ভারতে মুসলিমদের নিরাপত্তা পাওয়ার ন্যূনতম অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে! গুজরাট থেকে দিল্লি, আসাম থেকে উত্তর প্রদেশ- সর্বত্র মুসলিম নিধনের উৎসবে মেতেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। ভারতের শাসকগোষ্ঠী উগ্রপন্থী বিজেপির এজেন্ডাই হচ্ছে এক দেশ, এক ধর্ম বাস্তবায়ন। যে ভারত বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অব্যাহতভাবে অন্যায্য উদ্বেগ জানিয়ে আসছে সেই দেশটি এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিকৃষ্টতম ভূখণ্ড হয়ে উঠেছে।

বিজেপির মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে সারা ভারতে মুসলিমদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি মিডল ইস্ট মনিটরের এক তথ্যচিত্রে মুসলিম নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে।

গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে, ভারতে মুসলিমদের বসত ভিটা থেকে উৎখাত, ব্যবসা বানিজ্যে বাধা এমনকি রাস্তাঘাটে বোরখাপড়া নারীদের হেনস্থার মত ন্যক্কারজনক কাজে লিপ্ত হচ্ছে সেখানকার উগ্র সনাতন ধর্মাবলম্বিরা। বর্তমানে দেশটির উত্তরপ্রদেশে মুসলিম নির্যাতনের মাত্রা নতুন করে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজ্যের মোজাফফরনগরে প্রকাশ্যে একজন মুসলিম নারীর হিজাব খুলে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মুসলিম সমাজে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে মুসলিম নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দেশটির মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’র মতো ‘মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিমে’র ডাক দিতে দেখা গেছে।

মোজাফফরনগরের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুরুষ ফারহিনের হিজাব জোর করে খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে বাকিরা গালিগালাজ ও শারীরিক লাঞ্ছনার মাধ্যমে তাদের অপমান করছে। বিশ্বব্যাপী এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়।

মিডল ইস্ট মনিটরের তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্রাকডাউনের নামে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী আদর্শের সাথে সঙ্গতি রেখে, দলটি অবৈধ গণগ্রেফতারের মাধ্যমে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করেছে, নির্বিচারে তাদের বাড়িঘর, মসজিদ ও মাদরাসা ভেঙে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে আটক কেন্দ্রে আটক করেছে। এসব আটক ব্যক্তিদের সাথে দুর্ব্যবহার করা তারা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের ১৭০টির বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা বন্ধের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ আলেম সমাজ। ভারতে মাদ্রাসা বন্ধের প্রক্রিয়াকে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার রাষ্ট্রীয় প্রয়াস বলে মনে করেন তারা। গত মঙ্গলবার এক বার্তায় এমন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদিতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেছেন আলেমরা।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহারণ টেনে আলেমরা জানান, এখানে (বাংলাদেশে) আমরা এটি কল্পনাই করতে পারি না। যদি বাংলাদেশে একসঙ্গে ১৭০টি মন্দির বন্ধ করে দেয়া হতো এবং শীর্ষপর্যায়ের কেউ সেটিকে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যায়িত করতেন, তাহলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও এবং দেশীয় সুশীল সমাজে কী রকম তোলপাড় হতো, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

 
অথচ ভারতে দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম নিপীড়ন, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনলায় বন্ধ, গরু, নামাজ, হিজাব এবং মুসলিমদের ওয়াকফকৃত সম্পদে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুসলমানদের নাগরিক অধিকার খর্ব করে একের পর এক আইন পাস করা হচ্ছে। এর কোনো জবাবদিহিতা নেই। আশ্চর্যজনকভাবে কিছু বাংলাদেশি সুশীল ব্যক্তিত্ব, এনজিও সংশ্লিষ্ট এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও পতিত শক্তির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রকেও ‘কমিউনাল ভায়োলেন্স’ বলে প্রচার করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টে লিপ্ত হন।

 
সাধারণ আলেম সমাজ মনে করে, এটি শুধু দ্বৈতনীতি নয়; বরং মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধেই একটি বিশ্বব্যাপী ন্যারেটিভ যুদ্ধ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা মুসলিম বিশ্বের বিবেকবান মানুষ, আলেম, চিন্তাবিদ ও সংগঠনসমূহকে এই সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠুক সর্বত্র। আওয়াজ উঠাও বাংলাদেশের বিপ্লবী তরুণরা।

আনন্দ সাজু লিখেছেন, বাংলাদেশী হিন্দুদের উচিত ভারতের ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কথা বলা। ভারতে বর্তমানে যেভাবে মুসলিম নির্যাতন করা হচ্ছে, ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি মুসলিমদের ধর্মীয় অবকাঠামোও ভাঙচুর করা হচ্ছে। ভারতের এই হিংসাত্মক কাজের জন্য বাংলাদেশের হিন্দুদের উচিত হবে গণ জমায়েত করে প্রতিবাদ করা।

ভারত বারবার মুসলিম নির্যাতন করার পরও, বাংলাদেশী হিন্দু ও সংগঠনগুলো কোন কথা বলেনা।এই বিষয়টা আমার ভালো লাগে না। চিন্ময় প্রভুর মুক্তি এবং ভারতের মুসলিম নির্যাতন প্রতিবাদের এক ব্যানার সামনে রেখেও তাদের উচিত রাস্তায় নামা।

আবু নাসের তুষার ভারতে মুসলিম নির্যাতনের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, আমাদের দেশেও ৫ আগষ্টের পরে অন্যধর্মের মানুষের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তারা এই ধরনের ভিডিও একটাও দেখাতে পারে নাই। আল্লাহ সকল দেশের সকল ধর্মের মানুষদের হেফাজত করুক।‘মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।