ অফার

প্রাথমিক শিক্ষায় ২০ বছরের অর্জন, জেএসপি৩ সমাপ্তিতে জাইকা ও ডিপিই’র সেমিনার

সিংগাইরে সালাউদ্দিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

গুগল সার্চে শীর্ষে পাক এয়ার ভাইস মার্শাল, আরও যা ছিল আগ্রহের শীর্ষে

জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা হবে -এ্যাডভোকেট এম.এ. হান্নান খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার দায় ভিসি এড়াতে পারেন না বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি

১০০ টাকার জন্য শিশু অটোচালক হত্যা, ২ আসামির স্বীকারোক্তি

বিরামপুরে আলুর বাজারে ধ্বংস

রাস্তা নির্মাণ শেষ হলেও অধিগ্রহণের টাকা পায়নি জমির মালিকরা, অধিগ্রহণের পাওনা টাকার দাবিতে মানববন্ধন

জকিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের পুশ ইন : ১৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো

সদরপুরে আট মাস ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেড় হাজার পরিবারে, ভোগান্তিতে ২০ হাজার মানুষ

খেলার মাঠ বন্ধ কওে প্রাচির নির্মান চেষ্টার প্রতিবাদে শিশু শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন